রাজকন্যা (৩য় পর্ব)


বাহিরে খুব ঠান্ডা ছিলো শীতের সময় বলে কথা। হাটছিলাম রাস্তা দিয়ে আর কাঁপতে ছিলাম আমি আর আকাশ।আকাশদের বাসা থেকে অনেক দূরে চলে গেলাম। ঐখানে দেখলাম অনেক গুলা খেজুর গাছ। আমি আর আকাশ গাছের নিচে দাঁড়িয়ে রইলাম। গাছ গুলো তেমন বড় নয় যার কারণে রসের হাড়ি নিতে বেশি কষ্ট হয়নি। আমি গাছে উঠতে পারতাম না কিন্তু আকাশ পারতো। তাই আকাশ গাছে উঠলো আমি মোবাইলের ফ্লাস জালিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম গাছের নিচে।
.
রাত তখন সাড়ে ১০ টা বেজে গেছিলো। আমি এমনিতে অনেক ভীতু ছিলাম। ভয় পাচ্ছিলাম বলে আকাশ আরো বেশি করে ভয় দেখাচ্ছিল আমাকে। পরে গাছ থেকে রস নিলাম। আমি আর আকাশ দুই হাড়ি রস খেয়েছি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে। রস খেয়ে সুন্দর মতো হাড়িটা আবার গাছের মধ্যে রেখে দিলো আকাশ।এবং আমি বললাম বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। পরে অন্য গাছ থেকে এক হাড়ি রস নিয়ে নিচে নেমে আসলো আকাশ। তখন হাড়ি সহ নিয়ে আসতে ছিলাম। ভয় পাচ্ছিলাম না হাতে সিগারেট ছিলো বলে। কারন আমি একটু বেশি ভীতু ছিলাম তাই সিগারেট আর ম্যাচ সাথে করে নিয়ে ছিলাম।
.
বাসায় যেতে যেতে সাড়ে এগারোটা বেজে গেলো। কেউ ঘুমায়নি তখন। আমি আর আকাশ হাত মুখ ধুয়ে রুমে গেলাম। আন্টির কাছে রসের হাড়িটা দিলো আকাশ। আন্টি বুঝে গেছিলো যে আমরা রস চুরি করে এনেছি। কি আর করার এখন বুঝেই তো গেলো। ইভাকে দেখতে পাচ্ছিলাম না তখন। ইভাকে দেখার জন্য রুমে উকি দিচ্ছিলাম কিন্তু দেখতে পেলাম না। একটু পর ডিনার করতে বসলাম খাবারের টেবিলে সবাই তখন ইভাকে দেখতে পেলাম। আহ দিলটা শান্তি হয়ে গেলো ইভাকে দেখার পর। খেয়ে নিলাম রাতের খাবার।
.
মোবাইলে চার্জ ছিলো না তাই বন্ধ করে চার্জে দিয়ে বাহিরে যাই।মোবাইল চালু করতেই দেখি বাসা থেকে কল করেছিলো অনেক গুলো। অটো রিপ্লাইয়ের মেসেজ এসে পড়লো। পরে সাথে সাথে কল করলাম বাসায়। কথা বললাম আম্মু-আব্বুর সাথে। নানান প্রশ্নের জবাব দিতে হলো। কেনো মোবাইল অফ ছিলো, কোথায় গিয়েছিলাম, ডিনার করেছি কিনা, রাতের বেলা বের হবি না রুম থেকে ইত্যাদি আরো অনেক প্রশ্ন। আমি শুধু তাদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলাম আর হুমমম হুমমম করছিলাম। কথা শেষ করলাম এখন শুয়ে পড়বো। ঘুম আসে নাই তবুও শুয়ে শুয়ে গান শুনবো। ফেসবুকে আর লগ ইন করতে পারলাম নেটওয়ার্ক এর কারনে। আমি বাংলালিংক সিম ইউজ করতাম।কিন্তু ঐ খানে বাংলালিংকের নেট নাই বললেই চলে।
.
আমি আর আকাশ এক রুমে থাকলাম। ঘুম আসছিলোনা তাই আগামীকাল কি কি করবো ঐ গুলো নিয়ে কথা বলছিলাম।আর সাথে ইভাকে নিয়েও ভাবছিলাম। মনে মনে ভাবছি ইভাকেও আমাদের সাথে নিয়ে যাবো। কেনো যানি ইভাকে ছাড়া কিছুই বুঝতেছিলাম না। সব কিছুতেই শুধু ইভাকে নিয়ে ভাবতাম। রাত ২ টা বেজে গেলো কিন্তু আমাদের চোখে ঘুম নাই। আমি আকাশকে বললাম...
.
- দোস্ত ঘুম আসছে নারে।
- আমারও রে। 
- শুধু ইভার কথা মনে হচ্ছে। 
- হো তোর তো এখন ওর কথা মনে হবেই। প্রেমে পড়ছো নতুন হবে না।
- হুমমম। শালা বুঝেছিস তাহলে।
- আয় বাহির থেকে হেটে আসি।
- মাথা খারাপ। রাত বাজে ২ টা আর এখন বাহিরে যাবো।
- তুই এত ভীতু কেনো?? 
- ভীতুই ভাল। এত সাহসী হয়ে কি হবে?
- ইভার সাথে কথা বলবি? যদি বলতে চাস তাহলে বাহিরে যেতে হবে। যাবি? 
.
এইবার আর না করতে পারলাম না। সাথে সাথে বাহিরে এসে পড়লাম। তখন সাহস মনে হয় বেড়েই গেছিলো আমার। আকাশ ইভা কে কল দেয় কিন্তু রিসিভ করলো না। ইভা, তার ছোট বোন এবং আন্টি এক রুমেই ছিলো। মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছে তাই কল রিসিভ করেনি। কপাল খারাপ হলে যা হয় তাই হলো। রাতে আর কথা বলা হলো না ইভার সাথে। আমি আকাশকে বকা বকি করছিলাম...
.
- শালা তোর জন্য শীতের মধ্যে বাহিরে আসলাম 
- আমার জন্য বাহিরে আসছোত?? নাকি আমার বোনের সাথে কথা বলার জন্য আসছোত?
- কই কথা তো বলতে পারলাম না। হুদাই আসলাম।
- হো এখন তো সব দোষ আমার। যার জন্য চুরি করি সেই বলে চোর। 
- হো। ঘুমে ধরছে রুমের ভেতরে যামু আয়।
- তুই যা। আমি একটু কাজ সেরে আসছি।
- যাহ তাড়াতাড়ি কর। আমি দাঁড়ালাম এখানে। 
.
পরে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। আমার আবার ঘুমানোর সময় কোলাবালিশ লাগে। কোলবালিশ ছাড়া ঘুম আসেনা তাই আকাশকে কোলাবালিশ হিসেবে ব্যবহার করলাম ঐ দিন।ঘুমিয়ে পড়লাম তখন।
.
- আচ্ছা তোমার হাতটা ধরতে পারি??  
- হ্যাঁ অবশ্যই। 
- তোমার হাত এত ঠান্ডা কেনো?? 
- জানিনা তো। <হাসছিলো আমার কথা শুনে> 
- অনেক ভালবাসি তোমায় 
- আমিও। 
- আচ্ছা ইভা.. 
- হুমমম বলো। 
- না কিছুনা। 
- আচ্ছা সবসময় আমাকে ভালবাসবে তো?  
- হ্যাঁ বাসবো। 
- এই হাত কখনো ছাড়বে না তো?  
- না কখনো ছাড়বো না।
.
আমি আর ইভা হাটছিলাম হাত ধরে। কি যে ভাল লাগছিলো বলে বুঝাতে পারবোনা। বাদাম ওয়ালা বাদাম বিক্রি করছিলো রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে। ইভা বায়না ধরলো বাদাম খাবে। বাদাম নিলাম বিশ টাকার আমার আবার বাদাম পছন্দের নয়। কিন্তু ইভার অনেক পছন্দের ছিলো বাদাম। তার জন্য সেদিন বাদাম খেলাম ইভা আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে আমি তাকে খাইয়ে দিচ্ছিলাম।
.
- ঐ বেটা উঠ।
- কি হইছে?
- ঘুম থেইক্কা তাড়াতাড়ি উইঠা ফ্রেশ হয়ে নে। বাজারে যেতে হবে। 
- ধুররর হালা।
.
মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো। তার মানে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম?? আকাশের জন্য এত সুন্দর স্বপ্নটা ভেঙে গেলো। ঘুম থেকে উঠে পড়লাম ফ্রেশ হয়ে নিলাম। তারপর আকাশ আর আমি বাজারে গেলাম। হাসি পাচ্ছিলো স্বপ্নের কথা মনে করে। কাল রাতে ইভা কে নিয়ে ভাবছিলাম বলেই ঘুমের মধ্যেও সে আসছিলো। পরে বাজার করে নিয়ে আসলাম বাড়িতে।
.
বাসায় এসেই ইভার মুখে 'শুভ সকাল' শুনলাম। তাকে দেখে প্রাণটা জুড়ে গেলো। বুঝিনা ইভা আমাকে দেখে এভাবে মুচকি হাসে কেন। এমনিতেই তার প্রতি ক্রাশ হয়ে রইছি। তার মাঝে মুচকি হাসি দেখলে বুকের মধ্যে চিনচিন ব্যাথা শুরু হয়ে যায়।সকালের নাস্তা হোটেল থেকে করে আসছিলাম। কিন্তু বাসায় এসে আবার করলাম কারন এই ফাঁকে ইভাকে দেখতে পারবো।
.
- এই এইভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন?? 
- কই কিছু না তো। 
- কিছু একটা তো দেখতেছিলেন। 
- আপনাকে। 
- মানে বুঝলাম না। 
- না কিছু না। 
.
বলে উঠে এসে পড়লাম। একটু লজ্জা পেয়েছিলাম তার কথা শুনে। পরে আমি আর আকাশ নদীতে গোসল করলাম। আমি কাছা-কাছি ছিলাম কারন এমনিতেই সাঁতার পারিনা তাই। পরে গোসল শেষ করে রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম। বেশি ঘুমাতে পারিনি ইভার ডাকে ঘুম ভেঙে যায়।
.
.
.
📝 Ridoy Nadim (((AR PagLa)))

Comments