- দোস্ত উঠ। ক্যাম্পাসে যাবি না?
- হুমম। নীলা আর একটু ঘুমাই।
- এই শালা আমি নীলা না। উঠ তাড়া-তাড়ি।
- হ্যা। কি হইছে ডাকছিস কেনো?
- ক্যাম্পাসে যাবি না?
- হুম যাবো। উঠ তাহলে এমনেই দেড়ি হয়ে গেছে।
- আচ্ছা ১০ মিনিট অপেক্ষা কর। ফ্রেশ হয়ে আসছি।
.
পরে তাড়া-তাড়ি করে উঠে ফ্রেশ হয়ে ফেললাম। সকাল ৯:৩০ টা বেজে গেছে। ক্লাস ৮ টা থেকে। দেড় ঘন্টা দেড়ি হয়ে গেছে। ফ্রেশ হয়ে বের হই ক্যাম্পাসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। রুবেলকে বলে যাই দরজাটা লাগিয়ে দেওয়ার জন্য। শিড়ি দিয়ে নামছিলাম আর ভাবছিলাম। যদি নীলার সাথে দেখা হয়। কিন্তু না দেখা হলো না। রিক্সা নিয়ে ক্যাম্পাসে চলে গেলাম।
.
ক্যাম্পাসে গিয়ে শুনি দুই দিন পরই ইয়ার ফাইনাল। মাথায় তো পুরো বাশ পরলো কথা শুনে। প্রিপারেশন একদমই বাজে। কি আর করার ক্লাস মেটের কাছে থেকে কিছু নোট কালেক্ট করলাম। ক্লাস শেষ করে বের হয়ে আসলাম। ভাল লাগছে না কিছুই। দোকানে গিয়ে সিগারেট নিলাম। সিগারেট ধরিয়ে যখন মুখের নিয়ে একটা টান দিলাম তখনই নীলার কথা মনে পড়লো। নীলা তো বারণ করে ছিলো এইগুলো না করতে। আর কি করার রিয়াদকে দিয়ে দিলাম।
.
- আমি একসাথে দুইটা টানমু শালা?
- টান। তুই তো একসাথে দুইটা টানতেই পারিস।
- হ। দে তাইলে। বিল তুই দিবি দুইটার।
- আচ্ছা তা না হয় দিলাম।
- দোস্ত। নীলাকে খুব মিস করছি?
- এই চায়ের দোকানে বসেও ভাবিকে মিস করছিস? কেনো ভাবিকে নিয়েই কি সিগারেট খাইতি?
- ধ্যাত শালা। বাদ দে। তুই টান আমি একটু বাহিরে গেলাম।
- বিলটা দিয়ে যা।
- এই নে মানিব্যাগ। বিলে দিয়ে দিস তুই।
.
দোকান থেকে বাহিরে এলাম। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করলাম। নীলাকে কল দিলাম। প্রথমবার রিং হয়েই থেমে গেলো। পরে আবার দিলাম। তখনও কল ধরেনি। তাই একটা মেসেজ পাঠালাম। পরে রিয়াদ দোকান থেকে বের হয়ে আসে। রিয়াদকে নিয়ে বাজারে চলে গেলাম। আগে হোটেলে গিয়ে নাস্তা করলাম। পরে বাসার জন্য নাস্তা নিয়ে নিলাম। কিছু তরকারি কিনলাম এবং মাছ নিলাম।
.
- দোস্ত মাথাটা প্রচুর ব্যথা করতেছে রে।
- কেনো?
- ঘুম হয়নি ভাল মতো। এর মাঝে দুই সিগারেট একসাথে টানছি। এর কারণে হয়তো।
- আচ্ছা চল তাহলে চা খাই। মাথা ব্যথা কমে যাবে।
- হুমম চল।
.
চায়ের কাপটা হাতে নিয়েই ঐ মামার কথা মনে পড়ে গেলো। ঐ মামার কাছ থেকে বিদায়ও নিয়ে আসতে পারলাম না। চায়ের কাপে চুমুক দিতেই শুনলাম মোবাইলে টোন বাজছে। পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখি নীলার কল। কল কেটে পরে কল ব্যাক করলাম।
.
- হ্যালো। ঘুম ভেঙেছে?
- হুমম।
- বিছানা থেকে তো এখনো উঠোনি। যাও উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও।
- হুমম উঠছি। আপনি কোথায়?
- আমি চা খাচ্ছি চায়ের দোকানে।
- এই শোনেন। ঐ গুলো কিন্তু খাবেন না।
- হুমম ঠিক আছে। তুমি উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নাও।
- আচ্ছা আপনি বাসার গেইটের সামনে এসে আমাকে একটা কল দিবেন।
- কেনো?
- আপনাকে দেখবো তাই।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
.
আমার বলার আগে নীলাই কথাটি বলে ফেলে। ও না বললে আমি নিজেই তাকে বলতাম এই কথাটি। যাইহোক চা খেয়ে বাসায় আসার জন্য রিক্সায় উঠলাম। আসার পথে ঐ দোকানের ভাইয়ের সাথে দেখা হয়। রিক্সা থামিয়ে কথা বললাম তার সাথে।
.
- কি অবস্থা ভাই? কোথায় ছিলেন এতদিন?
- বরিশাল গেছিলাম ভাই।
- ওহহহ আচ্ছা। মিয়া একবার বলেও তো যেতে পারতেন।
- ভুলে গেছিলাম ভাই।
- দিবো নাকি এক প্যাকেট?
- না ভাই। লাগলে পরে এসে নিয়ে যাবো।
- কি বলেন ভাই। আপনার মুখে এই কথা প্রথম শুনলাম। কখনো তো না করেননি আজ হঠাৎ না করলেন।
- ভাই ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টায় আছি এইগুলো। তাই আর কি।
- ওহহহ আচ্ছা। তাহলে আর কি করার। কিছু লাগলে আইসেন ভাই।
- হ্যা অবশ্যই ভাই। তাহলে দুই হালি ডিম দিয়ে দিন।
- আচ্ছা দাঁড়ান দিচ্ছি।
.
ডিম নিয়ে আবারো রিক্সায় উঠে পড়লাম। বাসার গেইটের সামনে চলে আসি। রিক্সা থেকে নেমে রিক্সাওয়ালাকে বিদায় করে দিলাম। শিড়ি দিয়ে উঠার সময় নীলাকে কল দিলাম। ওদের রুমের সামনে গিয়ে দেখি ও দাঁড়িয়ে আছে। ইচ্ছে করছিলো সাথে করে নিয়ে যেতে। কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব নয়। কি আর করার দেখে চলে আসি। কথাও বলতে পারিনি। আমাদের রুমের সামনে গিয়ে কলিং বেল টিপলাম। রুবেল এসে দরজা খুলে দেয়।
.
- কিরে আসছিস তোরা?
- হুমম আসছি তো।
.
ভেতরে গিয়ে দেখি আন্টি বসে আছেন। হাত থেকে তরকারির ব্যাগ গুলো টেবিলের উপরে রাখলাম। এবং রবিন কে বললাম রান্না ঘরে নিয়ে যেতে।
.
- কেমন আছেন আন্টি?
- ভাল আছি। তোমরা কেমন আছো বাবা?
- আপনাদের দোয়ায় ভাল আছি।
- ফ্রেন্ডের বিয়েতে কেমন মজা করলা?
- হ্যা আন্টি খুব ভাল। আমাদের তো আসতেই ইচ্ছে করছিলো না।
- আচ্ছা তাহলে আমি যাই বাবা।
- আন্টি এই মাসের বাসা বাড়াটা দিতে একটু দেড়ি হবে। প্লিজ রাগ কইরেন না।
- আরে বোকা রাখো তোমার বাসা বাড়া। তোমাদের আর বাসা বাড়া দিতে হবেনা। এখন থেকে মনে করবে এটা তোমাদেরই বাসা।
- কি বলেন আন্টি? স্বপ্ন দেখছি না তো?
- তোমরা হচ্ছো আমার ছেলের মতো। ছেলেদের কাছ থেকে কিসের বাসা বাড়া। আর কিছু দরকার পরলে সরাসরি আমাকে জানাবে।
- জ্বি আন্টি অবশ্যই।
.
পরে আন্টি চলে গেলেন। যে মহিলা মাসের পাঁচ তারিখ না হতেই বাসা বাড়ার জন্য পাগল হয়ে যেতো। তার মুখে আজ এই কথা শুনে সত্যিই অবাক হওয়ার মতোই ছিলো। পনেরো হাজার টাকা বাসা বাড়া নিবেন না।
কিভাবে সম্ভব। যাইহোক এতে আমাদেরই ভালো হবে।
.
- সুমা?
- জ্বি ভাইয়া।
- নাস্তা গুলো খেয়ে নিও তোমরা। আর মাছ আর তরকারি এনেছি। যেভাবে রান্না করার কইরো।
- ঠিক আছে ভাইয়া।
.
পরে রুমে চলে গেলাম। অনেক গুলো শার্ট ময়লা হয়ে গেছে। ঐ গুলো ধুয়ে গোসল করে ফেললাম। বারান্দায় রৌদ দেওয়ার মত ছিলো না। তাই ছাদে গিয়ে রৌদে দিয়ে এলাম। রুমে গিয়ে দেখি ওরা রুমের মধ্যে সিগারেট খাচ্ছিলো। আমাকে খাওয়ার জন্য বলে কিন্তু আমি মানা করি। আর ওদেরকে বলি যে বারান্দায় গিয়ে সিগারেট খেতে। কারণ দরজা খোলা ছিলো যেকোনো সময় সুমা দেখে ফেলতে পারে।
.
আমি বিছানায় বসে নোট গুলো দেখছিলাম। দুই দিনে কিভাবে সম্ভব এত গুলো সাব্জেক্ট কমপ্লিট করা। এটাই ছিলো আমাদের লাস্ট ইয়ার। আর আমার ইচ্ছেও ছিলো না অনার্স কমপ্লিট করে আর পড়া লেখা করার। কিন্তু বাবা-মায়ের প্যারায় পড়তে হয়েছে। আর সেটাও এখন শেষের দিকে। ভাল মতো পরিক্ষা গুলো দিতে পারলেই হলো।
.
- রুবেল?
- হ্যা বন্ধু।
- এইদিকে আসিছ তো একটু।
- হুম দাঁড়া শেষ করে আসছি।
.
- হ্যা বন্ধু বল।
- তুই মার্কেটে যাবি কবে থেকে?
- বন্ধু কাল থেকেই যাবো। কেনো?
- রবিনের ব্যাপারটা একটু দেখিস তো।
- রবিন চাইলে কাল থেকেই যেতে পারে। সমস্যা নেই।
- আচ্ছা আমি রবিনকে বলে দিবো নে। আর নাস্তাটা করে তারপর সিগারেট খা। ঠান্ডা হয়ে যাবে কিন্তু।
- আচ্ছা যাচ্ছি খাইতে।
- ঠিক আছে যা। আর রবিনকে বলিস তো আসতে।
- আচ্ছা।
.
- রবিন, রবিন?
- হ্যা ভাইয়া বলো।
- কি করো তুমি?
- এইতো ভাইয়া কিছুনা। রুমে বসে ছিলাম। কেনো ভাইয়া?
- তোমার ভাইয়া ডাকে তোমাকে।
- ওহ আচ্ছা ভাইয়া যাচ্ছি।
- হুমম যাও। আর তোমরা নাস্তা খেয়েছো?
- হ্যা ভাইয়া খেয়েছি। আপনি করে নিন। খাবার ঢেকে রাখা আছে।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
.
- ভাইয়া ডেকেছিলে?
- হুমম। বস এখানে। শোন কাল থেকে রুবেলের সাথে মার্কেটে যাবি।
- আচ্ছা ঠিক আছে ভাইয়া।
- কিছুদিন কর। আসতে আসতে ভাল লাগবে।
- আচ্ছা ভাইয়া ঠিক আছে।
- হুমম এর কারণেই ডেকেছি।
- আচ্ছা। তাহলে আমি যাই ভাইয়া।
- হুমম ঠিক আছে যা।
.
আমি একটু পড়তেছিলাম। এত পড়া কাভার দিবো কিভাবে সেটাই তো মাথায় আসছিলো না। তো কি আর করার যেভাবেই হউক শেষ তো করতে হবেই। তাই একটু বেশি সময় দিচ্ছিলাম পড়ায়। কিন্তু মন বসেছিলো না বার বার শুধু নীলাকে পাওয়ার ইচ্ছে জেগে যাচ্ছিলো। আমি যে দুইটা টিউশন করাতাম। সেটাও আপাতত অফ ছিলো। কারণ ইয়ার ফাইনালের প্যারার মাঝে টিউশন এর প্যারা নিতে পারবো না।
.
পড়তেছিলাম তখন দেখলাম টয়া কল দিয়েছে। ধ্যাত ভুলেই গিয়েছিলাম। টয়া বলেছিলো ঢাকায় পৌঁছে যেনো তাকে জানাই। কিন্তু ভুলে গেছি সেটা। এখন তো কত কথা শুনিয়ে দিবে। পরে কলটা পিক করলাম।
.
- কিরে কুত্তা। বাসায়কি পৌঁছাসনাই?
- দোস্ত। ভুলেই গেছি রে। বাসায় এসে ঘুমিয়ে পড়ছিলাম। তাই আর তো জানাতে পারিনি।
- হুমম বুঝছি বুঝছি। সাথে বউ থাকলে কি আর ফ্রেন্ডদের কথা মনে পড়বে?
- ধ্যাত কি বলিস। তোরা হচ্ছিস আমার কলিজা।
- আর নীলা কি?
- নীলা তো আমার সব কিছু।
- হাহাহাহা।
- তো কি করছিস?
- তোর দুলা ভাইয়ের পাশে বসে আছি।
- ওহহহ। ভাল ভাল। তো দোস্ত ঢাকায় আসবি কবে?
- ঠিক জানিনারে। তবে ঢাকায় যাবো। কথা দিলাম। তোদের সাথে দেখা না করলে আমার ভাল লাগবে না। খুব মিস করছিরে তোদের।
- আমরাও মিস করছি। আর এখন আমাদের মিস করা একটু কমিয়ে দে। এখন একটু তোর জামাইকে মিস করিস।
- যাহ কুত্তা। রাখলাম।
- ঠিক আছে। আল্লাহ্ হাফেজ।
.
টয়ার সাথে কথা বলা শেষ করে আবার পড়ায় মনোযোগ দিলাম। আমার দেখা-দেখি রিয়াদ ও পড়তে বসে। দুই বন্ধু মিলে পড়ছিলাম। একটু পরে গিয়ে সবাই একসাথে দুপুরের খাবার খেলাম। খাবার খেয়ে আবারো নোট গুলো হাতে নিলাম।
.
(চলবে)
.
.
লেখাঃ হৃদয় নাদিম
Comments
Post a Comment