রাত জেগে ভোর ৫ টায় বেহুঁশ এর মতো ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ মনে হলো ভুমিকম্প হচ্ছে। তাড়া-তাড়ি উঠে বসে পড়লাম বিছানার উপর। পরে বুঝলাম আসলে ভুমিকম্প হয়নি। সেই শব্দটা ছিলো আমার মোবাইলের। নতুন এক ধরনের মোবাইল বের হয়েছে। ঐ মোবাইলে গান প্লে করলে মনে হয় ১ মাইলের দূরের মানুষ ও সেটা শুনতে পারবে। আর ঐ মোবাইলের ভ্রাইবেটের শব্দেই ঘুম ভাঙে। তখন সকাল ১০ টার কাছা-কাছি। এইতো ১০-১৫ মিনিট বাকি হবে ১০ টা বাজতে। কিন্তু তখন আমার কাছে ভোর সকাল। যেহেতু ভোর ৫ টায় ঘুমিয়েছি। মোবাইলটা চেক করে দেখলাম কে এত সকালে কল দিয়ে আমার আরামের ঘুমটা হারাম করেছে। দেখলাম রাফির নাম। রাফি এত সকালে কল দিলো কেনো? পরে কল ব্যাক করলাম।
.
- হ্যালো রাফি <ঘুম ঘুম কন্ঠে>
- কিরে নাদিম তুই এখনো ঘুমাইতাছোত? আর তোরে কতক্ষণ ধইরা কল দিতাছি দেহোছ না?
- আরে ভাই ঘুমাইতে ঘুমাইতে একটু দেড়ি হয়ে গেছে। কি হইছে ঐটা বল তো।
- বাহ। ঘুমাইতে ঘুমাইতে তো সবই ভুইলা গেছোত। তুই এহনো আইতাছোত না ক্যান? তোরে যে কাজ দিছি ঐ কাজ কি আমারেই করতে হইবো?
- আরে কি কাজ দিছোত।
.
কথাটি বলার সাথে সাথেই সব মনে পড়ে গেলো। আজ তো রাফির গায়ে হলুদ। রাফি হচ্ছে আমার খালাতো ভাই। আমার এক বছরের ছোট। কিন্তু বিয়ার প্যারা বেশি এর কারণে আমার আগেই বিয়ে করে ফেলছে। যাক এটা কোনো ব্যাপার না। আসল কথা হলো গতকাল ও ওদের বাসায় ছিলাম। ওদের বাসা হচ্ছে কুমিল্লায়। গতকাল রাত ০৯ টায় রাফিদের বাসা থেকে নারায়ণগঞ্জে ফিরে আসি। কারণ বিয়ে বাড়ি গেস্ট ছিলো বাড়ি ভরতি। আর আমি সবার সাথে ঘুমাতে পারিনা। তাই আমাদের বাসায় এসে পড়ি। টানা সাতদিন ধরে নারায়ণগঞ্জ টু কুমিল্লা এবং কুমিল্লা টু নারায়ণগঞ্জ আসা যাওয়া করতে করতে আমি খুবই ক্লান্ত। তারপরও কি আর করার ছোট ভাই বলে কথা।
.
- মালের ব্যবস্থা ঠিক ঠাক হইছে তো?
- আরে বেটা সব ঠিক ঠাক।
- তাইলে তাড়া-তাড়ি আইসা পর নাদিম।
- আচ্ছা একটু পর রওনা দিচ্ছি।
.
মাল মানে কিসের কথা বলা হচ্ছে হয়তো আপনারা বুঝতে পারছেন। এই যুগে গায়ে হলুদে যেইসব ড্রিংক ছাড়া গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান জমে না ঐ সব এর কথাই বলা হচ্ছে। যাক বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। বাসায় আমি একাই ছিলাম। কারণ মা - বাবা এবং বড় আপু তিন দিন আগেই কুমিল্লাতে চলে গেছেন রাফিদের বাসায়। ফ্রেশ হয়ে গোসল করে নিলাম। রেডি হয়ে বের হলাম বাসা থেকে। আজ যেহেতু গায়ে হলুদ তাই আজ আর বাসা আসা যাবে না। তাই রাফির বিয়ে পর্যন্ত খালার বাসাতেই থাকতে হবে।
.
হোটেলে গেলাম নাস্তা করতে। তখন বেলা ১১:৩০ টার মত বাজে। নাস্তা শেষ হয়ে গেছে সিংগারা, ডাল পুড়ি বানাচ্ছে। তো কি আর করার হোটেল থেকে বের হয়ে চায়ের দোকানে গেলাম। এক কাপ চা সাথে একটা বেন্সন সিগারেট নিলাম। যাক কোনো রকম সকালের নাস্তাটা শেষ হলো। বাস স্ট্যান্ড এ গিয়ে দাঁড়ালাম। রয়েল কোচ বাসের টিকেট নিলাম। আধা ঘন্টা লাগবে বাস আসতে। ততক্ষণে ১২ টা বেজে গেছে। কুমিল্লা যেতে ১ ঘন্টার মতো লাগবে। টিকিট কাউন্টারে গিয়ে বসলাম একটু। হাতে সিগারেট ছিলো। সিগারেট টানছিলাম হঠাৎ পিছন থেকে একজনের কথায় পিছু ফিরলাম।
.
- এটা কি গু খাওয়ার জায়গা?
- মানে? কি বলতেছেন এইসব?
- আপনি যে সামনে বসে এইসব খাচ্ছেন। সব ধোয়া তো আমার নাকে-মুখে এসে লাগছে।
- ও সরি। আসলে বুঝতে পারিনি। তবে প্রথমে যে শব্দটা বলছেন ঐটা না বললেও পারতেন। কথাটি বলেই ঐ খান থেকে বের হয়ে যাই।
.
৫ মিনিট পরে বাস চলে আসে। বাসে উঠলাম সীট মাঝখানের দিকে পেয়েছি। তবে জানালার পাশে পেলে ভালো হতো। ১৯ নম্বর ছিলো আমার সীটের সিরিয়াল নম্বর। ২০ নম্বর সিরিয়ালটায় তখন কেউ আসছিলো না বলে আমি জানালার পাশে গিয়ে একটু বসলাম। জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কিছুক্ষণ পর কেউ একজন আসেন।
.
- এক্সকিউজ মি!
- জ্বি বলুন < ঐ মেয়েটা যার সাথে কাউন্টারে কথা কাটা-কাটি হয়েছে >
- ২০ নম্বর সীট টা আমার।
- ও। < আমি উঠে বের হলাম >
- যান বসুন।
- হ্যা ধন্যবাদ।
.
শেষ মেষ এই মেয়ের পাশেই বসতে হলো। যাক সমস্যা নাই। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসা ছেড়ে দিলো। বাস যত দ্রুত চলছে আমার ঘুম ও তত বাড়ছে। কিন্তু বাসে ঘুমানো অসম্ভব। আবার সাথে একটা মেয়ে ঘুমের মধ্যে যদি তার উপর হাত লাগে তাহলে আরো কথা শুনিয়ে দেবে। পানি পিপাসা লেগে যায় অনেক। পানি নিতে ভুলে গিয়েছিলাম। এখন কি করা যায়। একটু পর দেখলাম সেই মেয়েটি ব্যাগের ভেতর থেকে পানির বোতল বের করে পানি খাচ্ছিলো। আমি ভাবতেছি চাইবো নাকি চাইবো না। কি ভাববে হাবিজাবি অনেক কিছুই ভাবছিলাম তার দিকে তাকিয়ে।
.
- কি হলো? খাবেন?
- হুম না।
- তাহলে তাকিয়ে আছেন কেনো?
- ওহ এমনি সরি।
.
খুব বেশিই পানি পিপাসা লাগছিলো। তাই সব ভাবা-ভাবি বাদ দিয়ে বেসরমের মতো পানি চেয়ে বসলাম।
.
- আসলে আমার না অনেক পানি পিপাসা লেগেছে।
- আপনাদের মতো ছেলেদের এই একটাই সমস্যা। মেয়ে মানুষদের পানি খেতে দেখলেই আপনাদের পানি পিপাসা লেগে যায়। এই নিন পানি।
- আজব তো। থাক আপনার পানি খাওয়া আমার দরকার নেই।
- না খেলে নাই।
.
কি রকম মেয়ে। পানি নিয়ে কত কথা শুনিয়ে দিলো। আর তার দিকে তাকাইলাম ও না। অন্যদিকে তাকিয়ে কোনোরকম কুমিল্লায় এসে পৌঁছালাম। বাস থেকে নেমে আগে গেলাম পানি খাওয়ার জন্য। একটা সিগারেট ধরালাম। সামনে এসে দাঁড়ালো বাসের সে মেয়েটি। তাকে দেখে আমি সিগারেটটা পিছনে এনে ফেললাম।
.
- সরি। বাসের মধ্যে ঐ সব কথা বলা আমার ঠিক হয়নি।
- সমস্যা নেই।
বলতে গিয়ে আবারো সিগারেটের ধোয়া তার নাকে মুখে গিয়ে লাগলো।
- ছিহ।
.
বলেই রেগে মেয়েটি সামনে থেকে চলে গেলো। আমার কি দোষ হঠাৎ সামনে এসে দাঁড়ায়। ধোঁয়া টা ছাড়ারও সময় পাইনি। যাইহোক আমি সিগারেট টা শেষ করে "সি এন জি" তে উঠার জন্য গেলাম। সি এন জি'র ভেতরে গিয়েও দেখি পাশে সে মেয়ে। আল্লাহ্ তখন সত্যি খুব লজ্জা লাগছিলো। মেয়েটা ভাবছে আমি তাকে ফ্লো করছি। সামনেও জায়গা নেই। দুপুর সময় সি এন জি পাওয়া যায় না। কি আর করার সেই মেয়ে এক সাইডে আমি এক সাইডে মাঝে তার ব্যাগ। দু'জন দু'দিকে তাকিয়ে আছি।
.
- মামা পিছনে আর এক জন লাগবে।
- আর নিতে হবে না। দুই সিটের বাড়াই দিবো আপনাকে। আপনি যান এখন।
- তাইলে ঠিক আছে মামা।
.
- মামা সামনের মোড়ে সাইড করে রাইখেন।
- ঠিক আছে মামা।
.
সি এন জি থেকে আগে আগেই নামলাম। দুই সীটের বাড়া দিয়ে ব্যাগটা নিলাম। পরে দেখি ঐ মেয়েও নেমে যায়। এখন দুই জনই তাকালাম। কাহিনী কি সে এখানে নামলো কেনো? আমি তো আগে নামলাম। সে তো আমার পরে নামছে। এর মানে এখন তো সে ভাববে না যে আমি তাকে ফ্লো করছি।
.
- আফা এত বড় নোট ভাংতি হবে না।
- আমার কাছে তো খুচরা নেই।
- কোনো সমস্যা মামা?
- মামা ঐ আফার কাছে ৫ শত টাকা নোট। আমার কাছেও ভাংতি নাই আফার কাছেও ভাংতি নাই।
- সমস্যা নাই। এই নেন আপনার বাড়া।
- আচ্ছা মামা।
.
মনে মনে ভাবছি হয়তো এখন এসে ধন্যবাদ দিবে। একটু ফর্মালিটি দেখাবে। কিন্তু না তার পুরোটাই উল্টা। কিছু না বলেই চলে গেলো মেয়েটি। কি রকম মেয়ে এটা। একটা ধন্যবাদ তো পেতে পারতাম। এটাই সিম্পল ছিলো। কিন্তু না এটা পুরোই উল্টা।
.
- হ্যালো মিস্টার।
- পিছনে তাকিয়ে দেখি সে মেয়ে।
- আপনি এখনো যাননি?
- এই নেন আপনার টাকা।
- আহা এটা না দিলেও হতো।
- কেনো? আপনার টাকা আপনি নিবেন। এটাই স্বাভাবিক।
- আচ্ছা ঠিক আছে দেন।
.
আল্লাহ্ এ কেমন মেয়ে। জল্লাদ মেয়ে একটা। আমি হাটতেছিলাম কারণ খালার বাসা একটু সামনেই। তখন দুপুর ২ টা বাজে। নাস্তাও করিনি তখনও। একেবারে সকালের নাস্তা আর দুপুরের খাবার একসাথেই করবো। বাসার গেইটের সামনে গিয়ে পিছনে তাকালাম দেখি ঐ মেয়ে পিছনেই। কি ব্যাপার এই মেয়ে এখনো যায়নি। তাদের বাসা কি এইদিকেই নাকি ভাবতেছিলাম। একটু পরেই রিয়া এসে হাজির।
.
- আরে নাদিম ভাইয়া এখানে দাঁড়ায় আছো কেনো?
- তুই দুপুর বেলায় এখানে কেনো?
- আমার এক ফ্রেন্ড আসবে। ভাইয়া।
- ওহ। আচ্ছা থাক তাহলে আমি গেলাম।
.
- এই পিয়া। এইদিকে আয়।
কথাটি শুনে পিছনে ফিরলাম। ও খোদা এই মেয়েই কি রিয়ার ফ্রেন্ড। এখন কি হবে। যদি এই মেয়ে রিয়াকে বলে দেয় আমি সিগারেট খাই। তাহলে তো রিয়া পুরো বাড়ির মানুষকে জানিয়ে দিবে। এখন কি করা যায়।
.
- নাদিম ভাইয়া। ও আমার ফ্রেন্ড পিয়া।
- পিয়া। উনি আমার ভাইয়া।
.
তার দিকে তাকালাম। তার চোখের মধ্যে আগুন জ্বলছে মনে হচ্ছিলো। কিভাবে তাকিয়ে আছে। যাক কোনো রকম চোখ নামিয়ে রিয়াকে জিজ্ঞাসা করলাম রাফির কথা।
.
- রাফি কোথায়রে?
- ভাইয়া রুমে আছে যাও।
- আচ্ছা তোরা আয় তাহলে। আমি গেলাম।
- হুমম যাও।
.
রুমে গিয়ে বসলাম। আম্মুর সাথে দেখা হলো। আম্মুকে বললাম খিদা লাগছে খাবার দেওয়ার জন্য। আমি ফ্রেশ হওয়ার জন্য বাথরুমে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে গেলাম খাওয়ার জন্য। ডাইনিং টেবিলের সামনে গেলাম। আহ খাবারের কি সুগন্ধ বের হচ্ছে। চেয়ারে গিয়ে বসলাম। খাচ্ছিলাম পাশে আম্মু আর আন্টি বইসা বইসা কথা বলতেছে। একটু পর রিয়া আসলো সাথে ওর ফ্রেন্ড। সেও খেতে বসলো। এখন তার সামনে আমি খাবো কিভাবে। মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো। পরে দেখবো এই খাবার নিয়াও সে কথা শুনিয়ে দেবে। ধ্যাত আমি নিচের দিকে তাকিয়ে তাড়া-তাড়ি খেয়ে রাফির রুমে এসে পড়লাম।
.
- কিরে কখন আইছোত?
- আধা ঘন্টা হইবো।
- কল দিলি না আইসা।
- আমার খুদা লাগছিলো বেটা। খাইয়া টাইয়া পরে আসলাম। আর তোর রুমে তো খুজে গেছিলাম তোরে পাই নাই।
- আরে আমি একটু উপরে গেছিলাম। সব কিছু ঠিক ভাবে আনছোত তো?
- হ্যা। তুই ব্যাগ খুইলা দেইখা লো ঠিক মতো আছে নি।
- আচ্ছা ঠিক আছে। দেইখা লই।
.
রাফি দেখছে ওর মাল ঠিক আছে কিনা আর আমি ভাবছি সে মেয়ের কথা। যদি রিয়ার কাছে বলে তাহলে আমার অবস্থা কি হবে। রিয়া তো সবার কাছে গিয়ে বলবে। কি যে করি। পরে সবাই রাফির রুমে আসলো।
আম্মু, আপু, আন্টি, রিয়া, পিয়া আরো অনেকেই আসলো। ছেলেদের জন্য এক কালারের পাঞ্জাবি - পায়জামা আর মেয়েদের জন্য একই কালারের শাড়ি। সবাইকে দিয়ে দিলো। তারা সবাই কথা বলছে আমি রিয়ার ফ্রেন্ড পিয়ার দিকেই তাকিয়ে আছি। মেয়েটা একটু জল্লাদ দেখতে শ্যামলা। কিন্তু তাকে ভালো লেগে যায়। হঠাৎ পিয়াও আমার দিকে তাকায় আর আমি সাথে সাথে অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে নেই।
.
- রাফি?
- হুম। বল নাদিম।
- আমার মনে হয় আজকে মাল খাওয়া হবে না রে।
- কুত্তার বাচ্চা কি কস? তোর প্যারাতেই তো আনাইলাম এইগুলা।
- আমি কি আর জানতাম যে এরকম কাহিনী হইবো।
- কি কাহিনীরে? আর একটা জিনিষ খেয়াল করছি আমি। আমরা সবাই কথা বলতেছিলাম। আর তুই চুপ-চাপ রিয়ার ফ্রেন্ড এর দিকে তাকিয়ে ছিলি। আসল কাহিনি কি রিয়ার ফ্রেন্ড?
- হ্যা রে। শুন তাহলে পুরো কাহিনি।
.
পুরো কাহিনি শেয়ার করলাম রাফির সাথে।
.
- আরে বেটা আমি আছি তো চিন্তা করিছ না। আগে আমার বিয়াটা শেষ হইতে দে পরে তোর বিয়ার কথা কমু নে।
- কি যে কছ রাফি।
- হাহা। লজ্জা পাইয়ো না ভাইয়া। তোমার কাহিনী বুঝা যাইতেছে সব কিছু।
- আচ্ছা আয় ছাদে যামু। বিড়ির প্যাকেটটা নিয়া নে।
- হুমম চল। আমারও তো বিড়ি খাওয়া আর হইবো না। যা খাওয়ার বিয়ার আগেই খাইতে হইবো।
- হুম।
.
ছাদে গেলাম। গিয়ে দেখি রিয়া আর ওর ফ্রেন্ড স্টেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সাথে সাথে আমি সিগারেটের প্যাকেটটা রাফির হাতে ধরাইয়া দিলাম। এবং বললাম ওর পকেটে রাখতে। রাফি তো পরে বুঝছে আমি কেনো এমন করছি। পরে রাফি আর আমি ওদের কাছে গেলাম। পরে রাফি রিয়াকে বললো নিচে যেতে। মানে পিয়ার সাথে আমার কথা বলিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিলো।
.
- পিয়া।
- জ্বি ভাইয়া।
- ও আমার খালাতো ভাই। নাদিম।
- হুম জানি। < মুখ ভেংচি কেটে >
- আচ্ছা তোমরা কথা বলো। আমি একটু আসছি।
.
আমিও দাঁড়িয়ে আছি পিয়াও দাঁড়িয়ে আছে। কিভাবে শুরু করবো বুঝতেছি না। আমার অবস্থা দেখে সেই বলে ফেললো।
.
- কি ছাদে আসছেন কেনো? ফালতু জিনিষ খেতে?
- ইয়ে না মানে। আচ্ছা সরি। আর প্লিজ রিয়াকে এইসব কথা কিছু বলবেন না।
- কেনো বলবো না?
- ও রে বললে। ও বাসার সবাইকে বলে দিবে।
- তাতে আমার কি?
- প্লিজ বইলেন না।
- আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু এক শর্তে।
- কি শর্ত? বলেন।
- আর এইসব খাবেন না।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
- হুম মনে থাকে যানি।
.
আরো কিছুক্ষণ কথা বললাম তার সাথে। পরে নিচে নেমে আসলাম। গায়ে হলুদের জন্য সবাই রেডি হচ্ছিলো। আমার উপর তো বিশাল দায়িত্ব পড়ে আছে। যে বিয়ে করে সে আরামে থাকে। আর কষ্ট করতে হয় ভাইদের। যাক গা ব্যাপার না কোনো। আমিও সব কাজ শেষ করে নিলাম। রুমে আসলাম রেডি হওয়ার জন্য। কিন্তু আমার পাঞ্জাবী টা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। বাসায় এত গেস্ট কোথায় রাখছে কে জানে? খুঁজতে ছিলাম একটু পর আমার পাশে এসে হাজির।
.
- কিছু খুঁজছেন?
- তাকিয়ে দেখলাম পিয়া। হলুদ শাড়িতে পিয়াকে অসম্ভব সুন্দরী লাগতেছিলো। আমি তো বোকার মতো তাকিয়েই ছিলাম তার দিকে।
- এই এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?
- ইয়ে মানে। আপনাকে খুব কিউট লাগছে শাড়িতে।
- সত্যি?
- হ্যা।
- কিন্তু আপনাকে তো খ্যাত খ্যাত লাগছে। পোশাক চেঞ্জ করেননি ক্যান?
- আসলে খুঁজে পাচ্ছি না।
- পিছনে যান। আমি খুঁজে দিচ্ছি।
.
আমি তো বোকার মত চেয়েই রইছি পিয়ার দিকে। এত সুন্দর লাগছে। যা বলে প্রকাশ করা যাবে না। পরে আমার হাতে পাঞ্জাবী - পায়জামা দিয়ে বলে চেঞ্জ করে নিতে। আমিও পরে রেডি হয়ে নিলাম। বাহিরে এসে খুঁজছি পিয়াকে কিন্তু পাচ্ছিলাম না। কোথায় চলে গেলো আবার। পরে দেখা মিললো তার। হাত দিয়ে ইশারাতে বললো যে ভালো লাগছে। সবাই ছাদের উপরে গেলাম। হলুদ দেয়া শেষ। এখন অনুষ্ঠান শুরু হবে। কিন্তু আমি চুপ-চাপ দাঁড়িয়ে আছি। যে ছেলে গান শুনলে ফালা-ফালি শুরু করে দিতো সেই ছেলে চুপ-চাপ দাঁড়িয়ে আছে। সবাই লাফা-লাফি করছে। শুধু মাত্র আমি ছাড়া। একটু পর দেখি রিয়া ও তার ফ্রেন্ড কে জোড় করে নিয়ে গেছে স্টেজ এ। ওরাও নাচা-নাচি করছে। এই সুযোগে আমি নিচে আসি। ড্রিংক করি সবাই মিলে। অল্প ড্রিংক করি যাতে পিয়ার বুঝতে না পারে। রুম থেকে বের হয়ে ছাদের এক সাইডে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিলাম। আর পিয়াকে নিয়ে ভাবছিলাম।
.
পরে সামনে গিয়ে দাঁড়াই। সবাই যার যার মতো মজা মাস্তি করছিলো। শুধু আমি একা দাঁড়িয়ে ছিলাম। একটু পর পিয়া আসে আমার সামনে।
.
- কোথায় গেছিলেন?
- কোথাও না। কেনো?
- বুঝতে পারছি কিন্তু আমি। থাক আজকের জন্য সব কিছু মাফ।
- সত্যি?
- হুমম সত্যি। এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?
- এমনি।
.
একটু পর রিয়া এসে আমাকে আর পিয়াকে সামনে নিয়ে যায়। আমরাও নতুন জামাই - বউ এর মতো লজ্জা পাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিলো বিয়েটা আমাদেরই হচ্ছে। এভাবে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হয়। আর রাফির বিয়েটাও সম্পূর্ন হয়। আমার আর পিয়ার সাথে বেশ ভালো একটা রসায়ন তৈরী হয়ে যায়। রাফি ও তার নতুন বউয়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন। এবং যদি আমার আর তার পরে কি হয়েছে তা জানতে চান তাহলে কমেন্টে জানাবেন।
.
ধন্যবাদ।
আজাইরা প্যাঁচাল এত কষ্ট করে পড়ার জন্য। ভালো থাকবেন সবাই।
.
.
.
লেখাঃ~~~~
হৃদয় নাদিম
Comments
Post a Comment