👸 বউ পাগল 👸

দুই বছর হলো আমাদের বিয়ে হলো। এই দুই বছরে একে অপরকে ছাড়া একদিনও থাকি নাই। ভবিষ্যৎ এ সে বিহীন থাকার ইচ্ছেও নাই। নিজের ইচ্ছেতেই বিয়ে করি আমরা।  আমাদের রিলেশন ছিলো ৫ বছর। রিয়ার বাসায় কিভাবে জানা-জানি হয়ে গেলো। ওহ হ্যা আমার বউয়ের নাম রিয়া। খুব বেশি ভালবাসি দু'জন দু'জনাকে। রিয়াদের বাসায় জানা-জানি হওয়ার পর থেকে বাসা থেকে আমাদের রিলেশন মেনে নেয়নি।
.
অন্য কারো সাথে বিয়ে ঠিক করে রিয়ার। কিন্তু আমাদের রিলেশন ছিলো আমাদের নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধেই যেটা বলে ধারনা করা যেতে পারে। আমাদের রিলেশন এ যাবার আগে আমরা কুরআন ছুঁয়ে ওয়াদা করেছিলাম যে বাঁচতে হলে একসাথে বাঁচবো আর নাইলে এক সাথে মরবো।  অবশেষে আল্লাহ্‌ তা আলা আমাদের হেদায়েত দিয়েছেন যার ফলে আমরা এতটা দূরে আসতে পেরেছি।
.
যাইহোক এখন আসল কথায় আসি। যখন রিয়ার বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে তখন আমি ছোট খাটো একটা জব করি। যা বেতন পেতাম ওইটা আমার নিজেরই হতো না।
হ্যা আমার পরিচয়টা দেই তাহলে। ছোট্ট একটা গ্রামে বাস করতাম। আমি,  মা-বাবা,  আর ছোট এক বোন। পরিবারের বড় ছিলাম বলে সব কিছুই আমার উপর দিয়ে যেতো। 
.
যাইহোক এইচ এস সি পাশ করার পর আর পড়া হয়নি। কারণ ২০১০ এ আমার বাবা আমাদের ছেড়ে বহুদূরে চলে যান।  তারপর পরিবারের সব দায়িত্বটা আমিই মাথায় নেই। জবের জন্য ঘুরা-ঘুরি করতে করতে একটা সময় ছোট একটা জব পেয়ে গেলাম। বেতনটা একটু কম ছিলো।
.
প্রথম বেতন পেলাম মা আর রিমির জন্য কিছু কেনাকাটা করে নিয়ে গেলাম। আর ৫ হাজার টাকা মার হাতে দেই। ঐটা ছিলো আমার রোজগারের প্রথম টাকা। এইভাবে কেটে গেলো ১ বছর। জবের পেমেন্ট টা একটু বেড়ে গেলো।  এখন গ্রামের কিছু জমি-জমা ছিলো ঐ টুকু বেচে ঢাকায় এসে বসবাস শুরু করলাম। আমার জবটাও ট্রান্সফার হয়ে ঢাকায় এসে পড়লো যার কারণে ঢাকায় এসে পরলাম।
.
আমার জবটা ছিলো ওয়ালটন শো রুমের। ভালই লাগছিলো জবটা খুব পছন্দের ছিলো বলে জবটা আর ছেড়ে দেইনি।
হঠাৎ একদিন এক মেয়ে আসলো আমাদের শো রুমে।
.
- আচ্ছা নতুন মডেলের কি কোন কিছু আসছে ?
- হ্যা ম্যাম। অনেকগুলাই নতুন এসেছে। কয়েকটা মোবাইল দেখালাম।
- তার একটা পছন্দ হলো। আচ্ছা এটার প্রাইজ কতো?
- ম্যাম প্রাইজটা দেওয়া আছে দেখে নিন।
- ওহ সরি দেখতে পাইনি।
- ওহ আচ্ছা নো প্রোব্লেম ম্যাম।
- আচ্ছা এইটা প্যাক করে দিন।
- ওকে ম্যাম।
.
পরে ফোনটি মেমো করে তার হাতে দিয়ে দেই। সেইদিন আর তার নাম জানা হয়নি। সে চলে গেলো। এর দুইদিন পর আবার আসলো সে।
.

- এক্সকিউজ মি!
- হ্যা বলেন।
- ফোনটা প্রোব্লেম করতেছে দেখেনতো একটু।
- আচ্ছা। সরি ম্যাম প্রোব্লেম এর জন্য।
- ইটস্ অকে। ফোনটা চেঞ্জ করে দিন।
- সরি ম্যাম এটা একটাই ছিলো। ১ সপ্তাহের মধ্যে আসবে। আপনি চাইলে অন্য একটা নিতে পারেন ।
- না না। আমার এই ফোনটাই অনেক পছন্দ হয়েছে।  আচ্ছা যখন আসবে আমাকে একটু জানাবেন। আপনার কন্টাক্ট নম্বরটা দিন । আমি আপনাকে কল দিয়ে জেনে নিবো।
- জ্বি অবশ্যই। ০১৯৮৯....৩৭।
- ধন্যবাদ।
.
উনি চলে গেলেন নম্বরটি নিয়ে। আমিও আমার ডিউটি শেষ করে বাসায় চলে গেলাম। খাওয়া শেষ করে ঘুমাতে যাবো।  তখন আমার মোবাইলে অচেনা নম্বর থেকে একটা মেসেজ আসলো। মেসেজটা ছিলো  "এটা আমার নম্বর "  পরে বুঝলাম সে। ৫ দিন পর ফোনটা আসে আমাদের শো রুমে। তাকে কল করলাম। সে এসে ফোন নিয়ে গেলো।
.
ঐ দিন রাতে আবার ফোন দিল সে আমাকে। মাঝে মাঝে কথা বলতাম। একটা সময় ভাল লেগে যায় কথা বলতে বলতে। তো ঐ দিন আমি তাকে দেখা করার জন্য বলি। সেও রাজি হয়ে গেলো। আমার চিন্তা ভাবনা ছিলো তাকে প্রোপোজ করবো।
.
প্রথম দেখা করলাম একটা রেস্টুরেন্টে। অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি একটু পর সে আসলো। এসে বসলো আমার বিপরীত পাশে। আর আমি তো তাকিয়েই আছি।  সে একটু লজ্জা পেয়ে গেলো। আমিও নিচে তাকিয়ে থাকলাম।
.
- আচ্ছা কেমন আছেন? 
- হ্যা অনেক ভাল। আপনি?
- আমিও।
.
তারপর দু'জনে কিছু খেয়ে নিলাম। এখন কিভাবে কথাটা বলবো ভাবতেছি। আমার বলার আগেই সে বলে ফেললো।
.
- হৃদয় আমি আপনাকে লাইক করি।
- হোয়াট??? একটু ভাব নিয়ে বললাম।  মনে মনে আমিও তো অনেক হ্যাপি।
- যা শুনছেন ঐটাই।
- ওহহহ। 
- আপনার উত্তরটা তো জানতে পারলাম না।
- ওকে পরে বলবো। এখন উঠি চলেন। 
- ওকে।
.
রিয়াকে তাদের বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে আসলাম। ঐ রাতে কথা হলো আবার। আমিও জানাই তাকে আমার সম্মতির কথা। এইভাবেই কেটে গেলো আমাদের রিলেশনের ৫ টি বছর। সবশেষে রিয়া তার ফ্যামিলি ছেড়ে আমার কাছে চলে আসে। অনেক কিছুই ঘটেছিল। কিন্ত কোনো ভাবেই রিয়াকে আমার কাছ থেকে নিয়ে যেতে পারেনি। আর উপর আল্লাহ্‌ ছাড়া আর কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না। এটা আমাদের বিশ্বাস।
.
 অনেক সমস্যার মধ্যে পরেও বিয়েটা সম্পূন্য ভাবে হলো। রিয়া আমার বউ হয়ে গেলো সে'দিন। অনেক ইচ্ছে ছিলো এই দিনটা দেখার জন্য।  যা আল্লাহ্ রহমতে দিনটা দেখতে পেয়েছি। এখন শুরু হলো আমাদের নতুন জীবন। রিয়াকে আমার ফ্যামিলির সবাই পছন্দ করেছে। আমি এটাই চেয়েছিলাম যে এমন কেউ আসুক যে আমার ফ্যামিলিকে তার নিজের ফ্যামিলি মনে করবে। অবশেষে তাই পেলাম।
.
এইভাবেই চলতে থাকে আমাদের জীবন। কিছুদিন আগে খুশির সংবাদ শুনেছি। সবার দোয়া আশা করছি তার জন্য। আর আমি আমার বউয়ের জন্য পাগল আর সে আমার জন্য পাগল। আর এখন রিয়ার বাসার সবাই আমাদের  সম্পর্কটা মেনে নিয়েছেন। ভালবাসিরে বউ তোকে অনেক বেশি। আজ আমাদের বিবাহ বার্ষিকী।
.
এইটা কোনো কাল্পনিক গল্প নয়। এটা আমার দেখা একটা অসমাপ্ত জীবনের গল্প। বেঁচে থাকুক ভালবাসা বেচে থাকুক ভালবাসার মানুষ গুলো।
.
📝হৃদয় নাদিম