সেইদিন রাতে আর ঘুমাতে পারলাম না। শুধু মনে পড়ছিলো দুপুরের ঘটনাটি। কিভাবেই কি হয়ে গেলো বুঝতেই পারছি না।ইভার এরকম পাগলামি কি সবসময় থাকবে নিজের কাছেই প্রশ্ন করছি। তবে এটা বুঝতে পারলাম যে ইভা আমাকে অনেক ভালবেসে ফেলেছে। তখন এটা মাথার মধ্যে গুড় পাক খাচ্ছিলো। তাই আর ঘুমাতেও পারছিলাম না এপাশ ওপাশ করছিলাম।
.
আগামীকাল ঢাকায় চলে যাবো। ইভাকে আর প্রতিদিন কাছ থেকে দেখতে পারবো না। এটা ভেবেও একটু খারাপ লাগছে। কি আর করার আমার সেইরাতের ঘুম কেরে নিলো এরকম চিন্তা গুলো। হঠাৎ ভ্রাইবেট এ বিছানাটা কেঁপে উঠে বুঝতে পারলাম মেসেজ এসেছে মোবাইলে। কিন্তু নয় সেইদিন রাতে ভুমিকম্প হয়েছিল। সবাই দৌঁড়ে বাড়ির উঠানে চলে আসলাম। বাসায় কল দিয়ে জেনে নিলাম সবাই ভাল আছেন। বুকটা ধুবধুব করছিলো খুব। অবশেষে কিছুক্ষণ পর সব শান্ত হয়।
.
এইদিকে শেষ বারের মতো ইভাকে দেখে নিলাম। তার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম সেও ঘুমায়নি। রুমের ভেতরে চলে যাই। পরে তার মোবাইলে মেসেজ করলাম।
- কি ব্যাপার ঘুমাওনি এখনো?
- ঘুম আসছে না। কি করবো বলো।
- আমারও তো ঘুম আসছে না। তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে খুব।
- পাশে তো আম্মু। আম্মুর পাশে তো কথা বলা সম্ভব না।
- তাও ঠিক।
- আচ্ছা তুমি বাহিরে আসো। দেখি আমি বাহিরে আসতে পারি কিনা।
- আচ্ছা।
.
এস এম এস এ চ্যাঁটিং হচ্ছিলো এতক্ষন আমাদের। পরে আমি বাহিরে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। ১০ মিনিটের মধ্যে ইভা আসে। তখন রাত ২ টার মতো বাজে। আমার পাশে এসে দাঁড়ালো সে। আমি তার হাতটি ধরলাম। ধরেই রাখলাম তার হাতটি এভাবে অনেকক্ষন।
.
- কি ব্যাপার ঘুম আসছে না কেনো তোমার??
- ঘুম আসবে কি করে। তুমি....
- আমি কি?
- না কিছু না।
- বলো...
- দুপুর বেলা যে জিনিষটা পরে ছিলো গালে। ঐটাই মনে পড়ছে খুব।
- হাহা। ওহ তাই? কেনো ভুল হয়েছে ঐ কাজটা??
- জানিনা। কিন্তু আকাশের কাছে ধরা পরা গিয়েছি তখন।
- হাহাহা।
- তুমি হাসছো??
- তাহলে কি করবো হাসা ছাড়া আর কি আছে। তুমি বললে কাঁদবো। কি কাঁদবো??
- না কাঁদতে হবে না।
.
হাতটি ধরেই কথা বলতেছিলাম আমরা। একটু পর ইভা আমার কাঁধে তার মাথাটা রাখে। আমিও বাম হাত দিয়ে তাকে গিরে রাখি। এভাবেই কথা বলছিলাম আমরা। চারদিক কুটকুটে অন্ধকার হালকা একটু ঠান্ডা বাতাস আর এই রোমান্টিক মূহুর্তটা খুব ভাল লাগছিলো। যা বলে বোঝাতে পারবো না।আমি ডান হাত দিয়ে তার একটি হাত আমার মুখের দিকে রাখলাম।
.
- এই ভীতু পাগল তোমার ভয় করছে না?
- নাহ আজ ভয় করছে না তো।
- সত্যি ভয় করছে না??
- হুমম।
- ঐ দেখো তো সাদা কাপর পড়া ঐ টা কি যেনো আমাদের দিকে আসছে।
.
একটু ভয়ে ভয়ে বললো কথাটা যাতে আমি ভয় পাই। সত্যি আমি ভয়ে তাকে জ্বড়িয়ে ধরেছিলাম। একদম নিশ্চুপ দু'জনে শুধু দু'জনের নিশ্বাসের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। ৫ মিনিটের মতো ভুলেই গেছিলাম যে আমরা বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি। ইভাও আমাকে খুব জোড়ে ধরে রেখেছিলো। একটু পর সব ঠিক হলো।
.
- তুমি এত ভয় পাও কেনো???
- তুমি যেভাবে বলেছো ভয় পাবো না তো কি!
- হি হি হি।
- তুমি হাসছো?? আর আমি এখানে ভয়ে শেষ।
- এখন কিন্তু আবার ভয় দেখাবো।
- নাহ নাহ প্লীজ বইলো না।
- ঐ যে দেখো ঐ টা....
.
আর বলতে পারেনি পরের শব্দ গুলো। আমার আঙুল দিয়ে তার ঠোঁটে স্পর্শ করি পরে আর কিছু বলতে পারেনি। আমি আলতো করে তার কপালে একটা চুমু একে দিলাম। পরে ইভা তার রুমে চলে যায় আর আমি আমার রুমে চলে এলাম। প্রায় ১ ঘন্টা আমরা বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখন ৩ টা বাজে রুমে। এসে ঘুমিয়ে পড়লাম ইভার কথা ভাবতে ভাবতে।
.
সকালেও ঘুম ভাংগে ইভার মিষ্টি ডাকে। সাথে এক কাপ চা। ৮ টা বাজে আমার রুমে আসে ইভা পরে ঘুম থেকে উঠিয়ে চা দিয়ে গেলো। আমি মনে মনে ভাবছিলাম তখন বউ যে কাজটা করবে বিয়ের পর। সে কাজটা বিয়ের আগেই করে দিচ্ছে। এটা কিন্তু খুব ভাল লাগছে দেখে। চা খেয়ে উঠে পড়লাম একেবারে।বউয়ের আদেশ মানতে হবে তা না হলে পরে অভ্যাস করতে পারবো না। তাই এখনই অভ্যাস করতে হবে।
.
সেইদিনের সকালটা শুরু হয়েছে ইভার মুখ দেখে। দিনটা অনেক ভাল ভাবেই কাটবে আশা করি। বাসায় ফোন করে জানিয়ে দিলাম সন্ধ্যায় লঞ্চে উঠবো ঢাকায় পৌঁছাতে আগামীকাল হবে। কথা শেষ করে রেখে দিলাম মোবাইলটা। সকালের নাস্তা করলাম একসাথে সবাই। আর আমাদের মিষ্টি কিছু পাগলামি তো সাথে আছেই।
.
- কাল থেকে তো আর দেখা হবে না তোমার সাথে।
-হবে। তোমার বাসার সামনে যেয়ে দেখা করে আসবো। তাহলেই দেখতে পারবো।
- কিন্তু...
- কোনো কিন্তু নয়। আমি তোমাকে ভালবাসি এবং সবসময় বাসবোন
- কি,, কি বললে শুনতে পাইনি আমি। আর একবার বলবে কথাটা?
- আমি তোমাকে ভালবাসি।
- সত্যি??
- হুমম সত্যি।
- তুমি না আকাশ ভাইয়াকে বলেছিলে ভালবাসার কথাটা আমার কাছ থেকে প্রথম শুনবে। কিন্তু এখন তো তুমি নিজেই বলে ফেলছো।
- হুমম কিছু হবে না এতে। তুমি কিন্তু আমাকে এখন বললে না।
- কি বলবো?
- না কিছু বলতে হবে না।
- এই ভীতু পাগলটা দেখি রাগও করতে পারে।
- হুহ।
- অনেক ভালবাসি আমার ভীতু রাজকুমারকে।
- আমিও অনেক অনেক ভালবাসি আমার রাজকন্যাকে।
- সবসময় বাসবে তো??
- হুমম। তুমিও বাইসো প্লীজ।
- আচ্ছা পাগলটা আমার।
.
এই প্রথম ভালবাসি এ কথাটি দু'জন দু'জনকে বলি। আমি সত্যি অনেক ভালবাসি আমার রাজকন্যা কে। আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসি তাকে। সেও বাসে অনেক বেশি ভাল আমাকে। প্রিয় মানুষটি পাশে থাকলে নিজেকে সবচেয়ে সুখী ব্যক্তি মনে হয়। আমারও তাই মনে হচ্ছিলো।
.
ঐ দিন দুপুরের খাবার শেষ করলাম। একটু বিশ্রাম নিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। ৫ টার দিকে বাসা থেকে বের হই। লঞ্চে যেতে যেতে ৬ টা বেজে গেলো ৬:২০ মিনিটে লঞ্চ ছেড়ে দিবে। সবাই একসাথেই একই ক্যাভিনে রইলাম। রাতে খাওয়ার জন্য কিছু কিনে নিলাম বাহির থেকে। আর আমার রাজকন্যার জন্য ক্যাট-ব্যারি নিয়ে নিলাম ছোট রাজকন্যার জন্য ও চকলেট নিয়ে নিলাম। ছোট রাজকন্যা হচ্ছে ইভার বোন। সময়ের সাথে সাথে আমাদের ভালবাসাটাও বেড়ে যাচ্ছে।
.
.
.
📝 Ridoy Nadim (((AR PagLaaa)))

Comments
Post a Comment