ড্রাগ এডিক্টেড



ড্রাগ এডিক্টেড মানুষেরা পরিবর্তন হতে চায়। তারা চায় তাদের জীবনে এমন কিছু আসুক যেটা আগলে ধরে সে ড্রাগ থেকে মুক্তি হতে পারে। আবার অনেকে আছে হাজার চেষ্টার ফলেও সে ড্রাগ এডিক্টেড মানুষেরা কখনো পরিবর্তন হতে পারে না। আসলে তারা চেষ্টাই করেনা। শুধু যে ছেলেরা ড্রাগ এডিক্টেড সেটা কিন্তু নয়। ছেলে-মেয়ে উভয়ই ড্রাগে জড়িত। কিন্তু তাদের এইসবের পেছনের কারণ গুলো কি আধোও কেউ জানতে চেয়েছে? বা বুঝতে পেরেছে? খুব কম মানুষই আছে যারা এইসব ব্যাপারে জানতে ইচ্ছুক। কিন্তু শেষে তারাও হার মেনে যায় তাদের কাছে।
.
অনেকেই অনেক কারণেই এই নেশা জগতে আসে। আসলে তারা মনে করে এই জগতে আসলেই হয়তো তারা ভালো থাকতে পারবে কিন্তু তা নয় যারা এই জগতে আছে তারাও কিন্তু এখন চায় জগত তাকে বিসর্জন দিতে। কিন্তু পারছে না। এর জন্য দায়ী কিন্তু আমরা। আমাদের সমাজের মানুষেরাই। চোর যখন চুরি করে তখন তার সাথে যদি ভালো মানুষ ও থাকে তাহলে তাকেও আমরা খারাপ ভাবি। কিন্তু এটা কি ঠিক? তেমনি করে একজন ড্রাগ এডিক্টেড লোক যখন ভালো হতে চায়। তখন আমাদের সমাজের মানুষেরাই তাকে অসম্মান করবে। বলবে যে ড্রাগ এডিক্টেড। তাই অনেকে ভালো হতে চেয়েও ভালো হতে পারছে না। এর জন্য দায়ী কিন্তু আমরাই।
.
সবচাইতে দুঃখ জনক ব্যাপার হলো মানুষের মুখের কথা। কেউ যদি তাদেরকে সাপোর্ট দিতো। তাহলে অনেকেই এই নেশা জগত থেকে বেরিয়ে আসতে পারতো। কিন্তু আমরা তা করছি না। সাপোর্ট না দিয়ে আরো উস্কানি মূলক কথা বলি। কিন্তু এটা কি ঠিক? আমার মতে ঠিক না। কারণ মানুষ মাত্রই ভুল। তারা ফেরেস্তা নয় যে তারা সবসময় ঠিক পথে চলবে। সমাজে চলতে হলে অনেক কিছুকেই মানিয়ে চলতে হয়। সেখানে ভালো খারাপ মিলিয়েই ভর করে আছে।
.
মানুষ সাধারণত ড্রাগে এডিক্টেড হয় -
(i) ফ্যামিলির কারণে।
(ii) বন্ধু বান্ধবের পাল্লায় পরে।
(iii) প্রেমে পরাজয়ী হয়ে।
.
আজ এই তিনটা বিষয়েই কথা বলবো। মূলত এই তিনটা জিনিষের কারণেই এরকমটা হয়। আর কয়েকজন ড্রাগ এডিক্টেড মানুষের সাথে কিছুদিন মিশে তাদের ভুল পথে আসার কারণ গুলো জানতে পেরেছি। আমি সবসময় ভুল পথের মানুষদের সাথে মিশার চেষ্টা করি। এবং তাদের এই ভুল পথে আসার কারণটা জানতে চেয়েছি। অনেক জনই সঠিক পথে আসার রাস্তা দেখিয়েছি যতটুকু সম্ভব। কিন্তু আবার অনেকেই আমার সঠিক কথাকে মূল্যায়ন করেনি। এতে হয়তো আমারই ভুল ছিলো। কারণ হয়তো আমি তাদেরকে ভালো মতো বুঝাতে পারিনি।
.
এইতো কয়েকদিন আগেই আমার একজনের সাথে কথা হয়। এবং তার থেকে এইসব ব্যাপারে জানতে চাই। সে প্রথমে বলতে না চাইলেও পরে ঠিকই বলতে বাধ্য হয়েছে। তাদের সাথে মিশতে হলে আপনাকে ওদের মনের মতো হতে হবে। ড্রাগ এডিক্টেড মানুষদের সবসময়ই বদমেজাজি হয়ে থাকে। তারা অল্প কিছুতেই রেগে যায়। আবার খুব সহজেই আপন করে নিতে পারে। তবে তার কারণে তাদের মতো করে হতে হয়। আমি বলছিনা যে তারা যা করে সেইগুলোই করতে হবে। তাহলে তাদের মনের মত হতে পারবেন। আমি বুঝাতে চেয়েছি যে তাদের সাথে এই বিষয়টাকে প্রথমে ভাল বলে পরে এদের বিপরীত হতে হবে।
.
আমার সাথে কয়েকদিন আগে যার সাথে কথা হয়। সে ছিলো একজন মেয়ে ড্রাগ এডিক্টেড। তার সাথে আমার পরিচয় হয় কোনো এক অচেনা জায়গাতেই। বাসে করে একদিন ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে আমার পাশে বসে ছিলেন সে মেয়েটি। দেখে বুঝাই যাচ্ছে কোনো এক ধনী পরিবারের মেয়ে। কিন্তু তার আচার আচরণ একবারে খিটখিটে স্বভাবের। কিন্তু তাকে দেখে আমার একটু জানতে ইচ্ছে করলো তার ব্যাপারে। কিন্তু কিভাবে বলে শুরু করবো সেটা ভাবতে ভাবতেই। তার মোবাইলে একটা কল আসে। হয়তো তার বাসার কেউ কল দিয়েছে। কিন্তু মোবাইলের সাউন্ডটা একটু বেশি ছিলো বলে আমিও তাদের কথা গুলো শুনে ফেলি।
.
- হ্যালো আদিবা। কোথায় তুই?
- আমি যেখানে ইচ্ছে সেখানে আছি। তাতে তোর কি?
- মা। দেখ তোর জন্য অনেক চিন্তে হয়। তুই কোথায় যাস, কোথায় থাকিস। কিছু তো বলেও যাস না।
- তুই জেনে কি করবি? আর আমায় নিয়ে তোর এত ভাবতে হবে না। আর আমাকে কল দিবি না।
- শোন মা।
.
কলটি কেটে দেয়। তখন তার নামটা জানতে পারি। কিন্তু ড্রাগ এডিক্টেড লোকদের দেখলেই বুঝা যায়। আর তাদের চিনার একমাত্র উপায় তাদের কথা বার্তার ধরন। এখন আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছিলো তার ব্যাপারে জানবার। তাই আওব ভুলেই তার সাথে কথা বলি।
.
- হ্যালো। আমি নাদিম। আপনি আদিবা?
- হ্যা। তো?
- আচ্ছা আপনার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করা যাবে?
- ফ্রেন্ডশিপ করার কি দরকার? আর শুনেন আমার সাথে কথা বলবেন না।
- আচ্ছা। ঠিক আছে কথা বলবো না। আচ্ছা আমি কিছু জানতে চাই আপনার সম্পর্কে।
- কি জানতে চান?
- আচ্ছা আপনি যে একটু আগে কারো সাথে কথা বললেন। সে কি হয় আপনার?
- আমার মা হয়।
- আচ্ছা মায়ের সাথে কি কেউ এভাবে কথা বলে?
- তোর থেকে শিখতে হবে আমার? কার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়?
- না। ঠিক তা নয়।
- তাহলে?
- না এমনি। আচ্ছা আপনি কোথায় যাবেন এখন?
- জাহান্নামে যাবো। আপনি যাবেন আমার সাথে?
- আপনি নিয়ে গেলে যাবো।
.
কথা গুলো খুব বিরক্তিকর ভাবেই বলছিলো। সেটা দেখেই বুঝা যাচ্ছিলো। কিন্তু আমি তো এত সহজে হার মানার লোক না। জানার দরকার আমার। তাই না জেনে আর তাকে ছাড়ছি না। সে যতই বিরক্ত হচ্ছে আমি ততই কথা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। সে একবার আপনি করে বলছিলো একবার তুই করে বলছিলো। কিন্তু আমি আমার কথা বলা চালিয়ে যাচ্ছিলাম।
.
একটু পর সে মেয়েটি বাস থেকে নেমে যায়। তার সাথে আমিও নেমে গেলাম। আমি তাকে ফ্লো করতে লাগলাম। তার পিছু পিছু যেতে থাকলাম। কিন্তু সামনে যেতে যেতে দেখলাম সে একটা বাসার মধ্যে ঢুকে পড়লো। বাসাটা আসলে হোটেলের মতো। যেখানে দেহ ব্যবসা হয়। ঐ রকম একটা বাসায় ঢুকলো। আমিও পরে সে বাসায় ঢুকলাম। এবং সব কিছু ম্যানেজ করে তার সাথে দেখা করলাম। আমাকে দেখে সে বলে-

- আপনি ঐ বাসের ছেলেটা না?
- হ্যা। ঠিকই চিনতে পেরেছেন। আমি সেই।
- তো এরকম কতদিন ধরে? দেখে তো মনে হয় না।
- আপনাকে দেখেও তো মনে হয় না।
- আমার ব্যপারা বাদ দিন। যা করতে এসেছেন তা করে বিদায় হন।
- আচ্ছা আমি আসলে ঐরকম ছেলে না। আমি আসছি আপনার সাথে একটু কথা বলতে।
- কথা বলার সময় নাই।
- আচ্ছা ১০ মিনিট সময় দিন। আমি আপনাকে এক্সট্রা টাকা দিবো।
- আচ্ছা বলুন।
- আপনি এই জগতে কতদিন ধরে আছেন?
- ৬ বছরের মতো।
- আপনাকে দেখে তো মনে হচ্ছে আপনি অনেক ভালো ফ্যামিলির মেয়ে।কিন্তু এই পথে কেনো আসছেন?
- এটা অনেক কাহিনী।
- যদি কিছু না মনে করেন তাহলে প্লীজ বলুন।
- শুনে কি করবেন সেটাই তো বুঝতেছিনা। আচ্ছা শুনেন তাহলে। আমি আমার ফ্যামিলির একমাত্র মেয়ে। কিন্তু আমার বুঝ হওয়া পর থেকে আমি আমার বাবা-মাকে একদিনও দেখিনি যে তারা ভালো ভাবে কথা বলতো। আমার বাবা প্রতিদিন রাতে এসে মাকে মারদোর করতো। কিন্তু সেটা আমার একদমই অপছন্দ ছিলো। আর এভাবে অনেকদিন যাবৎ দেখে আসছিলাম। আর তখনই আমি এই পথে আসতে বাধ্য হয়েছি।
- আচ্ছা এটাই কি সমাধান? অন্যভাবে কি সমাধানটা করতে পারতেন না?
- জানিনা।
- আচ্ছা এই কাজ করেন কেনো?
- আমি ড্রাগ এডিক্টেড। যদি এইসব না করি তাহলে আমি কিভাবে ড্রাগ নিবো?
- ওহহহ আচ্ছা। আমি কিছু বলতে চাই। মন দিয়ে শুনবেন একটু?
- হ্যা বলেন।
- আচ্ছা এই জগত থেকে কি বের হওয়া যায় না?
- বের হবো কেনো। বিন্দাসই তো আছি।
- কিন্তু সমাজ তো সেটা ভালো চোখে দেখেনা।
- কে কি ভাবে বা না ভাবে তা নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই। আমি যেমনটা আছি ঠিকই আছি।
- আচ্ছা ধরেন আপনি ভালো হবেন এ জগত থেকে মুক্তি পেতে চান। তাহলে আপনার জন্য কোনটা ভাল হবে। আই মিন কোন জিনিষ গুলোকে চান? যার মাধ্যমে আপনি আগের মতো হতে পারবেন।
- এক কথা আমি এখন সবার চোখে খারাপ। আমার বাপ- মা সবার চোখেই। আর এর জন দায়ী আমার ফ্যামিলি।
- আচ্ছা এখন তো তারা চায় আপনি ভালো হয়ে যান।
- দাঁত থাকতে যখন দাঁতের মর্যাদা দিতে পারেনি। তাহলে এখন দাঁত দিয়ে করবে তারা?
- আচ্ছা ড্রাগ এডিক্টেড ছেলে মেয়েরা কি শুধু ফ্যামিলির কারণেই এরকম ডিসিশন নিয়ে থাকে?
- সেটা তো আমি বলতে পারবো না। কিন্তু আমার কিছু বন্ধু বান্ধব আছে তারা বেশির ভাগই ফ্যামিলি, প্রেমে ছ্যাকা খেয়ে এরকমটা হয়েছে।
- আচ্ছা বন্ধু বান্ধবের পাল্লায় পড়েও কি কেউ এরকম হয়?
- আমি এটাতে বলতে চাই। সবাই এক না। যেমন আপনি এখন আমার সাথে আছেন। আর এইখানে কারা আসে। সেটা তো বুঝতে পেরেছেন। এখন আপনি তো ঐরকম না। এটাও একটা উদাহরণ হতে পারে। যে খারাপ হতে চায় সে এমনিতেই খারাপ হয়। আর যে ভাল সে খারাপের সাথে থাকলেও ভালো হবে। এটা যার যার চিন্তা ভাবনা।
- ভাল লাগলো আপনার সাথে কথা।
.
পকেট থেকে ৫ হাজার টাকা বের করে দিলাম। কিন্তু সে নিবে না। কারণ জানতে চাইলে বলে।
.
- আপনার সাথে কথা বলে আমার অনেকটা ভালো লেগেছে। আসলে এভাবে আমি কাউকে কোনদিন আমার নিজের কথা শেয়ার করিনি। তাই আমি এই টাকাটা নিতে পারবো না।
- আচ্ছা। আমি শেষ একটা কথা বলবো আপনাকে। একটা অনুরোধ থাকবে।
- হ্যা বলুন।
- যদি পারেন তাহলে এ জগত থেকে বেরিয়ে আসবেন। বাহিরের জগতটাকে একটু সময় দিবেন দেখবেন আপনি এর থেকেও বিন্দাস ভাবে চলতে পারবেন। তাই যাই করেছেন সব কিছু ভুলে গিয়ে জীবন নতুন ভাবে শুরু করবেন।
- আচ্ছা আপনার কথা আমি ভেবে দেখবো।
- তাহলে আমি আসি। ভালো থাকবেন।
- ঠিক আছে।
.
কথাটি বলে আমি রুম থেকে বের হয়ে আসি। এবং সে মেয়েটির কথা চিন্তা করছি। আমার মনে হয় সে এইগুলো থেকে ফিরে আসতে পারবে।কেনো জানি কথা বলে মনে হলো। কিন্তু আমরা যাই করছি না কেনো তার থেকে বড় অন্যায় হলো আমাদের এই জগতের মানুষদের খারাপ চোখে দেখা। আমরা একটু সাপোর্ট করলেই হয়তো অনেক মানুষ এইগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে।
.
.
.
লেখাঃ হৃদয় নাদিম

Comments