- আজই??
- হুমম দোস্ত আজই। তুই তাড়া-তাড়ি এসে পড়িস
- ইনশাআল্লাহ্।
- আচ্ছা দোস্ত তাহলে ইফতারের সময় দেখা হচ্ছে।
.
আমার বন্ধু রিমন। রিমনের সাথেই এতক্ষণ কথা বলছিলাম। রিমন পুরান ঢাকার বাসিন্দা আর আমি নারায়ণগঞ্জ এর বাসিন্দা। হাতে মাত্র ৩ ঘন্টা সময় বাকি আছে। তো রওয়ানা দিয়ে দিলাম। একটু তাড়া-তাড়ি দিতে হবে কারণ ঢাকার রাস্তা সময় ধরে যাওয়া যায় না জ্যাম এর কারণে।
.
বাসে উঠলাম এবং মাঝ রাস্তায় গিয়ে পৌঁছলাম। বাস এক্সিডেন্টে রাস্তায় জ্যামে আটকিয়ে পড়লাম। এইদিকে ইফতারের সময় হতে চললো। ১ ঘন্টা জ্যামে বসে থাকার পরে বাস সামনে চলতে লাগলো। কিন্তু ভাগ্য খারাপ গুলিস্তাঁন গিয়ে পৌঁছতেই মাগরিবের আজান দিয়ে দিলো। এদিকে রিমন ফোন দিচ্ছেই কিন্তু কি আর করার জ্যামের কারণেই এমনটা হলো।
.
গুলিস্তাঁন নামলাম বাস থেকে। দেখি অনেক অনেক রোজাদার ব্যক্তি ভির করে দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার পাশের ছোট ছোট দোকান গুলোর সামনে। আমিও সেইখানে গিয়ে দাঁড়ালাম। এবং শরবত খেয়ে গলাটা ভিজালাম। শরবত খেয়ে মসজিদে গেলাম নামাজ পড়ার জন্য। যাওয়ার পথেই এক পথ শিশুর সাথে দেখা হয়ে যায়।
.
- ভাই ভাই ২০ টা টাকা দেন না। হাত পেতে বললো।
- ২০ টাকা দিয়ে কি করবা??
- ইফতার করবো। সারাদিন রোজা রাখছি কিন্তু এখনো কিছু খেতে পারিনাই। ভাই দিবেন ভাই। খুব খিদা লাগছে।
- চলো আমার সাথে।
.
একটা দোকানের সামনে গেলাম। ছেলেটার বয়স ৬-৭ বছর হবে। এত ছোট একটা ছেলে রোজা রাখতে পেরেছে তাতেই অনেক।
.
- তোমার যা যা খেতে ইচ্ছে করে তাই খেতে থাকো।
- আচ্ছা ভাই।
- মামা যা চাইবে সব দিও।
- আচ্ছা মামা।
.
এইদিকে নামাজ শেষ হয়ে যায়। মসজিদ থেকে বের হতে লাগলো মুসুল্লিরা। আমার নামাজ টা মিস হলো। ভাবতে ভাবতেই পিচ্ছিটার দিকে তাকালাম কত সুন্দর করে খাচ্ছে।
.
- ভাই একটা কথা কই?
- হুমম বলো।
- আমার ছোট বইন জিলাপি খাইতে চাইছিলো। আমার ছোট বইনটা আমার জন্য অপেক্ষা করতাছে।
- আচ্ছা তোমার বাড়িতে কে কে আছে?
- আমি, আমার ছোট বইন, আর আমার মা।
- তোমার বাবা নেই?
- না ভাই আমি ছোট থাকতেই বাজান এক্সিডেন্টে মারা যায়। কান্না করতে করতে বলে।
- তোমার মা কি করেন?
- মা একটা বাড়িতে কাজ করতো। কিন্তু কিছুদিন ধরে মা'র শরীরটা ভালো না থাকার কারণে আর কাজে যেতে পারছে না।
- আমাকে নিয়ে যাবে তোমাদের বাসায়?
- হ ভাই আহেন।
- তুমি এখানে দাঁড়াও তোমার বোনের জন্য জিলাপি নিয়ে আসি।
- আচ্ছা ভাই।
.
সত্যি পিচ্ছিটার কথা শুনে অনেক খারাপ লাগছে। দোকান থেকে জিলাপি নিয়ে আসলাম।
.
- চলো। আচ্ছা তোমার নাম কি?
- আমার নাম মানিক।
- মানিক,,, অনেক সুন্দর তো নামটা।
.
রিক্সা ডাকলাম।
- ভাই আমাদের ঐ খান দিয়া রিক্সা যায় না। হাইটাই যাইতে হয়।
পরে হেটেই যেতে লাগলাম।
.
- আচ্ছা মানিক তুমি রোজা রাখো কিভাবে তুমি তো অনেক ছোট।
- কথাটা শুনে কান্না করে দিলো। ভাই রোজা রাখা যে কথা রোজা না রাখাও একই কথা।
- যেমন?
- রোজা রাখলেও না খেয়ে থাকতে হয়, না রাখলেও না খেয়েই থাকতে হয়।
- সেহেরি করেছো কি খেয়ে?
- ভাই আমাগো আবার সেহেরি। এক গ্লাস পানি খেয়ে সেহেরি করছিলাম। ভাই ঐ যে আমাদের বাসা।
.
বাসার সামনে যেতেই মানিকের ছোট বোন দৌঁড়ে আসলো। ভাই আমার জিলাপি আনছো? কি হইলো ভাই আমার লেইজ্ঞা জিলাপি আনো নাই? জিলাপির প্যাকেট টা ওর হাতে দেই। ও তো খুব খুশি জিলাপি পেয়ে।আসলেই কাউকে হাজার কিছু দিয়েও খুশি করানো যায় না। আর কাউকে অল্প কিছুতেই অনেক বেশি খুশি করানো যায়। বাসায় আসার গাড়ি বাড়া রেখে বাকি টাকা গুলো মানিকের হাতে দিলাম।
.
- ভাই এইটা আমি নিতে পারবো না।
- নেও ভাই। তোমার মাকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যেও।
- ভাই আপনি অনেক ভাল মানুষ।
- আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও এরকমই করতো।
- ভাই আর একটা কথা বলি??
- হুমম বলো।
- ভাই আপনাকে একটু জড়িয়ে ধরি?
- ধরো ভাই। বুকে জড়িয়ে নিলাম।
.
আসলে ভালবাসাটাই এরকম। পরে ঐ খান থেকে চলে আসি। রিমনকে ফোন করে বললাম কেনো যেতে পারিনি ওদের বাসায়। বাসে উঠে পরি আর ভাবতে থাকি মানিক এবং তার পরিবারের কথা। আল্লাহ্র রহমতে অনেক ভাল আছি।
.
.
.
লেখাঃ হৃদয় নাদিম
Comments
Post a Comment