ফিরে আসোনা

ফিরে আসোনা
.

.
(১)
প্রতিটা মানুষেরই ইচ্ছে হয় নতুন কিছু পাবার। আবার কেউ কেউ অন্যের ইচ্ছের সমাধি দেখে মনে মনে আফসোসও করে। কারো ইচ্ছে বাড়ি-গাড়ি, টাকা-পয়সার। আবার কারো দরকার সুন্দর একটা মন। যে মনে থাকবে মিষ্টি মধুর ভালবাসা। যে ভালবাসার জলে ভেসে থাকা যাবে সবসময়। 
.
ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া এক ছেলেও চায় তার মনের মধ্যে কেউ চিরকালের জন্য ভর করুক। সেটা আবেগ হতে পারে। কিন্তু ভালবাসাটা কখনো মিথ্যে হয়না। হয়তো সেখানে আবেগ ছড়িয়ে থাকে কিন্তু মনের মধ্যে জন্মানো ভালবাসাটাও থাকে।
.
রাজ ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়তো। আজ সে রাজের গল্পটাই আপনাদের কাছে শেয়ার করবো। রাজ তার মা-বাবার বড় ছেলে। তারা দু'ভাই ছিলো। তার ছোট ভাই আর রাজ। সারাদিন তার ছোট ভাইয়ের সাথে দুষ্টামি, মারা-মারি করতে করতেই সময় কাটতো। রাজ বড় বলে তিনি অন্যায় না করলেও তার মা-বাবার কাছ থেকে বকা শুনতে হতো। আর এটা পরিবারের সব বড় ছেলে-মেয়েদেরই শুনতে হয়। 
.
৫ম শ্রেণী পাশ করে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে উঠে। ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে প্রথম ক্লাসে যায়। তখন তার তার তেমন বন্ধু ছিলো না। কিছুদিন পরেই রাজুর সাথে তার খুব ভাল বন্ধুত্ব হয়ে যায়। রাজুও একই ক্লাসে পড়তো। এভাবে কিছুদিন যাবার পর রাজ আরো কিছু নতুন বন্ধু পেয়ে যায়। একটা সময় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে সময় কাটনো তার সবসময়ের রুটিন হয়ে গেলো। 
.
ষষ্ঠ শ্রেণীতে থাকা অবস্থাতেই রাজু একটি মেয়ের সাথে রিলেশনে জড়িয়ে যায়। সেটা রাজের মনে আঘাত করে প্রতিনিয়ত। আঘাত করার কারণ রাজ তখনো কাউকে আপন করে পেতে পারেনি। তাই আফসোস করতো তার বন্ধুদের প্রেম করতে দেখলে।রাজ তখন মনে মনে ভাবতো, তার মনে কি এমন কেউ আসবে না, কেউ কি ভালবাসবে না! রাজের খুব ইচ্ছে জাগে কাউকে ভালবাসার। এভাবেই কাটছিলো তার দিন কাল।
.
একদিন বিকেলে হাটতে বের হয় রাজ। কিছুপথ যেতে দেখতে পায় একটি মেয়েকে। মেয়েটিকে দেখে রাজ খুব পছন্দ করে ফেলে। প্রথম দেখাতেই ভালবেসে ফেলে। পরে জানতে পারে সেই মেয়েটির তার এলাকার ছোট ভাইয়ের বড় বোন। এরপর থেকেই শুরু হয় পিছু নেয়া। 
.
তার এলাকার ছোট ভাইটিকে দেখতে পায় রাজ। এবং ঐ দিনই তার সাথে কথা বলে।

- কেমন আছো ভাই?
- জ্বি রাজ ভাইয়া অনেক ভাল আছি। 
- তো তোমাকে এখন দেখাই যায়না। কোথায় থাকো সারাদিন?
- ভাইয়া বাসায়ই থাকি। বাহিরে বের হতে দেয়না এখন।
- ওহহহ।  আচ্ছা তোমার আপুর নামটা যেনো কি?
- রুপা। কেনো ভাইয়া?
- না এমনি। ঐদিন তোমাদের দু'জনকে দেখলাম তাই জিজ্ঞাসা করলাম।
- ওহহ।
- আচ্ছা তোমার আপুর মোবাইল নম্বরটা দেও তো। 
- ০১.........।
- ধন্যবাদ ভাইয়া। আচ্ছা তাহলে এখন আসি কেমন! ভাল থেকো।
- আচ্ছা ভাইয়া।
.
রাজকে খুব সম্মান করতো এবং অনেক ভাল মনে করেই মোবাইল নম্বরটি চাওয়ার সাথে সাথেই দিয়ে দেয়। রাজ নম্বরটি নিয়ে বাসায় এসে পড়ে। এবং ভাবছে কল দিবে কি দিবে না। অনেক ভাবার পর ঐ নম্বরটি কল দেয়।
.
(২)
প্রথমবার কলটি রিসিভ করলো না। ২য় বার আবারো কল দেয়। তখন কলটি রিসিভ করলো। এবং রিসিভ করার সাথে সাথে ওপাশ থেকে সালাম দেয়। রাজ মনে মনে সালামের উত্তর নেয়। কোনো কথা না বলাতে ওপাশ থেকে কলটি কেটে দেয়। 
.
রাজ তার কন্ঠ শুনেই পাগল হয়ে যায়। খুব সুন্দর ছিলো তার কন্ঠটা। রুপা যখন কথা বলছিলো তখন রাজ মুগ্ধ ভাবে তার কথা গুলো শুনেছিলো। কথা শুনেই তার কথার প্রেমে পড়ে যায়। রুপা দেখতেও খুব সুন্দরী ছিলো। প্রতিটা মেয়েই তার ভালবাসার মানুষের চোখে সুন্দরী।
.
পরেরদিন আবারোও ফোন দেয় ঐ নম্বরটিতে। এইবার সাহস করে কথা বলবেই রাজ মনে মনে বলে কথাটি। 
.
- হ্যালো! আসসালামু আলাইকুম।
- ওয়ালাইকুম আসসালাম। কে বলছেন?
- আচ্ছা এটা কি রুপার নম্বর?
- জ্বি আমিই রুপা। কিন্তু আপনাকে তো চিনতে পারলাম না।
- আমি রাজ।
.
পরে রাজ তার পরিচয় দেয়। এবং এভাবেই আস্তে আস্তে একটা সময় প্রতিদিনই কথা হতো তাদের। রাজ রুপার প্রেমে হাবু ডুবু খাচ্ছিলো তখন। চোখ বুঝেই রুপাকে দেখতে পেতো। খেতে বসলেও রুপার কথা মনে পড়তো। একটা সময় রুপাকে ছাড়া কিছুই বুঝতো না রাজ। রাজ খুব ভালবেসে ফেলে রুপা নামের ঐ মেয়েটিকে।
.
কিছুদিনের মধ্যেই তাদের মাঝে খুব ভাল বন্ধুত্ব হয়ে গেলো। কিন্তু রাজ বন্ধুত্বের চেয়ে আর একটু বেশি হতে চাচ্ছিলো। কিন্তু আবার ভয়ে বলেনি তাকে যদি বন্ধুত্বটা ভেঙে যায় এর কারণে। কিন্তু রাজের মন মানছিলো না। রাজ ভেবে নিলো তিনি তার ভালবাসার কথা জানাবেই। সাহস করে বলে -
.
- রুপা।
- হুমম বলো রাজ।
- তোমাকে একটি কথা বলতে চাই। কথাটি অনেকদিন ধরেই বলবো বলে ভাবছি। কিন্তু বলতে পারিনি।
- কি বলতে চাও বলো।
- রুপা আমি তোমাকে খুব ভালবাসি।
.
কথাটি শুনে রুপা একদম চুপ হয়ে যায়। কোনো কথা বলছিলো না। তাই রাজ রুপাকে আবারো কথা বলার জন্য অনুরোধ করে।
.
- জানিনা আমি ভুল বললাম কিনা। কিন্তু আমি আর পারছিলামনা না বলে থাকতে। কথাটি আরো আগেই বলার দরকার ছিলো। কি হলো কিছু বলবে না?
- রাজ আসলে আমি কখনো তোমাকে নিয়ে এভাবে ভাবিনি।
- হুমম বুঝলাম। এখন তুমি কি চাও??
- আমাকে দু'দিন সময় দিতে হবে। আমি আগে ভাল মতো ভেবে তারপর তোমাকে জানাবো।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
- তাহলে আজ রাখি। পরে কথা হবে।
- আচ্ছা ঠিক আছে টাটা।
.
রাজ খুবই চিন্তায় পড়ে যায়। রুপা যদি তার সাথে আর কথা না বলে তখন কিভাবে থাকবে। এরকম আরো অনেক কথা মনে পড়ছিলো তার।
.
(৩)

দু'দিন পর রুপা ফোন দিলো রাজকে। রুপার নম্বর থেকে ফোন আসে দেখে রাজ খুব খুশি হয় আবার ভয়ও পায়। কি বলে তা ভেবে। ভয়ে ভয়ে রাজ কলটি রিসিভ করে। এবং হ্যালো বলে। কিন্তু ওপাশ থেকে লজ্জা মাখা কন্ঠে কথা বলছিলো রুপা। এভাবে কথা বলতে শুনে রাজ খুব খুশি হয়ে গেলো। 
.
- তোমার উওরটা তো দিলে না?
- হুম দেবো কিন্তু আমার তিনটে সর্ত আছে।
- হুমম বলো কি সর্ত?
- সর্ত গুলো হলো -

(|) আমাকে ছেড়ে কখনো যেতে পারবেনা।
(||) আমার ফ্যামিলিকে মানিয়ে নিতে হবে।
(|||) আমাকে কখনো ভুল বুঝতে পারবেনা।

- হুমম ঠিক আছে। তোমার সর্ত মেনে নিলাম। 
- হুমম তাহলে ঠিক আছে। <লজ্জা কন্ঠে বলে কথাটি>
- একবার লভ ইউ বলোনা।
-উঁহু পারবো না। লজ্জা করে।
- একটু বলোনা।
- আগে তুমি বলো। তারপর আমি বলবো।
- আচ্ছা ঠিক আছে। আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি।
- হিহি। <হাসছিলো কথাটি শুনে>
- কি হলো বলবে না?
- আমিও তোমায় ভালবাসি।
.
কথাটি বলেই ফোনটি সাথে সাথে কেটে দেয় রুপা। রাজ তো খুব খুশি কথাটি শুনে। আরো বেশি খুশি হয়েছে যে, প্রথম কেউ তাকে ভালবাসি কথাটি বলেছে। প্রেমে পড়লে মানুষ খুব পাগল হয়ে যায়। প্রেমের জন্য পাগল হয়ে যায়। রাজও এরকমই পাগল হয়ে যায় রুপার জন্য।
.
রাজ এতটাই খুশি হয়েছিলো যে, তাকে কেউ মারলেও সে হাসতো। তার বন্ধুরা তাকে দুষ্টামি করে মারলেও তাদের কিছু বলতো না। এভাবেই শুরু হলো তাদের প্রেম কাহিনী। প্রতিদিন কম হলেও ২০০ বারের মতো কথা হতো তাদের। 
.
কিছু সুখ, কিছু কষ্ট, কিছু অভিমান আর হাজারো ভালবাসা নিয়ে তাদের ভালবাসা চার বছর হয়ে যায়। এই চার বছরে এক একটি দিন আনন্দে রঙিন ছিলো। হঠাৎ একদিন অচেনা নম্বর থেকে একটি ফোন আসে রাজের ফোনে। রাজ ফোনটি রিসিভ করতেই একটি মেয়ের কন্ঠ শুনতে পায়।
.
মেয়েটি রাজকে বারবার ফোন করতো। রাজ বহুবার না করার সত্ত্বেও মেয়েটি ফোন করতো। মেয়েটি রাজ খুব ভালবাসে কথাটি রাজকে জানায়। কিন্তু রাজ মেয়েটিকে জানায় রুপার কথা। তবুও মেয়েটি রাজকে বার বার ফোন করতো এবং রাজকে বলতো। তাকে ভালবাসতেই হবে।
.
এ কথাটি রুপাকে জানায়।
.
- হ্যালো রুপা।
- হ্যাঁ বলো।
.
পরে সবকিছু রুপাকে খুলে বলে। রুপাও সব কিছু শুনে রাজের কাছ থেকে।
.
- আচ্ছা তুমি একটু ঐ মেয়েকে বলে দেওনা।
- পারবো না।  

বলেই ফোনটি কেটে দেয় রুপা। একদিন রাজ তার আপুর বাসায় যায়। তার আপু এবং দুলাভাই ছিলো তার পাশে। কথা বলছিলো সবাই একসাথে। এমন সময় ঐ মেয়েটি আবার ফোন দেয়। এবং ফোন দিয়ে রাজকে বলতে বলছে আই লভ ইউ। কিন্তু রাজ তো কখনোই বলবে না। রাজের অবস্থা দেখে তার দুলাভাই বুঝে গেলো এবং সাথে সাথে তার কাছ থেকে ফোনটি নিয়ে ঐ মেয়েটিকে আই লভ ইউ বলে।
.
মেয়েটি সাথে সাথে ফোনটি কেটে দেয়। এবং তার দু'দিন পরই রুপা রাজকে ফোন দেয়। এবং বলে কলিকে ভালবাসি বলেছিলো এই কথাটা। রাজ তখনই জানতে পারে মেয়েটির নাম কলি। আর রুপা এবং কলি দু'জন বান্ধবী ছিলো। পরে রাজ সব কিছু খুলে বলে কিন্তু রুপা তাকে ভুল বুঝে। 
.
এভাবে একটা সময় রাজ এবং রুপার সম্পর্কটা শেষ হতে শুরু হয়। রুপা রাজের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে থাকে। ফোন দিলে কথা বলতে চাইতো না। কথা বললেও রেগে যেতো। ভাল কথা বললেও রেগে যেতো। রাজ একটা সময় রুপাকে বলে।
.
-শোনো রুপা এভাবে কথা বলার চেয়ে ব্রেকাপ করে ফেলো। তাহলেই আর সমস্যা হবেনা। <কথাটি রাগের মাথায় বলে>
- অকে ঠিক আছে ব্রেকাপ।
.
এরপর থেকে তাদের আর কথা হয়নি। তাদের মাঝে দুরত্বটা বেড়ে যাচ্ছিলো। ছয় মাস কথা হয়নি তাদের মধ্যে। এই ছয় মাসে রুপা একবারও রাজকে ফোন করেনি বা কথা বলার চেষ্টাও করেনি। কিন্তু রাজ ফোন করেছে বহুবার কিন্তু রুপা আর কথা বলেনি তার সাথে।
.
এভাবেই শেষ হয়ে গেলো তাদের এত সুন্দর একটি ভালবাসা। ভুলটা কার ছিলো?  রাজের নাকি রুপার? রাজ কি রুপাকে বুঝাতে পারেনি? নাকি রুপা বুঝেও রাজকে বুঝতে পারেনি। একটা ভালবাসার উপর নির্ভর করে বিশ্বাস। যদি কাউকে বিশ্বাসই না করতে পারে। তাহলে ভালবেসেছিলো কি কারণে। 


.
.
.
Ridoy Nadim (((AR PagLaaa)))

(((সমাপ্ত)))

Comments