- হ্যালো রিফাত।
- হ্যা কিরে কেমন আছিস?
- এইতো ভালো। তোর কি খবর?
- ভাল না বেশি। আচ্ছা যে কারণে তোকে কল দিয়েছি। আমার একটা সাব্জেক্ট নিয়ে সমস্যায় পড়েছি। একটু হেল্প করবি ভাই?
- কি বলিস। অবশ্যই। বিকেলে আমার বাসায় আসিস। আমি বিকেলে বাসায়ই আছি।
- আচ্ছা বন্ধু। তাহলে রাখি রে।
- হুমম তাহলে বিকেলে বাসায় দেখা হচ্ছে।
.
রিফাত আমার ক্লাস মেট ছিলো। মোটামুটি ভালই ফ্রেন্ডশিপ রিফাতের সাথে। রিফাতের বাসা মিরপুর-১০ এ। ও ঐ খানের স্থানীয় ছিলো। আর প্রথম যখন মিরপুর আসি তখনই ওর সাথে পরিচয়। কিন্তু পরিচয় হয় একটা ঝামেলা দিয়ে। একটা ভুল বোঝা-বুঝির মাধ্যমেই রিফাতের সাথে আমার ফ্রেন্ডশিপ জন্মায়। কিন্তু এখন সব ঠিক ঠাক হয়ে গেছে।
.
আমি স্টুডেন্ট হিসেবে ততোটা ভাল ছিলাম না। তাই একটু বেশি সময় দিতে হতো পড়া-লেখায়। কিন্তু রিয়াদ খুব ভাল স্টুডেন্ট ছিলো। ও পরিক্ষার আগে একটু দেখলেই কাভার করে ফেলতে পারে। আর মাথার উপর এত চাপ নিয়ে পড়া লেখা যে হচ্ছে সেটাই অনেক বেশি। কিন্তু তখন ঘটলো আরেকটি ঘটনা। বাবা কলে দেয়।
.
- আসসালামু ওয়ালাইকুম আব্বা। কেমন আছেন?
- এইতো বাবা। ভাল আছি। তুই কেমন আছিস?
- জ্বি আমিও ভাল আছি।
- শোন বাবা। আমি তো মিরপুর এসেছি একটা কাজে। তুই কোথায় যেনো থাকিস?
.
পরে বাসার ঠিকানাটা বললাম। এবং আব্বা আমাদের বাসায় আসছেন। কোনো সমস্যা হতো না যদি না রবিন আর রবিনের বউ না থাকতো। এখন কি করা যায়। আব্বা আধা ঘন্টার মধ্যেই বাসায় চলে আসবেন। কথাটি শেয়ার করলাম সবার সাথে। কিন্তু কোনো বুদ্ধি পাচ্ছিলাম না। পরে মনে হলো বাড়িওয়ালা আন্টির কথা। বাড়িওয়ালার বাসায় না হয় সুমাকে দুই একদিন রাখা যাবে। কিন্তু রবিন কোথায় থাকবে? পরে আন্টির বাসায় যাই।
.
- আসসালামু ওয়ালাইকুম আন্টি।
- ওয়ালাইকুম আসসালাম। কি ব্যাপার হৃদয়?
- আন্টি একটা হেল্প দরকার।
- হুমম বলো।
- আব্বা আসছেন আমাদের বাসায়।
- হ্যা আসছেন সেটা ভালো কথা।
- না আন্টি ঠিক সেটা নয়। সমস্যাটা অন্য জায়গায়।
- আচ্ছা ভেতরে আসো। পরে বলো কি হয়েছে।
.
পরে বাসায় ভেতরে গিয়ে বসলাম। এবং সোফায় বসে আন্টির সাথে কথা বললাম। রবিন আর সুমার কথাটাও শেয়ার করলাম। আন্টি জানতেন না যে এই ব্যাপারটার কথা। যে রবিন আর সুমা পালিয়ে বিয়ে করেছে। পরে জানালাম বিষয়টা। কিন্তু আন্টির রিয়েকশন দেখে আমি অবাক। সে খুব সহজেই মেনে নিলেন। এবং এই বিষয়টাও সাপোর্ট করলেন। যাক তাহলে সুমা কয়েকদিনের জন্য তাদের বাসাতেই থাকবে। আন্টি নীলাকে বলে আমাকে চা দেওয়ার জন্য। পরে নীলার হাতের চা খেলাম।
.
- আচ্ছা আন্টি তাহলে আমি উঠি।
- আচ্ছা বাবা যাও। তুমি সুমাকে আমাদের বাসায় পাঠিয়ে দিও। নীলার সাথে থাকবে সুমা। সমস্যা হবে না কোনো।
- জ্বি আন্টি। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
.
পরে আমাদের রুমে গিয়ে সুমাকে আন্টিদের রুমে পাঠিয়ে দিলাম। আর সুমার কাপর - চোপর গুলো খাটের নিচে লুকিয়ে রাখলাম। সবই তো হলো এখন রবিন কোথায় থাকবে? তাই ভাবতেছিলাম। তখন মনে হলো রিফাতের কথা। রিফাত হয়তো একটা সমাধান বের করে দিতে পারবে।
.
- রবিন শোন তুই এখন বাহিরে যা। পরে আমি তোকে ফোন করে জানিয়ে দেবো।
- আচ্ছা ভাইয়া ঠিক আছে।
.
পরে রবিন বাহিরে চলে গেলো। এবং বাসাটা গুঁছিয়ে ফেললাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই আব্বা আমাদের বাসার গেইটের সামনে চলে আসেন। পরে আমি আব্বাকে নিচে থেকে আমাদের রুমে নিয়ে আসি। যাইহোক কোনো ঝামেলা না হলেই হবে।
.
- আসসালামু ওয়ালাইকুম আংকেল। ভালো আছেন আংকেল?
- হ্যা বাবা আমি ভালো আছি। তোমরা কেমন আছো?
- জ্বি আংকেল আমরা ভাল আছি।
.
রিয়াদ এবং রুবেল আব্বার সাথে কথা বলছিলো। আমি বাহিরে থেকে চা-নাস্তা নিয়ে আসি।
.
- আব্বা হঠাৎ করে আসলে যে?
- আর বলিসনা বাবা। একটা কাজে এসেছিলাম। কিন্তু কাজটা শেষ হয়নি আগামীকাল শেষ হবে। তাই ভাবলাম বাসায় না গিয়ে তোদের বাসাতেই আসি।
- হুমম কোনো সমস্যা নেই আব্বা।
- তোর পড়া-লেখা কেমন চলছে?
- হ্যা আব্বা। আল্লাহ্র রহমতে ভালো ভাবেই চলছে।
- হুমম ভাল হলেই ভাল।
- হ্যা আব্বা। পরশু থেকে আবার ইয়ার ফাইনাল পরিক্ষা শুরু হচ্ছে।
- কি বলিস? গতকালই না বরিশাল থেকে ঢাকায় আসলি। দুই দিন পর পরিক্ষা। আগে জানতিস না?
- না আব্বা। সমস্যা নেই কোনো। পরিক্ষা ভাল হবে। দোয়া কইরো।
- আচ্ছা যাক তাহলে ঠিক আছে।
.
- বাবা তোমার নাম কি?
- আংকেল আমার নাম রুবেল।
- তুমিও কি ওদের সাথেই পড়ো?
- জ্বি না আংকেল। আমি একটা মার্কেটে জব করি।
- ওহ তুমি সে। হৃদয় তোমার কথা বলেছিলো। আচ্ছা সিলেটে যেনো কে থাকে?
- জ্বি আংকেল আমি। আমি আর হৃদয় একই ভার্সিটিতে পড়ি।
- ওহহহ আচ্ছা তাহলে ভালো। তোমাদের বাসায় রান্না কে করে।
- সুমা করে। <মুখ ফসকে সুমার কথা বের হয়ে যায় রুবেলের>
- সুমা কে?
- আব্বা সুমা আমাদের কাজের বুয়ার নাম।
- ওহ আচ্ছা।
- হ্যা আব্বা তুমি বিশ্রাম করো গিয়ে।
.
পরে রবিনদের রুমে আব্বাকে থাকতে দিলাম। আব্বা ওদের রুমে গিয়ে বিশ্রাম করছে। আর পরে আমরা কথা বলছিলাম। একদিন থাকবেন আব্বা। আর ওদেরকেও বললাম যে এই একটা দিন যেনো কোনো ফালতু কাজ না করে। একটু পরে রিফাতকে কল দিলাম।
.
- কিরে এসেছিস বাসায়?
- দোস্ত একটা সমস্যায় পড়ে গেছিরে।
- কি হয়েছে?
.
পরে রিফাতের সাথে শেয়ার করলাম। এবং বললাম যে রবিনকে ওদের বাসায় একদিন রাখার জন্য। রিফাত রাজি হয়ে যায়। এবং পরে রবিনকে রিফাতদের বাসার ঠিকানা মেসেজ করে পাঠিয়ে দিলাম। আল্লাহ্ রহমতে একটা সমস্যা শেষ হলো। সন্ধ্যা হয়ে যায়। মাগরিবের নামাজের জন্য আব্বা ডাকলো। পরে সবাই মিলে একসাথে মাগরিবের নামাজ পড়তে যাই। নামাজ পড়ে আসার সময় আংকেলের সাথে রাস্তায় দেখা হয়ে যায়। পরে আংকেল আর আব্বা কথা বলেন।
.
আংকেল তাদের রুমে নিয়ে যায়। আমরাও গেলাম সাথে। আব্বা সুমাকে চিনতো না। আর সুমা ভয়ে বের ও হয়নি রুম থেকে। কিন্তু ঘটনা ঘটে আরেকটা। আব্বা তাদের বাসায় যাওয়ার পর হঠাৎ করেই নীলার কথা জানতে চায়। আমি তো অবাক হয়ে গেলাম। আব্বা নীলার কথা জানতে চাচ্ছে হঠাৎ। আমার তো আপুকে নিয়ে সন্দেহ হলো। আপু হয়তো বলেছে নীলার কথা। যাক নীলার সাথে কথা বললেন। রিয়াদ আর রুবেল আমাকে বলে।
.
- কিরে কাহিনী কি?
- জানিনা রে বন্ধু। চুপ থাক এখন। যা হচ্ছে চুপ-চাপ দেখে যা শুধু।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
.
পরে চা-নাস্তা করে আমাদের রুমে চলে আসি। একটু পরে নীলা আমাকে কল দেয়। আমি পাশের রুমের বারান্দায় গিয়ে নীলার সাথে কথা বলি।
.
- এই কি হইলো এটা? আপনার বাবা আমাকে চিনে কিভাবে?
- সেটা তো আমারও চিন্তা হচ্ছে।
- আমার কিন্তু প্রথমে ভয় লাগছিলো। কিন্তু পরে কথা বলে মন ভাল হয়ে গেছে।
- আচ্ছা তোমার আব্বু-আম্মু কি কিছু বলেছে এই বিষয়ে?
- না কিছু তো বলেনি।
- আচ্ছা তাহলে ঠিক আছে।
- আপনার বাবা আমাকে প্রথমবার দেখেই এক হাজার টাকা দিলেন।
- হ্যা তোমাকে মনে হয় পছন্দ হয়েছে। আচ্ছা এখন রাখো তো। আপুকে কল দিবো।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
.
আপুকে কল দিলাম। মোবাইলে টাকা ছিলো না তাই আপুকে বললাম কল ব্যাক করতে। আপু কল ব্যাক করলো।
.
- কিরে কি হয়েছে?
- তুই আব্বাকে নীলার কথা কেনো বলেছিস?
- কেনো? কি হয়েছে?
- অনেক কিছু ঘটে গেছে।
- আচ্ছা বল কি হয়েছে।
.
পরে বললাম আপুকে। এবং এটাও বললাম যে প্রথম দেখেই নীলাকে টাকা দিয়েছে। এবং এই বিষয়টা নীলার আব্বু-আম্মু কি ভাববে সেটাও আপুকে বললাম। এবং আপু পরে আমাকে আসল কাহিনী খুলে বলে।
বরিশালে টয়াদের বাসায় যখন গিয়েছিলাম। তখন আমরা সবাই মিলে একটা গ্রুপ ছবি তুলেছিলাম। আর সেটা আপুকে দিতে গিয়ে ভুলে 'ইমুর' স্টোরিতে দিয়ে ফেলছিলাম। আর সেটা দেখেই আব্বা আপুকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন নীলার কথা। আপু পরে সব কিছু খুলে বলে। আপুর সাথে অনেক ফ্রি ছিলেন আব্বা। তাহলে বুঝলাম আসল কাহিনী তাহলে এটাই। আর ঐ ছবিটাতে রবিন আর সুমা ছিলো না। ওরা থাকলে তো আরো বড় সমস্যায় পড়তে হতো। আল্লাহ্ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।
.
যাইহোক আপুর কাছ থেকে শুনে ভয় লাগছিলো আবার একটু ফ্রেশ ও লাগছিলো। কারণ আমার একটা সমস্যা দূর হলো তাহলে। দেখি সামনে কি হয়। তবে আমিও খুব খুশি হয়েছিলাম আপুর কথা শুনে। আর তখন মনে হচ্ছিলো আব্বা মনে হয় এই কারণেই আমাদের বাসায় হঠাৎ এসেছেন। চার বছর হবে আমি এই বাসায় আছি। এই চার বছরে আব্বা কোনোদিন আসলো না। আজ ছেলের বউকে দেখার জন্য চলে আসেন। আর আংকেল আন্টিও খুব ভালো ব্যবহার করেছিলেন।
.
ঐ দিন আর রিফাতের সাথে ঐ বিষয়টা নিয়ে সমাধান করতে পারলাম না। তাই পড়তে বসলাম। অনেক পড়া বাকি আছে। একটু একটু করে শেষ করছিলাম পড়া গুলো। ঐ দিন আমি আর রিয়াদ আব্বাকে শুনিয়ে শুনিয়ে জোড়ে জোড়ে পড়ছিলাম। আর রুবেল হাসছিলো। বিড়ি খাওয়ার জন্য রুবেল ছটফট করছিলো। কিন্তু এই একদিন কোনো বিড়ি খাওয়া চলবে না বাসার মধ্যে।
.
- বন্ধু আমি বারান্দায় গিয়ে খেয়ে আসি?
- মাথা খারাপ? আব্বা যদি গন্ধ পায় তাহলে কি হবে বুঝতে পারছিস?
- আমি কিছু জানিনা। আমার খেতেই হবে।
- আচ্ছা এক কাজ কর ছাদে গিয়ে খেয়ে আয়।
- বন্ধু একা ভয় করে।
- তাইলে বইসা বইসা মুড়ি খা।
- চল রুবেল আমিও যাবো তোর সাথে।
.
পরে রুবেল আর রিয়াদ বিড়ির প্যাকেট নিয়ে ছাদে চলে গেলো। আমি অন্য রুমে গিয়ে আব্বার সাথে কথা বলছিলাম। এবং বললাম যে মা কে নিয়ে আসতে। মা তো একা একা বাসায় থাকবে। আব্বা বললো আপুরা বাসায় আসছে। তাহলে তো আর চিন্তা নেই। মনে মনে ভাবছিলাম। আপুরা বাসায় আসছে আর তুমি আমার হবু বউকে দেখার চলে আসছো।
.
ব্যাপার গুলো খুব সহজেই হয়ে যাচ্ছে তাই না? হ্যা আসলেই এটা হচ্ছে ভাগ্য। আল্লাহ্ কার ভাগ্যে কি লিখে রেখেছেন তা কেউই জানে না। আর ভাগ্যে যা লেখা আছে তাই তো হবে।
.
- হৃদয়।
- হ্যা আব্বা বলো।
- রবিনের সাথে কি তোর আর দেখা হয়নি?
- না তো। কেনো? আবার কোনো সমস্যা হয়েছে?
- তোর খালা তো পাগলের মতো হয়ে যাচ্ছেন। আর কিরকম হারামী ছেলেটা বাসায় একটা কল ও দেয়না।
- ওহহহ। আচ্ছা আমি দেখবো নে রবিনের কোনো খোজ নিতে পারি কিনা। এখন চলো সবাই একসাথে বসে রাতের খাবারটা খেয়ে নেই।
- হুমম ঠিক আছে চল।
.
সবাই একসাথে বসে খাবার খাচ্ছিলাম। আব্বাও রান্নার প্রশংসা করলেন। এবং বললেন তোদের বুয়া তো ভালই রান্না করে রে। আমরা আব্বার কথা শুনে মুচকি হাসি। ছোট ভাইয়ের বউটাকে শেষে কাজের বুয়া বানিয়ে ফেলতে হলো। কিছু করার নাই। এটা না বললে আমাদেরই সমস্যায় পড়তে হতো। খাওয়া শেষ করে আব্বা রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। আমিও একটু নোট গুলো শেষ করে ঘুমিয়ে যাই।
.
(চলবে)
.
.
লেখাঃ হৃদয় নাদিম
Comments
Post a Comment