"ব্যাচেলর" (৬ষ্ঠ পর্ব)


রাতের খাবারের জন্য অপেক্ষা করতে করতে খুদাটা আরো বেশি পরিমাণের বেড়ে যায়। তারপরও রুবেল আসছে না। একটা কল দিয়ে দেখা দরকার। কই গেলো ছেলেটায়।
.
- কিরে বেটা। কই তুই?
- আমি বন্ধু বাড়ির গেইটের সামনে আইসা পড়ছি।
- তাড়া-তাড়ি আয় তাহলে। আমি দরজা খুলতেছি।
- ঠিক আছে বন্ধু।
.
দরজা খুলে রুবেলের জন্য অপেক্ষা করছি। সেই দুপুরে দুইটায় লাঞ্চ করছিলাম। এখন রাত ১১ টা বাজে। এর মধ্যে সন্ধ্যা বেলায় নাস্তাটাও করা হয়নি। তাই একটু বেশিই খিদে পেয়ে যায়। ও আরেকটি কথা বলা হয়নি। মিষ্টি নিয়ে আসছিলাম রবিনের বিয়ে উপলক্ষে। সে মিষ্টি থেকে বাড়িওয়ালার বাসায় ১ কেজি দিয়ে বাকি গুলো আমাদের জন্যই রেখে দিছিলাম। সন্ধ্যায় আমি নিজেই মিষ্টির প্যাকেটটা দেওয়ার জন্য বাড়িওয়ালার বাসায় গেলাম। দরজা নক করলাম কিন্তু দরজা খুললো আদ্রিতা।
.
- কেমন আছো আদ্রিতা?
- ভাইয়া ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন?
- হুমম ভাল আছি। আন্টি বাসায় নেই?
- হ্যা আছে তো। আম্মু নামাজ পড়ছে।
- ওহ আচ্ছা ঠিক আছে। সমস্যা নেই। এই মিষ্টির প্যাকেটটা রাখো।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
- আন্টিকে বলে দিও যে হৃদয় ভাইয়া দিয়ে গেছে।
- ওকে ভাইয়া।
.
কথা বলে আসার সময়ই নীলার কথা শুনতে পেলাম।

- কে আসছেরে আদ্রিতা?
- হৃদয় ভাইয়া আসছে।
- ওহ। আচ্ছা তুই ভেতরে যা।
- ওকে। আপু।
.
- হাই। কেমন আছেন?
- এইতো আছি। আপনি?
- হুমম আমিও ভাল আছি।
- আচ্ছা তাহলে আমি যাই।
- যাবেনই তো। একটু পরে যান।
- কেনো? 
- কেনো আবার? আর আপনার ফ্রেন্ডরা অনেক ভালো। আপনি কেমন জানি।
- আমার কোন ফ্রেন্ডটা ভালো?
- রুবেল ভাইয়া রিয়াদ ভাইয়াও।
- ওহ আচ্ছা। হ্যা ওরা ভাল। শুধু আমি খারাপ।
- না না। আমি কি তা বলছি? আপনিও ভাল কিন্তু।
- কিন্তু কি?
- অবুঝ।
- হুম জানি আমি অবুঝ।
- আচ্ছা হঠাৎ মিষ্টি কেনো?
- ও আপনাকে তো বলাই হয়নি। আজ আমার বিয়ে হলো। আর সে বিয়ের মিষ্টিই নিয়ে আসলাম।
- কিহহ।
- বাসায় গিয়ে বউ দেখে আসবেন।
.
ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিলো। আমার তো খুব হাসি পাচ্ছিলো। আমিও আমাদের রুমে চলে আসি। রুমে গিয়েও আর লুকাতে পারলাম না ওদের কাছে। ওরা তো শুরু করছে কি হয়েছে তা শুনার জন্য। পরে বললাম সব খুলে। ওরাও হেসে দিলো। কিন্তু পরে ওরাই আবার বুঝালো যে কাজটা ঠিক হয়নি। হেন-তেন আরো অনেক কথা।
.
রুবেল রাতের খাবার নিয়ে আসে। আগে তো অভদ্র ভাবে যেখানে ইচ্ছে খেয়ে ফেলতাম। কিন্তু এখন আর ঐ সুযোগটা নেই। ছোট ভাইয়ের বউটা খুব সংসারী মেয়ে দেখে বুঝা যাচ্ছিলো। আমাদের তখনো কোনো ডাইনিং টেবিল ছিলো না। কিন্তু ডাইনিং রুম ছিলো। তাই ফ্লোরে বসেই খাওয়া হতো। ঐ দিন রাতের খাবার সুমাই পরিবেশন করলো। আমাকে এবং আমার বন্ধুদের খুব সম্মান করতো। আমি এটাই চেয়ে ছিলাম আমাকে সম্মান করুক বা না করুক আমার ফ্রেন্ডের যাতে সম্মান করে। যাতে ওদের মনের মধ্যে কোনো কমতি না থাকে। আমি আমার ছোট ভাই আর ছোট ভাইয়ের বউয়ের জন্য স্বাধ্যমত করতে পারবোই।
.
সেদিনের মতো রাতের খাবার শেষ করলাম। আর কথা ছিলো পার্টি হবে। হ্যা পার্টিটা হয়েছিলো। রবিনের জন্য ১২ টার পর পার্টি শুরু করলাম। ছোট একটা সাউন্ড স্পিকার ছিলো। সেটাতেই অল্প সাউন্ড দিয়ে গান প্লে করলাম। আর ড্রিংক করলাম। সবারই পিনিক হয়। কিন্তু রুবেলের একটু বেশিই পিনিক হয়ে যায়। যার কারণে ও কিছুটা পাগলামি শুরু করে দিয়েছিলো। আর আমরাও পিনিকে ওর সাথে মজা করছিলাম। তো ঐ দিন রাতে কে কিভাবে ঘুমাইছি সেটা খেয়াল নেই। রুবেল তো ফ্লোরেই ঘুমায় পড়ছে। ঐ দিনের মতো মজাটা করলাম।
.
সকালে ঘুম থেকে উঠি কলিংবেলের শব্দেই। উঠে দরজা খুললাম। বুয়া আসছে। সে গিয়ে সকালের নাস্তা বানাতে ছিলো। আমরা এক এক করে উঠে ফ্রেস হয়ে নিলাম। আমার আর রিয়াদের ঐ দিন একটা ক্লাস্ট টেস্ট পরিক্ষা ছিলো। তাই ক্যাম্পাসে চলে গেলাম ৮ টার দিকে। ক্লাস শেষ করে ১২ টার দিকে ক্যাম্পাস থেকে বের হলাম। রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম আমি আর রিয়াদ।
.
- হৃদয়।
- হুম দোস্ত বল।
- ওদের তো কাল বিয়ে হলো। আমাদের তো দরকার ওদের কিছু গিফট্ দেয়া।
- হ্যা কথাটি খারাপ বলিসনি। তাহলে তুই বল তোর কি প্ল্যান?
- আমরা তো ওদের বড় ভাইয়ের মতোই। আর ওরা তো এখন এখানেই থাকবে। আর এখন এটা আমাদের ফ্যামিলির মতোই। তাই আমি বলছি যে টুকটাক বাসায় অনেক কিছু লাগে। আমরা অল্প অল্প করে সেইগুলা নিয়ে আসি। তুই কি বলিস?
- রিয়াদ তুই এত কিছু ভাবিস? আমি তো জানতাম তুই এখনো অবুঝ। আসলেই রে আমি তো এভাবে ভাবিনি। আর আমরা কিন্তু পড়া-লেখার পাশা-পাশি ফ্রি সময়ে ছোট খাটো চাকরি করতে পারি। এতে আমাদের জন্য ভালো হয়। আর এইখানে পার্ট টাইম জব করার অনেক উপায় আছে।
- হুম ঠিক আছে।
- আচ্ছা আমরা কাল রাতের পিনিকে এইসব বলতেছি?
- ধুরু শালা। তুই সবসময়ই মজার মধ্যেই থাকিস হৃদয়।
- হাহাহা।
- রুবেলের সাথে এই ব্যাপারটা শেয়ার করা দরকার।
- হ্যা। সবার মতামতেরই দরকার আছে।
- আচ্ছা চল কিছু খেয়েনি খুদাও লাগছে।
- হুমম চল তাহলে।
.
হোটেল থেকে সিংগারা খেলাম। এবং বাসার জন্য নিয়ে নিলাম। এভাবেই কেটে যাচ্ছিলো বিবাহিত ব্যাচেলর এবং অবিবাহিত ব্যাচেলরদের ছোট্ট সংসার। আমি বিকাশের দোকান থেকে ক্যাশ আউট করে নিলাম। আপু গতকাল রাতে বলেছিল ৩ হাজার পাঠাবে। কিন্তু সে আরো দুই হাজার বাড়িয়ে ৫ হাজার পাঠিয়েছে। যাক একটু ভালোই হয়েছে। এখন বাসায় কল দিয়ে টাকার কথাটা জানায় দেই বাবাকে।
.
- হ্যালো বাবা।
- হুম বাবা কেমন আছোত?
- আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভাল আছি। তোমরা কেমন আছো?
- হ্যা ভালো আছি আমরা। তোর নিজের প্রতি খেয়াল রাখছিস তো? খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করিস কিন্তু।
- আচ্ছা বাবা। তোমরাও তোমাদের খেয়াল রেখো।
- আর তোর টাকা বিকেলে পাঠিয়ে দিবো নে।
- ওকে ঠিক আছে বাবা।
- আচ্ছা ভালো থাকিস। আল্লাহ্‌ হাফেজ।
- আল্লাহ্‌ হাফেজ।
.
আমি টিউশুনি করে ৫ হাজারের মতো পাই। আমি নিজে একাই ছোট ভাইয়ের সংসার চালাতে পারবো। কিন্তু তাতে রবিন কিছু বুঝবে না। ওর এখন অনেক কিছু জানার আছে বুঝার আছে। তাই কয়েকটা দিন পরে ওকে রুবেলের সাথে মার্কেটের জব করতে বলবো। রিয়াদ ও ওর বাসায় কথা বলে টাকার কথা বলে দেয়। আর আমাদের প্ল্যানিং তো একটা আছেই। আগে রুবেলের সাথে কথা বলে পরে সব হবে। তো পরে বাসায় গেলাম। রুবেলও মার্কেটে যায়। ওর আসতে আসতে রাত ৯ টা বাজবে। ওদের জন্য সিংগারা নিয়ে গেছিলাম ঐ গুলো সুমাকে ডাক দিয়ে ওর হাতে দিলাম। ও দেখে খুশিই হয়।
.
একটু পরে খেয়াল করে দেখলাম রুমটা আগের থেকে একটু অন্যরকম লাগছে। হ্যা পরে বুঝতে পারলাম সুমা ঘরটা গুছিয়েছে। আসলেই একটা মেয়েই একটা সংসার আগলে রাখতে পারে। আমাদের রুমটা ছিলো আগে অগোছালো। এখন দেখতে কত ভাল লাগছে। আমাদের রুমে গেলাম। ঐ রুমটাও গুছিয়েছে। মেয়েটা আসলেই পাগল। আমাদের রুম গুছানোর কি দরকার ছিলো।
.
- সুমা?
- জ্বি ভাইয়া আসছি।
- এই কি তুমি রান্নাঘরে কেনো? বুয়া আসেনি?
- ভাইয়া। বুয়াকে আসতে মানা করেছি। আমি তো আছিই। আমি আজ থেকে রান্না করবো।
- মাথা খারাপ হয়েছে তোমার। তুমি আমার ছোট ভাইয়ের বউ। মানে আমার ছোট বোনই। আর তুমি করবে বুয়ার কাজ। এটা কখনই মেনে নিবো না।
- ভাইয়া আমি রাঁধতে পারি তো। কিছু হবে না। প্লিজ ভাইয়া মেনে নিন।
- ধ্যাত। তোমরা যা ইচ্ছে করো।
- ওকে ভাইয়া।
- আর শোনো আমাদের রুম গুছাতে হবে না। এটা আমরা গুছিয়ে নিবো।
- ভাইয়া।
- আচ্ছা যা ইচ্ছে কইরো।
.
জানি বলে কোনো লাভ নেই। তাই আর কথা বাড়ালাম না। আর আসলেই মেয়েটা অনেক লক্ষী। অল্প কিছুদিনেই সবাইকে আপন করে ফেলেছে। এভাবে সবাই পারে না। রবিনকে দেখতে পাচ্ছিনা। কোথায় গেলো?
.
- সুমা। রবিন কোথায়?
- ভাইয়া ও আপনারা আসার আগে একটু বাহিরে গেছে।
- ওহহহ। আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি সিংগারা গুলো খেয়ে নিও।
- ঠিক আছে ভাইয়া।
.
কোথায় গেলো ছেলেটায়? ফোনটা হাতে নিয়ে কল দিলাম রবিনকে।
.
- হ্যালো।
- হুম ভাইয়া বলো।
- কই তুই?
- ভাইয়া আমি একটু বাহিরে আসছি। কেনো?
- তুই সুমাকে বাসায় একা রেখে বাহিরে গেছিস কেনো? কিছু লাগলে আমাকে বলতি। তুই কেনো গেছিস?
- এসে পড়তেছি ভাইয়া।
- আচ্ছা তাড়া-তাড়ি আইসা পরিস তাহলে।
.
আমাদের বাসায় দুইটা বাথরুম ছিলো। দুইটাই রুমের মধ্যেই ছিলো। আর বাথরুমটা পরিষ্কার করা দরকার। তাই আমাদের রুমের বাথরুমটা পরিষ্কার করে গোসল করে ফেললাম। আমাদের নিয়ম ছিলো এক সপ্তাহে এক জন করে বাথরুম পরিষ্কার করবে। সেটাও এখনো চলছে। এবং চলে যাবে। গোসল করে কাপর গুলো বারান্দায় মেলে দিলাম। আর এখন সিগারেট ও লুকিয়ে খেতে হয়। তাই বারান্দায় গিয়ে সিগারেট খেতাম। সিগারেট খাচ্ছিলাম আর আকাশের দিকে তাকিয়ে নীল আকাশটা দেখছিলাম।
.
(চলবে)
.
.
লেখাঃ হৃদয় নাদিম

Comments