- হ্যালো হৃদয়।
- হ্যা টয়া। তুই এখনো ঘুমাসনি?
- তোরা আসছিস আমার তো ঘুমই আসছে না খুশিতে। কতদিন পর দেখবো তোদের।
- বিয়ের কণে এত রাত জাগলে পরে কিন্তু বিয়ে করবে না। বুঝিস কিন্তু।
- হুহ। এখন কোথায় আছিস?
- সেটা তো বলতে পারবো না রে।
- ঐ দিকের আবহাওয়া কেমন?
- হ্যা ভালোই তো। কেনো?
- আমাদের এইদিকে কিন্তু সিরিয়াস ঝড় হচ্ছে। আমার তো তোদের জন্য টেনসন হচ্ছে।
- আরে চিন্তা করিস না তো। এইদিকে সব ঠিক ঠাক আছে।
- আচ্ছা আল্লাহ্ হাফেজ। আমি সকালে তোদেরকে নিয়ে আসতে যাবো। তোরা নেমে কল দিস আমাকে।
- হ্যা ঠিক আছে আল্লাহ্ হাফেজ।
.
টয়ার ফোন রাখার সাথে সাথেই আমার বাসা থেকে আম্মু কল দেয় আব্বুর মোবাইল থেকে।
.
- হ্যালো মা।
- কিরে তোদের ঐ দিকে কি অবস্থা?
- এইদিকে তো আবহাওয়া ভালই।
- এইদিকে কিন্তু অনেক ঝড় - বৃষ্টি হইতাছে।
- কি বলো। আচ্ছা মা চিন্তা করো না তোমরা এইদিকের আবহাওয়া খুব ভাল।
.
আমি নিজেই তো চিন্তায় পড়ে গেলাম। আল্লাহ্র নাম স্মরণ করলাম। ১০-১৫ মিনিট পরই শুরু হলো ঝড়। এখন সবাই ভয় পেয়ে গেলো। নদীর মাঝে এরকম ঝড় সত্যিই খুভ ভয়ানক ব্যাপার ছিলো। সুমা তো কান্নাই করে দেয় ভয়ে। সবাই আল্লাহ্কে ডাকছিলাম। বাতাসে লঞ্চ শুধু এদিক ওদিক হচ্ছিলো। আর বিদ্যুৎ চমকাচ্ছেও। নীলাও খুব ভয় পেয়েছে। সে চুপ-চাপ বসে আছে। আমি তার পাশে গিয়ে বসি। তার হাতটি ধরে বসে আছি।
.
- ভয় পেয়ো না। আমি আছি তো।
- হুমম।
- সব ঠিক হয়ে যাবে একটু পরই।
- আচ্ছা আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই। জানিনা যদি পরে বলার আবার সুযোগ না পেলাম।
- হ্যা বলো। কি বলবে।
- আমি আপনাকে অনেক ভালবাসি।
- আমিও তো বাসি।
.
মুখে বলছি ঠিকই ভালবাসি। কিন্তু ভেতরে ভয়টা ঠিকই কাজ করছে। ছাড়া এরকম অবস্থার মুখোমুখি হয়েছে শুধু মাত্র তারাই বলতে পারবে মাঝে নদীতে ঝড়ের সম্মুখীন হলে কতটা ভয়ের। নীলা আমার বুকে তার মাথা রেখে নিজেকে আড়াল করে রেখেছে। সবাই আল্লাহ্ কে ডাকছি। শুধু আমরা নয়। লঞ্চের প্রতিটা মানুষই আল্লাহ্কে স্মরণ করছে। কিছুক্ষণ পর আল্লাহ্র রহমতে সবকিছু ঠিক হয়ে যায়। ঝড় থেমে যায়। কিন্তু হালকা বৃষ্টি হচ্ছিলো। এরকম অবস্থাটা আগে শুনেছি কিন্তু সেইদিন নিজেরাই এই সমস্যায় সম্মুখীন হয়েছিলাম।
.
রাত তখন ৩ টা বাজে। কারো চোখেই ঘুম নেই। এই অবস্থায় ঘুম থাকবে কিভাবে। আবহাওয়া ঠিক হয়ে গেছে। সবাই ক্যাবিন থেকে বের হলাম। আমরা তখন একটা ক্যাবিনেই বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম কিন্তু পরেই শুরু হয় ঝড়। বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। সুমা তো অনেক ভয়ে পেয়েছিলো। যার কারণে কেঁদে দেয়। আমরা সবাই ভয় পেয়েছি। নীলাকে বুকে না নিলে সেই কেঁদে দিতো।
.
- রবিন তুই সুমাকে একটু ওয়াশরুমে নিয়ে যা। কেঁদে তো চোখ ফুলিয়ে ফেলছে।
- হ্যা চলো বউ।
.
রবিন নিয়ে যায় ওর বউকে। আমিও আমার তাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। রিয়াদ ও রুবেল চুপ-চাপ অন্যদিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
.
- কিরে তোরা এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? তোরাও কি ভয় পেয়েছিস নাকি?
- ভয় তো পাবোই। ভাবতেছি বন্ধু যদি আজকের পরিনামটা খারাপ দিকে যেতো। তাহলে কি হতো।
.
নীলা ওদের কথা শুনে আরো ভয় পেতে লাগলো।
.
- আহা কি বলছিস দেখছিস তোদের ভাবি ভয়ে শেষ। তার মাঝে আবার এইসব বলছিস।
- ওহ ভাবি চিন্তা করবেন না। আর কিছু হবেনা। আর লঞ্চ কত বড় দেখছেন। এটা কখনো ডুববে না।
- বড় জিনিষ গুলোই তো ডুবে যায় তাড়া-তাড়ি।
.
রিয়াদ এ কথা বলা মাত্রই নীলা কেঁদে ফেলে। আর কি করার ওদের সামনে বুকে জড়িয়ে নিলাম। ওরা তো দেখে অবাক হয়ে গেলো। আমি পরে নীলার চোখের পানি মুছে দিলাম। কিন্তু আজ নীলা আমাকে জানিয়েছে তার ভালবাসার কথা। এত তাড়া-তাড়ি বলা হতো না। কিন্তু ভয়ে আজ সব বলে দিছে। কিন্তু নীলা যে আমাকে ভালবাসার কথা বলেছে সেটা বাকিরা কেউ শুনতে পায়নি। আমি ইশারা দিয়ে ওদের চুপ থাকতে বলি।
.
- আচ্ছা এখন তো সব ঠিক আছে। এখন আর মন খারাপ করার দরকার নেই। এখন আবার আড্ডা দিবো।
- হ্যা ঠিক বলেছিস। আচ্ছা দুই ভাবিকে ক্যাবিনে দিয়ে আমরা একটু খাবার টাবার নিয়ে আসি।
- হ্যা সেটা ঠিক হবে।
.
পরে সবাই নিচের তলায় গেলাম। কিছু চিপস্ - বিস্কুট নিলাম। আমরা সিগারেট আর চা খেয়ে। ওদের জন্যও চা নিয়ে গেলাম। লঞ্চ ও আগের মতো গতিতে চলছে। আর এক দেড় ঘন্টা লাগবে পৌঁছাতে। তখন সাড়ে তিনটার মতো বাজে। আমরা গেলাম ওদের কাছে। ওদের জন্য যা নিয়ে গেছিলাম তা ওদেরকে দিলাম। ওরাও খাচ্ছিলো। আমরা বারান্দায় বসে আড্ডা মারছিলাম। কিন্তু পরে রিয়াদের মোবাইলে কল আসে। রিয়াদ ও আমাদের কাছে থেকে সরে একটু দূরে চলে যায়। তখন বুঝতে পারলাম যে রিয়াদের খালাতো বউ কল দিয়েছে। রিয়াদ কথা বলছে আমারও ইয়ে হয়ে গেছে। রবিনেরও বউ আছে। বাকি আছে শুধু রুবেল।
.
- কিরে বন্ধু তোরটা কবে হবে?
- বন্ধু এইসব প্যারা আমার ভাল লাগে না।
- তাই? আচ্ছা যা তোরেও এই প্যারাতে ডুকিয়ে দিবো। দেখি বিয়ে বাড়িতে কাউকে পাইনি তোর জন্য।
- সত্যি বন্ধু?
- এই তুই না মাত্রই বললি যে এইসব প্যারা নিতে তোর ভাল লাগে না।
- আরে ঐটা কথার কথা বলছি। তুই সত্যি আমার জন্য একটা ঠিক করে দিবি তো বন্ধু?
- হ্যা দিবো।
- আচ্ছা আয় তাহলে একটু অক্সিজেন নিয়ে আসি দুই বন্ধু মিলে।
- মাত্রই না খেয়ে আসলাম।
- তো কি হয়েছে। আবার খাবো। চল, রবিন আসো। রিয়াদ ওর খালাতো বউয়ের সাথে কথা বলুক।
.
পরে আবারো ছাদে গেলাম। আহা অসাধারণ লাগছিলো। তখন শীত ও করছিলো। অনেক ঠান্ডা আবহাওয়া ছিলো। আর এই ঠান্ডায় সিগারেট খেতে যে কি মজা। সিগারেট খাওয়া শেষ করে নিচে নামছিলাম। পরে রুবেল বলে।
.
- আচ্ছা রবিন একটা কথা বলো তো।
- হ্যা রুবেল ভাইয়া বলো।
- তোমার ভাইকে যদি বরিশালে গিয়ে বিয়ে করিয়ে দেই কেমন হবে।
- আবার শুরু করলি তোরা?
- ভাইয়া আমার কাছেও কিন্তু..
- চুপ কর তোরা। রুবেল দেখতো স্পিড ক্যান আছে কিনা। থাকলে নিয়ে আয়।
- আচ্ছা বন্ধু। আমারো খেতে ইচ্ছে করছে।
- তাহলে সবার জন্যই নিয়ে আয়।
- ভাবিরা কি খাবে?
- ওদের জন্য আইস্ক্রিম নিয়ে আসিস তাহলে।
- আচ্ছা ঠিক আছে। তোরা ক্যাবিনে যা। আমি নিয়ে আসতেছি।
.
পরে রুবেল গেলো দোকানে। আর আমি আর রবিন গেলাম ক্যাবিনে। এখনো দেখি রিয়াদ সেখানেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলতেছে। রিয়াদের সামনে গেলাম।
.
- আরে বেটা এখন তো একটু থাম। রেহাই দেস না।
- ধুরু বেটা। নেটওয়ার্ক নাই কথাই বুঝা যায়না।
- তোমার লিজ্ঞা নদীর মাঝ খানে টাওয়ার লাগাইতে হইবো।
- বন্ধু বরিশালে নেট না পাইলে তোর খবর আছে।
- আচ্ছা। ঠিক আছে। এখন আয় সবাই একসাথে আড্ডা দেই।
- হুমম আয়। বরিশাইল্লা কই?
- বরিশাইল্লা আমাদের জন্য ঠান্ডা আনতে গেছে।
- ধুরু হালা। এমনেই ঠান্ডায় কাপতেছি। আর রাত বাজে ৪ টা। এত রাইতে পাইবোনি?
- আরে লঞ্চে সারা রাতই দোকান খোলা থাকে।
- আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে চল। ভাবিদের সাথে কথা বলি।
- হাহা। হুমম চল।
.
- কোথায় গেছিলেন আপনারা?
- কেনো? কেউ কি আমাদের খুঁজে ছিলো?
- জ্বি খুঁজেছি বলেই জিজ্ঞাসা করেছি।
- তো কি কারণে খুঁজেছিলেন?
- এত গুলো চিপস্ - বিস্কুট যে এনেছেন আপনারা না খেয়ে কেনো গেলেন?
- ১০ প্যাকেট চিপস্ আর ১০ প্যাকেট বিস্কুটই খেতে পারো না।
- আমরা তো রাক্ষস আপনাদের মতো।
- এইগুলো রুবেল একাই খেতে পারবে।
.
ওর কথা বলতেই রুবেল আমাদের জন্য ঠান্ডা নিয়ে আসে।
.
- কিরে বন্ধু আমার ব্যাপারে কিছু বলছিলি নাকি?
- হ্যা। তুই অনেক খাদক ঐটাই বলতেছিলাম।
- তোরা শুধু আমাকে খাদকই বলিস। আমি কি তেমন খাই নাকি?
- ঐ যে দেখ তোর জন্য চিপস্ আর বিস্কুট রেখে দিছে।
- এখনো শেষই করতে পারেন নাই? কি যে করেন ভাবি। এইগুলো এক বসাতেই খেয়েই শেষ। না মানে সবাই একসাথে খেলেই শেষ হয়ে যাবে।
- হ্যা বুঝছি আমরা যে তুই অনেক খাদক।
- আচ্ছা যেটাই হউক। এখন ঠান্ডা নিয়ে আসছি। ঠান্ডা খাও।
- এই ঠান্ডার মধ্যে কে বলবে ঠান্ডা খাওয়ার জন্য? নীলা বলে কথাটি।
- আর কে বলবে। আপনার হবু ___ সেই বলেছে নিয়ে আসতে।
- এর কারণেই তো চিকন হচ্ছে দিন দিন।
- হুহ। ঠান্ডার মধ্যে ঠান্ডা খেতে কি যে মজা সেটা কি তোমরা বুঝো।
- না আমরা কিছুই বুঝি না। সব তুই বুঝিস। এখন ঠান্ডা খা।
.
ঠান্ডা খেতে খেতে লঞ্চ গিয়ে পৌঁছায় বরিশালের লঞ্চঘাটে সাড়ে পাঁচটায় গিয়ে পৌঁছে। লঞ্চ থেকে নামতে নামতে লাগলো আরো আধা ঘন্টা। কেউই ঘুমাইনি। সবাই এক ক্যাবিনে বসেই আড্ডা দিছি। শুধু শুধু দুইটা ক্যাবিন নিয়েছিলাম। লঞ্চ ছিলো তিন তলা। আর বিশাল বড়। হয়তো হাজারের মতো মানুষ ছিলো লঞ্চে। যাইহোক পরে টিকেট দিয়ে বের হলাম।
.
(চলবে)
.
.
লেখাঃ হৃদয় নাদিম
Comments
Post a Comment