ভাদাইম্মা (রম্য). (২য় পর্ব)




- টয়া....টয়া.....

- কি কি হয়েছে??  ডাকছো কেনো?
- লক্ষী বোন আমার রাগ করেনা।
- হুহহহ বয়েই গেছে আমার। তোমার সাথে রাগ করবো কেনো?
- আচ্ছা রাগ করো না। আর কখনো তুই করে বলবো না। এইবার আমাকে কিছু প্রশ্নের উত্তর দেও তো।
- মনে থাকে যেনো। আর বলো কি জানতে চাও ভাইয়া।
- রোজা মানে তুমি যাকে ভাবি বলো। সে আজ আমাদের বাসায় কেনো আসবে?
- সে তো প্রায়ই সময় আসে আমাদের বাসায়।
- কি বলো আমি তো জানতাম না।
- তুমি কিভাবে জানবে??  তুমি তো সারাক্ষণ ভাদাইম্মার মতো ঘুড়া-ঘুড়ি করো।
- ছিহ টয়া আমি তোমার বড় ভাই হই। আমাকে এই নোংরা কথা বলতে পারলা?
- এহহহ। আর শোনো শুধু আমি না। আম্মু ও তো তোমাকে এই নামে ডাকে। আরো একজনও আছে যে তোমাকে ভাদাইম্মা নামে ডাকে।
- কে! কে সে?
- রোজা ভাবি।
- কে!!! রোজা ভাবি? ইয়ে মানে রোজা?
- হাহা পাগল তুমি একটা ভাইয়া। আর শোনো আজ আমাকে আর রোজা ভাবিকে ট্রিট দিবে তুমি।
- কেনো ট্রিট দেওয়ার কি আছে?
- ছিহ ভাইয়া। তোমার হবু বউকে ট্রিট দিবে তাতেও কিপটেমি করছো?
- বোন আমার পকেটে মাত্র ১০ টাকার ৩ টা নোট আছে। তুমি আম্মুর কাছ থেকে কিছু টাকা মেনেজ করে দেও না।
- তুমি গিয়ে চাও। আমি পারবো না।
- আমি চাইবো? লজ্জার ব্যাপার তো।
- আচ্ছা দেখি আম্মু কে বলে নেওয়া যায় নাকি।
.
আমার তো একটা জিদ ছিলো যে জব না পাওয়া পর্যন্ত মায়ের সাথে কোনো কথাই বলবো না। তাই টাকা চাইবো কি করে তা নিয়েই ভাবছিলাম কিন্তু অবশেষে ছোট বোনকে দিয়ে টাকা নেয়া যাবে। তার মাঝে আবার টয়া বললো তাদের ট্রিট দিতে হবে। ৩০ টাকা দিয়ে ট্রিট দেয়া যাবেনা। তাই এই টাকা টা সিগারেট খাওয়ার জন্যই রেখে দিলাম।
.
কিছুক্ষন পর জানতে পারলাম যে রোজা একা আসবে না।সাথে তার মা-বাবা ও আসবে। কিন্তু হঠাৎ তারা আমাদের বাসায় আসছে কেনো তা নিয়ে কিছুটা ভাবছিলাম। মা বাজারের লিস্ট টয়াকে দিয়ে আমার কাছে পাঠিয়ে দিলো। যাক বাবা এখান থেকে কিছু টাকা মারতে পারবো। তাই আর দেড়ি না করে বের হলাম বাজার করার জন্য।
.
- মামা যাইবা নাকি?
- কই যাইবেন মামা?
- একটু সামনে যামু মামা।
- আচ্ছা উঠেন তাইলে।
.
রিক্সায় উঠে বসলাম। খুব খুদা পেয়েছে সিগারেটের খুদা সকাল বেলা এইটা পেটে না পড়লে সারাটা দিন আমার খারাপ যায়। তাই কিছুটা পথ সামনে যেয়েই দোকান থেকে সিগারেট নিয়ে নিলাম। মায়ের দেয়া লিস্ট অনুযায়ী সব কিছুই নিয়ে নিলাম। ঐ খান থেকে দুইশত টাকা বেঁচেছে তাই টাকা গুলো নিজের পকেটেই রেখে দিলাম দরকারে লাগতে পারে।
.
বাসায় এসে পড়লাম বাজারের ব্যাগটা হাতে। বাসায় সেইদিন প্রথমই বাজার করে নিয়ে আসি কিন্তু হোস্টেলে থাকতে প্রায় সময়ই করতে হতো। হেটে আসছিলাম তাই একটু ঘেমে যাই।হেটে আশার কারন টাকা বাঁচানোর জন্য। কি আর করার ব্যাগটা নিয়ে সোজা ৪ তলায় উঠে পড়ি। বাসার ভেতরে ঢুকে বাজারের ব্যাগটা রেখে সোজা আমার রুমে চলে গেলাম।
.
বেলকোনিতে গিয়ে দাঁড়াই রোজাকে দেখার জন্য। আমার রুম থেকে রোজাকে খুব ভাল মত দেখা যায়। আর সে এরকম সময় বেলকোনিতে বসে গান শুনতো। আর আমিও সে সুযোগে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাকে দেখতাম। সেইদিনও এর ব্যতিক্রম ছিলো না। কিন্তু সেইদিন আবার মায়ের কাছে ধরা খেয়ে গেলাম।
.
- নাবিদ
- হুমম কি বলো <পিছনে ফিরে>
- গরমের মধ্যে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?
- কই গরম? কি ঠান্ডা বাতাস আসছে।

<বাতাস নেই বললেই চলে রৌদে পুরো বেলকোনিটা গিরে আছে। আর সেই রৌদের মধ্যে দাঁড়িয়ে রোজাকে দেখছিলাম >

- রুমের ভেতরে আয়। কথা আছে তোর সাথে আমার।
- হুমম বলো কি কথা?
- আজ রোজার আব্বু-আম্মু আসবে আমাদের বাসায়।
- হুমম শুনেছি টয়ার কাছ থেকে।
- আর কেনো আসবে সেটাও কি টয়া বলেছে?
- না ঐ টা বলে নাই। কেনো আসবে তারা?
- এতদিন তোর চাকরির জন্য অপেক্ষা করছিলাম আমরা সবাই। তোরা যখন ছোট ছিলি তখন থেকেই রোজাকে আমাদের পছন্দ ছিলো। আর রোজার বাবা আর তোর বাবা ভাল বন্ধু ছিলো। তাই আমরা সবাই ঠিক করে রেখেছিলাম তোর আর রোজার বিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু তুই তো এখন পর্যন্ত একটা চাকরিও পাইলি না। বিয়ের পরও কি ভাদাইম্মা হইয়া থাকবি??
- মা তুমি আমাকে ভাদাইম্মা বলো কিছু মনে করি না। কিন্তু তোমার ছোট মেয়েও আমাকে এই কথা বলে।
- ঠিকই তো বলে। ভাদাইম্মাকে কি বলবে তাইলে?
.
মাথা টা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। অন্যদিকে অনেক খুশি লাগছিলো মনে। তার মানে আমার কাছে এতদিন সব কিছুই লুকিয়ে রেখেছিলো। আসলে একটা জব খুবই দরকার। তা না হলে মায়ের দেয়া ভাদাইম্মা নামটা ইতিহাসের পাতায় লিখা হয়ে যাবে।
.
আর এটাও বুঝতে পারলাম মা কেনো সবসময় আমাকে চাকরির জন্য প্যারা দিতো। সত্যি মা তুমি অনেক ভাল।তোমাকে অনেক ভালবাসি। তোমার পরেই যতটুকু ভাল বাসবার ঠিক তত টুকু ভালবাসি রোজাকে।
.
.
.
📝 Ridoy Nadim (((AR PagLaaa)))
.
🔸🔹🔸(((চলবে)))🔹🔸🔹

Comments