সেইদিনটি খুব স্মরণীয় মনে হয় আমার কাছে। কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি যে এরকমভাবে কেটে যাবে সেই দিনটি। বাসায় এসে পড়লাম। রোজাকে তাদের বাসায় এগিয়ে দিয়ে আসলাম। কিন্তু একটা ভুল করে ফেলছি রোজা মোবাইল নম্বরটা নিতে ভুলে গেছি। আমি জানি টয়ার কাছ থেকে রোজার নম্বর টা পাবো। কিন্তু রোজাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম সেটাই বুঝতে পারলাম না।
.
- এই শোনো
- কি বলো
- চলোনা আজ সবাই মিলে কোথাও ঘুরতে যাই।
- হুমম ঠিকই বলছো। অনেকদিন ধরেই কোথাও বের হইনা।আজ যেতেই পারি।
- হুমম।
- এখন আমার আদর??
- না এত আদর নিতে হবে না।
- না হবে। দাও না।
- ইসস তোমায় নিয়ে আর পারা যায় না।
- দিবে না??
- হুমম দিবো তো। আগে চোখ বুঝো পরে।
- আচ্ছা বুঝলাম এখন দাও।
.
রুম থেকে চলে গেছে। কিন্তু আমি তো চোখ বুঝেই ছিলাম যার কারণে দেখতে পারিনি। পরে চোখ মেলে দেখি সে নাই। আবার সে আমাকে দোকা দিছে। ড্রয়িংরুমে গেলাম ঐ খানেই সবাই গল্প করছে। আমিও গিয়ে রোজার পাশে বসি। তার হাতের মধ্যে চিমটি কাটলাম।
.
- আদর না দিয়ে এসে পড়ছো। কষ্ট পাইছি হুহ।<ফিস ফিস করে বললাম>
- হাহাহা।
.
সে আমার কথা শুনে হাসতে থাকলো মিটিমিটি করে। তারপর ঠিক করলাম কোথায় যাওয়া যায়। পরে রোজাদের গ্রামের বাড়িতে যাবো বলে ফাইনাল করলাম। আজ বিকেলেই রওয়ানা দিবো। তাই সবাই সবার ব্যাগ গুছাচ্ছিলো।
.
- কি কি নিতে হবে তোমার জন্য?
- কিছু নিতে হবে না।
- রাগ করেছো??
- না।
- আচ্ছা সরি।
- সরি বললে কাজ হবে না।
- তাহলে কি করতে হবে মহারাজ?
- না কিছুই করতে হবে না।
- আচ্ছা চোখ বন্দ করো।
- না বন্ধ করবো না।
- করো। না করলে দেইখো।
- হুমম করছি।
.
আমার কপালে তার ঠোটের ছোঁয়া পড়লো। যে জিনিষ টা সব কিছুকে হার মানাতে পারে। এটাই তো চেয়েছিলাম তার কাছ থেকে। প্রায় সময়ই রাগ করে থাকি শুধু মাত্র তার ঠোটের ছোঁয়া নেওয়ার জন্য।
.
তো অবশেষে রোজার গ্রামের বাড়িয়ে গিয়ে পৌঁছাই। কিন্তু রোজার গ্রামের বাড়িতে বেশিক্ষন থাকতে পারলাম না। কারণ মোবাইলের ভাইব্রেটের শব্দে ঘুমটা ভেংগে গেলো। হুমম সেই ফোনটা পেয়ে অনেক খুশি হয়েছিলাম। কারণ অবশেষে ভাদাইম্মা শব্দটা আর শুনতে হবে না কারো কাছ থেকে।
.
হুমম অবশেষে জব টা পেয়েই গেলাম। কিন্তু এতক্ষন স্বপ্ন দেখতে ছিলাম। তাই নিজের হাতে একটা চিমটি কেটে নিলাম। দেখলাম যে জবের টাও কি স্বপ্ন দেখছি নাকি। কিন্তু এটা সত্যিই। পরের দিন থেকেই যেতে বললো। অনেক খুশি হলাম আর মনে মনে ভাবলাম যে একদিন এই স্বপ্নটাও সত্যি হবে যদি আল্লাহ্ চান।
.
পরেরদিনঃ
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হলাম। এই প্রথম অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। মা খুব খুশি হয়েছিলো। অফিসে গেলাম একটা ব্যাংকে জবটা পেয়ে গেলাম। তো শুরু হলো নতুন জীবন। এভাবে মাস শেষ হলো প্রথম সেলারি পেলাম।
.
প্রথম বেতন পেয়ে মা-বাবা এবং টয়ার জন্য কিছু শপিং করে নিলাম। এবং রোজার জন্য একটি শাড়ি নিয়ে গেলাম। কিন্তু লজ্জা লাগছিলো কিভাবে রোজাকে শাড়ি টা দিবো। রোজার জন্য যে শাড়ি টা নিয়ে ছিলাম সেটা আমাদের বাসার কাউকে যানাই নি। কিন্তু দুইদিন পর ছোট বোন দেখে ফেলে।
.
- ভাইয়া.......
- এত সুরে সুরে ভাইয়া বলছো কেনো??
- ডাকবো না কেনো? তুমি তো ভাইয়া অনেক নিজের দায়িত্ব পালন করা শিখে গেছো।
- মানে?? কি বোঝাতে চাচ্ছো তুমি টয়া?
- কারো জন্য কিছু নিয়ে আসলে সেইটা লুকিয়ে রাখতে নেই ভাইয়া।
.
এইবার বুঝেই গেলাম কাহিনীটা। কিন্তু কি আর করার লজ্জা লাগছিলো তাই তো লুকিয়ে রাখতে হয়েছে।
.
- কি ভাইয়া কি ভাবছো?
- হে না মানে। আমাকে একটা হেল্প করবা বোন?
- সবসময়ই তো হেল্প করিই। কিন্তু এখন আর করবো না।নিজের কাজ নিজে করতে শিখো ভাইয়া।
- কিন্তু কিভাবে?? বুদ্ধি দাও না টয়া।
- ০১৯৬৭৮....০ এটা ভাবির নম্বর।
- এত্ত গুলা ধন্যবাদ বোন আমার।
- ধন্যবাদ দিলে হবে না। আমার টাকা লাগবে। যদি না দাও তাহলে আম্মুকে বলে দিবো শাড়ির কথা।
- এই না না।
.
পকেট থেকে হাজার টাকার একটা নোট দিয়ে মুখ বন্ধ করলাম। কারণ জানাজানি হলে সমস্যা হতে পারে। সমস্যা বলতে নিজে লজ্জা পাবো অনেক তাই। কিন্তু আমি জানি মা অনেক খুশি হবে কথা টা শুনলে।
.
তো সেইদিন রাতে তাকে ফোন করলাম। অনেক ভেবে দেখলাম ফোন করলে যদি তার আম্মু রিসিভ করে তাহলে কি হবে। ভেবে চিনতে পরেই ফোন করলাম। কিন্তু কথায় আছে না "যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়" তেমনি কিছু হলো।
.
- আসসালামু আলাইকুম।
- ওয়ালাইকুম আসসালাম। কে বলছেন?
- আ আমি।
- আমি কে?
- আমি নাবিদ।
- ওহহহহ কেমন আছো বাবা?
- জ্বি আন্টি ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন?
- আমিও ভাল আছি। বাসার সবাই কেমন আছে?
- সবাই ভাল আছে। আন্টি রো রোজা কে দেয়া যাবে?
- হুমম অবশ্যই। একটু অপেক্ষা করো।
.
কিভাবে যে কি বলে ফেললাম নিজেও বুঝতে পারলাম না। তবে আন্টির সাথে কথা বলছিলাম আর ভয়ে আমার হাত-পা কাঁপছিলো। যাইহোক হবু শাশুড়ির সাথে কথা বললাম। হবু বউয়ের সাথেও কথা বলবো। তা ভাবতেই যেনো কেমন জানি মনে হচ্ছিলো।
.
.
.
📝 হৃদয় নাদিম (((AR PagLaaa)))
.
🔹🔸🔹(((চলবে)))🔸🔹🔸
Comments
Post a Comment