"ব্যাচেলর" (৪র্থ পর্ব)

সকালে সবাই তাড়া-তাড়ি উঠে যায়। শুধু আমি ছাড়া। ঘুমিয়েছিলাম'ই তো ৫ টায়। সবাই ৮ টায় উঠে যায়। সকালে বুয়া আসে প্রতিদিন সকালের নাস্তা বানায়। কিন্তু আজ বুয়া দরজার বাহিরে থেকে বিদায় দিয়ে দেয় ওরা। কারণ বুয়া ভেতরে ঢুকলেই ধরা খেতে হতো। বাড়িওয়ালাদের বাসায় কাজ করতো এই বুয়াটা। পরে আমাদের রান্না করে দেওয়ার জন্য তাকে ডাকি। আর রুমে কোনো আকাম-কুকাম করলে এই বুয়াই প্যাচ লাগায় বাড়িওয়ালার কাছে গিয়ে।
.
- হৃদয় বন্ধু। সকালের নাস্তা কি হোটেল থেকে আনবো?
- কয়টা বাজে?  যে এখুনি নাস্তা করার জন্য পাগল হয়ে গেলি।
- তুই চোখটা মেইলা দেখ কয়টা বাজে।
- আচ্ছা যা হোটেল থেকে নাস্তা নিয়ায়। আমারে একটু ঘুমাইতে দে প্লিজ।
- টাকা দে। টাকা নাই তো আমার কাছে।
- মানিব্যাগ থেকে টাকা নিয়া যা।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
.
রুবেল নাস্তা আনতে বাহিরে গেলো। এদিকে সবাই উঠে ফ্রেশ হয়ে গেছে।  আমার খেয়ালই ছিলো না যে আজ ছোট ভাইয়ের বিয়ে। খেয়াল থাকলে আমিও আগে আগে উঠে যেতাম। কারণ বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত বিপদ। যেকোনো সময় দেখে ফেলতে পারে বাড়িওয়ালি। আর প্রতিদিন সকালে আংকেল আমাদের সাথে দেখা করে যায়। আজোও আসবে হয়তো। কলিংবেলের শব্দ পেলেই বুঝতে পারি যে আংকেল আসছে। কারণ সকাল বেলা আংকেলই আসে। আর বুয়া তো হইছে জমিদার। ১০ টা না বাজলে তার আসতে মনে চায় না।
.
- হৃদয়। উঠ, এই বেটা উঠ আংকেল আসছে।
- উঠে ঘুম ঘুম কন্ঠে বললাম। ঐ বুইড়ায় তো প্রতিদিনই আসে।
- আরে বেটা প্রতিদিনের আসা আর আজকের আসাটা অনেক তফাৎ।
- কি কইতাছোত।
.
না সব প্যারা মনে পড়ে গেছে। তাড়া-তাড়ি উঠে গেলাম আংকেলকে মেনেজ করতে। দরজার বাহিরেই দাঁড়িয়ে আছে। ভেতর থেকে কেউ সাড়া দিচ্ছেনা বলে দরজা নক করছে। এই ভাবে তো আংকেল দরজা নক করেন না। দরজা খুলে যা দেখলাম। তা দেখার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।
.
- আসসালামু আলাইকুম আন্টি।
- ওয়ালাইকুম সালাম। কিও মিয়া দরজা খুলতে এত দেড়ি হলো কেনো?  কতক্ষণ ধইরা দরজা নক দিতাছি। রুমের ভেতর কাউকে আনছোনি আবার?
- কি যে বলেন আন্টি। আসলে ঘুমিয়ে ছিলাম তো তাই। দরজা খুলতে একটু দেড়ি হয়ে গেছে।
- ওহ। এত বেলা পর্যন্ত ঘুমাও কে? আর আজকে কয় তারিখ? বাসার বাড়া দিলে না কেনো?
- আন্টি আজ ৫ তারিখ। আপনার বাসা বাড়া একটু পরেই দিয়ে আসতাম। বুঝলাম না বাসা বাড়ার জন্য এত সকালে আসার কি দরকার ছিলো?
- এত কথা বইলা লাভ নাই। একটু পরেই বাসা বাড়া দিয়ে আসবে।
- আচ্ছা আন্টি ঠিক আছে।
.
- রবিন..... <সুমা ডাকে রবিন'কে> 
- এই, মেয়ে মানুষের কথা শুনলাম। দেখি ভেতরে যাইতে দাও।
- না, না আন্টি মেয়ে মানুষ আসবে কোথায়?
- তুমি সরো। < আমাকে সরিয়ে দিয়ে বাসার ভেতরে ডুকে পড়লো>
- এই মেয়ে কে তুমি?
- আন্টি ও আমার ভাইয়ের বউ।
- ভাইয়ের বউ এখানে কি করে।
- শুধু ভাইয়ের বউ না ভাই ও এসেছে।
- কোন ভাইয়ের বউ।
- রবিন এইদিকে আয়।
- আসসালামু ওয়ালাইকুম আন্টি। কেমন আছেন?
- আর ভালো থাকা।
- আন্টি এই যে রবিনের বউ এটা।
- মজা লও আমার সাথে? এতটুকু কেছরা একটা পোলার বউ এটা। হৃদয় তোমাকে আমি ভাল মনে করছিলাম। এখনো সময় আছে সত্যি করে বলো।
- আন্টি আমি মিথ্যা কি বললাম। যেটা সত্যি ঐ টাই তো আপনাকে বললাম। আপনি তো রবিনকে আগেও দেখছেন। আগেও তো অনেকবার এসেছিলো।
- জ্বি আন্টি আমারই বউ। তার নাম সুমা। এই সুমা, আন্টিকে সালাম করো। <সুমা গিয়ে আন্টিকে পা ধরে সালাম করলো>
- থাক মা। উঠো তুমি। দেখ কতো সুন্দর একটা মাইয়া। তুমি মা কিসের জন্য এরকম একটা কাইল্লা ছেড়ারে বিয়া করলা?
- আন্টি এইগুলা কি বলছেন? আমি এতটাও কালো না। যতটা বলছেন।
- যাক গা কাবিননামাটা আমাকে ফটোকপি করে দিয়ে আসবা। আর বরিশাইল্লা ডা কই?
- কেনো আন্টি?
- ওর মতিগতি কিন্তু আমার ভাল লাগে না। ওরে ঠিক ঠাক ভাবে কথা বলতে বলবা।
- আচ্ছা আন্টি। একটু পরে বাসা বাড়াটা দিয়ে আসবো নে।
- আরে বাসা বাড়া দিও। কতো সুন্দর একটা মেয়ে। আমার এখনো বিশ্বাস হয় না যে ওদের বিয়ে হয়েছে।
.
কথাটি বলতে বলতেই আন্টি রুম থেকে বের হলো। আল্লাহ্‌ কথায় আছে 'যেখানে বাঘের ভয় সেইখানেই সন্ধ্যা হয়' ঠিক ঐ রকমটাই ঘটলো। আংকেল আসলে তাকে এক প্যাকেট সিগারেট হাতে দিয়ে মেনেজ করতে পারতাম। কিন্তু আন্টি শুধু বাসা বাড়া নেওয়ার জন্য পাগল হয়ে থাকে। মনে হয় রাতে ঘুমায়নি বাসা বাড়ার জন্য। যাক কোনো রকম তো রক্ষা পেলাম। এখন তাড়া-তাড়ি বিয়েটা হয়ে গেলেই সব কাহিনী খতম।
.
- সালামুয়ালাইকুম আন্টি। কেমন আছেন?
- ঐ বরিশাইল্লা সালাম টা ঠিক মতো দিতে পারিস না।
- আন্টি দেখেন সবসময় আমার সাথে এরকম মিস বিহেভ করবেন না।
- আরে বরিশাইল্লা দেখি শুদ্ধ ভাবে কথা বলতে পারে।
- আমরা বরিশালের মানুষরা চাইলে সবই পারি।
- যা বাটপার পোলা।
- আন্টি আপনি সবসময় আমাকে বকা দেন।
- এটা বকা না রে বোকা। এটা ভালবাসা। তোরা তো আমার পোলার মতোই।
- আচ্ছা আন্টি যাই তাহলে। নাস্তা ঠান্ডা হয়ে যাইতেছে।
.
- কিরে দরজা খোলা কেনো? বাড়িওয়ালি আইসা পড়লে।
- আর দরজা বন্দ রেখে কি হবে। আন্টি দেখেই গেছে।
- বন্ধু আমার অনেক ক্ষুধা লাগছে। আগে সবাই নাস্তা করি। পরে কথা বলবো নে।
- হুমম তাই ভাল।
.
প্যাকেট বের করে খুলে দেখলাম নেহারি আর নান রুটি। আমার মানিব্যাগ থেকে পাঁচশত টাকার নোট টাই নিয়ে গেছে। সবাই একসাথে বসে নাস্তা করলাম। এইবার বিয়ের জন্য দৌঁড়াতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব বিয়ের কাজ শেষ করতে হবে। বাসায় কাজী আনা অসম্ভব। কাজী কে যদি আন্টি দেখে ফেলে তাহলে সত্যি সত্যিই বাসা ছাড়তে হবে আমাদের। রিয়াদ ফোন করে কাজীর সাথে কথা বলে সব কিছু জেনে নেয়। গেলাম কাজী অফিসে। ফাস্ট টাইম কাজী অফিসে গেলাম। বিয়ে করতে নয় করাইতে এবং সাক্ষী দিতে।
.
- কাজী সাহেব বিয়ে কি কমপ্লিট?
- এত তাড়া-তাড়ি বিয়ে পড়ানো হয়?
- আচ্ছা পড়ান যতক্ষণ লাগে।
- ছেলের সাক্ষী কে? এইখানে সাক্ষর দেন।
- এইবার মেয়ের সাক্ষী লাগবে।
.
এখন বিয়ে কমপ্লিট হয়েছে। আর কোনো সমস্যা নেই। দুইদিন পর এসে একটা কাগজ আছে ঐটা নিয়ে যাবেন। এখন মিষ্টি মুখ করেন। রুবেল কাজী অফিসে যাওয়ার সময় মিষ্টি কিনে নিয়ে গেলো। কাজী অফিসে থাকা অবস্থা'ই বাসা থেকে কল দেয়। আমি একটু আড়ালে এসে কলটা ধরি।
.
- হ্যালো মা। কেমন আছো?
- আর ভালো থাকমু কেমনে। সকাল সকাল কি শুনলাম।
- কি হয়েছে মা?
- রবিনে নাকি বাসা থেকে টাকা নিয়ে পালাইছে।
- কি বলো মা। কই গেছে পালিয়ে?
- কই যাইবো কে জানে। শুন বাবা। রবিন যদি তোর ঐখানে যায় আমাকে জানাবি।
- আচ্ছা মা।
- কি হলো হাসছিস কেনো?
- কই হাসলাম মা। হাসি নাই তো। আচ্ছা রাখো তুমি।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
.
হায়রে কপাল মা যদি পরে জানতে পারে যে আমি নিজেই ওদের বিয়েতে সাক্ষী দিয়েছি। কত কথা যে আমাকে শুনতে হবে আল্লাহ্‌ ভালো জানেন। কাজী অফিস থেকে বের হয়ে গেলাম সবাই। রবিন, ওর বউ এবং রুবেল বাসায় চলে যায়। আমি আর রিয়াদ ওদের জন্য কিছু কেনা কাটা করি। যেহেতু নতুন সংসার ওদের। আর বড় ভাই হিসেবে আমার একটা দায়িত্ব আছে। কিন্তু আমার কপালে যে শনি ঘুরতাছে সেটাও আন্দাজ করতে পারছিলাম।
.
ডাবল বেড, দুইটা বালিশ এবং ওদের জন্য কিছু জামা কাপর কিনলাম। যে কয়দিন থাকার থাকবে। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে না যে ওরা আর বাসায় যাবে। এইখানেই থাকবে আর আমাকে বাঁশ দিবে। ৩ কেজি মিষ্টিও কিনে নিলাম। নতুন বিয়ে হয়েছে বাসার সবাইকে তো একটু মিষ্টি মুখ করানো দরকার। বাকি টুকি টাকি যা দরকার সব কিছুই কিনলাম। এবার বাসার দিকে যাওয়ার জন্য রিক্সা নিলাম।
.
কিছুক্ষণ পরেই মোবাইলে কল আসে। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দেখলাম খালার কল। ধরবো নাকি ধরবো না ভাবতেছিলাম। আবার মনে হলো যদি কল না ধরি তাহলে হয়তো আমাকেও সন্দেহ করতে পারে। তাই দ্বিতীয় বারের কলটা ধরি।
.
- হ্যালো খালা। কেমন আছেন?
- হৃদয় বাবা একটা সত্যি করে কথা বল তো।
- কি হয়েছে খালা?
- রবিন কি তোর সাথে?
- না তো। কেনো কি হয়েছে।
- আর বলিসনা। কুত্তার বাচ্চাটায় আমার ব্যাগ থেকে টাকা নিয়া পালাইছে। কোন মেয়ের সাথে বলে প্রেম করতো। ঐ মেয়েকে নিয়ে ভাগছে।
- হাহাহা। কি বলছেন এইসব।
- বাবা হাসিছ না তো। আমাগো মান সম্মান একবারে ধুলোয় মিশায় দিছেরে। মাইয়ার ফ্যামিলি একটু আগে আমাগো বাসায় আইসা কত কথা শুনাইয়া গেছে।
- ওহহহ। আচ্ছা খালা। যদি আমি ওর কোনো খবর পাই তাহলে আপনাকে জানাবো। রাখি এখন।
.
কল রেখে দিলাম। খুব হাসিও পাচ্ছিলো আবার খারাপও লাগছিলো। যাক যা হবার তা তো হয়েই গেছে। এইগুলো নিয়ে এখন চিন্তা না করাই ভালো। রবিনকে তো আর বাসায় জায়গা দিবেই না যতটুকু জানি আমি। খালা-খালু অপমান হইতেছে সবার থেকে। ছেলে এরকম একটা কাজ করে ফেলবে তারাই বা কি জানতো নাকি। এত ভাবার দরকার নেই। বিয়ে যখন করে ফেলেছেই। একটু হলেও এখন বুঝবে, একটু হলেও এখন আক্কেল হবে। আর আমি তার থাকার জন্য কেনাকাটা করে নিয়ে যাচ্ছি।

.
(চলবে)
.
.
লেখাঃ হৃদয় নাদিম।

Comments