"ব্যাচেলর" (১১ তম পর্ব)



ছাদে আড্ডা দিচ্ছিলাম। তখন আপু কল দিলো। সবাইকে চুপ থাকার জন্য বললাম। এবং আমি তাদের থেকে একটু সাইডে এসে পড়লাম।
.
- হ্যালো আপু।
-  কিরে অবস্থা হৃদয়।
- এইতো আপু ভাল। তোরা কেমন আছিস?
- হুমম ভাল আছি। মায়ের থেকে শুনলাম টয়ার নাকি বিয়ে।
- হ্যা আপু। আগামিকাল ওদের বাসায় যাবো।
- এত তাড়া-তাড়ি যাবি কেনো?
- আর বলিস না আপু। টয়ার বাবা এমন ভাবে বললো। আর না করতে পারিনি।
- তোর সাথে কে কে যাবে?
- আমার সাথে সবাই যাবে। রিয়াদ, রুবেল, রবিন ও সুমা যাবে।
- সুমা কে?
- রবিনের বউয়ের নাম সুমা।
- ও আচ্ছা। ছোট ভাইয়ের বউ নিয়ে ঘুরবি? নিজে বিয়ে করবি না?
- হ্যা বিয়ে তো করতে চাই।
- কি?  আচ্ছা মা'কে বলবো?
- আরে না না। আর একটা কথা আপু।
- কি?
- আমাদের সাথে আরেকজন যাবে।
- কে সে?
- বল তো কে যাবে?
- কে আর হয়তো। নীলা যাবে।
- ও মাই গোড।
- কি হলো? আল্লাহ্‌ কে ডাকছিস কেনো?
- আপু তুই সবসময় সত্যিটা কিভাবে বলতে পারিস?
- কারণ আমি আমার ভাইটার কথা শুনেই বুঝতে পারি সবকিছু। আর তুই যেভাবে এক্সাইটেড হচ্ছিস। সেটা না বুঝে পারা যায় না।
- আয়ান কি করে?
- কথা বলবি? আয়ানের সাথে?
- হ্যা। ওয়েট আমি ইমোতে ভিডিও কল দিচ্ছি।
- ওকে।
.
পরে ইমোতে ভিডিও কল দিলাম। আর ভাগিনার সাথে কথা বললাম। ও তো আমাকে দেখে মামামামা শুরু করছে। অনেকখন দুষ্টামি করলাম ভাগিনার সাথে। পরে রেখে দিলাম কথা শেষ করে।
.
- হৃদয় শোন।
- হ্যা আপু বল।
- সাবধানে যাইস। আর রবিনকে দে তো ফোনটা। ওর সাথে কিছু কথা আছে।
- আচ্ছা ঠিক আছে দাড়াও দিতেছি।
.
রবিনকে ডেকে ওর কাছে মোবাইল দিলাম।
.
- হ্যালো আসসালামু ওয়ালাইকুম আপু।
- ওয়ালাইকুম আসসালাম। আজ সূর্য কোন দিকে দিয়ে উঠলো রে? হঠাৎ তোর মুখে সালাম শুনলাম। তাও আবার আমাকে দিলি।
- আমি তো আগেও সালাম দিতাম আপু।
- ও তাই? কই কখনো তো শুনলাম না। আচ্ছা যাইহোক। তোর বউ কেমন আছে?
- হ্যা আপু সবাই ভালো আছি।
- বাসায় আসার কি আর চিন্তা ভাবনা নেই?
- জানিনা আপু। যে কাজ করে এসেছি কিভাবে যাবো?
- আচ্ছা চিন্তা করিস না। কোনো কিছু প্রয়োজন হলে আমাকে বলিস। আর হৃদয় তো আছেই।
- এর কারণেই তো চিন্তা হয় না আপু। কারণ ভাইয়ার সাথে থাকলে আমার আর কোনো চিন্তা নেই।
- আচ্ছা শুনলাম তোরা নাকি বরিশাল যাচ্ছিস?
- হ্যা আপু। আগামিকালই যাচ্ছি।
- সাবধানে গিয়ে পৌঁছাইস। আর টাকা কিছু আছে?
- আপু এটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। লাগলে তো তুমি আছোই। তোমার থেকে চেয়ে নিবো।
- আচ্ছা তাহলে তোরা যা। আমি হৃদয়ের বিকাশে হাজার পাঁচ এক টাকা পাঠিয়ে দিবো নে। ঢাকার বাহিরে যাচ্ছিস। টাকা তো লাগবেই।
- ও আপু তুমি এত ভালো কেনো?
- এত ভালো আবার না। নিজেও কিছু করিস। এখন তো আর তুই একা নয়।
- হ্যা আপু। আমি একটা জব করার চিন্তা করছি। বরিশাল থেকে এসেই জবটা করবো।
- আচ্ছা তাহলে ঠিক আছে। ভালো থাকিস তোরা।
- হ্যা আপু। আল্লাহ্‌ হাফেজ।
- আল্লাহ্‌ হাফেজ।
.
যোহরের আজান দিচ্ছিলো তাই ছাদে থেকে নেমে আসি সবাই। কলিংবেল চাপলাম। সুমা দরজা খুলে দিলো। আমরা সবাই আমাদের রুমে গেলাম। গিয়ে দেখি আদ্রিতা গেইম খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে পড়ছে। তাই ওকে আর ডাকলাম না। কিন্তু কিছুক্ষণ আমাদের কথার শব্দে আদ্রিতা উঠে যায়।
.
- উঠলে কেনো? ঘুমাও তুমি।
- না ভাইয়া আর ঘুমাবো না। বাসায় যাবো।
- বাসায় যাবে?
- হ্যা ভাইয়া।
.
পরে রবিনকে বললাম আদ্রিতাকে ওদের বাসায় দিয়ে আসতে। ওরাও চলে গেলো। আর বাসা থেকে একটা ধারুন রান্নার ঘ্রাণ বের হচ্ছিলো। ঘ্রাণ নিতে নিতেই তো খিদা পেয়ে গেলো। একটু দেখে আসি কি অবস্থা রান্নার। রুম থেকে উঠে গেলাম রান্নাঘরের সামনে।
.
- উঁহুম। <হালকা কাশি দিলাম> কি অবস্থা? রান্নার ঘ্রাণেই তো খিদে পেয়ে গেলো।
- হ্যা আজ তো রান্নার ঘ্রাণে তো খিদে পাবেই। বলে সুমা হেসে দিলো।
- রান্না প্রায়ই শেষ।
- যাক শেষ হলেই হলো।
- ভাইয়া পার্মেন্টলি যদি এরকম রাঁধুনিকে আমাদের বাসায় রাখা যেতো।
- উঁহুম।
- কি ভাইয়া পানি খাবেন? গলা ঠেকলো নাকি?
- আরে না। তোমরা রান্না শেষ করো তাহলে।
- আচ্ছা ভাইয়া।
.
আমি বলে চলে আসি কথাটি। আসার সময় পিছন থেকে নীলা বলে।
.
- আমি যে কষ্ট করে রান্না করছি। আমি কি কোনো গিফট্ পাবো না?
-  সেটা তো ভাবিনি।
- হুহ।
- আচ্ছা বলেন কি গিফট্ লাগবে আপনার?
- থাক আর লাগবে না। হুহ।
- আহা বলেন না।
- আচ্ছা পরে চেয়ে নিবো নে। এখন যান।
- জান?
- যান বলেছি জান না। শখ কতো। হুহ।
.
কথাটি বলে নীল রান্নাঘরে চলে যায়। আমিও আমাদের রুমে এসে পড়ি। একেক জন করে গোসল সেরে ফেলি সবাই। এর মাঝে রবিনের সাথে আমার কিছু কথা হয়। কথাটি হলো।
.
- ভাইয়া।
- কিরে রবিন কিছু বলবি। <কানে থেকে হেডফোনটি সরিয়ে>
- ভাইয়া তোমরা এত ভাল কেনো?
- হঠাৎ এ কথা কেনো? কিছু লাগবে? আমাকে বল কিছু লাগলে।
- আরে ভাইয়া না। আমার যা লাগে তুমি তো তা না বলার আগেই দিয়ে দিচ্ছো। আর কি লাগবে।
- তারপরও টাকা লাগলে আমাকে বলিস।
- সেটা চেয়েই নিবো। এখন কথা হচ্ছে।
- কি কথা?
- একটা সত্যি করে কথা বলবা কিন্তু ভাইয়া।
- হ্যা বল।
- ভাইয়া তুমি কি নীলা ভাবিকে খুব ভালবাসো?
- সেটা তো আমার থেকে তোরাই ভাল জানিস। দেখছিস না সবাই তো তাকে নীলা ভাবি বলে ডাকছে।
- হ্যা সেটা ঠিক। তবে আসলেই কিন্তু নীলা ভাবি অনেক ভালো। তোমাকে অনেক ভালবাসে।
- হ্যা রে পাকা ছেলে। সেটা আমিও জানি। এখন যা তোর রুমে গিয়ে গোসল করে ফেল।
- আচ্ছা ভাইয়া যাচ্ছি।
- হুমম যা।
.
আসলেই আমরা সবাই সবাইকে কত বুঝি। এ বুঝার মধ্যে যে কত ভালবাসা আছে। আর এই ভালবাসা টাকা দিয়ে কিনে পাওয়া যাবেনা। কিছু কিছু ভালোবাসা হৃদয় দিয়ে কিনে নিতে হয়। কিছু কিছু ভালবাসা আসে ভেতর থেকে। যেটা কখনো দেখানোর প্রয়োজন হয় না। আর এই ভালবাসা গুলোর জন্যই আমরা বেঁচে আছি।
.
- এই যে চিকন ছেলে।
- আচ্ছা আমি কি এতই চিকন?
- তাহলে কি? অনেক চিকন। এত খান খাওয়া গুলো যায় কোথায়?
- তুমিও এটা বলতে পারলে? সরি ভুলে তুমি বলে ফেললাম।
- সমস্যা নেই। এখন থেকে তুমি করেই বলবেন।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
- আচ্ছা আমি একটু বাসায় যাই।
- কেনো? এত কষ্ট করে রান্না করলেন। খেয়ে যাবেন না।
- আবার আপনি?
- আচ্ছা তুমি বললাম।
- হুম ঠিক আছে। গোসল করে ফ্রেশ হয়ে তারপর সবাই একসাথে আসবো।
- আচ্ছা ঠিক আছে। অপেক্ষা করবো।
- কার জন্য? আয়াতের আম্মুর জন্য?
- হ্যা।
- আচ্ছা তাহলে আমি যাচ্ছি।
- আমি আসছি সাথে।
.
তার সাথে সিঁড়ি দিয়ে নেমে তার বাসা পর্যন্ত গেলাম। এবং তাকে বাসায় এগিয়ে দিয়ে আমি রুমে এসে পড়লাম। আমিও গোসল করে ফেলি। এবং আপুর পছন্দের ঐ লাল রংয়ের পাঞ্জাবিটা পরি। আমার দেখা দেখি ওরাও পাঞ্জাবি পরে। আমরা চার জনই পাঞ্জাবি পরলাম। আর সুমাকে যে শাড়িটা গিফট্ করেছিলাম সে ঐ শাড়িটাই পরলো। আর ভাবলাম নীলাকে একটা শাড়ি গিফর্ট করবো। কারণ তাকে কখনো দেখিনি শাড়ি পড়তে। আর আমি চাই সে প্রথম শাড়ি পরবে সেটা আমিই দিবো।
.
আমরাও আমাদের রুম গুলো নিজে নিজেই পরিষ্কার করে ফেললাম। কিছুক্ষণ পর আংকেল আন্টিরা আসেন সাথে আদ্রিতা, আব্রিতা এবং নীলা আসে। বাড়িওয়ালার বড় মেয়েটা বিবাহিত তাই সে এখানে থাকেনা। তাই সে আপু আসেনি। যাক তাদের দেখে খুব খুশি হলাম। তবে নীলাকে দেখে তো আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম তার দিকে। এমনিতেই অনেক সুন্দরী তার মাঝে কালো রংয়ের ড্রেস পড়েছে। আরো অসম্ভব সুন্দরী লাগছিলো।
.
- বন্ধু এভাবে তাকিয়ে থাকিস না। আংকেল আন্টিও আছে।
.
রুবেলের কথাতে চোখ সরিয়ে নিলাম। কিছুটা লজ্জাও পেয়েছিলাম। কিন্তু পরে সবাই একসাথে দুপুরের খাবার খেলাম। আমার আর খাওয়া আমি তো নীলার দিকে তাকিয়ে আছি। আর তার খাওয়া দেখছি। নীলা ইশারা দিয়ে বলে যে খাওয়ার জন্য। এবং পাশে যে আংকেল আন্টি আছেন সেটা কেনো জানি বারবারই ভুলে যাচ্ছিলাম।
.
খাওয়া শেষ হলো সবার। সবাই প্রশংসা করলো রান্নার। আমরা তো জানতাম যে রান্নাটা নীলা করেছে। কিন্তু আংকেল আন্টিরা ভেবেছে সুমা রেঁধেছে। তাই সুমাকেই তারা প্রশংসা করে। খাওয়া শেষ করে মিষ্টি খেলাম একসাথে। মিষ্টি খাচ্ছিলাম আর রুবেল রিয়াদ কানের সামনে বলছিলো -
.
- বন্ধু এটা কি তোমার আর নীলার ভাবির বিয়ের মিষ্টি?
- চুপ চাপ খা। পরে এটা নিয়ে আলোচনা করিস।
- হা হা হা। আচ্ছা ঠিক আছে।
- হুমম ঠিক আছে।
.
আমাদের কথা শুনে আন্টি বলে উঠে।
.
- আরে বরিশাইল্লাকে তো আমি দেখিনাই এতক্ষণ। তোমাকে তো অনেক সুন্দর লাগছে।
- আন্টি আপনি শুধু আমাকে বরিশাইল্লা বলেন কেনো?
- হাহাহা। আরে বরিশাইল্লা দেখি লজ্জাও পায়।
.
আন্টির কথা শুনে সবাই হেসে দেই। আমাদের হাসি দেখে পরে রুবেলও হেসে দেয়। পরে তারা তাদের বাসায় চলে গেলো। আর নীলা পিছু ফিরে আমাকে টাটা দিলো। আমিও টাটা দিলাম তাকে। আমার টাটা দেওয়া দেখে ওরা একসাথে টাটা দেয়। আবার ও সবাই হেসে দিলাম। এভাবেই কাটছিলো আমাদের ব্যাচেলর লাইফ ও সরি ব্যাচেলর বললে ভুল হবে। বিবাহিত ব্যাচেলর লাইফ বলতে হবে। এভাবেই কেটে যাচ্ছিলো আমাদের বিবাহিত ব্যাচেলর লাইফ।
.
(চলবে)
.
.
লেখাঃ হৃদয় নাদিম

Comments