রাজকন্যা (৮ম পর্ব)



রাত একটু বেশিই হয়ে যায় তাই আর বাসায় আসিনি। শ্বশুর বাড়িতে থেকে গেলাম থুক্কু তখনো শ্বশুর বাড়ি হয়নি। হ্যাঁ আমার রাজকন্যার জন্য আমার পছন্দ মতো নীল রংয়ের শাড়ি কিনে ছিলাম। এমনিতে ও শাড়ি পড়তে পারতো না কিন্তু সে'দিন খুশিতে শাড়ি পড়ে আমার কাছে আসে। আমার আবার শাড়ি পরা মেয়েদের খুব ভাল লাগে। এই নিয়া অনেক মজার ঘটনাও ছিলো যা না বলাই থাকুক।
.
- কেমন লাগছে?
- কে আপনি?? 
- আমি কে মানে?
- মানে তুমি কি আমার রাজকন্যা??
- খুব বাজে লাগছে তাই না?
- আগে বলো তুমিই কি আমার রাজকন্যা?
- না তোমার পেত্নী।
- আমি চোখ নামাতে পারছি না। এই তুমি এখন থেকে শাড়ি পড়ে থাকবে সবসময়।
- কেনো এত পেত্মী দেখার কি দরকার।
- এই কে বলেছে আমার বউ পেত্মী? আমার বউ পরী নীল শাড়িতে তোমাকে নীল পরী লাগছে। <তার হাত ধরে কাছে টেনে এনে বললাম >
.
- উঁহুম উঁহুম....

হালকা কাঁশি দিয়ে স্বরন করে দিলো আকাশ। যে আমাদের পাশেই আছে আকাশ। তাই আর আদর নিতে পারলাম না আমার রাজকন্যার কাছ থেকে। তবে সত্যি বলতে শাড়িতে ইভাকে অনেক সুন্দরী লাগছিলো। আসলে মেয়েদের আসল রুপ শাড়ি পরলেই বোঝা যায়। শাড়িতে ইভাকে বউ বউ লাগছিলো। নীল রং টা ছিলো আমার খুব পছন্দের।
.
- এখন চেঞ্জ করে ফেলি??
- কেনো? ভাল লাগছে তো অনেক।
- রাত বাজে দেড়টা। সবাই ঘুমাচ্ছে আর তুমি পাগলামি করছো। তোমার পাগলামির জন্য আকাশ ভাইয়াও ঘুমাতে পারছে না।
- কিরে ঘুমাবি এখন?? মাথায় থাপ্পড় দিয়ে বললাম। 
- তোদের প্রেম শেষ কর। তোদের প্রেম করা শেষ হলে আমাকে বলিস। কান থেকে ইয়ার ফোন খুলে ফেলবো তাহলে। ফুল বলিউমে গান শুনতেছি ৪০ মিনিট ধরে। আমার কান গরম হয়ে গেছে।
- শালা কানের সাথে সাথে চোখটাও তো একটু বন্ধ করতে পারিস।
- বিয়ে কর আগে। তারপর যা হওয়ার হবে এখন নয়।
.
আমাদের কথা শুনে লজ্জা পেলো ইভা যেটা তার মুখের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারলাম। আমি আকাশের কানে কাছে ফিস ফিস করে বললাম রুমের বাহিরে যেতে।পরে চলে গেলো রুমের বাহিরে। যাওয়ার সাথে সাথেই ইভা আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি তার মাথায় কিস করি।
.
- এই পাগলি কি হয়েছে তোমার?
- কি হয়েছে জানিনা কিন্তু তোমাকে কখনো হারাতে দিবো না।
- তোমাকে ছেড়ে কোথাও গেলে তো।
- আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি রিয়াদ।
- আমি কি বাসি না?? 
- হুমম বাসো তো। কিন্তু সবসময় এরকম করে ভাল বাসবে তো?
- এর চেয়ে আরো অনেক বেশি বাসবো ভাল তোমায়।
- আচ্ছা। দেখা যাবে। 
- উম্মাহ....
- আমি করবো?? 
- না না তোমার করতে হবে না।
- কেনো?? 
- লিপ্সটিক লাগবে পরে আকাশ দেখে ফেললে লজ্জা লাগবে।
- আহা কি লজ্জা পায় আমার লজ্জাবতী জামাইটা।
- লজ্জা পাওয়াই ভালো।
- তাই না??  আচ্ছা তাহলে....
.
লিপ্সটিক লাগিয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে গেলো রুম থেকে। এখন শুধু গালে নয় ঠোঁট ও লাল করে দিয়েছে পাগলিটা। এমন পাগলামিটা বিয়ের পর থাকলেই হবে। কি আর করার সে'দিন ও ধরা খেলাম আকাশের কাছে। তবে লজ্জা পাইনি তখন কেনো জানি।
.
ঘুমিয়ে পড়লাম একটু পরই কারন জার্নি করে সবাই ক্লান্ত ছিলাম। ঘুমানার সাথে সাথেই কি সকাল হয়ে যায়??  তা আজো বুঝতে পারলাম না আমি। চোখ বুঝতে না বুঝতেই সকাল হয়ে গেছে। ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে নেই। সকাল সকালই এসে পরি তাদের বাসা থেকে। কারন আমাদের একটা টিম ছিলো ফুটবল খেলার।
.
দিনটা ছিলো শুক্রবার। বাসায় গিয়ে তৈরী হয়ে নিলাম নামাজের জন্য। জুম্মা নামাজ পড়ে নিলাম। আসার সময় এক রিক্সার সাথে বারি খেয়ে পড়ে যাই।হাতে একটু ব্যাথা পেয়েছিলাম। আমার কাছে একটুই মনে হচ্ছিলো কিন্তু বাসায় যাওয়ার পর আম্মুর অবস্থা দেখে মনে হয়েছিলো অনেক বড় এক্সিডেন্ট করেছি। পরে ডক্টরের কাছে গেলাম ইয়া বড় এক ঔষুধের লিস্ট ধরিয়ে দিলো। যা খেতে পারিনা তাই নাকি এক সপ্তাহ খেতে হবে।
.
যাইহোক কিভাবে যেনো ইভা জানতে পেরেছে আমার এক্সিডেন্টের কথাটা। ফোন করে কান্নাকাটি শুরু করে দিলো।  বিকেলে আকাশের সাথে আমাদের বাসায় আসবে ইভা। কিন্তু আমি জানতাম না যে ইভাও আসছে। না আসলে হয়তো এত সমস্যা হতো না আমার বাসায়।
আমার রুমে আমি, আম্মু,ভাবি আর আমার ভাতিজাটা ছিলো। আমাকে জ্ঞান দিচ্ছিলো আর আমি শুনছিলাম।
.
হ্যাঁ ভাই জানেনই তো মায়ের জ্ঞান দেয়া মানে কি? কিন্তু আমার ভালর জন্যই তো জ্ঞান দিচ্ছিলো পরে বুঝতে পারলাম। হাতে ব্যান্ডেজ নিয়ে বসে আছি রুমের ভেতরে। আবার শেষ মেষ ডান হাতেই ব্যাথা পেয়েছিলাম। দুপুরের আর খাওয়া দাওয়া হলো না ভাল মতো। আম্মু একটু খাইয়ে দিছিলো।
.
অবশেষে রাজকন্যা আমার রুমে প্রবেশ করলো। তাকাতেই যেনো একটা শক খেলাম। শক খেয়েছিলাম এর কারনেই যে মা'কে কি বলবো। যখন জিজ্ঞাসা করবে ইভার কথা। হ্যাঁ রাজকন্যা আমার দিকে তাকাতেই চোখ বিজিয়ে দিলো। বলতেও পারছি না কিছু তাকে। একটু পরে আকাশ মায়ের সাথে কথা বলে। এবং মা আমার রুম থেকে অন্যরুমে যায়। আর আকাশকে বলে যায় আমাকে মানুষ করার জন্য। আমি বুঝিনা আমাকে মানুষ করার দায়িত্ব শুধু আকাশকেই দেয় কেনো? 
.
- খুব ব্যথা পেয়েছো তাইনা??< চোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়ছিলো>
- না বেশি লাগেনি। সামান্য একটু।
- চুপ থাকো তো। দেখে শুনে চলতে পারে না স্টুপিডটা। যদি কিছু হয়ে যেতো তোমার?
- কিছু হবে না আমার।
.
অন্যদিকে ভাবি ইভার পাগলামি দেখে হাসছিলো। ইভা খেয়াল করিনি যে ভাবিও পাশে ছিলো। পরে আর কি? ভাবি বুঝে গেলো সব কাহিনী। পরিচয় করিয়ে দিলাম ইভাকে ভাবির সাথে।ভাবিও বলে উঠলো যে আমি দুপুরে খাইনি। বলার সাথে সাথে কয়েকটা ঝাড়ি শুনে ফেললাম ইভার কাছ থেকে। ভাবি প্লেটে করে খাবার দিয়ে গেলো আমাকে। এবং ভাবি ইভাকে ইশারা করে বললো আমাকে খাইয়ে দেয়ার জন্য।
.
কি আর করার খেতে ইচ্ছে করছিলো না তবুও খেলাম। তাও আবার আমার রাজকন্যা আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে। আফসোস আমি খায়িয়ে দিতে পারিনি। কান্না করে চোখ লাল করে ফেলছে একেবারে।
.
- এভাবে পিচ্ছিদের মতো কেউ কান্না করে??
- তুমি চুপ করো। আগে খেয়ে নাও পরে কথা বলবে।
.
কি আর করার তার এক দমক শুনে চুপ হয়ে গেলাম। পরে খাওয়া দাওয়া শেষ হলো। বুঝতে পেরেছি যে ইভাও খায়নি দুপুরে। ভাবিকে ডাকলাম...
.
- হুমম বলো রিয়াদ।
- আমি খাইনি বলে আমাকে খাইয়ে দিলো। কিন্তু সেও তো খায়নি এখন কে তাকে খাইয়ে দিবে??
- আহারে কি ভালবাসা আমার দেবরের। 
- হুমম। ওদের জন্য খাবার নিয়ে আসো।
- আচ্ছা।
.
অনেক বলে খাওয়াতে পারলাম তাহলে। জানতাম লজ্জা পাবে তাই আমার রুমেই খেতে বলছিলাম। অল্প একটু খেলো। ভাবির সাথে অনেকটা ফ্রি হয়ে গেলো ইভা। ভাবির পছন্দ হয়েছে ইভাকে তা বুঝতেই পেরেছি। আমি আবার ভাবির সাথে সব কিছুই শেয়ার করতাম। সন্ধ্যার হওয়ার আগে আগেই ইভাদের বাসায় চলে যায়।
.
রাতে মায়ের কাছে জবাব দিলাম সব প্রশ্নের।

- মেয়েটা কে?
- ইয়ে মানে,, মা ওর নাম ইভা।
- থাকে কোথায়? তুই কিভাবে চিনিস?
- আকাশের কাজিন। 
- ওহহহহহ আচ্ছা। মেয়েটা এমনিতে অনেক ভালই মনে হলো। 
.
কথাটা শুনে এত খুশি হয়েছিলাম তা বলে বুঝাতে পারবো না আমি। পরে ইভাকে ফোন করে বললাম। আম্মু তাকে পছন্দ করেছে। ইভাও খুশি হয়েছিলো কথাটা শুনে। রাত ৩ টা পর্যন্ত কথা বলি ইভার সাথে। ফোনের মধ্যেই একশ টা উম্মাহ দিয়ে ফেলেছে। পাশে থাকলে যে কি হতো। কিন্তু খুব ভালবাসি দু'জন দু'জনাকে।
.
.
.
📝  Ridoy Nadim (((AR PagLaaa)))

Comments