"ব্যাচেলর" (৫ম পর্ব)



রিক্সা বাসার সামনে গিয়ে পৌঁছায়। রুবেলকে কল দিয়ে নিচে নামতে বলি। ছোট ভাইয়ের বিয়ের ছোট খাটো জিনিষ গুলো নিয়ে যাচ্ছিলাম রুমে। সিড়ি দিয়ে উঠতে ছিলাম তখন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে বাড়িওয়ালার সেজো মেয়ে নীলা। এই সে নীলা যাকে নিয়ে আমাকে উঠতে বসতে কথা শুনতে হয় রিয়াদ আর রুবেলের কাছ থেকে। ওরা নীলাকে দেখে কানা-কানি শুরে করে দেয়। যেটা আমার একদমই অপছন্দ ছিলো। কিন্তু কি আর করার বন্ধু বান্ধব যাই করুক মেনে নিতে তো হবেই।
.
- দেখ রিয়াদ আমাদের ফিউচার ভাবি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
- ঠিক বলেছিস রুবেল। আমিও সেটাই ভাবতেছিলাম।
- ভাবি কেমন আছেন?
- এইতো ভাইয়া ভালো। আপনি ভালো আছেন?
.
- রুবেল। কাকে ভাবি বলছিস? মাথা ঠিক আছে তোর?
- রুবেল তো ঠিকই বলছে।
- রিয়াদ তোরে আমি ভাল মনে করছিলাম। কিন্তু তুই ও শেষে রুবেলের সাথে যোগ দিলি।
- তুই চুপ থাক। ঠিকই বলছি আমরা। যেটা সত্যি ঐটাই বলছি।
- ধুরর। থাক তোরা তোদের সত্যি নিয়ে। আমি উপরে গেলাম।
.
রাগ হয়ে উপরে উঠে যাই। কিন্তু তখন আমি একটা জিনিষ লক্ষ্য করেছিলাম। আমাদের কথা গুলো শুনে বাড়িওয়ালার সেজো মেয়ে নীলা মিটিমিটি হাসছিলো। কিন্তু যে হাসার হাসুক বা কান্না করুক তাতে আমার কি? রুমে ডুকলাম। ঐ খানে গিয়েও রেহাই পেলাম না। বাড়িওয়ালা এবং বাড়িওয়ালি দুইজনই বসে আছে। তাদের দেখে তো আমার মাথা আরো খারাপ হয়ে গেলো।
.
- কি ব্যাপার। আপনারা এখানে?
- তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।
- আমার জন্য। কেনো আন্টি? কোনো ঝামেলা হয়েছে আবার?
- ঝামেলা তো হয়েছেই।
- কি হয়েছে আন্টি?
- তোমার ছোট ভাই কি এখানেই থাকবে?
- হ্যা এখানেই থাকবে। যেহেতু একটা রুম খালি পড়ে আছে।
- কিন্তু তোমরা তো ব্যাচেলর ছেলেরা থাকো এখানে। যদি কোনো সমস্যা হয় পরে?
- আন্টি। রবিন আমার ছোট ভাই। আর রবিনের বউ হয়েছে আমার ছোট ভাইয়ের বউ। মানে আমার ছোট বোনের মতো। এটা নিয়ে আপনারা কোনো চিন্তা কইরেন না।
- আচ্ছা ঠিক আছে। তোমার ভরসাতেই কিন্তু এই বাসাটা ভাড়া দিয়েছি। এখন কথা হলো। বাসা ভাড়াটা কিন্তু বাড়িয়ে দিতে হবে।
- আমরা তো পুরো ফ্লাটের বাড়াই দেই। পুরো ফ্লাটের বাড়া ১৫ হাজার দেই। এতেই হবে না?
- তোমরা তো ব্যাচেলর ছিলে। কিন্তু এখন তো ফ্যামিলি হয়েছে একটা। এতে পানির খরচ ও বাড়বে। সব কিছুই মোটামুটি ভালোই খরচ হবে। তাই বাড়া বাড়িয়ে দিতে হবে
- আংকেল আপনি একটু আন্টিকে বুঝান।
- বাবা আমি কি বুঝাবো। তুমি জানোই তোমার আন্টিকে আমি অনেক ভালবাসি। সে যা বলে তার কোনো কথাই ফেলতে পারি না।
- তোমার কি লজ্জা সরমের মাথা গেছে। পিচ্ছি পিচ্ছি পোলাপাইনের সামনে এইগুলো কি সব বলছো?
.
আসলে আন্টিই হয়তো লজ্জা পেয়েছিলো। তাই আন্টি তখন চলে যায় আমাদের রুম থেকে। আসলেই আংকেল আন্টির সামনেই তাকে প্রশংসা করতো। মানে আন্টির সামনে ভালো সাজতো। কিন্তু আমি তো জানি আংকেলকে কিভাবে মেনেজ করতে হবে। তার হাতে এক প্যাকেট সিগারেট ধরিয়ে দিয়ে বললাম।
.
- আংকেল প্লিজ আপনি একটু আন্টিকে বুঝিয়ে বইলেন।
- আচ্ছা বাবা কোনো চিন্তা কইরো না তোমরা। আমি বুঝিয়ে বলবো নে তোমাদের আন্টিকে। জানোই তো তোমাদের আন্টি একটু বেশি বেশিই করে। এটা আমার উপর ছেড়ে দাও।
- আংকেল আপনার উপর ভরসা করেই কিন্তু আমরা এখনো এই বাসায় রয়েছি।
- আহা। তোমরা থাকো। কোনো দরকার পরলে আমাকে স্মরণ করবে। কেমন?
- আচ্ছা আংকেল।
.
আংকেলকে মেনেজ করে ফেলেছি। এখন পাশের রুমটা ওদের ভালো মতো গুছিয়ে দিলাম। রুবেল যেহেতু একটা মার্কেটে জব করে সেহেতু রবিনের জন্য একটা জব ম্যানেজ করে দিতে পারবে। আর আমিও দুই একটা টিউশুনি করা শুরু করে দিয়েছিলাম। তাই আর কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। বন্ধু বান্ধব এবং ছোয় ভাইয়ের ছোট্ট সংসারটা নিয়ে আমাদের ভালো ভাবেই কেটে যাবে। আমাদের প্লানিং ছিলো সেই রাতের পার্টিটা। কিন্তু সব কিছুই এরেঞ্জ করা হয়ে গেছিলো। কিন্তু এখন যাই করতে হবে যার যার রুমের মধ্যেই। কারণ এখানে সবাই ব্যাচেলর না। তাই আমাদের রুমের মধ্যেই পার্টিটা হবে। কিন্তু এইদিকে আরেক সমস্যা হয়ে পড়ে। সমস্যাটা হলো রবিনকে নিয়ে।
.
- ভাইয়া। আমি তোমাদের সাথে পার্টিতে থাকতে চাই।
- মাথা ঠিক আছে তোর? আজ তুই বিয়ে করলি। আর আজ যদি। রুবেল তুই ওকে বুঝা তো।
.
আমি রবিনের বড় ভাই আমি কিভাবে এইসব কথা ওকে বলবো। তাই রুবেলকে বুঝানোর জন্য বলে দিলাম। এখন যদি রুবেলের কথা বুঝে। অন্যদিকে সবাইকে বলে দিছিলাম যে এখন থেকে মিল খরচটা একটু বাড়াতে হবে। কারণ এখন তো আর আগের মতো মিল করলে হবেনা। আগে তো আলুর ভর্তা, ডাল দিয়ে মিল চালিয়ে ফেলতাম। কিন্তু এখন তো সেটা করা যাবে না। আর আমাদের মাঝে একটা জিনিষ খুব ভালো ছিলো। সবাই সবাইকে বুঝতে পারতো। মানে আমাদের মধ্যে আন্ডারস্ট্যান্ডিং খুব ভালো ছিলো।
.
- ভাইয়া রুবেল ভাইয়া আমাকে বুঝাইছে। কিন্তু আমার লজ্জা করছে। আমি কাল থেকে ঐ রুমে ঘুমাবো। আজকে তোমাদের সাথেই থাকবো। প্লিজ না কইরো না ভাইয়া।
- বিয়ে করেছিস। এখন আবার কিসের লজ্জা?
- জানিনা। কিন্তু লজ্জা করে তো।
- আচ্ছা যা ভাল মনে করিস। এখন যা তোর বউকে সময় দে।
- ঠিক আছে ভাইয়া।
.
পোলাপাইন গুলোর এত আবেগ থাকে কিভাবে? আবেগেই সব কিছু করে ফেলে। পরে ওদের মাথায় বিবেক কাজ করে। অদ্ভুত মানুষ। এইদিকে আমার কথা শুনে রিয়াদ ও রুবেল হেসে দিলো। ওদের হাসি দেখে আমিও হেসে দিলাম। বালিশের পাশ থেকে সিগারেটের প্যাকেট থেকে সিগারেট নিলাম। আর একটা মজা ব্যাপার হলো। আমরা তো আগে তিন জন থাকতাম এই বাসায়। তো প্রতিদিনই একজন না একজন এক প্যাকেট সিগারেট নিয়ে আসতো। এই জিনিষটা আমার কাছে অনেক ভাল লাগে। এইরকমটাও হওয়া দরকার।
.
- বন্ধু।
- কি হইছে।
- বন্ধু একটা কথা বলি। রাগ করবি না তো?
- কি কথা। আগে শুনি।
- বন্ধু তুমি রাগ করো আর না করো আমি বলতেছি। নীলা মেয়েটা কিন্তু তোমাকে অনেক পছন্দ করে। তুমি বুইঝাও কেনো অবুঝের মতো করো।
- এই টপিকে আর কোনো কথা যেনো না শুনি।
- হৃদয়। রুবেল ঠিক কথাই কিন্তু বলছে। আমি এটা খেয়াল করছি। নীলা তোকে আসলেই অনেক পছন্দ করে।
- এই তোরা চুপ করবি। যা পার্টির জন্য সব কিছু রেডি কর। যা হোটেল থেকে খাবার নিয়ে আয়।
- আজ কি আনবো?
- এই নে টাকা। গ্রীল আর নান রুটি নিয়া আয়।
- যাইতেছি। কিন্তু বন্ধু যেটা বলছি ঠিকই বলছি। একটু ভাইবা দেইখো তুমি।
- আবার শুরু করলি তোরা। প্লিজ থাম তোরা।
.
আসলে আমিও বুঝতাম যে নীলা আমাকে পছন্দ করতো। কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব। আমি তাদের বাসায় থাকি। এখন যদি তার বাবা-মা জানতে পারে। আমাদের বাসা থেকে বের করেই দিবে। তাই আমিও বেশি আগাচ্ছি না এই বিষয়টা নিয়ে। আর নীলাকে আমারও অনেক ভাল লাগতো। একটা সুন্দর মেয়েকে সবারই ভালো লাগবে। কিন্তু ওর আচরণ আমার কাছে অনেক ভাল লাগে। কিন্তু আংকেল - আন্টি আমাকে অনেক ভরসা করতো। শাসন বা চাপ দিলেও আমাদের কথা ভাবতো। নিজের ছেলেদের মতো ভাবতেন আমাদের।
.
আমি আবার আমার বড় আপুর সাথে অনেকটাই ফ্রি ছিলাম। আপুকে নীলার কথা বলেও ছিলাম। আপুও আমাকে সাপোর্ট দিয়েছিলো। আর রবিনের কথাটাও শেয়ার করা উচিৎ। তাই আপুকে কল দিলাম।
.
- হ্যালো আপু।
- কিরে কেমন আছিস?
- এইতো সারাদিন প্যারার মধ্যে পাড় করে এখন একটু প্যারা মুক্ত হলাম।
- কিসের প্যারা? টাকা লাগবে?
- আজব তো আমি কি শুধুর টাকার জন্যই তোকে কল দেই।
- আচ্ছা কি হয়েছে সেটা বল। নীলার কি বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে?
- আপু। তুই আসলেই না।
- আচ্ছা আচ্ছা বল কি হয়েছে।
- রবিনের কাহিনী শুনছোত?
- হুম শুনলাম তো। আর এটাও জানি যে রবিন তোর সাথেই আছে। আচ্ছা ওর বউটা দেখতে কেমন রে?
- রাখ। তুই কেমনে জানলি? যে রবিন আমার সাথে আছে।
- রবিনের সাথে আমার কথা হয়েছে। আর আমি জানিও যে রবিন কিছু করলে সবার আগে সেটা তুই জানবি।
- হায়রে। শেষ মেষ আমারে খারাপ ভাববে সবাই।
- এটা নিয়ে ভাবিস না। রাখ তাহলে।
- আচ্ছা রাখো। আপু শোন।
- হুম বল কত টাকা লাগবে?
- হাহাহা। তুমি আমার বলার আগেই বুঝে ফেলো। কত লক্ষী আপু আমার।
- পাম মারতে হবে না। দুই-তিন হাজার টাকা পাঠাতে পারবো। এর বেশি পারবো না।
- আচ্ছা তাই পাঠাও।
- আচ্ছা। কাল সকালে তোর ভাইয়া কে পাঠাতে বলবো নে। আল্লাহ্‌ হাফেজ।
- হুমম। আল্লাহ্‌ হাফেজ।
.
আপুর সাথে কিরকম ফ্রি। সেটা হয়তো বুঝতে পেরেছেন। হুম একটা ছেলের বড় বোন থাকা মানে তার কাছে অনেক কিছু। যেমনটা আমি মনে করি। খুদাও লেগে গেছে। রুবেল ও খাবার নিয়ে আসছে না। আর একটা সিগারেট ধরালাম। সিগারেটের টানছি আর হাসছি। কারণ একদিন হয়তো আমিও রবিনের মতো কাজ করবো সেটা ভেবে। যাক আমিও কিন্তু রোবট না। আমার ও মন আছে। আমারও ফিলিংস আছে। আর নীলার প্রতি ভালবাসাটাও আছে।
.
(চলবে)
.
.
লেখাঃ হৃদয় নাদিম।

Comments