🔥সেই রাতের গল্প🔥(৩য় পর্ব)

শান্ত খুব জোড়ে দৌড়ে চলে আসে মেসে। এবং রুমে এসে ফ্লোরে পরে যায়। শান্ত খুব ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু কি হয়েছে সেটা শিহাব এবং রাফি কেউই জানে না। প্রথমে ওরা শান্তকে পানি খাইয়ে ঠান্ডা করে। কিন্তু তাতেও শান্ত হাপাচ্ছিলো। এবং কি হয়েছে সেটা বলতে চাচ্ছিলো না শান্ত। রাফি একটু রেগেই যায়। আর শান্ত'র এরকম অবস্থা দেখে শিহাব আরো ভয় পাচ্ছিলো। আর এই তিন জনের মধ্যে সাহসী ছিলো শুধু রাফি।
.
শিহাব, রাফি এবং শান্ত ওরা চাইলে একই রুমে থাকতে পারতো। কিন্তু তিন জন তিন রুমে থাকতো। আর তাদের সাথে থাকতো দুইজন ছোট ভাই। এটা ঐ মেসের নিয়ম ছিলো। কিন্তু এরকম কাহিনী হওয়ার পর শান্ত এবং শিহাব কোনো ভাবেই তো থাকতে চাচ্ছিলো না। পরেরদিন সকালেই মেস ছেড়ে দিবে বলছিলো। কিন্তু রাফির জন্য আর ছাড়তে পারেনি মেসটা।
.
- রাফি দোস্ত।
- হ্যা শিহাব বল।
- তুই বুঝতে পারছিস না কেনো? এই মেসে থাকা যাবেনা।
- প্লীজ সকাল সকাল রাগ উঠাইস না তো। তোদের মত ভীতু আমি আমার জীবনেও দেখিনাই। কি না কি দেখেছিস তাতে তোদের মেস ছাড়তে হবে।
- তোর সাথে তো এরকমটা হয়নি তাই এভাবে বলছিস। যদি তোর সাথে এরকমটা হতো তাহলে বুঝতে পারতি। < কথাটি শান্ত বলছিলো >
- তোরা তো বেটা মাইয়া। মাইয়া না হলে কি এমন ভয় পায় কেউ? যা তো সামনে থেকে। মেজাজ গরম করবি না।
.
রাফির এরকম আচরণ দেখে শিহাব এবং শান্ত রুম থেকে চলে আসে। এবং সাথে সাথে বাড়িওয়ালাদের বাসায় গেলো। এই ব্যাপার নিয়ে কথা বলার জন্য। ওদের সাথে রাফিও যায়। ঐ বাসার বাড়িওয়ালার সাথে কথা বলছিলো।
.
- আচ্ছা আংকেল একটা কথা জানার ছিলো আমাদের।
- হ্যা বাবা বলো কি জানতে চাও?
- আসলে আংকেল আপনাদের এই বাসার আশে-পাশে কি কোনো ভয়ানক কিছু আসলেই আছে? নাকি মানুষের মনে ভুল একটু বলেন তো।
- হঠাৎ এই কথা কেনো বাবা?
- আংকেল আমরা জানতে চাই ব্যাপারটা। প্লীজ আমাদেরকে বলুন কথাটা।
- কি করে বলি এটা। আমি তো বলতে পারবো না বাবা।
- কেনো বলতে পারবেন না আংকেল? < রাফি একটু রেগেই কথাটি বলে >
- এই বিষয়ে বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু একটা কথা বলতে পারি যে তোমরা একটু সাবধানে থাকবে। রাতের বেলায় একা বাহিরে যেয়ো না।
- আংকেল আপনি কি আমাদের কাছে কিছু লুকাচ্ছেন? আমরা তো অনেকের কাছেই শুনেছি যে এই জায়গাটা একটু অন্যরকম। অনেকেই নাকি অনেক কিছু দেখতে পেয়েছে। আপনি এই ব্যাপারটা কি ভাবে নিচ্ছেন?
- তোমাদের বললাম না এই বিষয়ে কথা বলতে পারবো না আমি। তারপরও কেনো বারবার জিজ্ঞাসা করছো? যাও তোমাদের রুমে চলে যাও।
.
কথাটি বাড়িওয়ালা বলেই ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দেয়। এবং রাফির মাথায় তখন একটা প্রশ্নই বার বার আসছিলো। আসলেই কি তাহলে শিহাব এবং শান্ত কোনো খারাপ কিছু দেখতে পেয়েছিলো? অন্যদিকে বাড়িওয়ালার কথা শুনে শিহাব এবং শান্ত ওদের গলা শুকিয়ে গেছে। তাই তাড়া-তাড়ি রুমে চলে এসে পানি পান করে। কিন্তু রাফির মাথায় তখনও সব কিছু এলোমেলোই হয়ে ছিলো।
.
- আচ্ছা দোস্ত। আমার এখনো মনে হচ্ছে তোরা ভুল কিছু দেখেছিস। যদিও কিছু দেখিস তাহলে চল হুজুরের সাথে কথা বলে দেখি।
- দোস্ত। আমি না হয় ভুল দেখেছি। কিন্তু শিহাব যে দরজার সামনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছিলো ঐটা কি এমনি?
- আচ্ছা দোস্ত সরি। তোদের সাথে বাজে ব্যবহার করেছি। কিন্তু আমি এটার শেষ না জেনে থামছি না।
- আচ্ছা দেখ কি হয়।
.
আর মেস ছেড়ে দিলে এত সহজে মেস খুঁজে পাওয়া যাবেনা। তাই তাদের ঐ মেসেই থাকতে হলো। আর ঐ দিন শিহাব দেখতে পায় একটা হুজুর আসেন ঐ বাড়িতে। এবং বাড়িওয়ালার বাসাতেই গেলেন হুজুর। সেইদিনই কেনো হুজুর আসবে? কথাটি শিহাব একা একাই ভাবছিলো। এবং ব্যাপারটা শান্ত এবং রাফির কাছে শেয়ার করে। তাহলে কি আসলেই কিছু একটা আছে?
.
- আচ্ছা শিহাব হুজুরটাকে তুই চিনবি না পরে?
- হ্যা চিনবো। আর উনি তো ক্যাম্পাসের সাথে যে মসজিদটা আছে ঐ মসজিদেরই হুজুর।
- ওহ আচ্ছা ঠিক আছে। আর তো ম্যাচ শেষ হবে কবে?
- দুইদিন পরই ফাইনাল খেলা।
- পরে কি বাসায় চলে যাবি?
- হ্যা। কেনো তুই যাবি না?
- না। আমার টিউশন আছে। আরো তিন-চার দিন টিউশন করাতে হবে। পরে বাসায় যাবো।
- ওহহ আচ্ছা ঠিক আছে। একা একা ভয় পাবিনা?
- শোন তোদের মতো আমি মাইয়া নয় যে ভয় পাবো।
- আচ্ছা যেটা ভালো বুঝিস করিস।
.
ঐ দিন রাতের ঘটনা। ৯ টা কি ১০ টা বাজবে হয়তো। ওরা তিনজন ডিনার করে রুমে বসে কথা বলছিলো। গতকাল থেকেই ওরা তিনজন একই রুমে থাকে। কিন্তু হঠাৎ কেনো জানি রাফি তাদেরর রুমের দরজাটা খুলে অন্য রুমে যাওয়ার জন্য বের হয়। আর তখনই সাদা পাঞ্জাবি এবং মাথায় সাদা টুপি পরা কাউকে বাহিরে যেতে দেখতে পায়। আর তিনি ছিলেন ঐ বাসার বাড়িওয়ালা। কিন্তু তিনি এত রাতে বাহিরে কেনো যাচ্ছেন? রাফিও তার পিছু নেয়। আজ দেখবেই আসল কাহিনীটা কি।
.
রাফি এক জায়গায় লুকিয়ে ছিলো। ঐ খান থেকে বাড়িওয়ালাকে দেখা যাচ্ছিলো। তার হাতে এটা কি? সাদা কাপর দিয়ে প্যাঁচানো। এটার মধ্যে আসলে কি? রাফি চুপ-চাপ বাড়িওয়ালার কাহিনী দেখছিলো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। বাড়িওয়ালা একটু আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ আছে কিনা। কিন্তু রাফি অন্ধকারে ছিলো বলে দেখতে পারেনি রাফিকে।
.
একটু পর সাদা কাপর থেকে কিছু একটা বের করে বাড়িওয়ালার সামনের দিকে ছিটালো। এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা জোড়ে বাতাস শুরু হলো। বাড়িওয়ালা দু কদম পিছনে এলো। এবং তিনি কার সাথে যেনো কথা বলছিলো। কথাটি ভাল মতো শুনতে পাচ্ছিলো না রাফি। তাই আর একটু সামনে গেলো কথাটি শুনবার জন্য।
.
- তুই কেনো আবার ডাকলি আমাকে? তোর সাহস থাকলে তুই আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে কথা বল।
- হ্যা তোর সামনে যাই। আর তুই আমাকে শেষ করে দিস। তুই যাতে আমার বাসার মধ্যে না ডুকতে পারিস এর কারণে তো আটকেই রেখেছি।
- তাহলে কেনো ডেকেছিস বল।
- তুই আমার বাসার ছেলেদের সাথে কেনো এরকম করছিস?
- ওদের মধ্যে কেউ একজন আমার সামনে দিয়ে যায় এবং আমার পথ থামিয়ে দিয়েছে। তাই ওই ছেলেটাকেই আমি খুঁজছি। আর তুই যেইদিন এই কথা গুলো শেয়ার করবি ঐ দিনই তোর আটকানো সব পথ আমার আশা যাওয়ার রাস্তা হয়ে যাবে।
- সেটা কখনো সম্ভব হবে না। আর এই নে তোর ঔষুধ।
.
কথাটি বলে বাড়িওয়ালা কি যেনো সামনে ছুড়ে মারলেন। এবং সাথে সাথেই উপাশ থেকে ভয়নাক শব্দ করে কথা বলাটাও থেমে যায়। রাফি তাড়া-তাড়ি করে রুমে এসে দরজাটা লাগিয়ে দেয়। যাতে বাড়িওয়ালা বুঝতে না পারে যে কেউ দেখেছে বা শুনেছে তাদের কথা। রাফি রুমে ঢুকে বড় করে একটা নিশ্বাস ফেলে। এবং ভাবছিলো একটু আগে যা ঘটে গেলো। তার মানে বাড়িওয়ালা কিছু একটা করে আটকে রেখেছে।  চিকন গলায় আসতে আসতে কথা বলছিলো। রাফি এখন পুরোপুরিভাবে জেনে ফেললো। এবং খুব ভয়ও পাচ্ছিলো রাফি। তার মানে কিছু একটা তো আছেই।
.
🔥 (চলবে) 🔥
.
.
লেখাঃ হৃদয় নাদিম