"ব্যাচেলর" (৮ম পর্ব)



ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হলাম। ফ্রেস হয়ে গেলাম টিউশুনিতে। আমি যে বাসাতে পড়াতাম সে বাসা আমাদের বাসা থেকে কিছুটা দূরে। অষ্টম শ্রেণীর একটা ছেলে এবং নবম শ্রেণীর একটা মেয়েকে পড়াতাম। ছেলের নাম ছিলো রনি এবং মেয়ের নাম ছিলো রুমি। ৩-৪ মাস ধরেই টিউশুনি করে যাচ্ছিলাম। রনি ও রুমি ছিলো দুই ভাই-বোন। এইদিকে নিজের হাত  খরচের জন্য হয়ে যেতো টিউশুনির এই টাকাটা।
.
- রনি।
- জ্বী ভাইয়া।
- আমার জন্য একটু পানি নিয়ে আসো তো।
- ঠিক আছে ভাইয়া।
.
মাস শেষ হয়ে গেছে। যদি টিউশুনির টাকাটা আজ বা আগামীকালের মধ্যে পেতাম তাহলে ভালই হতো। আবার টয়ার বিয়ে। বিয়ের ভেতরেও কিছু খরচ আছে। দেখি আন্টিকে বলে।
.
- রুমি।
- জ্বী ভাইয়া।
- আন্টি বাসায় আছে না?
- হ্যা ভাইয়া আছে।
- একটু ডাকো। বলো আমি ডাকছি।
- ঠিক আছে ভাইয়া।
.
এইদিকে রনি পানি নিয়ে আসে। পানি খেলাম। এবং কিভাবে বেতনের কথা বলা যায় সেটা ভাবছিলাম। আর ওদের তো অনেকদিন পড়াতেও আসতে পারবো না। এইগুলো নিয়ে ভাবতে ভাবতেই আন্টি এসে যায়।
.
- হ্যালো আসসালামু ওয়ালাইকুম আন্টি।
- ওয়ালাইকুম আসসালাম।
- ভালো আছেন?
- হ্যা ভালো আছি। তুমি ভালো আছো?
- হ্যা ভালো আছি। আসলে যেকারণে আপনাকে ডাকা। ওদের তো কিছুদিন আমি পড়াতে আসতে পারবো না। আর ওদেরও পরীক্ষা শেষ।
- হ্যা তা ঠিক আছে।
- আর আন্টি। আমার ফ্রেন্ডের বিয়ে তো। তাই ওর বিয়েতে যেতে হবে। আর ওর বিয়ের সব দায়িত্ব পরেছে আমার উপর। কাল - পরশুর মধ্যেই আমাকে ওদের বাসায় যেতে হবে।
- হ্যা। ফ্রেন্ডের বিয়েতে তো যেতে হবেই। সমস্যা নেই তো।
- আচ্ছা আমি কি বলতে যাচ্ছি আন্টি সেটা হয়তো বুঝতে পেরেছেন।
- হ্যা বুঝতে পেরেছি। তুমি বসো আমি একটু আসছি।
.
যাক তাহলে বুঝাতে পেরেছি। বেতনটা পেলে আমার জন্যই ভালো হবে। কিছুক্ষণ পর আন্টি আসে এবং আমার হাতে এক হাজার টাকার ৫ টি নোট ধরিয়ে দেয়। এবং রনি, রুমিদের রেজাল্ট ও খুব ভালো হয়েছে এই পরিক্ষায়। তাই আরো দুই হাজার টাকা বাড়িয়ে দিলো। টাকা হাতে পেয়ে খুব ভালোই লাগলো। তাদের বাসা থেকে বের হই। এবং আমার ছাত্র-ছাত্রীকে দুই সপ্তাহের মতো ছুটি দিয়ে দিলাম। আমি সপ্তাহে তিন দিন পড়াতে যেতাম। আমি ওদের গণিত দেখিয়ে দিতাম। একটা সাব্জেক্টই পড়াতাম। সে হিসেবে স্টুডেন্ট গুলোও মেধাবী ছিলো।
.
রিক্সায় উঠে বাসায় আসছিলাম। মোবাইলটা বের করলাম। মোবাইলে স্ক্রিনটা অন হতেই দেখলাম কেউ কল দিয়েছিলো। লক খুলে দেখলাম অচেনা নম্বর থেকে বেশ কয়েকটা কল। আমার মোবাইল সাইলেন্ট ছিলো বলে আর কলটি ধরতে পারিনি। আমি পরে ঐ নম্বরে কল ব্যাক করলাম।
.
প্রথমবার রিং হয়ে কেটে গেলো। দ্বিতীয় বারেও একই রিং হয়ে কেটে যায়। তৃতীয় বারের সময় কলটি ধরে।
.
- হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।
- উপাশ থেকে কোনো শব্দ নেই।
- হ্যালো।
- তখনো চুপ।
- হ্যালো কে বলছেন?
'তখনো কোনো কথা বলেনি'
.
তাই আমি কলটা কেটে দেই। মনে মনে ভাবছিলাম কে হতে পারে? আর কথাই বা কেনো বলছে না। তাই ঐ নম্বরের শেষের দুইটা সংখ্যা মনে রাখি যাতে যদি আবার সে নম্বর থেকে কল আসে তাহলে চিনতে পারবো। আমার কেনো জানি মনে হচ্ছিলো সে নম্বরটি থেকে আবারো কল আসবে। পরে বাসার গেইটের সামনে গিয়ে পৌঁছাই। রিক্সা বিদায় করে রুমে যাচ্ছিলাম। তখন একটু ভাবছিলাম যদি রুমে যাওয়ার পথে নীলার সাথে একটু দেখা হয়ে যেতো। কিন্তু না দেখা হলো না। মন খারাপ করে আমাদের রুমের সামনে গিয়ে কলিং বেল চাপ দিলাম।
.
দরজা খুললো নীলা। এই কি আমি কি আমাদের রুমের সামনে নাকি ভুলে ওদের রুমের দরজা নক করলাম। কিন্তু না রুবেলের কথার আওয়াজ শুনে সমাধান হলো যে আমাদের রুমের দরজাই নক করেছি। কিন্তু সে এখানে কেনো? ও হো রুমের ভেতরে তো দেখি আন্টিও আছেন। আমি রুমের ভেতরে গিয়ে আন্টিকে সালাম দিলাম। একটু কথা বলে আমাদের রুমে চলে গেলাম। একটু ফ্রেশ হয়ে নিলাম।
.
- কিরে রুবেল তুই আজ এত তাড়া-তাড়ি?
- আর বলিস না বন্ধু। আমার তো ডাইরেক্ট হয়ে গেছে।
- ডাইরেক্ট মানে? বুঝলাম না।
- আরে বন্ধু বুঝবা না কেনো?  ডাইরেক্ট মানে ডাইরেক্ট।
- কি বাল বলিস। ডাইরেক্ট টা কি।
- ও মোর খোদা। তোরে কেমনে বুঝাই। আরে আমার বাথরুমে আসতে যেতে হচ্ছে বারবার।
- হাহাহাহা। ও আচ্ছা। কখন থেকে শুরু হইলো?
- তুই আমার বন্ধু না শত্রু? আমার এই অবস্থা আর তুই হাসছিস?
- রাগ করছিস কেনো?
- এ বন্ধু চাপ চাপ।
- হাহাহাহা। তাড়া-তাড়ি যা।
.
ডায়রিয়া কে রুবেল ডাইরেক্ট বলতেছে। না আসলেই অনেক খারাপ একটা সমস্যা। থাক ভাই এটা নিয়ে এত কথা বলার দরকার নেই। এটা যার হয় সেই বুঝে। আমি রুম থেকে বের হয়ে ডাইনিং রুমে গেলাম। আন্টি এখনো যায়নি। কথা বলছে সুমার সাথে। সুমার আসার পর থেকে আন্টিও কেমন জানি একটু অন্যরকম হয়ে গেলো। এখন আমাদেরকে বেশি চাপ ও দেয় না বাসা বাড়ার জন্য। আর প্রতিদিনই আমাদের বাসায় এসে সুমার সাথে দেখা করে যেতো।
.
- এই কি আন্টিকে চা, নাস্তা দিয়েছিস রিয়াদ?
- হ্যা সুমা দিয়েছে।
- যাক তাহলে ভালোই।
.
আমি গিয়ে রিয়াদের পাশে দাঁড়াই। রিয়াদ আমাকে বার বার আঙুল দিয়ে খুঁচা মেরে নীলাকে দেখার জন্য বলছিলো। আর নীলা সেটা দেখে মুচকি ভাবে হাসছিলো। আমিও দেখছিলাম নীলাকে। কিন্তু সেটা রিয়াদ বুঝছিলো না। নীলাও বুঝছিলো না। নীলা যেখানে বসে ছিলো তার সামনের দিকে রান্না ঘরের দরজা ছিলো। আর ঐ দরজার গ্লাসে নীলাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো। তাই আমি ঐ দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে নীলাকে দেখছিলাম। একটু পর রুবেল আসলো।
.
- কিরে কি অবস্থা এখন?
- বন্ধুরে আর বলিস না।
- সেলাইন খেয়েছিলি?
- বন্ধু ১২ টা খেয়ে ফেলছি। তবুও কমছে না।
- চিন্তা করিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
.
আমাদের কথা শুনে আন্টি বললো।
.
- কিও মিয়ারা তোমারা একা একা কি কথা বলো।
- আর বইলেন না আন্টি। আমি শেষ।
- তুমি শেষ মানে। কি রিয়াদ, হৃদয় বরিশাইল্লায় কি বলে।
- আন্টি রুবেল বলতে চাইতেছে ও বাথরুমটাকে অনেক ভালবাসে।
- এ বন্ধু আবার চাপ দিছেরে।
.
বলেই আবার দৌর দিলো টয়লেটে। আর ওর কাহিনী দেখে সবাই হেসে দিলাম। আসলে আমাদের ফ্লাটে যদি মজা হয় সেটা শুধু মাত্র রুবেলের জন্যই। ও সবসময় আমাদের হাসায়। আর এর কারণেই আমাদের ওকে এত ভাললাগে। কথা বলতে বলতে মনে পড়লো। আন্টিকে বলে দেই যে আমরা বরিশাল যাবো।
.
- ও আন্টি ভালো কথা।
- কি কথা। হৃদয়।
- আন্টি আমাদের তো একটা বিয়ের দাওয়াত পড়েছে। তাই আমরা সবাই পরশুদিন বরিশাল যাচ্ছি। ২০ তারিখে বিয়ে। বিয়ে শেষ করেই ঢাকায় ফিরবো।
- আজকে ১০ তারিখ মাত্র। আর বিয়ে হইলো ২০ তারিখে। এত তাড়া-তাড়ি গিয়ে কি করবে?
- না আন্টি আসলে হয়েছে কি। আমার ছোট বেলার ফ্রেন্ডের বিয়ে তো। তাই ওর বিয়ের অনেক দায়িত্ব আমার উপরে দিয়ে ফেলছে। আর টয়ার বাবাও আমাকে তার ছেলের মত দেখে। তিনিও এত করে বললেন তাই তাড়া-তাড়ি যেতে হবে।
- আচ্ছা ঠিক আছে সমস্যা নাই। তোমরা সাবধানে যাইয়ো।
- আন্টি নীলার ও তো পরিক্ষা শেষ। কলেজ ছুটিও দিয়েছে। আপনি যদি কিছু না মনে করেন তাহলে আমাদের সাথে নীলা যেতে পারে। ও তো ঢাকার বাহিরে আর ঘুরতে যায়নি কখনো।
< কথাটি সুমা বলে আন্টিকে। যদিও কথাটি আমার কাছে ভালো লাগে। তারপরও ঠিক হবেনা সেটা। >
- সুমা। মা তুমি ঠিকই বলছো। কিন্তু এত দূরে কিভাবে হ্যা বলি।
- আন্টি আমরা তো আছিই।
.
- কিরে যাবি বরিশালে?
- তুমি বললে যাবো।
- কিন্তু এতদিনের জন্য যাচ্ছো।
- সমস্যা নেই তো আন্টি। আমাদের উপর ভরসা নেই আপনার।
- ভরসা তো আছেই। হৃদয়কে ভরসা করেই তো এই বাসাটা ব্যাচেলরদের বাড়া দিয়েছিলাম। আর হৃদয়ের উপর আমার ভরসা আছে। তোমাদের উপরও আছে।
- হুমম তাহলে প্লীজ না করবেন না আন্টি।
- আচ্ছা ঠিক আছে নীলা তোমাদের সাথে যাবে।
.
এইদিকে খুশিও লাগছিলো আবার একটু সমস্যাও মনে হচ্ছিলো। যে আমি কখনো যাইনি। প্রথম বার যাবো বরিশালে। আমিই ভালো মতো চিনিনা, জানিনা তার মাঝে আবার নীলাকে নিয়ে যাবো। কেমন জানি মনে হচ্ছিলো। যাক সবাই যখন চাইছে তাহলে নীলাকে সাথে নিয়েই যাবো। আর টয়া কথাটি শুনলে অনেক খুশিই হবে। নীলা অনেক খুশি হয়েছিলো সেটা ওর দিকে তাকিয়েই বুঝতে পেরেছিলাম। কারণ হয়তো শুধু আমিই ওকে বুঝতে পারি এতটা সহজে। তার মন খারাপের হাসিটাও বুঝতে পারি আবার মন ভালো থাকার হাসিটাও বুঝতে পারি।
.
যাক তাহলে তারা আমাদের রুম থেকে চলে গেলেন। নীলা কয়েকবার পিছনে তাকিয়ে আমাকে দেখে। আর সেটা সবাই খেয়াল করে। আর কারো বুঝতে বাকি রইলো না। শেষ দিকে সুমাও বুঝে গেলো। আর অন্যদিকে তো রুবেলের অবস্থা সেই লেভেলের। না একটু রুবেলের সাথে থাকা টা জরুরি।
.
- বন্ধু ঠিক হয় নাই রে?
- একটু একটু ঠিক হইছেরে বন্ধু।
- তো আমরা ১০ দিনের জন্য তোদের গ্রামে যাচ্ছি।
- কি বলিস আসলেই? লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে বসে।
- এই বেটা আসতে লাফ দে। পরে কিন্তু আবার শুরু হয়ে যাবে।
- রাখ তোর শুরু। এত খুশির সংবাদ। দাঁড়া আমি এখুনি জামাল ভাইকে জানিয়ে দেই আমার ১০ দিনের ছুটি লাগবে।
- আচ্ছা বল।
- তোরা কোনো কথা বলবি না। শুধু চুপ করে শুনবি।
- ঠিক আছে।
.
- হ্যালো সালামুয়ালাইকুম জামাল ভাই।
- ওয়ালাইকুম আসসালাম। এখন কি অবস্থা রুবেল?
- ভাই অবস্থা তো মোটামুটি ভালোই হয়েছে কিন্তু ঝামেলা তো আরেকটা হয়ে গেছে ভাই।
- আবার কি ঝামেলা?
- ভাইয়া আমার দাদা খুব অসুস্থ। আমার কালকেই গ্রামে যেতে হবে।
- আচ্ছা সমস্যা নেই সেটা না হয় গেলে।
- ভাইয়া আমার যে কিছু টাকা লাগবে। বুঝতেই তো পারছেন গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি অনেকদিন পর তার মাঝে আবার দাদা অসুস্থ। যদি এখন হাফ বেতনটা দিতেন।
- আচ্ছা সমস্যা নেই। কাল মার্কেটে এসে দেখা করে যেয়ো।
- ঠিক আছে ভাই। রাখি তাহলে।
.
- দেখছো বন্ধু কিভাবে ম্যানেজ করতে হয়?
- তুই কেমনে পারিস এইসব?
- বরিশাইল্লা পোলা মুই বুঝতে হবে।
- আসলেই মামা তুই জিনিয়াস।
.
- রুবেল আর একটা খুসির সংবাদ আছে।
- কিরে রিয়াদ।
- আমাদের সাথে নীলা ভাবিও যাবে।
- কি বলছিস। হৃদয় বন্ধু এইবার তুমি ফান্দে পড়ছো।
- চুপ। এইগুলো নিয়ে বেশি কথা বলিস না।
- এইবার মামা সত্যি সত্যি নীলা ভাবিকে ভাবি ডাকার ব্যবস্থা করমু।
- মানে?
- মানে কিছু না বন্ধু। সেটা সময় হলে বুঝতে পারবে। এখন আমার অনেক খুশি লাগছে। চলো সবাই মিলে একটু প্রাণ ভরে অক্সিজেন নিয়ে নেই।
- এতক্ষণে একটা ভাল কথা বলছোত।
.
তিন বন্ধু মিলে অক্সিজেন নিতে গেলাম বারান্দায়। যেহেতু দরজার রুম খোলা ছিলো। তাই বারান্দায় গিয়ে ধোয়া উড়িয়ে দিয়ে আসলাম।
.
(চলবে)
.
.
লেখাঃ হৃদয় নাদিম

Comments