রাজকন্যা (১০ম পর্ব)



- দোস্ত কই তুই??
- আমি তো বাসায়। 
- আমি তোর বাসার সামনে।। 
- দাড়া আমি আসতেছি।।
.
রাত তখন ৯:৩০ মিনিট। রাতের বেলা আড্ডা দিতে খুব পছন্দ করতাম আমরা। তাই সবসময় তখনই আড্ডা দিতাম। আকাশ আর আমি পুরোনো এক বাসার ছাদে বসে আছি। আকাশ সিগারেট খাচ্ছিলো। এই নয় যে আমি সিগারেত খেতাম না।আগে খেতাম মাঝে মাঝে কিন্তু আমার রাজকন্যা মানা করার ফলে এখন আর মুখে দেইনা। ইভা মোটেও এগুলা পছন্দ করতো না। আর আমি কিভাবে তার অপছন্দ করা জিনিষ গুলো ইউজ করবো। তাই তার অপছন্দ এর কাজ কিছুই করিনা।
.
ইভার পরিক্ষাও শেষ হয়ে গেছে। এই তো সামনের ২০ তারিখই আমার আর ইভার এংগেজমেন্ট। এই সব নিয়ে ভাবতেই কেমন জানি লজ্জা লাগে। তবুও আল্লাহ্‌র কাছে শুকরিয়া যে প্রিয় মানুষটিকেই জীবন সংগী করতে পারবো। আগে এংগেজ করে রাখবে আমাদের তার ৫ বছর পরই বিয়ে। অন্যদিকে খুব আনন্দও লাগছে।
.
- হ্যালো আম্মু। 
হহ কিরে কই তুই? এত রাতে বাহিরে কেন? 
- আইসা পড়তেছি ৫ মিনিটের মধ্যে।
- তাড়াতাড়ি আয় বাসায়।
- আচ্ছা আসতেছি। 
.
উঠে পড়লাম ঐখান থেকে আকাশকে বলে। রাত ১১ টার মতো বেজে গেছে। কিন্তু এখনো আমার রাজকন্যা ফোন দিলো না।বুঝতেছি না কি হলো। সবসময় ১১ টা বাজার সাথে সাথে আমাকে ফোন করে আমাদের বাসায় যেতে বলতো। কারণ সে জানতো আমি বেশি রাত পর্যন্ত বাসার বাহিরে থাকি। কিন্তু আজ তো ফোন দিলো না। আমি ফোন করলাম তাকে কিন্তু সুইচ অফ। কি ব্যাপার মোবাইল অফ কেনো। সাথে সাথে ইভার আম্মুর ফোনে ফোন করলাম।
.
- আসসালামু আলাইকুম আন্টি।
- ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছো বাবা?
- এইতো আছি। আন্টি ইভার মোবাইল অফ কেনো??
- বাবা ইভা তো একটু অসুস্থ। ও ঘুমাচ্ছে এখন তাই হয়তো মোবাইল অফ করে রেখেছে।
- কি হয়েছে আন্টি??? ঔষুধ খেয়েছে?? 

"কথাটা শুনে মাথার মধ্যে কেমন জানি একটা ভয় চেপে গেলো। কিছুক্ষণ আগেই তো কথা বললাম তার সাথে।

- জ্বর হয়েছে। হ্যাঁ ঔষুধ খেয়েছে তাই ঘুমিয়ে পড়েছে।
- আচ্ছা তাহলে ঘুমিয়ে থাকুক।
- চিন্তা করো না তুমি। ঠিক হয়ে যাবে। 
- আচ্ছা। তাহলে রাখি। আসসালামু আলাইকুম।
- ওয়ালাইকুম আসসালাম। 
.
মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো কথাটা শুনে। ইচ্ছে করছে ছুটে চলে যাই তার কাছে। কিন্তু এইটা তখন সম্ভব নয়। কোনো ভাবে বাসায় আসলাম না খেয়েই শুয়ে পড়লাম। চিন্তা হচ্ছে খুব ঘুমও আসছে না। ভাবতেছি কখন সকাল হবে আর কখন যাবো তাদের বাসায়। আর অপেক্ষা করতে পারছিলাম না। এভাবে ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম বুঝতেই পারলাম না।
.
সকালে উঠে ফ্রেশ হলাম। নাস্তা না করেই বের হয়ে গেলাম বাসা থেকে। সোজা ইভাদের বাসায় চলে গেলাম। আন্টির সাথে দেখা হলো পরে ইভার রুমে গেলাম দেখি ঘুমিয়ে আছে। কপালে হাত দিয়ে দেখলাম অনেক জ্বর। আমার হাত তার কপালে পড়তেই ইভা জেগে গেলো। উঠতে চাইছিল কিন্তু আমি পরে আর উঠতে দেইনি। কিছুক্ষণ জল পট্টি দিয়ে দিলাম।
.
ডক্টর আংকেল কে ফোন করে বাসায় আসতে বললাম। ইভার আব্বু কাজের চাপে একটু চিটাগাং যায়। তাই আমাকে সব কিছু করতে হলো। ডক্টর আংকেল ঔষুধের লিস্ট দিয়ে চলে যায়।পরে আমি ঔষুধ নিয়ে এলাম। সেইদিন বিকেল পর্যন্ত ছিলাম ইভাদের বাসায়। দুপুরে খাবার খাইয়ে দেই নিজ হাতে তাকে।পরে ঔষুধ খাইয়ে দিলাম।
.
ইভার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম আর সে শুয়ে ছিলো। কিন্তু একটু ঘুমায়নি তখন। চোখ মেলে তাকিয়ে তাকিয়ে আমার কাহিনী দেখছে আর মিটিমিটি হাসছে। আমি এদিকে টেনশনে ছিলাম আর সে হাসছে। একটু রাগ হচ্ছিলো তখন পরে তাকে ঘুমিয়ে থাকার জন্য বললাম। কিন্তু না তার চোখে আর ঘুম নেই।
.
- এই পাগল। 
- হুমমম বলো 
- তুমি এত চুপ-চাপ বসে আছো কেনো?? 
- তাহলে কি করবো বলো??? 
- তুমি আমাকে অনেক ভালবাসো গো?? 
- না বাসি না। এখন চুপ করে ঘুমিয়ে পড় প্লীজ। 
- ঘুম আসছে না তো। আর দেইখো আমি সুস্থ হয়ে যাবো।আমার জামাইর ভালবাসাতেই আমি সুস্থ হয়ে যাবো।
- হুমমম তাই যেনো হয়।
.
একটু পর উঠে বসলো আমার পাশে। আমার কাঁধে তার মাথা রেখে চুপ করে আছে। এইদিকে ইভার আম্মু অনেকবার এসে আমাদের দেখে গেলো। আমার কাহিনী দেখেও হাসছিলো আন্টি। পরে বিকেলে আমি এসে পড়ি তাদের বাসা থেকে।আমিও কিছু খেয়ে নিলাম পরে রাতে একটু কথা বলে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম ভাংগে ইভার ফোনে।
.
- শুভ সকাল। 
- শুভ সকাল। কেমন আছো এখন?
- অনেক ভাল।
- জ্বর কমছে তোমার?
- একেবারে কমে গেছে।
- সত্যি??
- হুমমম। আমি তো তোমায় বলেই ছিলাম আমি সুস্থ হয়ে যাবো।
- আচ্ছা। ভালই তো তাহলে।
- তুমি এখনো ঘুম থেকে উঠো নাই? 
- এইতো উঠে পড়েছি।
- তাড়াতাড়ি উঠে নাস্তা করে নাও প্লীজ।
- আচ্ছা বউ।
.
এভাবেই চলতে ছিলো দিন-কাল। আগামীকাল ২০ তারিখ মানে কালই আমাদের এংগেজ মেন্ট। সারা রাত ফোনে কথা বললাম তার সাথে। কি করবে, কি ড্রেস পড়বে,আমি কি পড়বো এই নিয়েই কথা হচ্ছিলো। কথা বলতে বলতে ফজরের আজান দিয়ে দেয়। পরে দু'জনে নামাজ আদায় করলাম। পরে ঘুমিয়ে পরলাম।
.
আজ আমাদের এংগেজ মেন্ট। আমার বাসা থেকে আমি, আকাশ, ভাইয়া -ভাবি এবং মা গেলাম ইভাদের বাসায়। কেমন জানি লজ্জা লজ্জা লাগছিলো খুব। কি আর করার বসে রইলাম সবার সাথে। একটু পর ইভা আসলো আন্টির সাথে। থুক্কু এখন আমার হবু শাশুড়ি হয়ে গেছেন উনি তো পাশে এসে বসলো ইভা। পরে ইভার হাতে আংটি পড়িয়ে দিলাম।
.
অবশেষে আমাদের এংগেজ হয়ে গেলো। এখন ইভা মানে আমার রাজকন্যাটা আমার হবু বউ। আর আমি আমার রাজকন্যার রাজকুমার হয়ে গেছি। এভাবেই চলছে আমাদের দিন-কাল। দু'জন দু'জনকে ভালবেসেই কাটছে আমাদের জীবন।
.
আর হ্যাঁ এই গল্পটা এক বড় ভাইয়ের জীবন কাহিনী থেকে নেয়া। এই গল্পের সাথে আমার নিজের কোনো মিল নেই। সবাই দোয়া করবেন তাদের জন্য। যেনো তারা সুখে থাকেন এবং খুব ভাল থাকেন। এটাই শেষ পর্ব  এবং সবাইকে এই গল্পের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
.
.
.
📝 Ridoy Nadim (((AR PagLaaa)))


🔹🔸🔹 সমাপ্ত 🔸🔹🔸

Comments