🔥সেই রাতের গল্প🔥 (২য় পর্ব)

ফজরের সময় শান্ত ঘুম থেকে উঠে। মসজিদে যাবার জন্য বের হচ্ছিলো। বাহিরে বের হয়ে দেখতে পায় কেউ মাটিতে পড়ে আছে। সামনে এগিয়ে যায় শান্ত। কাছে গিয়ে দেখতে পায় শিহাবকে। শিহাবের হাতের পাশেই পানির বোতলটি পড়ে আছে। শান্ত ঐ বোতল থেকে পানি নিয়ে শিহাবের চোখে ছিটিয়ে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই শিহাবের জ্ঞান ফিরে। এবং সাথে সাথে তাকে রুমের মধ্যে নিয়ে যায়।
.
- শিহাব কি হয়েছিলো তোর?? বাহিরে পড়ে ছিলি কেনো?
.
শিহাব চুপ-চাপ শুয়ে আছে আর শান্তর কথা শুনে চোখ বুঝে। এবং মনে করতে থাকে কি ঘটেছিলো গতকাল রাতে তার সাথে। শিহাবের সব কিছু মনে পড়ে যায়। এবং সাথে সাথে বিছানায় শুয়া অবস্থা থেকে উঠে বসে পড়ে। শান্ত হাত দিয়ে শিহাবের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। এবং পূণরায় জিজ্ঞাসা করলো।
.
- শিহাব কি হয়েছে তোর?
- কি কিছু না। <আস্তে করে কথাটি বলে>
- কিছুনা মানে। আমাকে খুলে বল দোস্ত।
.
পরে সব কিছু খুলে বলে তাকে। শান্ত কথা গুলো শুনে খুব ভয় পেয়ে যায়। অনেকের কাছ থেকেই এই কথা শুনেছে সেইদিন আবার শিহাবের কাছ থেকেই শুনতে পায়। শান্ত যখন প্রথম বার শুনেছিলো তখন মিথ্যে মনে করেছিলো। কিন্তু সেইদিন শিহাবের কাছ থেকে এরকমটা শুনতে পেয়ে ঘটনা গুলো সত্যিই মনে করে। শিহাবের চোখ মুখ একেবারে কেমন জানি হয়ে গেছে। তা দেখেই বিশেষ করে শান্ত সত্যি বলে মেনে নেয়।একটুপর শিহাব বোতলটির দিকে তাকায়। দেখে অবাক হয়ে যায় বোতলে পানি দেখে। সাথে সাথে শান্তকে জিজ্ঞাসা করে।
.
- এই বোতল এখানে কেনো? আর এই বোতলে পানি কিভাবে আসলো?
- কি বলছিস আবোল-তাবোল শিহাব। তুই যখন মাটিতে পড়ে ছিলি তখন তোর পাশেই বোতলটি ছিলো পানি ভরা।
- না। বোতলে পানি আসলো কোথা থেকে। পানির কল দিয়ে তো রক্ত বের হচ্ছিলো। আর বোতলের মধ্যে রক্তই ছিলো।
- কি বলিস এইগুলো।
.
সাথে সাথে কপাল ঘামাচ্ছিলো শান্ত'র। শিহাবের কাছ থেকে এই কথাটি শুনে। তারপর শিহাব শান্তকে নিয়ে বাহিরে যায়। ঐ খানটাতে গিয়ে দাঁড়ায় যেখানে শিহাব জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আশে পাশে তাকালো সবকিছুই যেনো অন্যরকম লাগছে। গতকাল রাতে ছিলো একরকম আর তখন আর এক রকম। শিহাব দেখতে পায় একটা মোটা দড়ি ঝুলে রয়েছে। কিন্তু গতকাল তো এটা দেখতে পায়নি শিহাব। মনে মনে বলছিলো কথা গুলো।
.
- শান্ত
- হুমম ব বল শিহাব।
- আমি এইখানটাতে দাঁড়িয়ে ছিলাম গতকাল। আর পিছন থেকে কে জানি আমাকে স্পর্শ করে। আর তখনই সাথে সাথে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তারপর আর কিছু জানিনা।
- আচ্ছা এইখানে দাঁড়া তো।
- হুমম দাঁড়ালাম।
- সামনে তাকা।
- হুমম।
.
তারপর ঐ দড়িটা ধরে শান্ত। এবং দড়িটা খুব জোরেই শান্ত'র পিঠের দিকে ঠেকায়। শিহাব ভয়ে কেঁপে উঠে। পিছনে তাকিয়ে দেখে দড়িটা শান্ত'র হাতে।
.
- দোস্ত ঠিক এভাবেই আমার শরীরে কেউ স্পর্শ করছিলো।
- আরে গাধা গতকাল মনে হয় তুই এই মোটা দড়ির সাথে ডাক্কা খেয়েছিলি।
- না শান্ত। আমি শিউর কেউ ছিলো আমার পিছনে।
- আমার কাছে এখন পুরোপুরি পরিষ্কার হয়ে গেলো। যে তুই যা বলেছিস সবই মিথ্যে।
- আচ্ছা ধর এইটা দড়ি ছিলো। দড়ির সাথেই ধাক্কা খেয়েছিলাম। কিন্তু ঐ কান্নার আওয়াজটা তো মিথ্যে নয়।
- জানিনা। বাদ দে তো।
.
শান্ত কথাটি বলেই শিহাবকে রেখে রুমে চলে গেলো। শান্ত রেগে যায় তখন। কিন্তু শিহাবের সাথে যা ঘটেছে তা শিহাবই ভাল বুঝছে। একটু পরে শিহাবও রুমে চলে যায়। জানালা গুলো মেলে। কিন্তু তেমন কিছুই দেখা যাচ্ছে না। শুধু ছোট ছোট ঘাসে ভরে আছে মাঠটি। আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো ভাল মতো। কিছুই দেখতে পেলো না। তাহলে কি সব শিহাবের মনের ভুল ছিলো?
.
না তা কিভাবে সম্ভব। নিজের চোখকে তো আর মিথ্যে বলা যায় না। নিজের কানকে তো আর মিথ্যে বলা যায় না। নিজের কানে শুনেছে নিজের চোখে দেখেছে কল দিয়ে রক্ত বের হতে। সেটা কি করে মিথ্যে হতে পারে!! নিজের মনের ভেতর এই কথা গুলো বার বার শিহাবকে প্রশ্ন করছিলো।
.
একটু পর রাফি আসে। ও হ্যাঁ শান্ত, রাফি এবং শিহাব তারা তিনজন ক্লাসমেট। আর তারা প্রথম থেকেই ঐই মেসে আছে। রাফি অনেক সাহসী ছিলো। শিহাবের কথা শান্ত প্রথমে বিশ্বাস করলেও রাফি একদমই বিশ্বাস করেনি।
.
ঐ দিনই ছিলো ব্যাডমিন্টন খেলার ফাইনাল ম্যাচ। কিন্তু শিহাবের অবস্থা খুবই খারাপ ছিলো। আর রাতে তো রুমে থেকে বেরই হবে না। তাই সাথে রাফি এবং শান্তকে নিয়ে যাবে বলে ভাবে। তারাও শিহাবের অবস্থা দেখে রাজি হয়ে যায়। খাওয়া দাওয়া সেরে নিলো দুপুরের। এবং একসাথে আড্ডা মারলো বসে। রাতের বেলায় বের হয় তিনজনই।
.
ম্যাচ শুরু হবে ১১:৩০ টায়। খেলা শেষ হয়। পরে বন্ধুরা মিলে খেলতে থাকে। খেলা শেষ হতে ১২:৩০ টার মতো বেজে যায়। শিহাবতো ভয় পাচ্ছে এবং বলছে মেসে ফিরবেই না এত রাতে। এইদিকে আবার রাফি অনেক আগে চলে গেছে। একটা জরুরি ফোনে রাফি খেলার মাঠ থেকে চলে আসে।
.
পরে শান্ত আর শিহাব মেসে ফিরবার জন্য রওনা দেয়। মেসে ফিরার রাস্তা ছিলো দু'টো। একটা রাস্তা ছিলো কবরস্থানের পাশের রাস্তা দিয়ে যেতে হতো। আর অন্য রাস্তাটা ছিলো মাটির রাস্তা। রাত বেশি হওয়ার কারণে তাড়াতাড়ি মেসে ফিরার জন্য কবরস্থানের পাশে যে রাস্তাটি ছিলো। সেই রাস্তা দিয়ে আসার জন্য শান্ত বলে। কিন্তু শিহাব মানছে না। কোনো মতেই শিহাব ঐ রাস্তা দিয়ে ফিরবেনা।

.
আর অন্য রাস্তাটি ছিলো মাটির রাস্তা। ঐ রাস্তা দিয়ে মেসে ফিরতে একটু দেড়ি হয়। শিহাবের অনুরোধে মাটির রাস্তা দিয়ে যেতেই রাজি হয় শান্ত। কিছুপথ যেতেই দেখতে পায় রাস্তার মধ্যে অনেক পানি। আর শান্ত কোনোমতেই পানির মধ্যে দিয়ে যাবেনা। তাই শিহাবের সাথে রাগ করেই কবরস্থানের পাশের রাস্তা দিয়ে যেতে লাগলো। আর শিহাব ও পানি পাড় হয়ে মেসে ফিরে যেতে লাগলো।
.
শান্ত কবরস্থানের পাশে রাস্তায় চলে যায়। এবং তার মনের ভেতর একটু একটু ভয় অনুভব করতে থাকে। শিহাবের সাথে ঘটে যাওয়া কাহিনীটি শান্ত'র মনে পড়ে যায়। শান্ত ভয়ে কবরস্থানের দিকে তাকাচ্ছিলো না। কিন্তু কিভাবে যেনো চোখ পড়ে যায় সেখানে। এবং দেখতে পায় সাদা কাপর পড়া কাউকে।
.
🔥(চলবে)🔥
.
.
লেখাঃ হৃদয় নাদিম