সকালে ঘুম ভাঙে নীলার মেসেজের নোটিফিকেশনের শব্দে। সকাল আটটা বাজে তখন। আমি উঠে ফ্রেশ হতে গেলাম। বারান্দায় গিয়ে একটু হাটা-হাটি করলাম। চেয়ারে বসে একটা সিগারেট ধরালাম। এবং নীলার মেসেজের রিপ্লাই দিলাম। তার মেসেজটি ছিলো। এইরকম -
.
- শুভ সকাল লম্বা বোকা ছেলে।
.
তখন পর্যন্ত নীলা জানতো না যে আমি তাকে চিনে ফেলেছি। চিনতামই তো না যদি কাল রাতে নম্বরটি সেইভ না করতাম। আর মেসেজটি পাঠায় আমার মোবাইলে। হোয়াটস এপ এ পাঠায়নি। আমি তার মেসেজের রিপ্লাই দিলাম।
.
- শুভ সকাল। আয়াতের আম্মু।
.
মেসেজটি পাঠিয়ে দিলাম। এটা পাঠালাম যাতে নীলার আমার প্রতি একটু সন্দেহ হয়। মেসেজটি দেখে হয়তো সে অবশ্যই চিন্তা করবে যে আয়াত কে? আরো অনেক কিছু মাথায় আসবে তার। যাইহোক আমি একটু উল্টা পথেই চলতে পছন্দ করি। সবাই তো সোজা পথে চলে আমি না হয় একটু বাকা পথ দিয়ে ঘুরে আসি।
.
সিগারেট খাওয়া শেষ করি। সিগারেট খেতে খেতে একটি কথা মনে পড়ে যে আমার নম্বরটি নীলা কিভাবে পেলো বা কে তাকে আমার নম্বরটি দিলো। প্রথমত আমার সন্দেহ হচ্ছিলো সুমাকে নিয়ে। সুমা দিতে পারে নম্বরটি। কারণ একটা মেয়ে আরেকটা মেয়ের সব কিছুই বুঝতে পারে। শুধু একটা ছেলে আরেকটা ছেলেই কখনো বুঝলো না।
.
রিয়াদ ও রুবেলকে ডেকে উঠালাম ঘুম থেকে। রিয়াদ খুব তাড়া-তাড়িই উঠে যায়। কিন্তু রুবেলকে ডাকতে ডাকতে পরে উঠে। আর রুবেলকে উঠানোর একটাই টেকনিক ছিলো। সেটা হলো ওর কানের সামনে গিয়ে যদি কেউ বলতো যে রুমানা কল দিয়েছে। তাহলে রুবেলকে আর কে আটকায়। সাথে সাথে ও ঘুম উঠে যাবে। আর ঘুম থেকে উঠার পর বকা-বকি ও শুরু হয়ে যাবে। শালায় একটা মানুষও।
.
অন্যদিকে রবিনের উঠতেও অনেক লেট হতো। আমারও লেট হতো। কিন্তু আজ কেনো তাড়া-তাড়ি ঘুম থেকে উঠলাম সেটা আমিই জানি। আর সুমাও সকাল সকাল নাস্তা বানিয়ে ফেলে। কিছুক্ষণ পর সবাই ফ্রেশ হয়। পরে একসাথে নাস্তা করলাম। এবং রাতের প্লানিং যেটা করেছিলাম সেটা অনুযায়ী টাকা দিলাম ১০ হাজার করে।
.
আমরা সবাই বের হলাম। সবাই আগে ফার্নিচারের দোকানে গেলাম। সুমাকে বললাম খাট পছন্দ করতে। যাক খাট পছন্দ হলো তাদের। পরে ডাইনিং টেবিল পছন্দ করে নিলাম। পরে বাসার ঠিকানাটা দিয়ে দিলাম। আধা ঘন্টার মধ্যে বাসায় দিয়ে আসবে। টাকাও পুরোটাই দিয়ে দিলাম। পরে রবিন আর সুমাকে বাসায় পাঠিয়ে দিলাম। আমরা গেলাম ফ্রিজের দোকানে। ফ্রিজ এত বড় দরকার নেই তাই ছোট গুলোই দেখলাম।
.
৪০ হাজার টাকা একদম কাটায় কাটায় শেষ হয়েছে। সোফাটা আর নেওয়া হয়নি। যাক সোফাটা পরে নেয়া লাগবে। আমরা বাসায় এসে পড়লাম। আধা ঘন্টার মধ্যে তারা বাসার সামনে এসে পরে। পরে আমরা গিয়ে তাদের সাথে ধরে পাঁচ তলায় নিয়ে আসলাম। বাসার এক সাইটে রেখে দিলাম আগে। পরে ঠিক করে রাখা যাবে। এইগুলো উপরে শিড়ি দিয়ে উঠাতে শব্দ হয়েছে। আর শব্দ হওয়াটাই স্বাভাবিক। পরে আংকেল আন্টি আসে আমাদের বাসায়। দেখে তারাও খুশি হলো।
.
- বাহ। ভালই তো বাসার আসবাবপত্র নিয়ে এলে।
- হ্যা আন্টি। একটু আধটু এইগুলোর দরকার আছে।
- হুমম সেটা ভালো।
- জ্বি আন্টি।
- তাহলে ভালই হলো। এখন তো তোমাদের আর ব্যাচেলর বলা যাবে না।
- কেনো আন্টি?
- তোমরা আর ব্যাচেলর না। এখন এটা একটা ফ্যামিলি বাসা হয়ে গেছে। এখন তোমরা তিন জনেও খুব তাড়া-তাড়ি বিয়ে করে ফেলো। তারপর সব বউমাদের নিয়ে আড্ডা হবে।
- হাহাহা আন্টি কি যে বলেন।
- আন্টি আপনি ঠিকই বলেছে অল্প কিছুদিনের মধ্যে আমাদের বাসায় আর এক জনের বিয়ে হবে। < কথাটি আমাকে ইজ্ঞিত করে বলে রুবেল >
- কি বলো? আবার কে বিয়ে করছে?
- আন্টি রুবেল বিয়ে করবে। ওর নাকি বিয়ের করার অনেক শখ জাগছে।
- এহ। এই বরিশাইল্লার কপালে বিয়ে নাই।
- আন্টি এভাবে বইলেন না।
- কে রে বরিশাইল্লা?
- বউ ছাড়া কি থাকা যায় নাকি?
.
রুবেলের কথা শুনে সবাই হেসে দিলাম। বলে বউ ছাড়া নাকি থাকা যায় না। আসলেই কি থাকা যায় না? কি জানি এইগুলোর মধ্যে আমি এখনো অনেক কাচা। তাই এত কিছু বুঝি না জানি না।
.
- তো তোমরা কাল কখন রওনা দেবে?
- আন্টি বিকেলে বাসা থেকে বের হবো।
- আচ্ছা তাহলে এখন এইগুলো গুছিয়ে রাখো।
- হ্যা আন্টি। নীলাকে বলে দিয়েন তার ব্যাগ গুছিয়ে রাখার জন্য।
- আর বইলো না। গতকাল তোমাদের বাসা থেকে নিচে যাওয়ার পরই। নীলা ওর ব্যাগ গুছানো শুরু করে দিছে। পাগলি আমার মেয়েটা।
- সেটাই তো ভালো। আচ্ছা আন্টি আজ দুপুরে সবাই একসাথে খেতে পারি আমাদের বাসায়?
- এক কাজ করো তোমরাই আজ আমাদের বাসায় খেয়ো।
- না আন্টি আমরা যখন আগে বলেছি। আজ আপনারাই আমাদের সাথে খাবেন?
- কি দরকার শুধু শুধু মেয়েটাকে কষ্ট দেয়া।
- আন্টি প্লিজ। আপনাদের আজ আমাদের বাসায় দাওয়াত।
- আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু এত জনের রান্না সুমার করতে কষ্ট হয়ে যাবে। এক কাজ করি আমি নীলাকে আসতে বলি ও সুমাকে হেল্প করতে পারবে। আর নীলা এমনিতেও ভালোই রাঁধতে পারে।
- আচ্ছা ঠিক আছে। আন্টি।
.
তারা চলে গেলেন। এইদিকে গুছানো শুরু করে দিলাম। আর রবিনকে বললাম আন্টিদের ফ্রিজ থেকে তরকারি গুলো নিয়ে আসার জন্য।
এইদিকে সব গুছানো হয়েছে। আর রবিনও তরকারি গুলো নিয়ে এসেছে এবং সাথে নীলাও এসেছে। নীলাকে দেখে তো ওরা ভাবি ভাবি বলে ডাকা শুরু করে দিছে। কি আর বলবো জানি কিছু বললেও ওরা শুনবে না। তাই আমিও আর কিছু বললাম না।
.
- নীলা ভাবি।
- জ্বি ভাইয়া।
- আপনি নাকি খুব ভালো রাঁধতে পারেন?
- হ্যা কিছুটা। কেনো?
- হৃদয় তো বলতেছে আজ নাকি আপনার হাতের রান্না খাবে।
- তোরা বেশি কথা বলিস। ধ্যাত।
.
আমি রুমে চলে এলাম। কিন্তু আমি নিজেও চাইতাম যে তার হাতের রান্না একদিন খাবো। কিন্তু সেটার সুযোগ করে দিলো আজ। একটু পর রিয়াদ, রুবেল, রবিন তিন শয়তানই একসাথে রুমে আসে। রুমে এসেই শুরু করে দিলো। আজ ভাবির হাতের রান্না খাবো। আমাকে রাগানোর জন্য। কিন্তু আমি রাগছিলাম ঠিকই কিন্তু মন থেকে নয়।
.
- এখন গিয়ে জিজ্ঞাসা কর। কোনো কিছু লাগবে কিনা।
- বন্ধু এখন আমি, রিয়াদ, রবিন তিন ভাই মিলে ছাদে যাবো অক্সিজেন নিতে। তো তুমি জিজ্ঞাসা করে দেখো যাও।
- ছাদে যাওয়া কিন্তু মানা। সেটা ভুলে গেছিস?
- আরে রাখ তোর মানা। এখন তো এটা আমাদের আত্বীয়দের বাসাই।
- মানে?
- মানে তোর হবু শ্বশুর বাড়ি।
.
বলেই রুম থেকে দৌড়ে চলা যায় ওরা। ওরা যে আমাকে আরো কত প্যারা দিবে সামনে। আগামীকাল থেকেও প্যারা দেয়া শুরু করবে। ওরা তো সব গুলা ছাদে চলে গেলো। এখন তো আমাকেই যেতে হবে। কিন্তু যাবো নাকি যাবো না? আর গিয়েও কি বলবো সেটা ভাবছিলাম।
.
- সুমা....
- জ্বি ভাইয়া।
- কোনো কিছু লাগবে আজ?
- ভাইয়া সেটা তো নীলা ভাবি বলতে পারবে।
- আহা সুমা। তুমিও ওদের মত এরকম করো না।
- বাদ দেন সুমা আপু। সে যখন পছন্দ করেনা এইগুলা। তাই না বলাই ভালো।
- হইছে। শুনে যান আপনি।
- জ্বি বলেন হাতে খুন্তি ছিলো।
- কেমন আছেন?
- ভালো আছি।
- ওহহহ। আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করবেন না?
- আয়াত কে? আর আয়াতের আম্মুটা কে?
- কেনো?
- যেটা জিজ্ঞাসা করছি সেটার উত্তর দেন আগে।
- আরে আমার কাছে আয়াত নামটা অনেক ভাল লাগে। তাই বলেছিলাম যে মেয়ের নাম আয়াত রাখবো।
.
আমার কথা শুনে সে হেসে দিলো। আর তার হাসি দেখে আমার প্রাণটা জুড়ে গেছে। আসলেই একটা মেয়ের হাসিই পারে সব কিছুকে হার মানাতে। তার হাসি দেখে আমিও পরে হেসে দেই। কিন্তু তখন একটু লজ্জা পেয়েছিলাম।
.
- তাহলে আয়াতের আম্মুটা কে?
- এত কিছু বলতে পারবো না। এখন বলেন কিছু লাগবে কিনা।
- হুহ। টেক্সট করে দিচ্ছি। গিয়ে মশলা গুলো নিয়ে আসেন।
- আচ্ছা ঠিক আছে। আপনার জন্য আইস্ক্রিম আনবো?
- মন চাইলে আইনেন।
- ঠিক আছে।
.
আমি আবার জানতাম যে সে আইস্ক্রিম খেতে পছন্দ করতো। কারণ তার আইস্ক্রিম খাওয়া নিয়ে অনেক কথা শুনছি আন্টির থেকে। তাকে নাকি আইস্ক্রিম দিলে আর কিছু লাগে না। এমনকি আইস্ক্রিম এর জন্য অনেক বকাও শুনেছে।
.
আমি বাসার বাহিরে গেলাম। দোকানে গেলাম মশলা এবং আইস্ক্রিম নিলাম। ৪ টা কোন আইস্ক্রিম নিলাম। সুমা এবং নীলার জন্য। আমি সেখানে একটা সিগারেট ধরালাম। সিগারেট খেতে খেতে বাসার সামনে এসে পড়লাম। আমরা যে বাসাটায় থাকতাম ঐ বাসা থেকে দোকানটা কাছেই। ৫ মিনিটের দূরত্ব ছিলো। সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় দেখি আদ্রিতা। নীলার ছোট বোন।
.
- কেমন আছো আদ্রিতা?
- ভাল আছি ভাইয়া। আপনি কেমন আছেন?
- হ্যা ভাল আছি? আইস্ক্রিম খাবে?
- হ্যা খাবো।
- এই যে নাই।
- থেংক্স ভাইয়া।
- ওয়েলকাম। আমাদের বাসায় যাবে?
- হ্যা যাবো।
- আচ্ছা তাহলে আসো।
.
ছোট শালির সাথে মানে আদ্রিতার সাথে কথা বলতে বলতে আমাদের বাসায় গেলাম। কলিংবেল চাপলাম। সুমা দরজা খুলে দিলো।
.
- ওরা এখনো আসেনি?
- না ভাইয়া। তারা কোথায় গেছে?
- ওরা ছাদে গেছে।
- ওহ। কেমন আছো আদ্রিতা?
- ভালো আছি। তুমি কেমন আছো আপু?
- আমিও ভালো আছি। ভেতরে আসো।
.
আমি সুমার হাতে মশলা এবং আইস্ক্রিম গুলো দিয়ে দিলাম। নীলা তখন রান্না ঘরেই ছিলো। আমার কথা শুনে বের হয়েছিলো। কিন্তু পরে আদ্রিতাকে দেখে আবার চলে যায়। আমি ল্যাপটপটা অন করে আদ্রিতাকে দিলাম। ও গেইমস খেলছিলো। আমি পরে ছাদে যাওয়ার জন্য বের হবো।
.
- সুমা। আমি একটু ছাদে যাচ্ছি। দরজাটা লাগিয়ে দাও।
- এই শোনেন। <সুমাকে ডাকলাম নীলা আসলো আইস্ক্রিম খেতে খেতে>
- জ্বি বলেন সাহসী মেয়ে।
- আদ্রিতা কোথায়?
- কেনো? আর তাকে দেখে এত ভয় পাওয়ার কি আছে?
- যানেন বাসায় গিয়ে প্যাচ লাগাবে।
- কিছু হবে না। আচ্ছা দরজাটা লাগিয়ে দিন।
- শোনেন। এটা নিয়ে যান।
- আমি পছন্দ করি না আইস্ক্রিম।
- এখন থেকে খাবেন। নেন।
- তুমি খেয়ে ফেলো। আমার ভালো লাগে না।
- আচ্ছা তাহলে এটা থেকে খাবেন?
- সেটা খাওয়া যেতে পারে।
- আচ্ছা নিন তাহলে।
.
হাতে নিয়ে ছাদে উঠলাম। এবং তার খাওয়া আইস্ক্রিমটাই খেলাম। জানিনা কেনো খেয়েছি। কিন্তু ভালোই লাগলো খেতে। গিয়ে তিন শয়তানের সাথে যোগ দিলাম। ওরা তো আরামছে বিড়ি টানছে। আমিও গিয়ে টানা শুরু করলাম। একসাথে আড্ডা দিলাম চার জনে।
.
(চলবে)
.
.
লেখাঃ হৃদয় নাদিম
Comments
Post a Comment