- কি করছো রিপা?
- কিছু না। কিন্তু আপনি আমাকে তুমি করে বলছেন কেনো? আমি তো আপনাকে তুমি করে বলার অধিকার দেইনি।
- দেখো রিপা তুমি আমার বিবাহিত বউ। আর তোমাকে তুমি করে বলার আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে।
- বউ মানে? আপনার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে ঠিকই কিন্তু আমি আপনাকে আমার স্বামীর অধিকার দিতে পারবো না।
- এটা কেমন কথা? পারিবারিক ভাবেই তো আমাদের বিয়ে হয়েছে। যদি আমাকে বিয়ে করার তোমার দ্বিমত হয়ে থাকে তাহলে আগে কেনো বলোনি?
- আপনিও তো আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করেননি। যাকে বিয়ে করছেন তার ব্যাপারে অবশ্যই আপনার জানা দরকার ছিলো।
- কেনো তুমি কি রাজি ছিলে না?
- নাহ্। ছিলাম না। বাবা-মা'কে খুশি করার জন্যই বিয়েটা করতে হয়েছে। আর দয়া করে আমাকে একা থাকতে দিন। আমি চাইনা আপনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক থাকুক।
.
কথা গুলো বলেই রুম থেকে চলে যায় রিপা। আর অন্যদিকে তার বলা কথা গুলো ভাবতে থাকে রাজ। পারিবারিক ভাবেই তাদের বিয়েটা হয়। তিন মাস হয়েছে তাদের বিয়ের বয়স। এই তিন মাসে রিপার আচরণ মোটেই ভাল লাগছে না রাজের।
.
দিপা নামের এক মেয়েকে খুব ভালবাসতো রাজ। দিপাও খুব ভালবাসতো। কিন্তু তাঁদের ভালবাসার সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়ায় দিপার বাবা-মা। পাত্র হিসেবে রাজ খারাপ ছিলো না। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ানোর একমাত্র কারণ হলো তাদের ধর্ম।
.
রাজ মুসলিম ধর্মের ছিলো। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতো। যথেষ্ট মেনে চলতো নিয়ম গুলো। রাজ তার পরিবারের একমাত্র ছেলে। মা-বাবা'কে নিয়ে খুব সুন্দর ভাবেই জীবন কেটে যাচ্ছিলো। বাসায় দিপার কথা জানায়। তখন পর্যন্তও রাজ দিপার সম্পর্কে ভাল মতো জানতো না।
.
আর অন্যদিকে দিপা হিন্দু ধর্মের ছিলো। কিন্তু রাজকে প্রথম দেখাতেই তার ভাল লেগে যায়। তাই তার ধর্মটা গোপন রাখে। মিথ্যে বলেছিলো রাজকে। কারণ দিপা জানতো রাজ কখনই মেনে নেবে না। তাই তাকে মিথ্যে বলে।
.
কিন্তু সত্য কখনো চাপা থাকে না। তাঁদের সম্পর্কের কথা যে কোনো ভাবেই জেনে যায় দিপার মা-বাবা। তাঁদের এক বছরের সম্পর্ক নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। আর এই শেষ হওয়ার একমাত্র কারণ হলো দিপার মৃত্যু।
.
সম্পর্ক যেনে যাওয়ার পর বাসা থেকে বিয়ের কথা বলে দিপাকে। কিন্তু দিপা রাজকে এতোটাই ভালবাসতো যে অন্য কাউকে নিয়ে সংসার করার কথা মানতে পারেনি। তাই দিপা আত্তহত্যাকে
বেছে নেয়। দিপার লেখে যাওয়া শেষ কথা ছিলো,
" যদি একসাথে বাঁচতেই না পারি
তাহলে বেঁচে থাকার কোনো মানেই হয় না"
.
ঐ দিন রাতেই সে পৃথিবী ছেড়ে চিরকালের জন্য চলে যায়। আর এভাবেই শেষ হয়ে যায় দিপা এবং রাজের ভালবাসা।
.
রাজ মানসিক ভাবেই ভেঙে পড়ে। কখনো ভাবেনি যে, এভাবেই নষ্ট হয়ে যাবে তাঁদের ভালবাসা। মা-বাবার অনেক বলা-বলির পরেই রাজ রাজি হয় রিপাকে বিয়ে করার জন্য। রাজ প্রথমত দ্বিমত হলেও তার মা-বাবাকে খুশি করার জন্যই বিয়ের পিড়িতে বসে।
.
হঠাৎ পিছন থেকে তার মায়ের কথা শুনে পিছু ফিরলো,
- বাবা বৌমাকে নিয়ে কোথাও বেড়াতে যা। মেয়েটি বাসা থেকে বেরই হয় না। তুই কালই বৌমাকে নিয়ে তোর শ্বশুর বাড়িতে যা।
- কিন্তু মা...
- কোনো কিন্তু নয়। তুই ছুটি নিয়ে নে অফিস থেকে।
-
আচ্ছা ঠিক আছে।
.
মায়ের কথা গুলো ঠিক আছে কিন্তু রিপা কি রাজি হবে? আর তার সাথে তো ভাল করে কথাই হয়না। বলে দেখা যাক! কি হয়।
.
অনেক বিনতি করার পর রিপা রাজি হয় যাওয়ার জন্য। এর পরের দিনই যাবার জন্য তৈরি হচ্ছে। বাসে উঠে বসলো। জানালার পাশের সিট টা মনে হয় সব মেয়েদের জন্যই তৈরি হয়েছে। তারা জানালার পাশ ছাড়া বসতেই পারে না। সেও বসছে জানালার পাশেই। কোনো কথা বলছে না কেউ কারো সাথেই।
.
কিন্তু রিপা যে বাস ভ্রমণ করতে পারতো না সেটা রাজ জানতো না। কিছু পথ যাওয়ার পরই রিপা বমি করে। খানিকটা রাজের টি শার্টে এসে পড়ে। রাজ ব্যাগ থেকে পানির বতল বের করে রিপাকে দেয়। এবং রাজ নিজেই পরিষ্কার করে নেয়। এবং তার পরে থাকা টি শার্ট টি চেঞ্জ করে নিলো।
.
রিপা কিছুটা অসুস্থ বোধ করছিলো। তাই চোখ বুঝে ছিলো। কখন যে রাজের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে খেয়ালই করতে পারেনি। সূর্যের আলো জানালার ভেতর দিয়ে রিপার চোখে মুখে লাগছিলো। রাজ হাত দিয়ে রিপার চোখের উপরে রাখে যাতে রৌদ না লাগতে পারে। ঘুমান্ত অবস্থায় রিপাকে একেবারে নিষ্পাপ বাচ্চা লাগছে। এইসব কথা ভাবছে আর মিটিমিটি হাসছিলো রাজ।
.
পৌঁছে যায় বাস। বাস ব্রেক করাতে রিপার ঘুম ভেঙে যায়। এবং চোখ মেলে দেখতে পায় রাজের কাঁধেই তার মাথা। সাথে সাথে সড়িয়ে নেয় মাথাটা। এবং বাস থেকে নেমে যায়। রিক্সায় উঠে বাসার সামনে নামে। সবাই খুব খুশি তাঁদেরকে দেখে। বাসায় গিয়ে পৌঁছে অবশেষে।
.
সবার সাথে কথা বলে হাসি খুশি ভাবেই। এইদিকে লক্ষ্য করছে যে রিপার চোখে অর্ধ-ভংগীময় একটা ভাব রাজ বুঝে ফেলে। হয়তো বাসের ঐ ঘটনাটি রিপার মনের মধ্যে তার জন্য একটু ভালবাসা সৃষ্টি হয়েছে। রাজ তো বিষন খুশি মনে মনে।
.
যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। সবাই রাতে খাবার খেয়ে নেয় একসাথে বসে। খাওয়া শেষ করে ঘুমোতে যাবে। বিছানায় শরীর লাগাতেই সাথে সাথে ঘুমিয়ে যায় রাজ। বাস ভ্রমণ করে শরীরে ক্লান্তি বোধের কারণেই ঘুমিয়ে পড়ে তাড়াতাড়ি।
.
হঠাৎ মাঝে রাতে ঘুম ভেংগে যায়। রিপা জড়িয়ে ধরে আছে। রিপার শরীর গরমে পুড়ে যাচ্ছিলো। কপালে হাত দিয়ে দেখে খুব জ্বর। তারপর জলপট্টি দেয়। সারা রাত জেগে ছিলো রাজ এবং জলপট্টি দেয় রিপার কপালে।
.
সকালে রিপা ঘুম থেকে উঠে দেখে তার কপালে রুমাল। তারও বুঝতে আর কিছু বাকি রইলো না, যে কি হয়েছিলো।
রিপাও ভাবতে থাকে কথা গুলো। আসলেই রাজ তো খুব ভালবাসে তাকে। কিন্তু তার সাথে এরকম করে খুব অন্যায় হয়ে যাচ্ছে । নিজের ভুল বুঝতে পারে রিপা। রাজের দিকে তাকিয়ে হালকা একটা জোরে নিশ্বাস নেয়।
.
রিপা কিছুদিন এভাবে প্রতিনিয়ত মুগ্ধ হচ্ছে রাজকে দেখে। আস্তে আস্তে রিপার মধ্যেও ভালবাসা জন্মায় রাজের জন্য।
এইতো কিছুদিন পরের কথা,
.
- এই যে উঠেন, উঠেন তাড়াতাড়ি।
- হুমম < অনেকটা চমকে যায় রাজ >
.
চমকানোটাই স্বাভাবিক। রিপার কন্ঠ শুনতে পেয়ে উঠে বসে রাজ।
.
- যান উঠে ফ্রেশ হয়ে নিন। আমি নাস্তা টেবিলে রেখে দিয়েছি।
- আমি কি স্বপ্ন দেখছি? <আস্তে আস্তে বলে>
.
কিন্তু রিপা শুনে ফেলে।
.
- জ্বি না স্বপ্ন দেখছেন না। সত্যিই দেখছেন। এখন উঠেন তাড়াতাড়ি।
- আচ্ছা উঠছি।
.
ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করছে। আর ভাবছে রিপার কথা গুলো। রাজ খাবারের প্লেট নিয়ে রুমে আসে। দেখে রিপা বিছানা গুছাচ্ছে।
.
- রিপা
- জ্বি
- তুমি নাস্তা করেছো?
- না। একটু পর করবো আমি। আপনি খেয়ে নিন।
- তা কি করে হয়।
.
কাছে গিয়ে রিপার পাশে বসে। এবং নিজ হাতে খাইয়ে দেয়। এরকম মধুর ভালবাসা কোথাও পাওয়া যাবে না। রিপাও দুষ্টামির ছলে রাজের আঙুলে আস্তে করে কামড় বসিয়ে দেয়। হুমম এটাই ভালবাসা।
.
বেঁচে থাকুক এরকম হাজারো ভালবাসা। বেঁচে থাকুক ভালবাসার মানুষ গুলো।
.
.
.
Ridoy Nadim (((AR PagLaaa)))
Comments
Post a Comment