ভাদাইম্মা (রম্য). (৩য় পর্ব)



- কিরে দোস্ত কি খবর তোর?
- এইতো অনেক ভাল দোস্ত। তোর কি খবর?
- বেশি ভালো না রে দোস্ত।
- কেনো কি হইছে দোস্ত?
- এমনি মনটা অনেক খারাপ।
- কি হইছে সেটা খুলে বল।
- দোস্ত রিয়ার সাথে আজ অনেক ঝগড়া হইছে। আমি রাগের মাথায় রিয়াকে অনেক খারাপ কথা বলে ফেলেছি। আমার খুব খারাপ লাগতেছে দোস্ত। কি করবো বুঝতে পারতেছি না।
- আরে শালা এইডা নতুন কি?? তুই তো সবসময়ই ঝগড়া করোছ। শালা ঝগড়াটে পুরুষ। তুই আর ভালা হইবি না।
- ঠিকই কইছোত রে। আমি আসলেই অনেক খারাপ রে।
.
কথা টা শুনে মনে হচ্ছে আজ একটু বেশিই ভেংগে পড়েছে নাবিল। শালা যে,কোনো কিছুতে কষ্ট পেতে পারে তা আজ প্রথম দেখলাম।
.
- চিন্তা করিস না দোস্ত সব ঠিক হয়ে যাবে।
- আচ্ছা রাখি তাহলে। রাতে বের হলে ফোন দিস।
- আচ্ছা দোস্ত।
.
এতক্ষণ আমার ঐ কিপটে বন্ধুটার সাথে ফোনে কথা বলছিলাম। কথা শুনে মনে হলো কান্না করতেছিলো। এরকম টা আগে কখনো দেখিনি নাবিলের মাঝে। রিয়া হলো নাবিলের গফ মানে গার্ল ফ্রেন্ড। আমার দেখা একটা ঝগড়াটে রিলেশন। এমন দিন নয় যে ঝগড়া ছাড়া তাদের দিন কেটেছে।
.
এইদিকে আমি আমার পাখিটাকে দেখার জন্য আর তর সইতে ছিলো না। কখন যে আসবে আমার বাসায়। আর কখন তার ঐ দুটি নিষ্পাপ চোখের দিকে তাকাবো। আমি তো খুব বেশি উত্তেজিত ছিলাম রোজা কে নিয়ে। তার কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম বুঝতেই পারিনি।
.
আসলেই প্রিয় মানুষটি কে নিয়ে একটু ভাবলে কত ভালই না লাগে। তখন মনে হয় প্রিয় মানুষটা আমার পাশেই আছে।বিশেষ করে আমি কোলবালিশটা কে প্রিয়তমা ভেবে ঘুমিয়ে পড়ি। তখন মনে হয় কোলবালিশ টাই আমার রোজা।
.
- ভাইয়া <মাথার চুল টান দিয়ে>
- কি হইলো?
- উঠবা না?
- একটু পরে উঠি বোন আমার। বিরক্ত করো না।
- দেখছো ভাবি আমি নাকি এই ভাদাইম্মাকে বিরক্ত করতেছি।
.
কথা টা শুনার পর চোখ মেলে তাকাতেই দেখি টয়ার পাশেই রোজা। তাড়াতাড়ি উঠে বসলাম এবং অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম তার দিকে। কখনো চিন্তাও করিনি ঘুম থেকে উঠে রোজার ঐ চাঁদ মাখা মুখ খানি দেখতে পারবো।
.
- উঁহুম।
<হালকা একটু কাশি দিলো টয়া। টয়ার কাশির আওয়াজে আমি সতেজ হলাম>
- কি ভাইয়া কি দেখছো এভাবে?
- কই কিছু না তো।
- মিথ্যে বলবে না কিন্তু আর শোনো সকালের কথা মনে আছে তো?
- হুমম আছে। আর আমি কি বলেছিলাম ঐটা মনে আছে তো?
- হুমম আছে। আচ্ছা ভাবি তুমি এই ভাদাইম্মা সাথে কথা বলো। আমি আসছি একটু।
.
বলেই রুম থেকে দৌঁড়ে পালালো টয়া। তার সামনে এভাবে অপমান করলো আমাকে। বিষয় টা একটু খারাপ লাগলো আমার কাছে। কিন্তু কি আর করার টয়ার কথা শুনে রোজার মুখে হাসি দেখতে পেলাম। তাই আর কিছু মনে করলাম না।আসলে একটি মিষ্টি হাসিই পারে সব দুঃখ মুছে দিতে।
.
- ব, বসো এখানে <তোতলাচ্ছিলাম>
- না ঠিক আছে ।
- ওহ।
- ঘুমানোর ডিস্টার্ব করলাম বোধ হয়। আচ্ছা আপনি ঘুমান তাহলে।
- আহা না না।
- তাহলে এখনো বিছানায় কেনো?? যান ফ্রেশ হয়ে নিন।
- আচ্ছা যাচ্ছি এক্ষুনি। তুমি যেওনা প্লীজ।
- ভাদাইম্মা একটা। <মিনমিন করে বলেছে>
.
কিন্তু আমি শুনে ফেলেছি। অন্য কোনো শব্দ হলে হয়তো শুনতাম না কিন্তু এই ভাদাইম্মা শব্দটা কারো মুখ দেখলেই বুঝতে পারি যে, এই শব্দটা বলছে বা বলবে। তবে তার মুখে এই কথাটা খুব ভাল লাগলো শুনে। ভাল লাগবারই কথা প্রিয় মানুষ বলে কথা।
.
আমিও তাড়াতাড়ি গোসল করে নিলাম। আমার একটা অভ্যাস খারাপ ছিলো ৪ টার আগে গোসল করতাম না। কিন্তু সেদিন ৩ টায় গোসল করেছিলাম। রোজার জন্যই হয়তো। গোসল করে রুমে আসলাম বাহ কি সুন্দর করে বিছানাটা গুছানো। নিশ্চয়ই টয়া গুছিয়েছে বিছানাটা। কিন্তু কখনো তো দেখলাম না কেউ আমার বিছানা গুছিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আজ হঠাৎ গুছালো কে?
.
ড্র‍য়িং রুমে গেলাম ঐ খানেই সবাই বসে আছেন। সালাম দিলাম সবাইকে। আমার মনে হয় সেইদিনই প্রথম কাউকে সালাম দিয়েছিলাম। সবার সাথে আমিও বসলাম ঐ খানে।আমি লুকিয়ে লুকিয়ে রোজার দিকে তাকাচ্ছিলাম। রোজা এই টা বুঝতে পারে। তাই সে মুচকি হাসছিল নিচের দিকে তাকিয়ে।
.
গুরুজন রা কথা বলেছিলো তাই ঐ খানে আমাদের না থাকাটাই ভাল। আসল কথা হলো রোজার সাথে কথা বলবার।তাই ছোট বোন টয়াকে ইশারা দিয়ে বললাম রোজা কে নিয়ে আমার রুমে আসতে। কারণ সেইখানে বসে রোজার সাথে কথা বলতে পারছিলাম না।
.
- টয়া শোনো।
- হুমম বলো ভাইয়া।
-  একটু শুনে যাও তো।
- হুমম বলো।
- আম্মুর কাছে থেকে টাকা নিতে না বলেছিলাম। নিয়েছো কি?
- হুমম নিয়েছি তো। তুমি দাড়াও আমি নিয়ে আসছি।
- আচ্ছা যাও।
.
এদিকে রোজা আমার রুমের বেলকোনিতে দাঁড়িয়ে ছিলো। কি যেনো দেখতে ছিলো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। ভাবলাম ডাক দিবো কিন্তু পরে আর ডাকলাম না। তার চুল গুলো যে কত সুন্দর ছিলো। বাতাসে কিছুটা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিলো তার চুল গুলো। আমি পিছনে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম তা।
.
পরে টয়া এসে আমার হাতে ১০০০ টাকার ২ টা নোট ধরিয়ে দিলো। নোট দুটো দেখে সেই আনন্দ হচ্ছিলো মনে। পরে টয়া এবং রোজাকে নিয়ে বের হলাম। তারা দুইজন আগে থেকেই প্লানিং করে রেখেছিলো যে আমার কাছ থেকে  ট্রিট নিবে। তাই বেশি রিকোয়েস্ট করতে হয়নি তাকে।
.
এখন সমস্যা হলো আমরা তিন জন। রিক্সায় করেই যাতায়াত করতে হবে। কারণ আমরা যেখানে থাকি সেইখান দিয়ে শুধু রিক্সায় আশা যাওয়া করতে হয়। রাস্তা খুব একটা বড় না থাকার কারণে। তো এখন কি করা যায়। তিন জনই এক রিক্সায় যাওয়া যায়। কিন্তু আজ সম্ভব না। আমি চাইলেও রোজা এটাতে কিছুটা অমত হতে পারে।
.
কিন্তু রিক্সা না পাওয়ার কারনে এক রিক্সায় তিন জনকে উঠতে হয়েছে। আমি উপরে বসে ছিলাম আমার নিচে ছোট বোন তার পাশে বসে ছিলো রোজা। প্রচন্ড বাতাসের কারনে রোজার চুল গুলো আমার নাকে মুখে উড়ে আসছিলো। তখন ভালই লাগছিলো খুব।
.
পরে একটা ভাল রেস্টুরেন্টে যাই। রোজা তার পছন্দ মত অর্ডার করলো। খেয়ে বের হলাম রেস্টুরেন্ট থেকে। এখন ছোট বোন বললো রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাবে। রোজাও রাজি হলো পরে ফুচকা খাই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে। আমি তো রোজার ফুচকা খাওয়া দেখতেছিলাম। রোজা প্রথমে খেয়াল করেনি ব্যাপার টা। পরে বুঝতে পেরে একটু মুচকি হাসে।
.
.
.
📝হৃদয় নাদিম (((AR PagLaaa)))
.
🔸🔹🔸(((চলবে))) 🔹🔸🔹

Comments