🔥সেই রাতের গল্প🔥 (১ম পর্ব)

সময়টা ছিলো শীতকাল। রাতের বেলায় ব্যাডমিন্টন খেলাটা যেনো শীত কালের প্রধান খেলা। ব্যাডমিন্টন ছাড়া শীতকাল পাড়ি দেয়া অসম্ভব। শীত মানেই মাঠের দু'পাশে বাঁশের মধ্যে বাল্ব জ্বালিয়ে ব্যাডমিন্টন খেলা। গ্রাম অঞ্চলে ব্যাডমিন্টনের আর একটি নামে পরিচিত সবাই। যেটার নাম হলো রেকেট।
.
মেসে থাকতো শিহাব। প্রায় দু'বছর যাবৎ মেসে থাকছে শিহাব। ঐখানে থেকেই পড়াশুনো করতো। শিহাবের বাসস্থান ঢাকায়। পলিটেকনিকে পড়ার অনেক ইচ্ছে ছিলো তার। কিন্তু ঢাকাতে চান্স পেলোনা। চান্স পেয়েছে কুমিল্লা পলিটেকনিক ইন্সটিউটে। যার ফলে মেসে থেকেই পড়ালেখা করতে হয়।
.
ঐদিন ছিলো ব্যাডমিন্টন টিম। শিহাব ব্যাডমিন্টন খুব ভাল ভাবে খেলতে পারে। তাই সবাই শিহাবকে ডাকতো খেলানোর জন্য। শীতকালে রাস্তাঘাট খুব তাড়াতাড়ি নিরব হয়ে যায়। রাত ১০ টা বাজলেই যেনো রাস্তাঘাট নিরব হয়ে যায়। শিহাব যে মেসে থাকতো তার আশে পাশের ঘটনা খুবই ভয়ংকর ছিলো।
.
যেটা অনেক পরে শিহাব আশে পাশের লোক জনের কাছ থেকে জানতে পারে। মেসের পাশে ছিলো একটি কবরস্থান। কেউ কেউ বলে সেইখানে প্রায়ই সময় সাদা কাপর পড়া কাউকে দেখতে পায়। কবরস্থানের চারপাশে ঘুরা-ঘুরি করে।
.
ভয়ে কেউ রাতের বেলায় ঐ কবরস্থানের পাশ দিয়ে যেতে চাইতো না। এরকম অনেক ঘটনাই ঘটেছে যা অবিশ্বাস্য। বিশেষ করে শীতের সময় এটা বেশি দেখা যেতো। ওখানকার মানুষেরা খুবই ভয়ে ভয়ে থাকতো।
.
আরো একটি কথা শুনেছে যে রাত যখন গভীর হয় তখন বাচ্চাদের কান্নার আওয়াজ শুনতে পেতো। কিন্তু কে ডাকে তা আধোও কেউ জানতে পারেনি। শিহাব সবসময় ১২ টার আগেই ঘুমিয়ে পড়তো। কিন্তু একদিন ঘুম আসছিলো না। বিছানায় এপাশ ওপাশ করছিলো। রাত তখন প্রায়ই সাড়ে তিনটা বাজবে।
.
ঐ দিনই শিহাব নিজের কানে ঐ আওয়াজটা শুনতে পায়। এতদিন মানুষের কাছে শুনেছে কিন্তু ঐ দিন নিজের কানে শুনতে পেয়ে বিষণ ভয় পেয়ে যায়। মেসের মধ্যে ৫ টা রুম ছিলো। প্রতি রুমে ৩ জন করে থাকতো। মোট ১৫ জন থাকতো মেসে। কিন্তু ঐ দিন শিহাব একাই ছিলো রুমে। তার রুম মেট'রা ঈদ-উল-আজহা'র ছুটিতে বাড়িতে যায়।
.
রুমটি অন্ধকার ছিলো। বাল্ব নেবানো ছিলো। শীত কাল ছিলো তাই পাখাও বন্ধ ছিলো। একেবারে নিরব ছিলো রুমটি। শিহাবের ব্যাডমিন্টন টিম থাকার কারণে বাসায় আসেনি।
.
শিহাব মারাত্মক ভয় পেয়ে যায়। সাথে সাথে বিছানা থেকে উঠে বাল্বটা জ্বালায়। শিহাব হাপাচ্ছিলো বিছানায় বসা অবস্থায়। তার হার্টবিট ধুব-ধুব করছিলো। বিছানা থেকে উঠে পানির বোতলটি হাতে নেয় পানি পান করার জন্য। কিন্তু বোতলে পানি ছিলো না। পানি আনতে রুমের বাহিরে যেতে হবে। কিন্তু এত রাতে রুমের বাহিরে যাবে। শিহাবের বুকে সাহস হচ্ছিলো না।
.
তারমধ্যে পানি পান করা খুবই দরকার। অনেক পিঁপাসা পেয়েছিলো। আসতে আসতে বিছানা থেকে উঠে। দরজা মেলে দেখে বাহিরে খুটখুটে অন্ধকার। গেইটের সামনের বাল্বটা কিছুদিন ধরেই নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে অন্ধকার হয়ে আছে। শিহাব দরজার পাশে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ ভাবলো। পরে পাশের রুমের দরজায় নক করে কিন্তু কেউই সাড়া দেয়নি। সবাই ঘুমোচ্ছিলো তখন।
.
শিহাবের শরীর খুব ঘামছিলো। ঘাম গুলো মুছে আসতে আসতে বাহিরে যাচ্ছিলো পানি আনবার জন্য। অনেক অন্ধকার থাকার ফলে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে ফ্লাস জ্বালিয়ে নেয়। পানির কলটা একটু দূরে থাকায় হেটে যেতে হয়। হাত কাঁপছে যার কারণে মোবাইলটাও কাঁপছিলো।
.
পানি ভরবে কিন্তু কলে পানি নেই। পানির বধলে বের হলো লাল রং। না ঐটা লাল রংয়ের মতো দেখতে হলেও ছিলো রক্ত। সামনেই কবরস্থানটা দেখা যাচ্ছে। যতই ভাবছে তাকাবে না ঐদিকে, ততোই যেনো চোখটি সেইখানে চলে যাচ্ছে। আবার শুনতে পেলো সেই কান্নার আওয়াজটি।

.
শিহাবের সামনেই হচ্ছিলো সেই আওয়াজটি। কিন্তু কাউকেই দেখতে পাচ্ছে না। এইবার ভয়ে ভয়ে পিছু হাটছে সামনে তাকিয়ে। হাতের মধ্যে ছিলো বোতলটা। বোতলের মধ্যে পানির বধলে রক্ত। বোতলটা হাতে নিয়েই রুমের মধ্যেই ফিরছিলো।
.
হঠাৎ অনুভব করে পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু শিহাব তাকানোর সাহস পাচ্ছিলো না। মোবাইলের ফ্লাসের আলোতে ছায়াটা পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছিলো। দাঁড়িয়ে গেলো ভয়ে। আর হাটছে না। প্রায়ই পাঁচ মিনিটের মতো দাঁড়িয়ে ছিলো চোখ বন্ধ করে। চোখ খোলারও সাহস পাচ্ছিলো না।
.
কিছুক্ষণের মধ্যেই খুব জোরে বাতাস শুরু হয়ে গেলো। এবং শিহাব বুঝতে পারলো পিছনের দিক দিয়ে কেউ তার পিঠে স্পর্শ করছে। শিহাব সাথে সাথে জ্ঞান হাড়িয়ে মাটিতে পড়ে গেলো।
.
🔥(চলবে)🔥
.
.
লেখাঃ হৃদয় নাদিম