কলিং বেল এর আওয়াজে ঘুম থেকে উঠলাম। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলাম সকাল ৮ টা বাজে। হয়তো বুয়া আসছে। তা ভেবে দরজাটা খুললাম। কিন্তু দরজা খুলে দেখলাম বুয়া না বাসার বাড়িওয়ালা।
.
- আংকেল আসসালামু আলাইকুম
- ওয়ালাইকুম আসসালাম।
- আংকেল এত সকালে? জরুরি কিছু দরকার?
- না মিয়া। তুমি তো ফ্লাটে একা থাকো। আর রুম হয়েছে দুইটা। তাই আজ আরো এক ছেলে তোমার সাথে উঠবে। এটা বলতেই তোমার কাছে আসা।
- ও আচ্ছা ঠিক আছে আংকেল। কোনো সমস্যা নেই। আর কিছু দরকার?
- মানে। হৃদয় আসলে বাসার ভাড়াটা যদি আজ দিয়ে দিতে। খুব ভাল হতো।
- আংকেল মাস তো এখনো শেষ হয়নি। আজ ১০ তারিখ। গত ২ তারিখেই না বাসা ভাড়া দিলাম।
- বাবা আসলে একটু সমস্যায় পরে গেছি তাই চাচ্ছি।
- আচ্ছা ঠিক আছে আংকেল আমি জানাবো আপনাকে।
- হৃদয় তুমি আবার তোমার আন্টিকে কিছু বলো না। আমাকে প্রাইভেটলি জানাইয়ো।
- আচ্ছা আংকেল ঠিক আছে।
.
আংকেল চলে গেল। আমি দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে রুমে এসে বসলাম। এবং মনে মনে ভাবছি যদি বাসা ভাড়া দিয়ে দেই তাহলে তো আমার এই মাস চলতে একটু কষ্ট হয়ে যাবে। তারপরও আংকেলের কথা ভেবে একটু সমাধান বের করলাম। এ ছাড়া আংকেল হচ্ছে এমন একজন মানুষ যার প্রতিদিনই কিছু না কিছু দরকার পরেই। আর সে দরকারটা মিটানোর জন্য আমাকেই ডাকে। এই তো গতকাল আমার কাছ থেকে সিগারেট চেয়ে বসলো। আমি তো তার কথা শুনে পুরাই অবাক। অনেক বললাম যে আমি এইসব খাই না। কিন্তু কে শুনে কার কথা। আমাকে নাকি কখন দেখেছে সিগারেট খেতে। আর এই বাসায় যখন উঠি তখন বাসার একটা নিয়ম ছিলো। আসলে একটা নিয়ম নয় বলতে গেলে হাজারটা নিয়ম আমাকে লিস্ট করে দিয়েছিলো।
.
লিস্ট গুলো হলো:
(i) বাসার ভাড়া প্রতি মাসের ৫ তারিখের মধ্যে ক্লিয়ার করতে হবে।
(ii) শিড়ি দিয়ে উঠলে যেনো কোনো শব্দ না হয়।
(iii) জোড়ে উচ্চস্বরে কথা বলা ও গান শোনা যাবে না।
(iv) স্মোকিং করা যাবে না, বন্ধু - বান্ধব আনা যাবে না।
(v) সর্বশেষ কথা বাসায় কোনো প্রকার মেয়ে আনা যাবে না।
আরো অনেক নিয়ম ছিলো কিন্তু এই পাঁচটা নিয়ম কাগজে লিখে আমার হাতে ধরিয়ে দেয়। আর ব্যাচেলরদের কেউ রুম ভাড়া দিতে চায় না। এটা নতুন কিছু নয়। তাই অনেক কষ্টে এই বাসাটা পেয়েছি। তাই তাদের সব কথা মেনে নিয়েছি। আর তিন মাস হবে আমি এই বাসায় উঠেছি। আর এই তিন মাসে কোনো নিয়ম ভংগ করিনি। আর কখনো করবো কিনা সেটা আমি নিজেও বলতে পারছিনা। আমাদের বাসার বাড়িওয়ালা খুব ভয় পায় তার বউ কে মানে আন্টিকে। তাই যাই করে আন্টির অগোচরে। আংকেলের মেয়ে চারটা। আচ্ছা তাদের কথা না হয় পরে বলবো।
.
ফ্রেশ হয়ে নিলাম। শুক্রবার ছিলো সেইদিন। আর আমাদের ঐ বাসাতে একটা নিয়ম ছিলো। যে প্রতি শুক্রবার সকালের নাস্তা বাড়িওয়ালারাই দিতো। আমি দশ সপ্তাহ ধরেই দেখে আসছি। তাই শুক্রবারে বুয়া আসতো দেরি করে। আবারো কলিংবেল এর আওয়াজে দরজার সামনে গেলাম। দরজা খুলে দেখলাম আদ্রিতা দাঁড়িয়ে আছে। হাতে সকালের খাবার। আদ্রিতা হচ্ছে বাড়িওয়ালার মেজো মেয়ে। ক্লাস ফাইভে পড়ে। কিন্তু কথা শুনলে মনে হবে আমার নানীর বয়সের। এত পাকামী করে মেয়েটা। তার কথা শুনলেই বুঝবেন।
.
- হাই আদ্রিতা। কেমন আছো আপু?
- হুহ। আচ্ছা বলেন তো। বাসায় কি আর কাউকে দেখে না আম্মু।
- কেনো কি হয়েছে?
- প্রতি শুক্রবার সকালে ঘুম থেকে উঠিয়ে দেয়। আপনার জন্য নাস্তা নিয়ে আসার জন্য। নিচ তলা থেকে পাঁচ তলায় উঠতে কি আমার কষ্ট লাগে না?
- হ্যাঁ কষ্ট তো লাগবেই। তো কি আর করার?
- সব আমার কপাল। নেন আপনার নাস্তা।
- তুমি নাস্তা করেছো আদ্রিতা?
- আর নাস্তা। আপনি খান বেশি করে আপনার নাস্তা।
.
বলেই নাক ফুলিয়ে চলে গেলো। বাপরে বাপ মেয়ের কথা শুনলে যে কেউ টাস্কি খেয়ে যাবে। এত পাকামো কিভাবে করতে পারে এত পিচ্ছি একটা মেয়ে। যাক আমি রুমে গিয়ে নাস্তা করার জন্য বসলাম। বাহ আজকের নাস্তাটা একটু ভিন্ন। ভুনাখিচুড়ি আজকের নাস্তা। দেখেই মনটা ভরে গেলো। আহ কি ঘ্রাণ খিচুড়ির। ঘ্রাণ নিচ্ছি আর খাচ্ছি। খাওয়া শেষ করে বিছানায় গিয়ে বসলাম। মোবাইলটা হাতে নিলাম। একটু ফেইসবুকিং করার জন্য। ডাটা চালু করতেই নোটিফিকেশন আসা শুরু হলো। ইমোতে কলের নোটিফিকেশন সব। আপুর কল ছিলো। আমি কল ব্যাক করলাম। কিন্তু লাইনে ছিলো না বলে কলটা যায়নি। তাই ফোনে কল দিলাম।
.
- হ্যালো।
- কিরে ফোন অফ ছিলো কেনো? কতবার কল দিলাম। পরে না পেয়ে ইমোতে কল দিছি।
- আসলে রাতে ফোন অফ করে চার্জে দিয়ে ঘুমিয়েছিলাম তাই অফ ছিলো।
- ওহ আচ্ছা। তো কি করছিস?
- এইতো নাস্তা করে বসলাম।
- কি নাস্তা করলি আজ?
- ভুনাখিচুড়ি।
- বাহ। ভালই তো। তো খেয়েছিস ভাল মতো?
- হ্যাঁ আপু খেয়েছি। তোরা নাস্তা করেছিস?
- হ্যাঁ করছি।
- আম্মু - আব্বু করেছে?
- হ্যাঁ সবাই একসাথেই করেছি।
- হুমম ভাল তো। আমি বাদে সবাই এক সাথে খেলি। <একটু মন খারাপ করে।>
- আরে বোকা মন খারাপ করছিস কেনো? আজ আসবি বাসায়? এসে পর। অনেকদিন হলো তো আসছিস না।
- না আপু। আজ আসতে পারবো না। কাল একটা পরিক্ষা আছে। তা ছাড়া আজ নাকি নতুন একজন রুমমেট আসবে।
- ওহ আচ্ছা তাহলে ভাল ভাবে থাকিস।
- ঠিক আছে। আয়ান কি করে?
- ও ঘুমোচ্ছে।
- এখনো ঘুমোচ্ছে। আচ্ছা ও ঘুম থেকে উঠলে আমাকে ইমোতে কল দিস।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
- রাখি তাহলে।
- ওকে রাখ।
.
সবাইকেই অনেক মিস করছি। বিশেষ করে আয়ানকে। আয়ান হচ্ছে আমার ভাগ্নে। বড় আপুর ছেলে। ওর বয়স এক বছর। কিন্তু খুব দুষ্টমি করে। অনেকদিন হলো আয়ানকে কোলে নেইনা। দেখি সামনের সপ্তাহে বাসায় যেতে পারি কিনা। ল্যাপটপটা নিলাম একটু গান শুনার জন্য। এই দিকে অনেক গুলো শার্ট ময়লা হয়ে গেছে ধুতে হবে। শার্ট গুলো পরিষ্কার করে নিলাম। এবং বেলকোনিতে গিয়ে রৌদে দিয়ে আসলাম। এভাবে কাটছিলো আমার ব্যাচেলর লাইফ।
.
(চলবে)
.
লেখাঃ হৃদয় নাদিম
Comments
Post a Comment