✴স্বপ্নময়ী✴ (১ম পর্ব)



- তোমার হাতটি একটু ধরতে পারি?
- এতে আবার বলার কি আছে!
- না তবুও। ধরবো কিনা সেটা বলো।
- যদি না বলি তাহলে ধরবে না?
- না করবে কেনো?
- জানোই তো না করবো না। তারপরেও কেনো বলো?
- এমনি। 
- পাগল একটা।
.
স্নিগ্ধার পাশে দাঁড়িয়ে আছে পিয়াস। সূর্যের আলো এসে পড়ছে চোখের মধ্যে। তখন সকাল ১১ টা হবে। দু'জনে একে অপরের হাতটি ধরে হাটছিলো। পাশ দিয়ে ছোট একটি মেয়ে হাতে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাদের সামনে। স্নিগ্ধার লাল গোলাপ অনেক পছন্দের। আর পিয়াস চাইতো তার সব পছন্দের জিনিষ গুলো দিয়ে তাকে হাসি-খুশি রাখতে। 
.
ছোট মেয়েটির কাছ থেকে গোলাপ গুলো কিনে স্নিগ্ধার হাতে দিলো। সে ফুল গুলো নিয়ে খুব খুশি। সকল ভালবাসার মানুষ গুলোই চায় তার প্রিয়মানুষটিকে হাসি-খুশি দেখতে। হাসির মধ্যেই লুকিয়ে থাকে প্রিয়মানুষটির ভালবাসা। যা সামান্য কিছুতেই পূরণ করা সম্ভব।
.
পিয়াস এবং স্নিগ্ধা কিছুদিন হলো বিয়ে করেছে। একে অপরের ভালবাসা যেনো কোনো দিক থেকেই কমতি নেই। দু'দিন হলো কুয়াকাটা বেড়াতে আসে তারা। দু'জন দু'জনার হাতটি ধরে হাটছে। স্নিগ্ধার অন্য হাতে এক গুচ্ছ গোলাপ ফুল।
.
আশে পাশের কিছু মানুষ তাকিয়ে আছে তাদের দিকে যেটা পিয়াস লক্ষ করে। অন্যলোকের কাছে যদিও এটা পাগলামি মনে হচ্ছিলো কিন্তু তাদের কাছে মনে হচ্ছিলো এটাই ভালবাসা। স্নিগ্ধা মিটি মিটি হাসছে পিয়াসের দিকে তাকিয়ে।
.
- হাসছো যে,
- হাসি পাচ্ছে তাই হাসছি। 
- হুম হাসো। হাসিতে তোমাকে খুব সুন্দর লাগে।
- ওহহহ তাই বুঝি?
- হ্যাঁ তাই।
- অনেক তো হাটা-হাটি করলাম। এখন চলো হোটেলে যাই।
- এখুনি? আচ্ছা চলো তাহলে।
.
হোটেলে গিয়ে রুমের ভেতর প্রবেশ করলো। বিছানায় শরীর ঠেকাতেই পিয়াস ঘুমিয়ে পড়ে। সে ঘুম ভেংগে গিয়ে বাস্তবে ফিরে এলো পিয়াস। 
.
- পিয়াস, পিয়াস উঠ তাড়াতাড়ি।
- আর একটু ঘুমাতে দেও না স্নিগ্ধা।
- কি... স্নিগ্ধা, স্নিগ্ধা কে? 
.
চোখ মেলে দেখে পিয়াসের মা দাঁড়িয়ে আছে তার পাশে। সাথে সাথে শুয়া থেকে উঠে বসে। এবং মনে মনে বলে, এতক্ষণ কি তাহলে স্বপ্ন দেখছিলাম? আর স্বপ্ন দেখেই ঘুমের মধ্যেই ঐ মেয়ের নাম বলে ফেললাম। 
.
- কিরে বললি না স্নিগ্ধা কে?
- জানি না তো। 
- তাহলে এই নাম বললি কেনো?
.
কিছু না বলেই বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হতে যায়। এবং ভাবছে যদি মায়ের হাতে কিছু থাকতো। বিশেষ করে ঝাড়ু থাকলেই হতো তাহলে আজ পিঠের মধ্যে ঝাড়ুর বারি পড়তো। আল্লাহ্‌ বাঁচিয়েছে তার মায়ের হাতে ঝাড়ু ছিলো না।
.
স্নিগ্ধা হচ্ছে পিয়াসের ফুফাতো বোন। পিয়াস অনেক পছন্দ করে। কিন্তু কখনো তাকে বলতে পারেনি তার মনের কথা। তাই তো তার কথা ভেবে ভেবেই দিন-রাত কাটিয়ে দেয়। আর এর কারনেই সে স্বপ্নের মধ্যেও আসে। পিয়াস একটু ভয় পেয়ে যায়। এর কারণেই ভয় পায় যে তার আম্মু স্নিগ্ধার নাম শুনে ফেলে। তাহলে কি সব বুঝে ফেললো তার আম্মু?
.
ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে বের হয় বাসা থেকে। দিনটি ছিলো শুক্রবার। পিয়াস ক্রিকেট খেলতে খুব পছন্দ করতো। প্রতি শুক্রবার তাদের এলাকার মাঠে খেলা হয়। পিয়াস খুব ভাল ব্যাটিং করতে পারতো। মাঝে মাঝে বোলিং করতো। ধরতে গেলে অল রাউন্ডার ছিলো পিয়াস। কিন্তু লেখা-পড়ায় ছিলো ফাঁকিবাজ। পিয়াস এইবার এইচ এস সি পরিক্ষা দেয় এবং রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করছে। 
.
ঐ দিন মাঠে নেমে খেলাতেও মন বসছিলো না পিয়াসের। মাথার মধ্যে শুধু স্বপ্নের কথাটাই ঘুড়পাক খাচ্ছিলো। মাঠের এক পাশে বসে আছে। অনেক গাছ থাকাতে সেইখানে ছায়া থাকে সবসময় এবং খুব বাতাসও। বসে বসে ভাবছে আর একা একাই পাগলের মতো হাসছে।
.
হাসার কারণ ছিলো, যে মেয়ের কাছে গেলে বুক ধুবধুব করে, মাথা ঘামাতে থাকে সেই মেয়েই নাকি স্বপ্নে তার বউ। স্নিগ্ধা ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়তো। দেখতে শ্যামলা ছিলো। তেমন সুন্দরী ছিলো না। কিন্তু পিয়াসের মন চুরি করে ফেলেছিলো তার কথা বলার ধরন। অনেক সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারে সে। এবং খুব ভদ্র ছিলো। চেহারার মধ্যেও একটু আধটু মায়াবতী ভাব রয়েছে। 
.
মোবাইলের রিংটোনে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দেখে স্কিনে তার মায়ের নাম ভেসে আছে। কিছুটা ভয় পেয়ে যায় তার মায়ের কল দেখে। কি না কি বলে তা ভেবে কলটা রিসিভ করছেনা। দ্বিতীয় বার আবার কল দেয় পরে রিসিভ করে।
.
- কল ধরতে এতক্ষণ লাগে?
- মোবাইল সাইলেন্ট ছিলো তাই শুনি নাই। 
- কই তুই? 
- আম্মু আমি তো মাঠে।
- তাড়াতাড়ি বাসায় আয়। ২ মিনিটের মধ্যে।
- কেনো আম্মু?
- আসলেই বুঝতে পারবি।
- আচ্ছা আসতেছি।
.
পিয়াস যে স্নিগ্ধাকে পছন্দ করতো তা একটু আধটু স্নিগ্ধা বুঝতে পারতো। কিন্তু কখনো পিয়াস প্রকাশ করেনি যার ফলে স্নিগ্ধা পুরোপুরি শিউর ছিলো না। ভয়ে ভয়ে বাসার দিকে হাটা শুরু করলো পিয়াস। এবং ভাবছে আজ মনে হয় সত্যি সত্যি ধরা পরে গেলো তার মায়ের কাছে। 
.
.
.
হৃদয় নাদিম (((AR PagLaaa)))

Comments