বোন



- ভাইয়া, ভাইয়া।
- কিরে কি হয়েছে? কাঁদছিস কেনো রিয়া?
- ভাইয়া আজও ঐ ছেলেটি আমার সাথে বাজে ব্যবহার করেছে।
- কোন ছেলে? আর এটা আমাকে আজ কেনো বলছিস?
- ভাইয়া আমি আর কলেজে যাবো না। আমার আর ভালো লাগে না। কলেজে যাওয়ার সময় এবং কলেজ থেকে আসার সময় রাস্তার মধ্যে আমাকে উদ্দেশ্য করে অনেক বাজে বাজে কথা বলে।
.
কথাটি কেঁদে কেঁদে বলছিলো রিয়া। রিয়া হচ্ছে আমার ছোট বোন। ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ে। হঠাৎ এই কথা শুনে সত্যি আমার খারাপ লাগে। আমি আগে শুনিনি এই কথা। কিন্তু ছেলেটাকে যদি মারদোর করি তাহলে হয়তো পরে রিয়ার উপর আরো ঝামেলা হতে পারে। তাই ভেবে আমি আমার একটা ফ্রেন্ডের পরামর্শ নেই।
.
- হ্যালো রিমন।
- হ্যা নাদিম দোস্ত বল।
- কোথায় তুই?
- আমি তো ক্যাম্পাস থেকে বের হলাম মাত্র। তুই কোথায়? ক্যাম্পাসে আসলি না যে।
- আমি ঘুম থেকে উঠতে পারিনি। তাই ক্যাম্পাসে যেতে পারিনি। আচ্ছা শোন যে কারণে তোকে কল দিয়েছি। রিয়াকে কোন ছেলে নাকি খারাপ কথা বলেছে। আর এটা নাকি অনেকদিন ধরেই চলছে।
- কি বলিস? কোন ছেলে? নাম কি? বাসা কোথায়? ধোলাই দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
- না সেটা ঠিক হবে না। বরং ঐ ছেলেটা পরে রিয়ার আরো বড় ক্ষতি করার চেষ্টা করবে।
- তাহলে কি করবি? তুই কি ভেবেছিস?
.
রিয়াকে ডেকে বললাম যে আগামীকাল তুই কলেজে যাবি এবং তোকে আমরা ফ্লো করবো। পরে দেখবো ঐ ছেলেটি তোকে কি বলে। এর পরেই যা করার করবো। তো ঐ দিন রাতে আর ঘুম হলো না। শুধু একটাই ভাবনা মাথায় আসছে যে কিভাবে কি করা যায়। পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠি। পরে রিমনকে কল দিলাম। রিমন ও আসে আমাদের বাসার দিকে। রিয়া কলেজে যাওয়ার জন্য বের হয় বাসা থেকে। আমরাও পরে রিয়ার পিছু পিছু যেতে লাগলাম। পরে দেখতে পাই ঐ ছেলেটিকে।
.
ছেলেটির এরকম বাজে কথা শুনে আমার মাথায় রক্ত উঠে যায়। কিন্তু নিজেকে সামলে নিলাম। কারণ রেগে গেলেই হেরে যাবো। তাই যা করার মাথা ঠান্ডা করেই করতে হবে। আর রিমন ঐ ছেলেটিকে চিনে। কিন্তু আমি চিনতাম না। রিমনের থেকে পরে ঐ ছেলের ব্যাপারে সব কিছু জানলাম। ঐ দিন বিকেলে দেখলাম ঐ ছেলেটি একটি মেয়ের সাথে যাচ্ছে। কিন্তু রিমনের থেকে জানলাম যে ওটা ওর বড় বোন।
.
- বন্ধু দেখ মালটা। সেই না?
- হ্যা বন্ধু আসলেই সেই।
.
কথা গুলো একটু জোড়ে জোড়েই বলি যাতে করে তারা শুনতে পারে। আরো কিছু বাজে বাজে কথা বললাম। একটু পরে আমাদের সামনে আসে রেগে। যেহেতু কথা গুলো আমি বলেছিলাম তাই আমার কাছেই আসে। বুঝতে পারলাম যে কাজ হয়েছে তাহলে?
.
- কি ভাইয়া? খুব গায়ে লাগলো কথা গুলো তাই না? তোমার বোন তোমার কাছে যতটা প্রিয়। ঠিক তেমন সব ভাইদের কাছেও তার বোনটি প্রিয়। তুমি প্রতিদিন রিয়া নামের একটি মেয়েকে খুব বিরক্ত করো। বাজে বাজে কথা বলো। একবার ভেবেছিলে কি? যদি ঐ রকম বাজে কথা যদি তোমার বোনের সাথে কেউ করতো। দেখো রিয়া হচ্ছে আমার ছোট বোন। তোমার বোনকে আমি এইসব বাজে কথা বলতাম না শুধু তোমার বোনকে কেনো কোনো মেয়েকেই বলতাম না। শুধু তোমাকে তোমার ভুলটা ধরিয়ে দেবার জন্য বলতে বাধ্য হয়েছি।
.
কথা গুলো শুনে ঐ ছেলেটি মাথা নিচু করে ফেলে। তখন বুঝতে পারলাম যে হয়তো তার মনে যে খারাপ জিনিষটা ভর করেছিলো সেটা দূরে চলে যাচ্ছে। আসলে আমরা না বুঝেই মজা করে অনেক ভুল করে ফেলি। আর ওটা চিন্তা করিনা যে আজ আমি অন্যকে নিয়ে মজা করছি কাল তো অন্য কেউ আমাকে নিয়ে মজা করবে। আজ আমি অন্যের বোনকে মাল বলছি কাল তো কেউ আমার বোনকেও মাল বলবে। তখন সেটা কিভাবে নিবো?
.
মেয়েদের সম্মান করতে না পারলেও অন্তত খারাপ মন্তব্য করা ঠিক না। আজ আপনি কাউকে সম্মান করবেন কাল অন্য কেউ আপনাকে সম্মান করবে। আর এভাবেই চলে আসছে। তাই অন্ততপক্ষে বোনদেরকে বিরক্ত করা থেকে বিরত থাকা আমাদের অবশ্যই উচিত। আপনার বোনকে আপনি যেমন ভালবাসেন তেমনি ভাবে যদি অন্যের বোনকেও ভালোবাসতেন তাহলে খবরের কাগজে ধর্ষণ নামক জগন্য নামটা দেখতে হতো না। শুনতে হতো না যৌন হয়রানি নামক নোংড়া শব্দটা।
.
কোন মেয়ে মাল নয়। তাই কোনো মেয়েকে মাল বলার আগে একটু ভেবে নিবেন আপনার মা, বোনের কথাটি। যদি অন্যের মা, বোন মাল হয়। তাহলে আপনার মা, বোন ও মাল। নারী জাতিদের সম্মান করা অবশ্যই উচিত আমাদের। আসুন সবাই পরিবর্তন হই। আমরা পরিবর্তন হলেই পাল্টে যাবে পুরো বাংলাদেশ।
.
.
.
লেখাঃ হৃদয় নাদিম

Comments