"ব্যাচেলর" (২য় পর্ব)



যোহরের আজান দিচ্ছে। শুক্রবারে পবিত্র জুম্মার নামাজে যাওয়ার জন্য আপুর দেয়া লাল রংয়ের পাঞ্জাবিটা পড়লাম। পাঞ্জাবিটা বেশ ভালো মানায় আমার সাথে। আর লাল রং টাও আমার খুব পছন্দের। বাসা থেকে একটু দূরেই মসজিদ। আমি রেডি হয়ে রুম থেকে বের হওয়ার সময় আংকেলকে সাথে করে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়াই। কলিংবেল চাপ দিলাম। দরজা খুললো আন্টি।
.
- আসসালামু ওয়ালাইকুম আন্টি।
- ওয়ালাইকুম আসসালাম। বাবা ভালো আছো?
- আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভাল আছি আন্টি। আংকেল কোথায়?
- তোমার আংকেল রুমের ভেতর বসে আছে।
- নামাজের সময়ে বাসায় বসে আছে কেনো? আংকেল কে ডাকেন।
.
পরে আংকেল কে সাথে করে নিয়ে মসজিদে যাই। একসাথে জুম্মার নামাজ পড়লাম। আমি ছিলাম শুধু শুক্রবারের মুসুল্লি। কিন্তু প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া দরকার। কিন্তু সেটা জেনেও মানিনা। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় ভুল। তো আংকেল আর আমি কথা বলতে বলতে বাসায় আসি।
.
- আংকেল?
- হ্যা বাবা।
- এই নেন।
- বাবা। অনেক উপকার হইলো টাকাটা পেয়ে।
- কিন্তু আমি একটা জিনিষ বুঝতে পারতেছিনা আংকেল।
- কোন ব্যাপারে?
- না থাক। বাদ দেন। আমি যাই তাহলে আংকেল।
- শোনো হৃদয়। আজ কি রান্না হয়েছে?
- আর কি রান্না হবে। প্রতিদিন যা খাই তাই খেতে হয়। ব্যাচেলর বলে কথা।
- তুমি আজ আমাদের সাথে দুপুরের খাবার খাবে।
- কি বলেন?  মনে মনে একটু খুশিও হয়েছি। তবুও প্রকাশ করছি না।
- হ্যা আসো।
.
হাত ধরে টেনে বাসায় নিয়ে গেলেন। আন্টিও দেখে খুশি হলেন। আসলে আংকেল - আন্টি আমাকে তার নিজের ছেলের মতোই ভাবতেন। এবং আদর ও করতেন। একসাথে দুপুরের খাবার খেলাম। তবে আর একটা কথা বলে রাখা ভালো। বাড়িওয়ালার মেয়ে চার জন। সেটা আগেই বলেছিলাম। কিন্তু এর মধ্যে তার সেজো মেয়েটা আবার আমার সমবয়সী ছিলো। তার মতিগতি আবার আমার কিছুটা সন্দেহজনক মনে হতো। তাদের বাসায় যেইদিন উঠেছিলাম ঐ দিন থেকেই এই মেয়েটা কেমন জানি। আমাকে দেখলে কথা বলতে চাইতো। কিন্তু আমি সবসময় তার থেকে দূরে দূরেই থাকতাম। কারণ আমি চাইনা যে কোনো কারণে বাসাটা ছাড়ি। আর এমনিতে আংকেল আন্টিও আমাকে খুব ভাল ভাবে।
.
খাওয়া শেষ করে আমার রুমে যাই। যা খাইছি তা উপরে উঠতে উঠতেই অর্ধেক হজম হয়ে গেছে। রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি বাবার কল। কিন্তু ফোন বাসায় রেখে মসজিদে গেছিলাম তাই আর কলটি ধরা হয়নি। আমি পরে কল ব্যাক করলাম।
.
- হ্যালো
- কেমন আছিস বাবা?
- ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?
- এইতো ভালো আছি। কল দিলাম ধরলি না যে।
- আমি ফোনটা বাসায় রেখে নামাজে গেছিলাম। তাই ধরতে পারি নাই।
- ওহ। দুপুরে খাইছোত?
- হ্যা বাবা খাইছি। তোমরা খাইছো?
- হ্যা খাইছি। নে তোর মার সাথে কথা বল।
.
- হ্যালো মা।
- কি করোছ?
- এই তো মাত্র খেয়ে আইসা শুইলাম।
- কি খাইলি আজ?
- মুরগির মাংস, পোলাও, গরুর গোস্ত। বাড়িওয়ালাদের বাসায় খাইছি।
- ওহহহ। ভালোই তো।
- হুমম মা।
- আচ্ছা তাইলে এখন একটু ঘুমায় থাক।
- আচ্ছা ঠিক আছে মা।
.
ফোন রেখে দিলাম। একটু রেস্ট নিচ্ছিলাম। একটা সিগারেট ধরালাম। দুপুরে খাওয়ার পর না খেলে আবার ভালো লাগে না। সিগারেট খাচ্ছিলাম আর ফেইসবুকে নিউজফিড চেক করছিলাম। একটু পর কলিংবেল এর শব্দ পেয়ে সিগারেট টা তাড়া-তাড়ি ফেলে দিলাম। গিয়ে দরজা খুললাম।
.
- আসসালামু ওয়ালাইকুম।
- ওয়ালাইকুম আসসালাম।
- আমি রিয়াদ। < হাত মিলিয়ে >
- আমি হৃদয়। আসো ভেতরে। তোমার কথাই তাহলে আংকেল বলেছিলেন?
- হ্যা ভাইয়া।
- আচ্ছা তুমি এই পাশে বেড করে থেকো।
- ঠিক আছে।
- যাও ফ্রেশ হয়ে আসো আগে। পরে রান্নাঘরে মিল রাখা আছে খেয়ে নিও।
- আচ্ছা ভাই।
- কিসের ভাই? তুমি করে বলবা। আমরা একই ইয়ারের।
- হুম ঠিক আছে।
.
যাক একা ছিলাম এতদিন। এখন কেউ একজন তো আসলো। সময় কাটবে ভাল ভাবেই। রিয়াদ সিলেটে থাকে। এই বাসায় উঠার আগে অন্য একটা বাসায় ছিলো। ঐ খানে সমস্যা হয় এর কারণে এই বাসায় উঠে। রিয়াদকে সব কিছু বুঝিয়ে দিলাম এবং নিয়ম গুলো বলে দিলাম। রিয়াদ আর আমি একই ভার্সিটিতে ছিলাম। শুধু ডিপার্টমেন্ট আলাদা ছিলো।
.
এইভাবে কিছুদিন কেটে যায়। এর মধ্যে রিয়াদের সাথে আমার বন্ধুত্বটা তুমি থেকে তুই এ চলে যায়। রিয়াদ একটু গেইম পাগল ছিলো। সারাদিনই গেইম খেলতো। আমিও খেলতাম কিন্তু ততটা নয়। এর মধ্যে আমাদের সাথে আর একজন রুম মেট এড হয়। তার বাসা আবার বরিশাল। তার কথা শুনে আমি আর রিয়াদ প্রায়ই সময় হাসি। ওর নাম রুবেল। রুবেল এইখানে একটা মার্কেটে জব করতো। আমরা তিন জনই একই রুমে থাকি। রুবেল আবার একটু বরিশালের ভাষায় কথা বলতো।
.
প্রথম যেদিন আসে সেইদিন ওর কথা বুঝতে কিছুটা ঘোরপাক খাচ্ছিলাম। আসতে আসতে ঠিক হয়ে গেছে এখন। আমরা তিন জনই ভালো বন্ধুর মতো হয়ে যাই। রুবেল ছিলো আবার একটু মেয়ে পাগল। মেয়ে দেখলেই ওর মাথা ঠিক থাকে না। বাড়িওয়ালার মেয়েকে দেখেও তার পাগলামি শুরু হয়ে যায়।
.
- হৃদয়?
- হুম রুবেল বল।
- মুই (আমি) কিছু তোমাগো লগে শেয়ার করতে চাই।
- হুম করে ফেলো।
.
পরে শুরু হলো ওর চাপাবাজি। আল্লাহ্‌ এত চাপা মারতে পারে ছেলেটা। তবে মনটা খুব ফ্রি মাইন্ডের ছিলো। তো এর মধ্যে আমার আর রিয়াদের পরিক্ষা শেষ হয়। কিছুদিন ছুটি পাই। তাই আমি বাসায় আসি। রিয়াদ ও দুইদিন পর ওর বাসায় যায়। শুধু রুবেল একা ছিলো। তিন-চার দিন থাকলাম বাসায়। পরে রুবেল কল দিয়ে বলে যাওয়ার জন্য। ওর নাকি একা একা ভালো লাগে না। তাড়া-তাড়ি যাওয়ার জন্য বললো। আমার বাসা ছিলো নারায়ণগঞ্জ। আমার বেশি সময় লাগতো না ঢাকায় যেতে। মিরপুরের রাস্তার জ্যামটাই ছিলো সবচেয়ে কষ্টের। ও হ্যা মিরপুরে ছিলো আমাদের মেস। এর দুইদিন পর রিয়াদ ও এসে পরে।
.
তো একদিন প্লানিং করি সবাই মিলে বাসায় একটা পার্টি করবো। যেহেতু রুবেল জব করে তাই ও বেশি টাকা দিবে। আগেই তো বলছিলাম যে চাপাবাজি করলেও মনটা ভালো। পরে ও একাই পার্টির সব কিছু আয়োজন করলো। আমাদের থেকে কোনো টাকাও নেয়নি। সব কিছু আনা হলো যা যা দরকার। কিন্তু ঐ দিন ঘটলো আর এক নতুন ঘটনা।
.
(চলবে)
.
লেখাঃ হৃদয় নাদিম

Comments