গিয়ে পৌঁছলাম আকাশদের গ্রামের বাড়িতে। সাথে আমি, আকাশ, আফিয়া, ইভা এবং ইভার আম্মু। সবাই খুব ক্লান্ত হয়ে গেছি। একটু বিশ্রাম নেয়া দরকার আমাদের। আমি রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। ঘুমিয়েও ইভাকে স্বপ্নে দেখতে পেলাম।রোমান্টিকতা ছিলো খুব স্বপ্নটা। ঘুম থেকে উঠে গোসল শেষ করলাম। খুব খিদেও পেয়েছে কিন্তু আকাশকেও খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এইভাবে অনেকটা সময় বসে রইলাম। একটু পর ইভা আসলো আমার রুমে।
.
- খাবার রাখা আছে টেবিলে। খিদে পেলে খেয়ে নিয়েন।
- আচ্ছা। আপনি খেয়েছেন?
- না একটু পর খাবো।
- ওহহহহ। আচ্ছা একসাথে খাবো সবাই। আকাশকে দেখতে পাচ্ছিনা যে কোথায় গেছে ওহ?
- আকাশ ভাইয়া তো একটু বাহিরে গেছে। কেনো আপনাকে বলে যায়নি?
- না। আসলে আমি ঘুমিয়ে ছিলাম তাই মনে হয় কিছু বলেনি।
- হুমমম। আচ্ছা ঠিক আছে। আমি এখন আসি।
- আচ্ছা টাটা।
.
চলে যাওয়ার সময় একটা মুচকি হাসি দিয়ে গেলো। এই মুচকি হাসির রহস্যটা তখন কিছুটা বুঝতে পেরেছিলাম। কিন্তু এখন পুরোপুরি বুঝে গেছি। আগেই বলেছিলাম ইভার প্রতি অনেকটা দূর্ভল হয়ে পরেছি। যত দেখছি ততই পাগল হয়ে যাচ্ছি তার প্রতি। হয়তো এর নামই ভালবাসা। এইদিকে খুদাও পেয়েছে অনেক কিন্তু একটু ভাব নিতে যেয়ে বিপদে পরে গেলাম।
.
কিছুক্ষন পর আকাশ আসলো। সবাই খাবার টেবিলে অপেক্ষা করছিলাম আকাশের জন্য। একটু লজ্জা পেয়েছিলাম তাই ভাল মতো খেতে পারছিলাম না। কিন্তু ইভার আম্মু মানে আমার হবু শাশুড়ি বুঝে যায় আমি লজ্জা পাচ্ছিলাম। মাঝে মাঝে টেরা চোখ দিয়ে ইভাকে দেখে যাচ্ছিলাম। অবশেষে দুপুরের খাওয়া শেষ করলাম ৩ টা বাজে।
.
আকাশের সাথে গ্রাম দেখতে বের হলাম। ইভাও যাবে আমাদের সাথে। আকাশ রাজি হতে চাচ্ছিলো না পরে আমি বললাম আমাদের সাথে যাওয়ার জন্য। আমি,আকাশ এবং ইভা, আমরা তিন জন ঘুরে দেখতে ছিলাম গ্রামটা। হঠাৎ একটি নৌকা দেখতে পেলাম। ছোট বেলা থেকেই নৌকায় উঠার অনেক ইচ্ছে ছিলো। আমার সাথে ইভাও বলতে লাগলো নৌকাতে উঠবে। কিন্তু আমি সাঁতার জানতাম না। পরে উঠলাম নৌকাতে আকাশ চালাচ্ছিলো আর আমি এবং ইভা বসে ছিলাম।
.
- কিরে দোস্ত তুই মাঝি হইলি কবে থেকে?
- শালা এখন আমি মাঝি হয়ে গেলাম।
- হুমমম মাঝির মতোই তো সুন্দর করে চালাচ্ছিস।
- চুপ করে বসে থাক। নড়া-চড়া করলে কিন্তু পরে যাবি।এমনিতেই সাঁতার পারিসনা। আর এই পুকুরে অনেক গর্ত কিন্তু পরে গেলে আর উঠতে পারবি না।
.
একটু ভয় পেয়ে গেলাম। শক্ত করে ধরে রাখলাম যাতে না পরি নৌকা থেকে। অন্যদিকে ইভা আর আকাশ হাসছিলো আমার কান্ড দেখে। আমাকে ভয় দেখানোর জন্য আকাশ নৌকাটা একটু জোড়ে টান দিলো বৈঠা দিয়ে। নৌকাটা অনেকটা ধুলার কারণে ইভা নৌকা থেকে পরে যায়। আমিও সাথে সাথে পানিতে ঝাপ দিলাম ইভাকে উঠানোর জন্য। আকাশ আমার কান্ড দেখে পুরাই অবাক হয়ে গেলো। আমিও ডুবে যাচ্ছিলাম পরে আকাশের হাত ধরে উঠে আসলাম দু'জনে। পানি খেয়ে ফেলছিলাম অল্প কিছু।
.
আকাশ বকা দিচ্ছে আমাদের দু'জনকেই। তারপর নেমে গেলাম নৌকা থেকে। আমার তখন খেয়াল ছিলো না যে আমি সাঁতার পারি না। শুধু এটাই খেয়াল ছিলো ইভা পুকুরে পরে গেছে তাকে উঠাতে হবে। একটু রেগে যায় আকাশ। পরে বাসায় চলে আসলাম। তখন ছিলো শীত কাল ভিজে গেছি ঠান্ডায় কাঁপতেছিলাম। পরে ড্রেস চেঞ্জ করলাম শীতের কাপর পরে আসলাম।
.
একটু পর আকাশ আসলো আমার সামনে।
- রিয়াদ আমি কিছুটা আন্দাজ করতে পারছি। ইভা পুকুরে পরে যাবার সাথে সাথে তুই ঝাপ দিলি। তুই আমার বন্ধু আমি বুঝতে পারি তোর আশেক বিষয়।
- আসলে দোস্ত সত্যি কথা বললে রাগ করবিনা তো?
- তোর বলতে হবে না। আমি বুঝে গেছি। তুই শুধু আমার বন্ধু বলে তোকে কিছু বলিনি। অন্যকেউ হলে দেখতি।
- তুই কি রেগে আছিস আমার প্রতি?
- নাহ রেগে নেই। তবে ইভা কি জানে???
- না তাকে তো বলিনি কিভাবে জানবে।
- আচ্ছা সাবধানে করিস যা করার। আন্টি যেনো টের না পায়।আর আমি তো আছিই।
- দোস্ত তোরে যে কি বলে ধন্যবাদ দিবো।
- হইছে হইছে আর ধন্যবাদ লাগবে না। রাতে বের হবো তুই রেডি থাকিস।
- কোথায় যাবি?
- আরে বেটা খেজুরের রস চুরি করে খাবো। এটাই হচ্ছে একটা মজা।
- শালা চোর।
- হুমমম দুলাভাই আমিই চোর আপনে খুব ভাল?
- ধুররর বেটা লজ্জা লাগে তো এইসব কি বলিস।
.
আমার কথা শুনে আকাশ হেসে দিলো। আসলেই একটু লজ্জ্বা লাগলো "দুলাভাই " শোনার পর। পরে রুমে বসে গান শুনছিলাম আর ঐ গুলো চোখে ভাসছিলো। ইভাকে প্রথম ছুঁয়েছি এটা কেনো জানি অন্যরকম ফিল হচ্ছিলো। যাইহোক ইভাকে খুব বেশিই ভালবেসে ফেলেছি। কিন্তু তাকে কিভাবে জানাবো আমার ভালবাসার কথা। এটাই ভাবতেছিলাম চোখ বন্ধ করে।
.
- উঁহুম (হালকা জোরে একটু কাশি দিলো ইভা)
- চোখ মেলে দেখলাম ইভা সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
- কি করছেন??
- গান শুনছিলাম।
- ওহহহহ। ধন্যবাদ।
- কেনো?
- ঐ যে নিজের জীবন বাজি রেখে আমাকে উঠালেন যে তাই। [কথা গুলো বলছিলো আর মিটি মিটি হাসছিলো ]
- ওহহহহ আসলে এটা [থেমে গেলাম ]
- আসলে এটা কি?
- না কিছু নাহ।
- আচ্ছা আম্মু ডাকছে এখন যাই। পরে কথা হবে আর আকাশ ভাইয়ার সাথে বলা কথা গুলো আমি শুনেছি।
.
বলেই চলে গেলো একটা হাসি দিয়ে। আমি মনে মনে ভাবতেছি কিভাবে শুনলো আমাদের কথা গুলো। যাক তাহলে আমার আর কষ্ট করে তাকে বলতে হবে না। কিন্তু তার চেহারা দেখে বুঝতে পারলাম কিছু একটা পজিটিভ হতে যাচ্ছে। একটু পর আকাশের সাথে বের হলাম বাহিরে। খেজুরের রস খাওয়ার জন্য তাও আবার চুরি করে।
.
.
.
📝 Ridoy Nadim (((AR PagLaaa)))

Comments
Post a Comment