বাসার সামনে এসে দরজায় নক করে পিয়াস। উপাশ থেকে দরজা খুললো রুমি। রুমি ছিলো স্নিগ্ধার ছোট বোন। ৭ম শ্রেণীতে পড়তো রুমি। খুব খুশি হয় রুমিকে দেখে।
.
- কেমন আছো রুমি?
- হুম ভাল আছি পিয়াস ভাইয়া। তুমি কেমন আছো?
- আমিও ভাল আছি।
- কখন আসলে?
- আধা ঘন্টা হবে আসছি।
- ওহহহহহ। ভালোই হলো এসেছো। ফুফু কোথায়?
- ঐ রুমে আছে সবাই।
- আচ্ছা চলো তাহলে।
- তুমি দেখা করে আসো। আমি কার্টুন দেখবো।
- ঠিক আছে।
.
টিভি অন করে কার্টুনের চ্যানেলে দেয়। রুমি কার্টুন দেখছে আর পিয়াস বাকি সবার সাথে দেখা করতে যায়। সবার সাথে দেখা করার কথা বললেও স্পেশালি স্নিগ্ধাকে দেখার জন্যই যায়। কিন্তু যা হলো সবাই ছিলো শুধু স্নিগ্ধা ছিলো না। পরে জানতে পারে তার পরিক্ষা ছিলো যার কারণে আসতে পারেনি। ব্যাচারা পিয়াসের মনটা খুব খারাপ হয়ে যায় কথাটি শুনে।
.
- পিয়াস বাজার থেকে এইগুলো নিয়ে আয় তো।
<লিস্ট ধরিয়ে দিয়ে বললো।>
- আচ্ছা যাচ্ছি।
- তাড়াতাড়ি নিয়ে আসবি।
- ঠিক আছে আম্মু।
.
রাস্তা দিয়ে হাটছে মন খারাপ করে। মন খারাপ হবারই কথা। যাইহোক যা হবার হয়েছে। পিয়াস লিস্ট অনুযায়ী সবকিছু নিয়ে আসে বাজার থেকে। বাসায় এসে শুনতে পেলো স্নিগ্ধার পরিক্ষার সময় পিছিয়েছে। এবং বিকেলেই আসবে সে। এটা শুনে তো খুব খুশি পিয়াস। কি যে আনন্দ হচ্ছিলো তার মনে।
.
- পিয়াস?
- জ্বি ফুপ্পি।
- তুই বিকেলে ফ্রি আছিস?
- হ্যাঁ ফুপ্পি।
- তাহলে তুই স্নিগ্ধাকে একটু নিয়ে আসিস কষ্ট করে। ও তো একা একা আসতে পারবে না।
- আচ্ছা ঠিক আছে ফুপ্পি। সমস্যা নেই।
.
পিয়াসের আনন্দ কে দেখে। এরকম দায়িত্ব পেয়ে পিয়াস খুব খুশি হয়েছে। লাল রংয়ের পাঞ্জাবিটা পড়ে জুম্মার নামায পড়ে আসে পিয়াস। দুপুরের খাবার ভাল মতো না করেই বের হয় মুন্সীগঞ্জ যাওয়ার উদ্দেশ্যে। স্নিগ্ধাদের বাসা ছিলো মুন্সীগঞ্জ। যেতে একটু সময় লাগবে তাই তাড়াতাড়িই বের হতে হয়েছে।
.
লাল পাঞ্জাবী এবং সাদা রংয়ের প্যান্ট পড়া ছিলো। লাল এবং সাদা রং দু'টো খুব পছন্দের ছিলো স্নিগ্ধার। পরে পিয়াসেরও খুব পছন্দের হয়ে যায় রং গুলো। কমলা পুর স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠে। বাস ভ্রমণ করতে পারতো না পিয়াস। তাই ট্রেন ভ্রমণ করে। সোজা নারায়ণগঞ্জ চাষাড়া এসে নামে ট্রেন থেকে। নদী পাড় হয়ে মুন্সীগঞ্জ গিয়ে পৌঁছায়।
.
যেতে যেতে ৪:৩০ টা বেজে গেলো। স্নিগ্ধাদের বাসার সামনে এসে পরে। দরজা নক করতে উপাশ থেকে দরজা খুলে স্নিগ্ধা। পিয়াস তো তাকিয়েই আছে তার দিকে। সেও লাল রংয়ের একটা ড্রেস পড়েছে। পিয়াস তো মুগ্ধ হয়ে তাকিয়েই আছে তার দিকে। যেনো পলক সড়ছেই না। স্নিগ্ধা লজ্জা পেয়ে যায়।
.
- কেমন আছো? ভাইয়া
- ভাইয়া ডাক শুনে পিয়াসের চোখ সড়লো। হ্যাঁ ভাল আছি। তুমি কেমন আছো?
- এইতো ভাল আছি।
- রেডি হয়েছো তো?
- হ্যাঁ রেডি।
- তাহলে চলো যাওয়া যাক।
- এখুনি? মাত্রই তো আসলে একটু বিস্রাম করো। পরে যাওয়া যাবে।
- না সমস্যা নেই। চলো।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
.
ট্রেনে করে আসলে অনেক পথ ঘুরতে হয়। আর স্নিগ্ধাকে নিয়ে এতো ঘুরা-ঘুরি ঠিক হবে না। তাই বাসে করে যেতে হবে ঢাকা। বাসে উঠে তারা। বসে আছে দু'জন। স্নিগ্ধা জানালার পাশের সিটে বসে আছে আর পিয়াস তার পাশের সিটে। দু'জনই চুপ-চাপ বসে আছে। কারো সাথেই কোনো কথা বলছেনা।
.
- ভাইয়া তোমার পরিক্ষা কেমন হলো?
- আলহামদুলিল্লাহ্ ভাল। < স্নিগ্ধার ভাইয়া ডাকটা পিয়াসের পছন্দ না>
- ওহহহহহ ভালো হলেই ভালো।
- হুম। তোমার পড়াশুনো কেমন চলছে?
- মোটামুটি ভাল ভাবেই চলছে ভাইয়া।
- মোটামুটি কেনো? আচ্ছা এত ভাইয়া ভাইয়া বলতে হয়?
.
কথাটি বলে সাথে সাথে পিয়াস অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো। পিয়াস সয্য করতে না পেরে প্রকাশ করেই ফেলে কথাটি। স্নিগ্ধাও চুপ-চাপ বসে আছে। স্নিগ্ধা তো বুঝতোই কিন্তু সে পিয়াসের মুখ থেকেই শুনতে চাইতো। কিন্তু পিয়াস কি আধোও বলতে পারবে স্নিগ্ধাকে তার মনের কথা?
.
খানিকপথ যাওয়ার পর জ্যামে আটকে পরে তারা। এইদিকে সন্ধ্যা হতে লাগলো। বাস চলছে আস্তে আস্তে জ্যামের কারণে। পিয়াসের অবস্থা তো খারাপ হতে লাগলো বমি বমি ভাব। অনেক কষ্টে কন্ট্রোল করতে পেরেছে। স্নিগ্ধা তো ঘুমিয়েই আছে। পিয়াস বসে বসে তার ঘুমময় চেহারাবন্দি হয়ে যায়।
.
ঘুমানোর সময় তাকে আরো অনেক সুন্দরী লাগে। ঘুমানো অবস্থায় স্নিগ্ধা পিয়াসের কাঁধে মাথা ঠেকিয়ে দেয়। পিয়াসের খুব ভাল লাগছিলো তখন। কখনো ভাবেনি সে এই দিনটির কথা। একসাথে বাসে বসে আসাটা, তার কাঁধে মাথা রাখবে এটা কখনো ভাবতেও পারেনি পিয়াস। লবাস ব্রেক করাতে স্নিগ্ধা ঘুম থেকে উঠে যায়। এবং সাথে সাথে মাথা সড়িয়ে নেয় কাঁধ থেকে। হয়তো লজ্জা পেয়েছে।
.
- আর কতক্ষণ লাগবে?
- কাছা-কাছি এসে পড়েছি। আর অল্প কিছুক্ষণ লাগবে।
- ওহহ আচ্ছা।
- হুমম। ঘুম পেলে ঘুমিয়ে থাকতে পারো।
- না ঘুম চলে গেছে। <মুচকি হেসে>
.
স্নিগ্ধা মুচকি হাসছে আর পিয়াস তার হাসির প্রেমে পড়ছে। পিয়াস নতুন করে তার হাসির প্রেমে পড়ে গেলো।
.
.
.
Ridoy Nadim (((AR PagLaaa)))

Comments
Post a Comment