"ব্যাচেলর" (৭ম পর্ব)



- হৃদয় সিগারেটের প্যাকেটটা কই রাখছোত রে?
- বালিশের পাশেই না রাখলাম। খুঁজে দেখ।
- কোন বালিশের পাশে রাখলি? খুঁজেই তো পাচ্ছি না।
- আরে বেটা দেখ ভাল কইরা। খুঁজে পাবি তো।
- বন্ধু পাচ্ছি না।
- আরে এইখানেই তো ছিলো। কে নিলো প্যাকেটটা।
- আমি কেমনে কইতাম।
- রবিন কি নিলো নাকি?
- জিজ্ঞাসা করে দেখ।
- আরে ও তো বাসায়ই নেই। ও নিবে কিভাবে?
- তাহলে।
- আচ্ছা আয় তো আমার সাথে।
.
হ্যা যেটা সন্দেহ করেছি ঠিক ঐটাই হয়েছে। ময়লা ফেলার বালতিতে ফেলে দিয়েছে কেউ। আর কে এ কাজ করেছে সেটাও বুঝতে পারছি। তাই রিয়াদকে নিয়ে সোজা রুমে এসে পরলাম। এই কাজটা সুমাই করেছে। হয়তো রুম ঝাড়ু দিতে এসে এই কাজটা করেছে। কিন্তু মেয়েটাকে কত বার বললাম যে আমাদের রুম তার গুছানোর দরকার নেই। কি আর করার এখন থেকে যা করতে হবে লুকিয়েই করতে হবে।
.
- বন্ধু আমার সিগারেটের প্যারা ডুকছে।
- কি করবি এখন। সকালেই তো নতুন প্যাকেটটা কিনা আনলাম। আর ঐ খান থেকে মাত্র একটা খাইছিলাম গোসলের পর। বাকিগুলো ময়লার বালতিতে পইরা রইছে।
- এহন কি করতাম?
- এখন থেকে সিগারেট খেলে লুকিয়ে খেতে হবে। যেহেতু বাসায় একটা বোন আছে। আর কোন বোনই চাইবে না তাদের ভাইয়েরা এইগুলো করুক। তাই আগের মতো যেখানে সেখানে প্যাকেট রাখা যাবে না। কি বলতে চেয়েছি বুঝছিস?
- হ্যা বুঝছি ।
- তোর কাছে টাকা আছে?
- হ্যা আছে।
- তাহলে দোকান থেকে নিয়ে আয়। আর সাবধান দিনের বেলা বারান্দায় গিয়ে খাবি।
- আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে।
.
রিয়াদ চলে গেলো আমাদের অক্সিজেন নিয়ে আসতে। যেটা না করলে অক্সিজেন পাইনা। দুপুর দুইটা বাজে তখন। রবিন কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসে। কিন্তু ওর কান্ড দেখে আমি পুরাই অভাক। এটা কি করেছে বোকা ছেলে। পুরো বাজারটাই নিয়ে এসে ফেলেছে। এমনিতেই বাসায় ফ্রিজ ছিলো না। আর এইগুলো ফ্রিজ ছাড়া রেখে খাওয়াও যাবে না। রবিনকে ইচ্ছে মতো বকা দিলাম। তারপরও ও কিছু বললো না।
.
- এত গুলো আনার কি দরকার ছিলো? এইগুলা পচে যাবে না? বোকা কোথাকার।
- আচ্ছা থাকুক কিছু হবে না ভাইয়া।
- আচ্ছা দেখি। বাড়িওয়ালাদের ফ্রিজে রাখা যায় কিনা।
.
বাড়িওয়ালার রুমের সামনে গিয়ে কলিংবেল চাপলাম। আন্টি দরজা খুললো।
.
- আসসালামু আলাইকুম আন্টি। কেমন আছেন?
- আলহামদুলিল্লাহ্‌। তোমরা কেমন আছো?
- আমরাও ভাল আছি। আসলেই আন্টি একটা হেল্প লাগবে।
- কিসের হেল্প?
- আর বলবেন না আন্টি। এই বোকা ছেলেটা বাজারে গিয়েছিলো আজ। আমাদের না বলেই। বাজারে গিয়ে দেখেন কতো কিছু নিয়ে এসেছে। এখন এইগুলো তো সব একদিনে খাওয়া সম্ভব নয়। তাই যদি আপনাদের ফ্রিজে একটু রাখতেন। প্রোমিজ কালকেই নিয়ে যাবো।
- আহা। তুমি ওদের দেখে জেনে যাবে না। বোকা।
- আন্টি আমি তো বুঝতে পারিনি।
- আচ্ছা ঠিক আছে। এইগুলো নিয়ে ভেতরে যাও।
.
তাদের রুমের ভেতরে গেলাম ফ্রিজে রাখার জন্য। নীলাকে দেখলাম টিভির সামনে বসে আছে। টিভি দেখতে ছিলো। আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ালো। কিন্তু মনে হচ্ছে মনটা খারাপ। আর কি করার। আন্টি নীলাকে বললো আমাদের তরকারী গুলো ফ্রিজে রেখে দিতে। নীলাও আমার হাত থেকে তরকারীর ব্যাগটা নিয়ে ফ্রিজে রাখলো।
.
- আচ্ছা আন্টি তাহলে আমরা যাই।
- হ্যা যাও। আর শোনো। তোমাদের বাসার বউটা কেমন আছে।
- হুম আন্টি ভালোই আছে। <কথাটি নীলা শুনে আরো কষ্ট পেয়েছে হয়তো>
- মেয়েটি একা একা থাকে। আমাদের বাসায় ও তো আসতে পারে। নীলা আছে, আদ্রিতা আছে ওদের সাথে থাকলেও তো সময় কেটে যাবে।
- হুমম। আমি সুমাকে আসতে বলবো নে।
- তোমার আগে তোমার ছোট ভাই বিয়ে করে ফেললো। তুমি আবার কবে করে ফেলবা?
- হাহাহা। আন্টি বিয়ে করলে আর কেউ না জানলেও আপনারা ঠিকই জানবেন।
.
নীলাকে কিছুটা ইজ্ঞিত করেই কথা বলা। আর ও জেনে গেলো যে গতকাল যা বলেছিলাম ঐটা মিথ্যে ছিলো। আর তখন একটু হাসি দেখতে পেলাম তার মুখে। আসলেই কি নীলা আমাকে পছন্দ করে? আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছিলো না। কিভাবে সম্ভব সেটা। পরে রবিন আর আমি তাদের রুম থেকে বের হয়ে আসি। সিড়ি দিয়ে উপরে উঠার সময়ই "মিথ্যেবাদী" এরকম একটা কথা শুনি। পিছনে তাকিয়ে দেখলাম নীলা দরজার সামনে। আমি রবিন উপরে চলে যেতে বললাম। ও উপরে চলে যাচ্ছিলো।
.
- কে মিথ্যেবাদী?
- যে মিথ্যে কথা বলেছে সে।
- তাহলে তো আমি নই। কারণ আমি মিথ্যে কথা বলিনি।
- ইশশশ সত্যবাদীটা রে।
- আচ্ছা যাই। খিদে পেয়েছে অনেক।
- ঠিক আছে টাটা।
- হুম টাটা।
.
নীলা দরজা লাগিয়ে দিলো। আমিও উপরে এসে পরলাম। এইদিকে রিয়াদ ও বাসায় আসে সিগারেট নিয়ে। ও সিগারেট খেয়ে শান্তি হয়েছে। পরে সবাই একসাথে দুপুরের খাবার খেতে বসলাম। রুবেল ছিলো না শুধু। চাপাবাজটা অনেক মজার একটা মানুষ। আমরা ৪ জনই দুপুরের খাবার খেলাম। সেইদিনের রান্না গুলো ছিলো অনেক মজার। সবাই প্রশংসা করলাম রান্নার। আসলেই অনেকদিন পর এত মজা করে খেয়েছিলাম।
.
খাওয়া শেষ করে যার যার রুমে গেলাম। একটু রেস্ট নিলাম। এবং ভাবলাম যে সর্ব প্রথম আমাদের বাসায় একটা ফ্রিজ দরকার। সেটা আমি একা একাই ভাবলাম। রাতে রুবেল আসবে পরে ওদের কাছে শেয়ার করে নিবো। আর অন্যদিকে নীলার কথা কেনো জানি তখন থেকে একটু বেশি মনে পড়তো। কেনো জানি তাকে নিয়ে একটু বেশিই ভাবা হতো। এই দিকে রিয়াদ ওর খালাতো বনের সাথে দিব্বি প্রেম করে যাচ্ছে।
.
- রিয়াদ। এবার একটু রেহাই দে বাপ। একটু ঘুমা এখন।
- তুই ঘুমা। শালা।
- আচ্ছা আচ্ছা। কথা বলো তাহলে। তোমার খালার কাছে বিচার দিতে হবে।
- তুই চুপ কর।
.
এইদিকে ওরা আমার কথা শুনে হাসা-হাসি শুরু করে দিলো। দিয়া আবার আমাকে খুব ভাল ভাবেই চিনতো। দিয়া হচ্ছে রিয়াদের খালাতো বোন। মানে রিয়াদের প্রেমিকা। যখন তাদের ঝগড়া হয় তখন আমাকেই তাদের ঝগড়া মিটানো জন্য থাকতে হয়। আর এই কারণেই দিয়ার সাথে ভালো পরিচয় হয়ে যায়। আর রিয়াদও নীলার কথা বলে দেয় দিয়ার কাছে। তাই এখন তেমন দুষ্টামি করে কথা বলতেও পারিনা। কিছু বললেই নীলা কথা তুলবে আর নীলার কথা শুনলে আমি চুপ হয়ে যাই।
.
ওদের আর বিরক্ত করলাম না। ল্যাপটপটা অন করে একটা মুভি দেখা শুরু করলাম। মুভি দেখতে দেখতেই মেসেঞ্জারে টয়ার কল আসে। কি ব্যাপার টয়া হঠাৎ কল দিলো। কলটা পিক করলাম।

-কিরে মুটি কেমন আছিস?
- তুই আর চেঞ্জ হইলি না কুত্তা।
- হাহা। কেমন আছিস?
- হুম ভাল আছিরে। তোর কি খবর?
- এইতো আছি ভালই।
- শোন তাহলে যে কারণে তোকে কল দেওয়া।
- হুম শুনি কি কারণ।
- বেংগাইবি না কুত্তা।
- আচ্ছা বল। কি হয়েছে।
- এই মাসের ২০ তারিখে আমার বিয়ে।
- কি বলিস তোর বিয়ে? কেমনে কি? ছেলে কি কানা? নাকি লেংড়া?
- তুই আসলেই একটা কুত্তা। যা তোর লগে কোনো কথা নাই।
- শোন শোন।
- হুম বল।
- সব কিছু খুলে বল।
- ছেলে দেশের বাহিরে থাকে। তিন মাসের জন্য দেশে আসছে। বিয়ে করে আমাকেও বাহিরে নিয়ে যাবে।
- কোথায় থাকে?
- আমেরিকায়।
- বাহ বেশ তো।
- হুমম কচু। আর শোন তুই কবে আসছিস সেটা বল।
- দোস্ত আমি না গেলে হয়না?
- মানে কি? আমার বিয়েতে তুই থাকবিনা এটা কি করে হয়?
- অনেক প্যারার মধ্যে আছিরে।
- আচ্ছা প্যারা তোকে ভর করে নাকি তুই প্যারাকে ভর করিস?
- হেহে দুইটাই।
- আচ্ছা নীলার কি খবর?
- হ্যা নীলা ভালোই আছে।
- প্রোপোজ করিসনি এখনো?
- না। একেবারে বিয়ে করে ফেলবো। দোয়া করিস।
- হুম দোস্ত দোয়া তো অবশ্যই আছে। তুই তো এখনো মিরপুরে থাকিস। তাই না?
- হ্যা।
- ব্যাচেলর লাইফ কেমনরে?
- সব কিছু মিলিয়ে বিন্দাস।
- আচ্ছা তাহলে তুই এক সপ্তাহ আগেই এসে পরিস। আর নে আব্বুর সাথে কথা বল।
.
- আসসালামু আলাইকুম আংকেল। কেমন আছেন?
- ওয়ালাইকুম আসসালাম। ভাল আছি বাবা। তুমি কেমন আছো?
- হ্যা ভাল আছি।
- টয়া বলেছে কিছু?
- হ্যা বললো তো।
- তাহলে কিন্তু তুমি ওর বিয়ের সব কিছু দেখাশুনা করছো।
- জ্বি আচ্ছা।
- আজ ১০ তারিখ। তুমি দুই দিনের মধ্যেই এসে পড়ো।
- ঠিক আছে আংকেল।
- আচ্ছা নাও টয়ার সাথে কথা বলো।
- হুম টয়া। আসলেই আমি প্যারার মধ্যে আছি।
- প্যারাটা কাকে নিয়ে?
- রবিনকে নিয়ে।
.
পরে রবিনের সব কাহিনী খুলে বলি টয়াকে। ও তো বিশ্বাসই করছে না রবিন যে এরকম কিছু করবে। আর টয়া হচ্ছে আমার ছোট বেলার ফ্রেন্ড। ওরা আগে নারায়ণগঞ্জেই থাকতো। কিন্তু এস এস সি পরিক্ষার পর ওরা ফ্যামিলি সহ ওদের গ্রামে চলে যায়। ওদের গ্রামের বাড়ি ছিলো বরিশাল। রুবেলদের গ্রামের বাড়ির দিকেই। তো পরে টয়ার সাথে সব কিছু শেয়ার করলাম।
.
- আরে সমস্যা নাই। তুই রবিন আর ওর বউকেও নিয়ে আসিস। রবিনের বউকেও দেখা হয়ে যাবে। আর পারলে নীলাকেও নিয়ে আসিস। তাহলে তো আরো ভাল হবে।
- নীলা তো আমার বউ। যে ওরে নিয়ে যাবো।
- বউ বানিয়ে ফেল। তাহলেই তো বউ হয়ে যাবে।
- আচ্ছা পরেরটা পরে।
- আচ্ছা ঠিক আছে। আমি ঠিকানা তোকে টেক্সট করে দিচ্ছি।
- ওকে। আল্লাহ্‌ হাফেজ।
- হুমম আল্লাহ্‌ হাফেজ।
.
আচ্ছা আগে একটা ঘুম দেই। ঘুম থেকে উঠে পরে ভাবা যাবে কি করা যায়। রিয়াদ ও কথা বলতে বলতে কখন জানি ঘুমিয়ে পড়ছে। আমারো ঘুম পাচ্ছে। তাই ঘুমিয়ে পড়লাম।
.
(চলবে)
.
.
লেখাঃ হৃদয় নাদিম

Comments