- ঐ যে চাঁদটা দেখতে পাচ্ছো?
- হ্যাঁ। কিন্তু কেনো?
- চাঁদের মতোই সুন্দর তোমার মুখ খানি।
- ইসসসস, এভাবে বললে তো লজ্জা লাগে।
- আমার বউটা দেখি লজ্জাও পায়।
- লজ্জা কি শুধু তুমিই পাও? আমার কি লজ্জা নেই।
- আমি কি তা বলেছি?
- তাহলে কি বলেছো?
- মাথা।
- কার তোমার?
- না তোমার।
- না। বলো তোমার। বলো বলো।
- আচ্ছা আমারই। এইবার খুশি??
- হুমম খুব খুশি।
- চলো এবার রুমে যাই।
- এখুনি? আর একটু থাকি না।
- না আর নাহ। অনেক রাত হয়ে গেছে।
- আচ্ছা চলো তাহলে।
.
প্রতিরাতই ছাদের উপর এসে চাঁদ দেখাটা যেনো তার রুটিন হয়ে গেছে। বুঝিনা কি দেখে চাঁদের মধ্যে। যতবারই জিজ্ঞাসা করেছি, ততোবারই বলেছে তোমায় দেখি। মাঝে মাঝে বলেও ফেলি আমিতো তোমার পাশেই আছি, তাহলে কেনো প্রতিরাতে ছাদে এসে চাঁদ দেখো? সে বলে ছিলো, চাঁদের আলোর মাঝে আমি তোমায় দেখতে পাই। আর তোমার দিকে তাকালে শুধু লজ্জা পাই। তাইতো চাঁদ দেখি।
.
এরকম কথা শুনলে সত্যি খুব হাসি পায়। আসলেই সে কখনো আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারেনি। অন্যদিকে তাকিয়ে কথা বলবে সবসময়। খুবই লজ্জাবতি একটি মেয়ে সে। তার ভালবাসার প্রকাশ্যটা একেবারে অন্যরকম। আমি নিজেই তো বুঝিনা অনেক সময়।
.
রাত্রি অনাথ বাচ্চাদের খুব ভালবাসতো। ও হ্যাঁ তার নাম রাত্রি। আমি তাকে চাঁদের বুড়ি বলেই ডাকি। আর সে আমাকে বুড়া বলতো। প্রতি সপ্তাহে এক বার হলেও এতিমখানায় গিয়ে অনাথ বাচ্চাদের দেখতে যেতো এবং বাসা থেকে খাবার রান্না করে নিয়ে যেতো। নিজ হাতে বাচ্চাদের খায়িয়ে দিতো। কিন্তু আমাকে কখনো খাইয়ে দেয়নি। অনেক রিকুয়েস্ট করার ফলেও পাইনি।
.
রাত্রি খুবই বই পোকা ছিলো। মানে সারাক্ষণ বইয়ের মধ্যেই লেগে থাকতো। বই কাছে থাকলে তার আর কিছুই লাগবে না। আর আমি ছিলাম বউ পোকা। মানে আমার বউয়ের পাগল। এভাবে ভালবাসাটা যেনো বেড়েই যাচ্ছিলো দিন দিন। কিন্তু একটা সময় সেই ভালবাসাটা হাড়িয়ে যায় কোনো বাতাসের প্রবলবেগে।
.
বিয়ের এক বছর হলো আমাদের। এর মধ্যে অনেকবার বলার পরেও রাত্রি ভয়ে রাজি হতে চাইছিলো না বাবু নেওয়ার জন্য। সে শুধু বলতো যদি আমি মারা যাই, তখন তোমাকে কে ভালবাসবে? কে তোমাকে এতো কেয়ার করবে। তার কথা ভেবে আমি আর তাকে এইসব ব্যাপারে জোর করিনি।
.
কয়েকমাস পর সেই বলে, জানো আমার না খুব ইচ্ছে আমাদের একটা ছোট বাবু থাকবে। আর বাবুকে আমি অনেক আদর করবো। আমার ইচ্ছেটা কি পূরণ করবে? কথা গুলো ঐ দিন এমন ভাবে বলেছিলো যা পিচ্ছিরা যেরকম আবদার করে ঠিক ঐ রকম।
.
এভাবে আমাদের জীবন খুব ভালভাবেই কেটে যাচ্ছিলো। খুবই ভালবাসতাম দুজন দুজনাকে। এর কিছুদিন পর রাত্রি প্রেগন্যান্ট। চিকিৎসকের নিয়ম অনুযায়ী কোনো ভারি কাজ বহন করছে না। তখন যেনো তার প্রতি দায়িত্ব টা আরো বেড়েই যায়। ঠিকমতো খাবার খাওয়া, শরীরের যত্ন করা সব কিছুই খেয়াল করতে হচ্ছে।
.
হঠাৎ একদিন,
.
- এই শোনো। আমার না কেমন জানি খুব ভয় করছে।
- কিসের ভয়? আমি আছিতো।
- জানিনা কেনো জানি মনে হচ্ছে এইসব।
- বাদ দেও এইসব।
.
সাহস জাগানোর জন্য বুকি জড়িয়ে নিলাম। সে কান্না করে দেয়। আমি তার চোখের জল মুছে দিলাম। এবং শক্ত করে বুকে জড়িয়ে রাখলাম।
.
- আচ্ছা আমি যদি কখনো মারা যাই তুমি কিভাবে থাকবে?
- কি সব ফালতু কথা বলছো তুমি?
- বলোনা। তুমি কি আবার বিয়ে করবে?
- তুমি কোথাও যাবে না। কোথাও যেতে দিবো না তোমায় আমি।
- আমাদের বাবুটাকে খুব ভালবাসবে। কখনো কষ্ট দিবে না তো।
- না দিবো না। এখন ঘুমাও তো তুমি।
.
বুকের মধ্যে আগলে রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম। রাত ৩ টায় রাত্রির চিৎকার শুনে উঠলাম। তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। এবং সবাইকে খবর জানালাম। অপারেশন থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম। অপেক্ষা করছিলাম রাত্রির জন্য।
.
কিছুক্ষণ পর ডক্টর বের হলো। তার কোলে একটা ছোট্ট কিউট বাবু। সবাই খুব খুশি বাবুকে দেখে।
.
- ডক্টর রাত্রি কেমন আছে?
- সরি। বাচ্চার মাকে বাঁচানো যায়নি।
.
কথাটি শুনে মনে হলো উপরের আকাশটা মাথার মধ্যে ভেঙে পরলো। থিয়েটারে গেলাম দৌড়ে রাত্রির কাছে। সে ঘুমিয়ে আছে। কতো বার ডাকলাম অথচ একটি বারের জন্যও সে চোখ মেললো না। সে ঘুমিয়ে আছে। আর ঘুম থেকে উঠবে না সে। আর কথা বলবে না আমার সাথে। চাঁদ দেখার জন্য আর বায়ণাও ধরবে না।
.
মেয়ে সন্তান জন্মায়। মেয়ের নাম রাখা হয় চাঁদনি। চাঁদনিকে নিয়েই বেঁচে আছে রিয়াদ। রিয়াদ এখনো তার রাত্রিকে খুব মিস করে। মেয়ের মাঝেই যেনো রাত্রির ছায়া খুঁজে পায়।
.
ভাল থাকুক রাত্রি ঐ বহুদুরে। তার স্মৃতি গুলো নিয়েই বেঁচে আছে রিয়াদ। বেঁচে থাকুক তাদের ভালবাসার বন্ধন চাঁদনিকে নিয়ে।

.
.
.
Ridoy Nadim (((AR PagLaaa)))
Comments
Post a Comment