স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা



কানে ইয়ার ফোন লাগিয়ে রাস্তা দিয়ে গান শুনতে শুনতে যাচ্ছিল হৃদয়। তার পিছনেই একটা মেয়ে আস্তে আস্তে হেটে যাচ্ছিল। সময়টা ছিল শীতকাল। হৃদয় কিছুদিন হলো তার নিজের বাড়িতে এসেছে। হৃদয় হোস্টেলে থেকে পড়া লেখা করে। বছরে ২-৩ বার আসতো নিজের বাসায়। আসাটা ছিলো এরকম বৃহষ্পতি বার রাতে আসতো শুক্রবার রাতেই চলে যেতো হোস্টেলে।
.
- এই হৃদয়।
- কানে ইয়ার ফোন লাগানো থাকায়। শুনতে পারছেনা রুমির কথা।
.
আচ্ছা এখন রুমির ব্যপারে কিছু বলে রাখা ভাল। রুমি খুব ভাল একটা মেয়ে। দেখতে পরির মতো। খুব ভদ্র পরিবারের মেয়ে রুমি। রুমি হৃদয়কে অনেক আগে থেকেই চেনে এবং খুবই পছন্দ করে। কিন্তু হৃদয় রুমিকে চিনেনা। চিনবেই বা কি করে বেচারা তো তার বাসাতেই থাকেনা।
.
এবার একটু বেশি ছুটি নিয়েই এসেছে হৃদয়। কারণ পরিক্ষা শেষ হয়ে গেছে। তাই ১ মাস বন্ধ পেয়েছে তাই বাসায় এসেছে হৃদয়। হৃদয় তার সব বন্ধুদের সাথে দেখা করার জন্য সকাল সকাল বের হয়ে গেলো। কারণ তার ফ্রেন্ড সার্কেলটা একটু বড় ছিলো। আবার বছরের ১ বার দেখা করে একটু সময় তো লাগবেই তাই না।
.
_এই যে
_শুনছে না।
এবার হৃদয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো রুমি।
_কি ব্যপার ডাকছি শুনছো না নাকি!!
_ইয়ার ফোনের একটা খুলে জ্বি আমাকে কিছু বলছেন।
_না ভুতকে বলছি। কানের মধ্যে এইটা দিয়ে হাটছো কেন যদি বড় কোনো এক্সিডেন্ট ঘটে। তখন কি করবে?
.
কিছু বলার সাহস পেলোনা হৃদয়। কারণ কথাটা সত্য রাস্তা চলা চল করার সময় ইয়ার ফোন, হেড ফোন লাগিয়ে যাওয়াটা ভাল না। কারণ যে কোনো সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
.
_কি ব্যপার কথা বলছো না কেনো?
_না মানে। ইয়ার ফোন খুলেই পকেটে রেখে দিলো। এবং মন থেকে থেংক্স বললো হৃদয়।
_হুম ঠিক আছে। আর আমাকে আপনি করে বলছো কেনো? আমাকে কি তোমার বড় মনে হচ্ছে।
_না মানে প্রথম দেখলাম তো তাইইইইইইইইইই।
_ও তুমি করে বললেই খুশি হবো।
_ওকে। আপনার নাম ইয়ে তোমার নাম কি?
_রুমি।
_বা খুব সুন্দর তো নামটা।
_পাম দিলা নাকি সত্যি বললে?
_দুটোই।
_মানে????
_না কিছু না।
_ওহ। আচ্ছা তুমি কোথায় যাচ্ছো হৃদয়?
_আমি আমার ফ্রেন্ড এর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। তুমি কোথায় যাচ্ছো
_আমি আমার খালা মনির বাসায় যাচ্ছি।
_ওহ।
"এবার দুজনেই একসাথেই হাটছে এবং যাচ্ছে।"
_আচ্ছা তোমার খালা মনির বাসা কোথায়?
_বনানী।
_কি বনানী? আমিও তো বনানী যাচ্ছি।
_ওহ তাহলে তো ভালই হলো একসাথেই যেতে পারবো আমরা।
_হুম ভালই হলো।
.
একটা রিক্সায় উঠলো হৃদয় আর রুমি। হৃদয় এই প্রথম কোনো মেয়ের সাথে রিক্সায় বসেছে। হৃদয় একটু লজ্জা পেলো। দু'জনই চুপ চাপ বসে রইল।
.
_এই তুমি লজ্জা পাচ্ছো?
_কই না তো।
_ওহহহ। মুচকি হাসি দিয়ে।
.
হৃদয় আজ কেনো জানি একটু বেশি লজ্জা পাচ্ছে। কেনো পাচ্ছে তা ও নিজেই জানেনা। কিন্তু হৃদয়ের কেনো জানি রুমির দিকে তাকাতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু তাকাতে পারছে না। এবার একটু সাহস করেই বললো -
.
_আচ্ছা রুমি চলো আমরা কোনো রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে বসি। তারপর না হয় যাওয়া যাবে।
_একটু ভেবে। আচ্ছা চলো।
.
রিক্সা থেকে নেমে তারা একটা রেস্টুরেন্টে গেলো। কারণ খাওয়ার ভান করে কিছুটা রুমিকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখার জন্য।
.
_ঐ জায়গায় বসি।
_হুম চলো।
_আচ্ছা কি খাবে বলো।
_তুমি ওর্ডার দাও যা ইচ্ছে তাই।
_ওয়েটার?
_জ্বি স্যার কি লাগবে বলেন।
_দুইটা চিকেন বার্গার, সেন্ডুইচ, আর কোল্ড ড্রিংক্স ওর্ডার করলো।
_ওকে স্যার।
.
এইদিকে হৃদয় ভাবছে যাক কিছুক্ষণ তো বসে থাকা যাবে একসাথে। হৃদয় একটু পর পর রুমির দিকে তাকাচ্ছে। কোনো সুন্দর একটা পরির সামনে বসে আছে।খুবই ভাল লাগছে।
আর ভাবছে যদি রুমির মত কাউকে লাইফ পার্টনার করতে পারতো।
.
_এই তুমি চুপ করে আছো কেন? আর কি ভাবছো?
_হ্যাঁ। না কিছু না তো। অন্যদিকে তাকিয়ে।
_আমি দেখতে কি এতটাই খারাপ। যে আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলা যায় না।
_কি বললা।
_না কিছু না।
.
এতো দেখছি মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। এখন দু'জন দু'জনের দিকে তাকিয়েই কথা বলছে। চোখে চোখ পড়ে গেছে। দু'ঘন্টা পর ওয়েটার খাবার নিয়ে আনলো। দু'জনই খাচ্ছে খাওয়া দাওয়া শেষ করলো। বিল দিয়ে বের হয় রেস্টুরেন্ট থেকে।
.
_একটু দাঁড়াও আমি আসছি।
_কোথায় যাচ্ছো?
"একটু পর একটা লাল গোলাপ নিয়ে আসলো হৃদয়।"
_এই কোথায় গেছিলে তুমি?
_না কোথাও না। চলো হাটি
কিছু পথ হাটার পর।
_আচ্ছা রুমি তোমাকে একটা কথা বলতে পারি।
_হ্যাঁ বলো কি বলতে চাও।
.
পিছন থেকে গোলাপ ফুলটা বের করে। আমি তোমাকে দেখেই ফিদা হয়ে গেছি। আমি তোমাকে আমার লাইফ পার্টনার বানাতে চাই। গোলাপটা হাতে নিলো। কিন্তু কিছু বললো না। কারন রুমি তো তার ভালবাসার মানুষটার মুখ থেকে শুনতেই পেরেছে।
.
_আচ্ছা আমি কি ভুল কিছু বলে ফেললাম। প্লিজ রাগ করোনা। আমি এই প্রথম কোনো মেয়েকে ভালবেসেছি। এবং প্রথম বারই কাউকে প্রপোজ করলাম।
_ওহ তাই।
_হুম । (হার্ট বিট ধুব ধুব করছে)
_আচ্ছা হবো।
_কি সত্যি?
_না মিথ্যা।
_আই লভ ইউ
_লভ ইউ টু।
.
অতঃপর তাদের বিয়ে হলো। হৃদয় সত্যি তার পরিটাকে তার লাইফ পার্টনার করেই ফেললো। একটু পর ছোট বোন এসে।
.
_ভাইয়া ভাইয়া ভাইয়া ওঠো নাদিম ভাইয়া আসছে তোমাকে ডাকছে।
_ওকে আসছি রিয়া তুই যা।
.
হৃদয় এতক্ষণ স্বপ্ন দেখেছে। ওহ গোড। কিন্তু আমার স্বপ্নে দেখা রাজ কন্যাটার মত যদি আমার লাইফ পার্টনার বানাতে পারতাম কথাটি বলেই বিছানা থেকে উঠে হৃদয়। এবং স্বপ্নের কথা গুলো আবার নতুন করে মনে করতে লাগলো। কিছু কিছু স্বপ্ন মানা যায় না যে, এটা স্বপ্ন ছিলো। 
.
.
.
Ridoy Nadim (((AR PagLaaa)))

Comments