বিশাল বড় লঞ্চ। পুরোটা ঘুরলাম আমরা সবাই মিলে। সবাই খুব খুশি। কিন্তু আমার তো শুধু মন গিয়ে রয়েছে নীলার দিকে। নীলা কি করছে না করছে সেটা দেখাই আমার জন্য ইমপোর্টেন। আর তখন নীলার সাথে কথা বলতেও ভয় পাচ্ছিলাম না। কারণ সেখানে তার ফ্যামিলির কেউ ছিলো না। আর আমিও সে সুযোগে যখন খুশি তখনই কথা বলে যাচ্ছি।
.
- আচ্ছা আমি একটু নীলাকে নিয়ে চারপাশটা ঘুরে দেখি।
- হ্যা এখন তো তোরই সময় যা যা নিয়ে যা। এখন কি আর আমাদের কথা মনে পরবে তোর।
.
কথাটি বলে রিয়াদ। ওর সাথে সাথে সবাইও তাল দেয়া শুরু করে। আর নীলাও ওদের কথা শুনে মুচকি হেসে যাচ্ছিলো। কিন্তু আমার খুব ভাল লাগছিলো ওদের কথা গুলো তখন। কেনো জানি সব কিছু ভুলে এলোমেলো করে ফেলছিলাম। এলোমেলো হওয়ারই কথা। পরে আমি আর নীলা ক্যাবিন থেকে বের হয়ে আশে পাশে ঘুরে দেখছিলাম।
.
- কেমন লাগছে?
- কাকে আপনাকে?
- জ্বি না। ঘুরতে।
- সব মিলিয়ে খুব ভাল লাগছে আমার। যেহেতু প্রথম বার লঞ্চ ভ্রমণ করছি।
- ও আচ্ছা।
- জ্বি।
- আচ্ছা তোমাকে তো কখনো শাড়ি পরতে দেখলাম না।
- শাড়ি? আমি তো কখনো পড়িনি। আসলে আমি শাড়ি পড়তে পারিনা।
- ওহ আচ্ছা।
- তবে পড়বো।
- তাই?
- হ্যা। কেউ একজন দেখতে চেয়েছে। পড়তে তো হবেই।
- বাহ। এ না হলে আমার ব.. <থেমে যাই>
- কিছু বলতে চেয়েছিলেন মনে হয়।
- না না কিছু না।
- হুমম ঠিক আছে।
.
পরে আমি আর নীলা একসাথে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ রাতের আবহাওয়াটা উপভোগ করছিলাম। সত্যি বলতে লঞ্চের মধ্যে রাতের আবহাওয়াটা অসাধারণ লাগে। যারা গিয়েছেন তারা হয়তো বুঝতে পারবেন। তখন লঞ্চ ও ছেড়ে দেয়। আমি আর নীলা দাঁড়িয়ে ছিলাম। বাতাসে নীলার চুল আমার নাকে মুখে এসে লাগছিলো। সে সময়টা ছিলো খুবই আনন্দের।
.
- কিছু নিয়ে আসি?
- কিন আনবেন?
- ঠান্ডা কিছু আনবো?
- আইস্ক্রিম হলে হবে।
- আচ্ছা একটু দাঁড়াও। আমি নিয়ে আসছি।
.
পরে গেলাম আইস্ক্রিম আনতে। লঞ্চের ভেতরেই একটা দোকানের মতো দেখতে পেলাম। আর সেখানে গিয়ে আইস্ক্রিম ও পেলাম। আমি ইচ্ছে করেই একটা নিলাম। যাতে তারটা থেকেই খেতে পারি এর কারণে। আর এমনিতেও আইস্ক্রিম আমি বেশি লাইক করতাম না।
.
- এই যে আইস্ক্রিম?
- থেংক্স।
- আইস্ক্রিম খুব পছন্দ?
- হ্যা অনেক পছন্দ।
- আমার থেকেও?
- মানে?
- না কিছুনা।
.
রিয়াদ কল দিলো। রিয়াদের কল পিক করলাম।
.
- কিরে দোস্ত কোথায় তোরা?
- আমরা ছাদে। তোরাও আয়।
- আচ্ছা থাক আসতেছি।
- হুমম আয়।
.
একটু পর ওরা আমাদের সাথে যোগ হলো। একসাথে কিছুক্ষণ আড্ডা মারলাম সবাই। হঠাৎ করে রুবেল বলে উঠে।
.
- আচ্ছা আমরা কি আর একটি বিয়ের দাওয়াত খেতে পারি না?
- হ্যা পারি তো। আমরা বিয়ের দাওয়াতেই যাচ্ছি।
- আরে ঐটা না।
- তাহলে কোনটা?
- আরে বন্ধু বুঝো না কেনো? আমাদের এখানে তো একটি কাঁপল আছেই।
- এটা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু রুবেল।
- বেশি না বন্ধু হৃদয়। সবই ঠিক আছে।
.
রুবেলের সাথে সাথে বাকিরাও বলছে। আমি আর নীলা সেখানে বোকার মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনছি। আর নীলার দিকে তাকাতেই ও হেসে দেয়। তখন আমারই খুব লজ্জা করছিলো। তখন নীলার বাসা থেকে কল আসে। নীলা কথা বলে। পরে আমাকে দেয় কথার বলার জন্য।
.
- আসসালামু ওয়ালাইকুম আন্টি।
- ওয়ালাইকুম আসসালাম। বাবা লঞ্চ ছাড়ছে?
- হ্যা আন্টি। আরো ২০ মিনিট আগেই লঞ্চ ছেড়ে দিয়েছে।
- আচ্ছা বাবা সাবধানে যেয়ো। নীলার দিকে একটু খেয়াল রেখো বাবা।
- আহা আন্টি এটা নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না। আপনার মেয়ে তো আমাদেরও মানে। চিন্তা কইরেন না আন্টি।
- আচ্ছা বাবা। রাখি তাহলে। পৌঁছে আমাকে কল দিয়ো।
- ঠিক আছে আন্টি। আল্লাহ্ হাফেজ।
- হুমম বাবা। আল্লাহ্ হাফেজ।
.
আমার ঐ কথাটি শুনে ওরা সবাই হাসছিলো। আমিও কেমন বোকা। বোকার মতো কি না কি বলে ফেলছিলাম। যাইহোক আড্ডাটা খুব ভাল ভাবেই জমে যায়। কিন্তু একটা আফসোস নীলার খাওয়া আইস্ক্রিমটা থেকে ভাগ পাইনি তখন। কারণ সবাই পাশে ছিলো বলে।
.
সেইদিন কেনো জানি সিগারেট খাওয়ার কথা ভুলেও গেছিলাম প্রায়ই। যে আমি সারাদিন সিগারেটের প্যারা নিতাম। সেইদিন আমিই নিজেই এইগুলো থেকে দূরে ছিলাম। এর প্রধান কারণ ছিলো নীলা। রিয়াদ রুবেল ইশারায় আমাকে বলে সাইডে যেতে কিন্তু আমি ওদের কথায় কোনো সাড়া দিচ্ছিলাম না। একটু পরে আমরা সবাই নিচে এসে পরি। এবং সবাই ক্যাবিনের ভেতরে বসে কথা বলছিলাম। তখন একটু পর রিয়াদ আর রুবেল আমাকে একটু বাহিরে যাওয়ার জন্য বলে। আমি বারান্দার সামনে গেলাম।
.
- কিরে বন্ধু এটা কি হচ্ছে? তুই এরকম হয়ে গেলি কিভাবে?
- দোস্ত তুই এটা কিভাবে পারছিস? থাকছিস কিভাবে?
- আরে শোন তোরা। তোর ভাবিকেই তো প্রোটেকশন দিতে হচ্ছে। এখন কেমনে কি?
- বন্ধু আর যাই কর না কেনো। একসাথে বিড়ি না খেলে আমার ঘুমই হবে না।
- আচ্ছা তাহলে চল।
.
পরে গেলাম ওদের সাথে অক্সিজেন নিতে। আহ কি শান্তিটাই না লাগছিলো তখন। রবিনও চিপায় পরে আছে। আসলেই বিয়ের পর সবাই এরকম চিপায় পরে যায়। রবিন আমার ছোট ভাই ছিলো। কিন্তু অনেকটা ফ্রি ছিলাম। আর একসাথেই সিগারেট খেতাম। সেটা আমি মাইন্ড করতাম না।
.
- তো বন্ধু এখন চল। নিচে যাই।
- কেনো কি হয়েছে?
- আরে বন্ধু চলো না।
- জরুরী কাজ করতে যাবি নাকি?
- হ। বন্ধু আয় তাড়া-তাড়ি।
.
পরে রুবেল গেলো জরুরী কাজে। মানে ওয়াশরমে। ওর সবসময়ই যেখানে সেইখানেই এটা ডাকে। আর এটা নিয়ে সবসময়ই ওর সাথে মজা করি। আর আমাদের দুষ্টামিতেই রয়েছে বন্ধুদের জন্য ভালবাসা। পরে রুবেল আসে। আমরা পরে ক্যাবিনে গেলাম। সবাই আলাপে ব্যস্ত ছিলো। আমাদের ব্যাপারেই কথা হচ্ছিলো। আমরা যাওয়াতে টপিকটা চেঞ্জ করে ফেলে।
.
- কোথায় গিয়েছিলেন ভাইয়া?
- একটু ঘুরে আসলাম। কেনো কোনো সমস্যা?
- না ভাইয়া। ভাবি আপনাকে অনেক মিস করতেছিলো তো তাই।
- তাই?
.
আমি নীলার দিকে তাকিয়ে চোখ ইশারা করলাম। আর ও মুচকি হেসে দিলো। আচ্ছা এখন চলো সবাই মিলে একসাথে রাতের খবারটা খেয়ে আসি। পরে সবাই নিচের তলায় গেলাম। লঞ্চের ভেতরে আবার হোটেল ছিলো। ঐ খানেই গিয়ে রাতের ডিনার করলাম। ফাস্ট টাইম তো। তাই জানতাম না যে লঞ্চেও সব কিছু পাওয়া যায়। রুবেল বলেছে বিধায় জানতে পেরেছি।
.
(চলবে)
.
.
লেখাঃ হৃদয় নাদিম
Comments
Post a Comment