বাস থেকে নেমে যায় তারা। রাত তখন ৮:০০ টা বেজে গেছে। প্রচন্ড জ্যামের কারণে দেড়ি হয়ে যায়। বাস ভ্রমণ করার ফলে পিয়াস এবং স্নিগ্ধা দু'জনই খুব ক্লান্ত হয়ে যায়। রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে। অনেকক্ষন অপেক্ষার ফলে অবশেষে একটা রিক্সা দেখতে পেলো।
.
রিক্সায় উঠলো তারা। পিয়াসের পাশে স্নিগ্ধা। বাসের মধ্যেও একসাথে বসেছিলো। কিন্তু রিক্সার মধ্যে এত বেশি জায়গা না থাকাতে পিয়াসের বাম হাত এবং বাম পা স্নিগ্ধার হাত-পায়ের সাথে লেগে ছিলো। যা একটু বেশি রোমান্টিক মনে হচ্ছিলো। দু'জনই খুব লজ্জা পাচ্ছিলো। কিন্তু আবার ভালও লাগছিলো অনেক।
.
অনেক বাতাস থাকার কারণে স্নিগ্ধার ওড়নাটা অনিচ্ছাকৃতভাবে পিয়াসের চোখে-মুখে এসে লাগে। এতে পিয়াস মনে মনে খুব আনন্দ পাচ্ছিলো। দু'জনই চুপ-চাপ বসে আছে। কথা বলছে না কিন্তু তাদের মন ঠিকই কথা বলছে। যা কেউ শুনতে পাচ্ছে না।
.
- খুব বাতাস তাই না?
- হ্যাঁ অনেক বাতাস। অনেক ভাল লাগছে বাতাসটা তাই না?
- হুমম। আচ্ছা পিয়াস ভাইয়া তোমার সময় কাটে কিভাবে?
- আবারো?
- সরি সরি।
- হুমম ঠিক আছে।
- বললে না তো।
- কি বলবো?
- যা জিজ্ঞাসা করলাম তা।
- ওহহহ। আপাতত খেলা নিয়ে সময় কেটে যায়। রাতের বেলায় গান শুনে সময় কাটে।
- ওহহ খুব ভাল।
- হুমম। তোমার?
- আমার তো পড়াশুনো নিয়েই বসে থাকতে হয়।
- এটা ভাল। পড়াশুনো ভাল মতো করো।
- হুম করি তো।
- মাঝে মাঝে আমাকে নিয়েও ভেবো একটু। < আস্তে করে বলে>
- কিছু বললে?
- নাহ নাহ কিছু বলিনি।
.
বাসার সামনে এসে পরে। রিক্সা থেকে নেমে বাসার ভেতর যায়। পিয়াসের হাতে স্নিগ্ধার ট্রাবেল ব্যাগ ছিলো। ছেলেদের জন্মই মনে হয় মেয়েদের ট্রাবেল ব্যাগ টানার জন্য। তবে পিয়াস তার ট্রাবেল ব্যাগটা নিয়ে হাটছে কিন্তু বিরক্ত হচ্ছে না একটুও। প্রিয় মানুষের সব কিছুই অনেক আপন মনে হয়। হউক ব্যাগ কিংবা হউক জুতো।
.
বাসার মধ্যে যায়। ফ্রেশ হয়ে নিলো দু'জনই। সবাই এক সাথে বসে কথা বলছে। ছোট বেলার গল্প বলছে পিয়াসের আম্মু এবং ফুপ্পি। আর সবাই শুনছে আর হাসছে মজার কাহিনী শুনে। মাঝে মাঝে পিয়াস স্নিগ্ধার দিকে আড়ালে তাকায়। অনেকবার দু'জনের চোখে চোখ পড়ে যাচ্ছিলো। তখন মাথা নিচু করে ফেলছে।
.
গল্প শেষে একসাথে বসে রাতের খাবার খেয়ে নেয়। খাওয়ার সময়ও একে অপরকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে। খাওয়া শেষ করে ঘুমাতে যায়। সবাই ঘুমিয়ে পড়ে কিন্তু পিয়াসের চোখে ঘুম নেই। তার চোখের মধ্যে ভেসে আসছে সেইদিনের সকল ঘটনা গুলো। চোখ বুঝলেই স্নিগ্ধার মুখ খানি ভেসে উঠে তার চোখে।
.
পিয়াস ভাবছে এরকম একটি দিন কখনো আসবে ভাবেনি। দু'জন কতো সময় ছিলো একসাথে। এরকম সব কথা গুলো পিয়াসের মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিলো। স্নিগ্ধা কি কিছু বুঝেনা পিয়াস তাকে কতটা ভালবাসে। ভাবতে ভাবতেই কখন যে ঘুমিয়ে পড়ে বুঝতেই পারেনি।
.
সকালে ঘুম ভাংগে তার মায়ের ডাকে। রাতে ঘুমাতে একটু দেড়ি হওয়ার ফলে উঠতে ইচ্ছে করছিলো না তার। তবুও তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পড়ে স্নিগ্ধাকে এক পলক দেখার জন্য। কিন্তু স্নিগ্ধা তখনো ঘুমাচ্ছিলো। হয়তো সেও রাতে ঘুমাতে পারেনি।
.
হোটেল থেকে নাস্তা নিয়ে আসে সবার জন্য। সবাই নাস্তা করে নেয়। একপলক দেখে দু'জন দু'জনাকে। পিয়াস মাঠে যায়। কিন্তু খেলায় মন বসছিলো না কোনোমতেই। শুধুই স্নিগ্ধার কথা ভাবছে। পিয়াসের বন্ধু নাদিমের সাথে দেখা হয়ে যায়। নাদিম তার ছোট বেলার বন্ধু। একে অপরের সব কিছুই জানতো।
.
- আচ্ছা পিয়াস তোর কাহিনী তো কিছুই বুঝছি না। হঠাৎ কয়েকদিন ধরে দেখছি কেমন জানি অন্যমনস্ক হয়ে আছিস। কি ভাবিস এতো?
- কই কিছুনা তো।
- আমার কাছে লুকাস না। কি হয়েছে খুলে বল।
- স্নিগ্ধা আসছে আমাদের বাসায়। গতকাল নিয়ে আসছি ওদের বাসা থেকে।
- তুই নিয়ে আসছোত?
- হ্যাঁ।
.
পরে সব কিছু খুলে বলে নাদিমকে। নাদিম ও তাকে সাপোর্ট দিচ্ছিলো। যার কারণে পিয়াসের মনে সাহস জাগছিলো একটু করে।
.
- তো এখন কি করবি?
- কি করবো? তুই বল।
- আমি যা বলবো তাই করবি তো?
- হুম করবো দোস্ত।
- তুই সোজা প্রপোজ কর তাকে।
- কি বলিস। এটা কিভাবে করবো। ভয় লাগে আমার।
-শালা স্নিগ্ধা বাঘ নাকি ভাল্লুক? যে ভয় করে।
- জানিনা। কিন্তু অনেক ভয় করে।
- ভয় করলেও ভয়টা কাটিয়ে সরাসরি বলে ফেল।
- আচ্ছা দেখি। দোয়া করিস দোস্ত।
.
পিয়াস বাসায় এসে পড়ে। স্নিগ্ধাকে খুঁজছে পরে দেখতে পেলো টিভি দেখছে। পিয়াসের টিভি দেখা একেবারেই পছন্দ ছিলো না। কিন্তু সেইদিন টিভি দেখার জন্য সোফায় বসে আছে। আসলে টিভি দেখার জন্য বসেনি। বসে আছে তার স্বপ্নময়ী কন্যাকে দেখার জন্য।
.
- কিরে তুই টিভির রুমে?
- টিভি দেখছি আম্মু।
- তুই হঠাৎ টিভি দেখছিস। কখনো তো টিভির ধারের কাছেও আসতে দেখিনি তোকে।
- আজ ইচ্ছে হচ্ছে তাই দেখছি।
- গোসল করে নামায পড়তে যা।
- হুমম যাচ্ছি।
.
পিয়াসের কথা শুনে স্নিগ্ধা হেসে দেয়। হাসারই কথা অপছন্দের জিনিষ গুলো এখন পছন্দ হয়ে যাচ্ছে পিয়াসের। প্রিয় মানুষটি পাশে থাকলে সবকিছুই খুব ভাল লাগে।
.
- হাসছো কেনো?
- না এমনি।
- এমনি কেউ হাসে?
- আমি হাসি।
- ভাল।
.
বলেই উঠে পরে পিয়াস। গোসল করে মসজিদে যায় নামায পড়তে। নামায শেষ করে বাসায় এসে দুপুরের খাবার করে। স্নিগ্ধা ঘুমিয়ে পড়ে দুপুরে। পিয়াসের ভাল লাগছিলো না। তাই গিটারটা নিয়ে ছাদে যায়। সখের বেসে গিটারটা কিনে পিয়াস। ছাদে বসে বসে গিটার বাজাচ্ছে। সময় কাটানোর জন্য। কিন্তু তখন তার কাছে ১ মিনিট মনে হচ্ছে ১ বছরের মতো। স্নিগ্ধাকে অনেক মিস করছে।
.
গিটার বাজাচ্ছে সাথে গান গাচ্ছে আস্তে আস্তে। মানুষ প্রেমে পড়লে তখন মনের মধ্যে রোমান্টিক গান ঘুরাফেরা করে। পিয়াসেরও ঠিক তেমনই হচ্ছিলো। গিটারের সুর তুলে -
" এই জীবনে আর কেউ নেই
যেভাবে আছো তুমি মিশে
দু'নয়ণে তুমি আমায়
জড়িয়ে নাও ভালবেসে।
আমি তোমাকে ভালবাসি শুধু তোমাকে ভালবাসি
ভালবাসি শুধু তোমাকেই। "
.
গানটি গাচ্ছিলো চোখ বুঝে। মনে হচ্ছিলো তখন গানটি তার জন্যই বানানো হয়েছে। এমনিতেও এই গানটি পিয়াসের খুব পছন্দের ছিলো। হঠাৎ চোখ মেলে দেখে স্নিগ্ধা তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
.
.
.
Ridoy Nadim(((AR PagLaaa)))
Comments
Post a Comment