রাতের আকাশটাকে আরো সুন্দর করার জন্য একটা চাঁদই যথেষ্ট। ঠিক তেমনি ভাবে একটা মানুষকে ভাল রাখার জন্য সুন্দর একটা মনই যথেষ্ট। যে মনে ঘিরে থাকবে হাজারো ভালবাসার সৃষ্টি। যা হাজারটা কষ্ট কে হার মানাতে পারে।
.
- হ্যালো দোস্ত কি খবর তোর?
- কে বলছেন? (মেয়ে কন্ঠে)
- আসসালামু আলাইকুম আন্টি।
- কে আন্টি? আপনি কার কাছে ফোন করেছেন? কে আপনি?
- তাহলে নিশ্চয়ই রিমনের বোন আপনি?
- আরে আজিব তো। আপনি ভুল নম্বরে কল করেছেন। আমার কোনো ভাই টাই নাই।
.
নম্বর টা চেক করে দেখলাম। ঠিকি তো আছে নম্বরটা। কিন্তু ইনি আবার কে?
- ওহহ সরি আসলে রিমনকে কল দিতে গিয়ে আপনাকে কল দিয়ে ফেলেছি।
- হুমম বুঝতে পেরেছি। আচ্ছা ধন্যবাদ আপনার ভুল বুঝতে পারার জন্য।
.
বলেই উপাশ থেকে কলটা ঠুস করে কেটে দিলো। ভাবতে থাকলাম কে উনি। নম্বর টা আবার চেক করে দেখলাম শেষের দুই সংখ্যায় সব সমস্যা হয়েছে। ৩৭ এর জায়গায় ২৯ দিয়ে ফেলার কারণেই ভুলটা হয়েছে।
.
আমার আবার একটা সমস্যা ছিলো মোবাইলে কোনো নম্বর সেভ করে রাখতাম না। কিন্তু ঐ দিনই প্রথম কারো নম্বর সেভ করলাম পরী লিখে। কারণ অচেনা মেয়েটির কন্ঠ খুবই সুন্দর ছিলো। কন্ঠ শুনেই ভাল লেগে যায়।
.
রিমন ছিলো আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড। ও আমার সবকিছুই জানতো এমনকি বাবা-মায়ের কাছে রিমনকে তাদের ছেলে ভাবতো। তাই আমি আর রিমন একটু বেশি ফ্রি ছিলাম। রিমনকে কল দিলাম।
.
- ঐ বেটা কই তুই?
- আমি তো বাথরুমে। ক্যান?
- সারাদিন কি বাথরুমেই কাটিয়ে দিস?
- আরে বেটা না। আমি যখন বাথরুমে যাই তখনই তুই কল দিস। কি করবো আমি বল।
- তোর কিছু বলতে হবে না। তুই ১০ মিনিটের মধ্যে আমাদের বাসায় আসবি।
- এত জরুরী কেনো? কিছু হয়েছে নাকি?
- হ্যাঁ হয়েছে। তুই তাড়াতাড়ি আসিস।
.
বলেই কল কেটে দিলাম। এই দিকে ভাবছি আবার ঐ নম্বরে কল দিবো কিনা? আবার একটু ভয়ও করছিলো। ডাটা চালু করতেই ইমো তে ঐ নম্বরের সাথে কানেক্ট হয়ে গেলো। তার প্রোফাইলে গেলাম এবং ছবি দেখে নিলাম। আসলে পরীর চেয়েও দেখতে অনেক সুন্দরী মেয়েটি। এত সুন্দরী কিভাবে হয় একটি মেয়ে তাই ভাবছিলাম ছবিটা দেখে। কিছুক্ষণের মধ্যেই রিমন এসে হাজির।
.
- কিরে এখন বল কি হয়েছে?
- না কিছুই হয় নাই। যা হওয়ার এই ছবিটা দেখেই তো হবে।
- বাহ সেই তো মাল টা।
- মাল কি?? ভাবি বল ভাবি।
- ভাবি? আমার কোন ভাইয়ের বউ রে এটা??
- আ আমার।
- হা হা হা।
- হাসছিস ক্যান?
- নাহ এমনি। গাছে কাঁঠাল আর গোফে তেল।
- এটা বলতে পারলি? তুই না আমার ভাই লাগোছ?
- আচ্ছা বাদ দে। কাহিনী কি সেইটা বল।
.
পরে সবকিছু খুলে বললাম রিমনকে। এবং বলেও দিলাম তাকে আমার ভাল লাগে।
.
ইমো তে নক করলাম তাকে।
- হ্যালো।
- জ্বি বলুন।
- চিনতে পেরেছেন?
- হ্যাঁ।
- বাহ খুশি হলাম শুনে।
- কেনো?
- এই যে আমাকে মনে রেখেছেন তাই।
- ইসসসস নিজেকে খুব চালাক ভাবেন আপনি। তাই না?
- মোটেই না। আমি একদম বোকা।
- ছবি দেখে বোকাই মনে হচ্ছে। কিন্তু কথা শুনে একদমই মনে হচ্ছে না।
- ওহহহ আচ্ছা। এটা কিন্তু ভাল।
- কোনটা?
- নাহ কিছু না।
.
এভাবে রোজ কথা হতো চ্যাঁটিং হতো তার সাথে। তার নাম ছিলো তুলি। আগেই তো বলে দিয়েছি যে তাকে আমার ভাল লাগে। খুব ভাল ও বাসি বটে। কিন্তু চাইলেই কি আর ভালবাসা পাওয়া যায়।
.
তুলি আমার মনে রং লাগিয়ে যায়। যার মাধ্যমে আমাকে আঁকার শক্তি। তার চোখের দিকে তাকিয়ে হাজারটা পৃথিবী আঁকতে পারবো এটা আমার বিশ্বাস।
.
খুব ভাল বন্ধুত্ব হয়ে যায় একটা সময়। সব কিছুই শেয়ার করতাম দুজন দুজনার সাথে। শুধু মাত্র ভালবাসি এ কথাটি কখনো জানাতে পারিনি। আসলে এক তরফায় তো আর ভালবাসা হয় না।
.
১ বছর পরঃ
.
- হ্যালো ফাহিম।
- হুম তুলি বলো।
- একটা গুড নিউজ আছে।
- ওহ তাই নাকি? তো শুনি গুড নিউজটা কি?
- গুড নিউজটা হলো। কিভাবে যে তোমাকে বলি। লজ্জা লাগতেছে।
- বলে ফেলো কি বলতে চাও। <মনে লাড্ডু ফুটে গেলো >
- আসলে সামনের মাসের ১৭ তারিখে আমার বিয়ে। তুমি আমার খুব ভাল ফ্রেন্ড। তাই তোমাকেই প্রথম জানালাম।তোমাকে কিন্তু আমার বিয়েতে থাকতেই হবে ফাহিম।
.
কথাটা শোনার সাথে সাথে মাথার মধ্যে কেমন জানি গুড়পাক খেতে শুরু করলো। আসলে মনে হচ্ছিলো আমি গুড়ছি নাকি পৃথিবীটা গুড়ছে। পরে বুঝতে পারলাম আমার মাথাই গুড়ছে।
.
- কি হলো কিছু বলছো না কেনো?
- ওহহহহহ। এতো খুশির কথা। ভালই তো হলো।
- হুমম তুমি কিন্তু আসবেই।
- হুমম আসবো।
.
বর সেজে আসার ইচ্ছে ছিলো কিন্তু তা তো আর হবে না। তাই কনের পক্ষেই যাবো। ফাহিম বলতে চেয়েও বলতে পারলো না। প্রেম শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেলো।
.
আর হ্যাঁ সেই হতবাগার নাম ছিলো ফাহিম। ফাহিম প্রধান কাউকে খুব ভালোবেসেও তার ভালবাসা পাওয়া ভাগ্যে জুটলো না।
.
ফাহিমের শেষ কথা ভাল থাকুক তুলি। তাদের নতুন জীবন সুখি হউক এই কামনা করেই শেষ করলো।
.
.
.
লেখাঃ (হৃদয় নাদিম)
Comments
Post a Comment