ভাদাইম্মা (রম্য) . (১ম পর্ব)




- দোস্ত বিড়ি খাওয়াবি একটা??

- বিড়ি খাবি?? আরে তুই খাইতে চাইছস আর আমি খাওয়াবো না এটা কি করে হয়। তুই এখানে দারা আমি এক্ষুনি তোর জন্য বিড়ি নিয়ে আসতেছি।

- আচ্ছা যা তাইলে।
.
মনে মনে ভাবতেছি এই হালায় আজ এত ভাল হইলো কেমনে।জীবনে তার কাছ থেইকা ২ টাকা চাহিয়াও নিতে পারলাম না। ঐ হালায় নাকি আজ বিড়ি খাওয়াবে তাও আবার তার নিজের টাকায়। ভাবতেই কেমন জানি লাগতেছিলো।
.
- দোস্ত এই নে

- এইডা কি আনছোত?

- কেনো?  তুই যা চাইছিলি ঐডাই তো আনলাম।

- টুট টুট টুট।

- আরে ভাই বকা বকি করতেছিস ক্যান?

- আমারে জীবনেও দেখছোত বিড়ি খাইতে?

- নাহ দেখি নাই।

- তাহলে তুই এইগুলা কোন সাহসে আমার সামনে নিয়া আইছোত?

- তুই না কইলি বিড়ি খাবি তাই তো নিয়া আইছি।

- ওরে হালা। আমি বিড়ি কোনটারে কই?? প্রতিদিন যে বিড়ির কথা বইলা গোল্ডলিফ খাই ঐডা মনে নাই??

- ভুইলা গেছি দোস্ত। আর আমার কাছে গোল্ডলিফ কিনার টাকা নাই তো।

- তোর কাছে কবেই বা টাকা থাকে। ফইন্নি হালা।

- তাহলে বিশ টা টাকা দে। বিড়ি নিয়া আসি।

- এই নে। আর শোন বিড়ি না গোল্ডলিফ নিয়া আসবি।

- আচ্ছা।
.
আমাদের পরিচয়টাই তো দেয়া হয়নি এখনো। আমি নাবিদ আর ও আমার বন্দু নাবিল।পৃথিবীতে যে কিপটে বলে কোনো মানুষ আছে তা নাবিলকে দেখেই বুঝি।
ঐ দিন বাসায় এসে পড়ি। বাসায় আসতেই মায়ের ঝাড়ি।
.
- কিরে তুই কি সারা-জীবন ভাদাইম্মা হইয়া থাকবি?তোর মতো বয়সের ছেলেরা চাকরি কইরা বিয়া কইরা সংসার করতেছে আর তুই কিনা এহন পর্যন্ত কিছুই করতে পারলি না (মা)
.
আমি চুপচাপ মায়ের কথা গুলো এক কান দিয়ে শুনছি অন্য কান দিয়ে বের করে দিচ্ছি। কি করবো আর প্রতিদিনই এরকম কথা শুনতে শুনতে আমার কান পঁচে গেছে।
.
- আর কিছু বলবে?? (আমি)

- তোর লগে কথা কওয়ার(বলার) চেয়ে ঐ লালীর লগে কথা কওয়াও (বলাও) অনেক ভাল।(মা)
.
বলেই আমার রুম থেকে চলে যায়। আর লালী হচ্ছে আমাদের বাসার কুকুরের নাম। কুকুরের গায়ের রং টা লাল বর্ণের ছিলো তাই লালী বলেই ডাকতো।
.
মা ঠিকই বলেছেন পড়া-লেখা ছেড়েছি আরো পাঁচ বছর আগে কিন্তু এখনো চাকরির জন্য কোথাও এপ্লাই করিনি। আমার এক ফ্রেন্ড বিয়ে করে সংসার করছে তাদের একটা পিচ্ছিও আছে ২ বছরের।
.
মা প্রায়ই সময় ওদের বাসায় যায়। কারন আমাদের বাসার নিচেই আমার ঐ ফ্রেন্ডের বাসা। তাই আসতে যেতেই দেখা হয়।আর যখনই ঐ পিচ্ছিটা আমার মা কে দাদী বলে ডাকতো তখন আমার এরকম কথা শুনতে হতো।
.
না সেইদিন মায়ের কথাটা শুনে মনে একটু আঘাত পেয়েছিলাম। রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে উঠেই বের হলাম চাকরি খুঁজতে। তবে বাংলাদেশে ছেলেদের জব পাওয়া এতটা সোজা নয়। হাটতে হাটতে চটি ক্ষয় হয়ে যাবে কিন্তু জব খুঁজে পাওয়া যাবে না।
.
কয়েকটা জায়গায় জবের জন্য এপ্লাই করলাম। কিন্তু ১৫ দিন হয়ে গেলো কোথা থেকেও কোন মেসেজ আসলো না। এইবার কি আর করবো। বাসাতেও তেমন কোনো কথা বলছি না কারো সাথে। কারণ আমার মনের ভেতর একটা জিদ কাজ করছিলো। যে পর্যন্ত না কোনো জব পাচ্ছি সে পর্যন্ত কারো সাথেই কোনো কথা বলবো না।
.
তো এভাবে কয়েকটা দিন যাচ্ছিলো। ঘুমাচ্ছিলাম সকাল বেলায় ছোট বোন টয়া এসে ডাকলো।
.
- ভাইয়া ভাইয়া

- হুমম টয়া বলো

- তুমি এখনো ঘুমাচ্ছো? উঠো তাড়াতাড়ি।

- কেনো কি হয়েছে?

- কেনো তুমি জানো না আজ রোজা ভাবি আসবে।
.
রোজার নামটা শুনার সাথে সাথেই লাফ দিয়ে উঠে বসলাম।কারণ রোজা হলো ইয়ে মানে আমার ছোট বউ। ছোট বউ বলতাম কারণ আমরা ছোট বেলা থেকেই জামাই-বউ খেলতাম। সে খানে সব সময় রোজা আমার ছোট বউ থাকতো আর বড় বউ থাকতো রুম্পা আপু। রুম্পা আপু আমার বড় ছিলো তাই তাকে বড় বউ বলতাম। আর রোজা আমার চেয়ে এক বছরের ছোট ছিলো তাই তাকে ছোট বউ বলতাম।
.
- রোজা তোমার ভাবি হলো কবে থেকে টয়া??

- ইসরে মনে হয় আমি কিছুই জানিনা। দেখ ভাইয়া আমি কিন্তু সব জানি। আম্মু আমাকে সব বলেছে।

- কি বলেছে??

- আম্মু বলেছে তুমি নাকি সবসময় রোজা ভাবিকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে। আরো অনেক কিছু বলেছে।

- আর কি কি বলেছে?

- বলেছে তুমি নাকি একবার রোজা ভাবিকে প্রোপোজ করতে যেয়ে তার আম্মুকে প্রোপোজ করে ছিলে।

- তুই যা তো এখান থেকে।

- তুমি আবার আমাকে তুই করে বললে? রোজা ভাবি আসুক পরে  দেখাবো মজা।
.
বলেই মুখে ভেংচি কেটে রুম থেকে চলে গেলো। আমি বসে বসে ভাবছিলাম মা এই কথা কিভাবে জানতে পারলো। তার মানে রোজার আম্মু বলেছে এই কথা। আর হ্যাঁ একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে এরকম দূর্ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলাম। তখন ইন্টারের পরিক্ষা শেষ হয় রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
.
এই ফাঁকে আমার এক কাজিনের বিয়েতেই যাই। লম্বা ঠিক একই রকম ছিলো রোজা এবং তার আম্মু। দু'জনেই শাড়ি পড়েছিলো। একই রকম শাড়ি পড়েনি কিন্তু তবুও প্যাঁচ লাগিয়ে ফেলছিলাম। রোজা ছিলো নীল শাড়ি পড়া আর তার আম্মু ছিলো হলুদ শাড়ি পড়া।
.
আমি পিছন থেকেই ফ্লো করছিলাম। রোজা যে চেয়ারে বসা ছিলো সেই খান টাই খুব ভাল মতো দেখেছিলাম। আর তার পাশের সিটেই বসে ছিলেন তার আম্মু। কিন্তু কখন যে রোজা উঠে যায় সেইটা খেয়াল করিনি। আমি একটু পর তাকিয়ে দেখি যে তাদের দুইজন থেকে একজন বসে আছে তার মানে তার আম্মু নেই তার পাশে।
.
আমি তো এরকমই একটা সুযোগের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।আমিও বুকে কিছুটা সাহস নিয়ে গেলাম তার কাছে। তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছি ভাবছিলাম কিভাবে বলবো। একটা সময় করেই ফেললাম প্রোপোজ। কিন্তু যখন উনি পিছনে তাকালেন তখনই দেখি যে ঐটা রোজা ছিলো না। ছিলো তার আম্মু। আমি দৌঁড়ে পালালাম সেইখান থেকে।
.
রোজা আমাদের পাশের বাসাতেই থাকতো। তাই ছোট বেলা থেকেই একে অপরকে চিন্তাম। তাদের পরিবারের সাথে আমাদের খুব ভাল সম্পর্ক ছিলো। আর আমি ইন্টার এবং অনার্স কমপ্লিট করেছি হোস্টেলে থেকে। তাই হয়তো কিছু কথা আমি জানতাম না। গোপন করে রেখেছিল তারা হয়তো কিছু কথা।
.
কিন্তু হোস্টেলে মন টিকতো না বেশি। বাসায় আসতাম শুধু রোজাকে দেখার জন্যই। এভাবেই চলছিলো সেই দিন গুলো

। ৪ বছর পর একেবারেই বাসায় এসে পড়ি। তার পর রোজই রোজাকে দেখতাম লুকিয়ে লুকিয়ে।
.
.
.
📝Ridoy Nadim (((AR PagLaaa)))
.
🔸🔹🔸(((চলবে)))🔹🔸🔹

Comments