সকালে ঘুম থেকে উঠি তাড়া-তাড়ি। কারণ আজ নিজেকেই রান্না করতে হবে। কেননা সুমা তো বাড়িওয়ালার বাসায়। আর আব্বার সামনে তো সুমাকে বুয়া পরিচয় দিয়েছি। কিন্তু সুমাকেও তো সকালে আসতে বলতে পারিনা। তাই নিজেই নাস্তা বানালাম। ডিম বাজলাম আর ভাত রাঁধলাম। আব্বা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আসেন। আব্বা আবার সকাল সকাল নাস্তা করতেন। তাই আব্বাকে নাস্তা দিলাম।
.
- কিরে বাবা। নাস্তা কি তুই বানিয়েছিস?
- হ্যা।
- কেনো বুয়া আসেনাই?
- বুয়া নাকি অসুস্থ। তাই আসবেন না।
- আহারে। আমার ছেলেটা তাই নিজে নিজেই রান্না করলো।
- হ্যা আব্বা। আমি তো একটু আধটু রান্না করতে পারিই। কথা না বলে নাস্তা খাও তুমি।
- তুই খাবি না?
- আব্বা আমি এত সকালে নাস্তা করেছি কখনো?
- আচ্ছা ঠিক আছে আমি নাস্তা করছি। তুই গিয়ে ঘুমিয়ে পড় তাহলে।
- ঠিক আছে তাহলে।
.
আমি পরে রুমে চলে গেলাম। ঘুম তো আর আসবে না। সকাল ৭ টা বাজে তখন। রিয়াদ আর রুবেল তো নাক টেনে ঘুমাচ্ছিলো। পরে আমি ল্যাপটপটা নিয়ে একটু ঘাটা ঘাটি করা শুরু করি। ক্যামাপ্স তো বন্ধ দিয়ে দিছে পরিক্ষার জন্য। আগামিকাল থেকে পরিক্ষা আল্লাহ্ জানেন পরিক্ষা কেমন হবে। আমারও ভাল লাগতেছে না। তাই নীলাকে কল দিলাম। নীলাও ঘুমাচ্ছে হয়তো। দেখি কল দিয়ে। পরে কল দিলাম তাকে।
.
- হ্যালো। এত সকালে কল দিলেন।
- হুমম ভাল লাগছিলো না। তাই কল দিলাম।
- ওহহহ। কি করছেন?
- শুয়ে আছি। তুমি ঘুমাচ্ছিলে? বিরক্ত করলাম। আচ্ছা ঘুমিয়ে পড়ো তাহলে।
- উঁহুম সমস্যা নেই। কথা বলবো।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
.
তো নীলার সাথে কথা বলছিলাম। নীলা ঘুম ঘুম কন্ঠে আমার সাথে কথা বলছিলো। ভালোই লাগছিলো নীলার সাথে কথা বলে। তার কন্ঠ শুনলেই পাগলের মতো হয়ে যেতাম আমি। আর কি সুন্দর করে কথা বলতো সে। কিন্তু পরে কথা বলতে বলতেই নীলা ঘুমিয়ে পড়ে। আমিও পরে তার নিশ্বাসের শব্দ শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যাই।
.
৯ টায় আব্বা ঘুম থেকে উঠিয়ে দিলেন। উঠে নাস্তা করলাম। রুবেল আর রিয়াদকেও উঠিয়ে দিলাম। রুবেল আজ থেকে আবার মার্কেটে যাবে। তাই রুবেলকে বলে দিলাম রবিনকে কল দিয়ে সাথে করে নিয়ে যেতে। আব্বার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রুবেল চলে যায়। পরে আমি আর রিয়াদ নাস্তা শেষ করে পড়তে বসলাম। আব্বাকে শুনিয়ে শুনিয়ে পড়লাম। আব্বা ঐ রুম থেকে আমাদের রুমে আসেন। এবং যেটা বললেন সেটা শুনবার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না আমি।
.
- বসো এখানে।
- হুমম। কি করছিস তোরা?
- এইতো আব্বা পড়তেছিলাম।
- হুমম পড়। আচ্ছা আমার কাছে কি কোনো কিছু লুকাচ্ছিস তুই?
- কি বলো। কি লুকাবো।
- ভেবে দেখ কিছু লুকাচ্ছিস না তো।
- কি যে বলো আব্বা কি লুকাবো।
- রিয়াদ বাবা তুমি সত্যিটা বলো তো।
- আসলে আংকেল কি বলবো বুঝতেছি না।
- তোদের সাথে কি অন্য কেউ থাকে এই বাসায়?
- ইয়ে মানে কেনো আব্বা। এটা কেনো মনে হলো।
- ঐ রুমে মেয়ে মানুষের জুতা দেখলাম।
- আহ আব্বা ওটা তো রিয়াদের জুতা। ইয়ে মানে আব্বা।
- এত তোতলাচ্ছিস কেনো? রিয়াদ তুমি কি মেয়েদের জুতা পড়ো?
.
এই দেখ কিভাবে ধরা খেয়ে গেলাম। এখন কি করে এটা সামলাই। সত্যিটাকি বলে দিবো তাহলে। যা হবার হউক সত্যিটা তাহলে বলেই দেই। এখন যদি সত্যিটা না বলি তাহলে আরো সমস্যায় পড়তে হবে।
.
- আসলে আব্বা। একটা কথা লুকিয়েছিলাম তোমার কাছে। রবিন আমাদের সাথে ওর বউ নিয়ে।
- সেটা তো আমি জানিই। রবিন নাহলে এত সাহস পাবে কিভাবে।
- না আব্বা মানে।
- চুপ একদম চুপ। প্রিয়া আমাকে সব বলেছে। কিন্তু আমার কাছে এটা না লুকালেও পারতি। শোন তোর খালা-খালু আগেই সন্দেহ করেছিলো যে রবিন তোর সাথেই আছে। কিন্তু আমি আর তোর মা প্রথমে বিশ্বাস করিনি। কিন্তু তোর বোন যখন বলে তখনই সত্যিটা জানতে পারি।
- হুমম। আব্বা সরি। আমি কি করবো বলো। রবিন হঠাত করেই একদিন ওর বউকে নিয়ে উঠে আমাদের বাসায়। আর রবিনকে তো তাড়িয়ে দিতেও পারবো না। তাই আমাদের বাসাতেই থাকতে দেই।
- তো এখন কোথায় চোরটায়?
- তোমার ভয়ে গতকাল রবিনকে আমার এক ফ্রেন্ডের বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি।
- আর ওর বউ কোথায়?
- বাড়িওয়ালাদের বাসায় আছে।
- আচ্ছা যা বউমাকে নিয়ে আয়। দেখি বউমার মুখটা।
- ঠিক আছে।
.
আব্বা সব কিছু বুঝে গেলো। এইদিকে আমাকে সবাই খারাপ ভাববে। খালা তো আমাকে কত খারাপ ভাববে। ধ্যাত কেনো যে ওদের এই বাসায় ঠাই দিতে গেলাম। আর ঠাই না দিলে ওরা কোথায় যেতো। যাক খারাপ ভাবলে ভাবুক। যেটা করছি ভালই করছি। কথা গুলো একা একাই বকছিলাম। আর শিড়ি দিয়ে নামছিলাম। বাড়িওয়ালার রুমের সামনে গিয়ে কলিং বেল চাপলাম। আন্টি দরজা খুলে দিলেন।
.
- আন্টি সুমাকে পাঠিয়ে দিন।
- তোমার বাবা চলে গেছেন?
- না আন্টি। আব্বা সব জেনে ফেলছে।
- এখন কি করবা?
- সুমাকে দেখতে চেয়েছেন আব্বা।
- আমি তোমার বাবাকে বুঝিয়ে বলবো?
- তাহলে তো আরো ভাল হয় আন্টি। সুমাকে নিয়ে আসেন তাহলে।
- আচ্ছা যাও আসছি।
.
আন্টি এত ভাল ব্যবহার করছেন কেনো? এতটা ভাল ব্যবহার করতে আগে কখনো দেখিনি। আন্টি তো দেখছি আমাদের সব বিপদেই পাশে থাকেন। এবং আমাদের সাপোর্ট দিচ্ছেন। ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য হলেও বিশ্বাস যোগ্য। আমি রুমে চলে যাই। এবং একটু পরেই আন্টি আসেন আমাদের রুমে। সাথে সুমার সাথে নীলাও আসে।
.
আন্টি কথা বললেন আব্বার সাথে। তারা কথা বলতেছিলো তাই আমরা সেখান থেকে চলে আসলাম এবং সুমার সাথে কথা বলতেছিলাম। সুমা তো ভয়ে কাঁপছিলো। নীলাও বুঝাচ্ছিলো তাকে।
.
- ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। আব্বা যেহেতু সব জেনেই গেছেন। এতে তোমাদের জন্যই ভালো।
- জ্বি ভাইয়া। কিন্তু আমার অনেক ভয় লাগছে।
- ভয় পেতে হবে না। আন্টি কথা বলে আসলে তুমি গিয়ে সালাম দিও। আশা করি আব্বা খুশি হবেন।
- ঠিক আছে ভাইয়া।
- তো আমার বউটার কি ঘুম হয়েছে ভাল মতো।
- ইশশ। কবে বিয়ে করেছেন?
- ওহহহ আচ্ছা বিয়ে করিনি এখনো।
- হুহ।
.
একটু পর আন্টি আসেন আব্বার সাথে কথা বলে। পরে সুমা যায় তার সাথে আমরাও গেলাম। সুমা গিয়ে আব্বা পা ধরে সালাম করে। আব্বার মত তো নরম হয়ে গেছে। পরে সুমার সাথে কথা বলে। আমার পাশে নীলা দাঁড়িয়ে ছিলো। আন্টি আব্বার সাথে কথা বলে তাদের বাসায় চলে গেলেন। আমি আর নীলা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা শুনছিলাম। আর একটু পর পর নীলাকে ইশারা দিয়ে বুঝাচ্ছিলাম শিখে রাখো।
.
- আচ্ছা মা তোমার বাবা-মা'য়ের সাথে আর কথা বলোনি?
- জ্বি না খালু।
- এটা কি ঠিক হয়েছে? বাবা-মা'য়ের সাথে কথা বলা দরকার। তোমরা যেহেতু একটা ভুল করেই ফেলেছো। ভুল গুলো তো এখন শুধরাতে হবে তাই না?
- জ্বি।
- পিচ্ছিটা কই? হৃদয় তোর শিষ্যটা কোথায়? ওকে আসতে বল।
- আব্বা। ও রুবেলের সাথে মার্কেটে গিয়েছে। আজই প্রথম গেলো।
- তাহলে ভাল। বিয়ে যখন করেই ফেলেছে। কিছু তো করা দরকারই।
- হ্যা আব্বা।
- তোদের কোনো সমস্যা হয় না তো?
- না কোনো সমস্যা হচ্ছে না আপাতত।
- আচ্ছা সমস্যা না হলে ভালো। আর কিছু প্রয়োজন হলে অবশ্যই আমাকে জানাবি কিন্তু। আর আমি দেখি তোর খালা - খালুর সাথে কথা বলে। আর তুই কিন্তু ভুলেও এরকম কাজ করবি না। এরকম করলে কিন্তু তোর মাফ নাই বলে দিলাম।
- না আব্বা আমি এরকম কাজ করবো না।
- আচ্ছা তাহলে আমি এখন উঠি। চলে যেতে হবে।
- এখন কেনো যাবে? বিকেলে যেও আব্বা। তোমার বউমার হাতের রান্না খেয়ে পরে যেও।
- সেটা মন্দ বলিসনি। কিন্তু আরেকদিন খাবো বউমার হাতের রান্না। এক সাথে দুই বউমার হাতের রান্না খাবো।
.
আর কিছু বলতে পারলাম না। নীলা তো সাথে সাথে মাথা নিচু করে ফেলে। আমিও একটু লজ্জ্বা পেয়েছিলাম। কিন্তু ছেলেদের লজ্জ্বা পেতে নেই। তাই মাথা উঁচু করেই রেখেছিলাম। আব্বা বিদায় নিলেন। এবং খুশি হয়ে সুমাকেও টাকা দিলেন। কিন্তু আমাকে কোনো টাকা দিলো না।
.
- তোর হাত খরচ কি আছে নাকি শেষ?
- কিছু টাকা আমাকে দিয়ে গেলে ভাল হতো।
- আচ্ছা নে।
.
৪ হাজার টাকা দিলেন। এবং বললেন সবার দিকে খেয়াল রাখতে। আব্বা আংকেল-আন্টির কাছ থেকে বিদায় নিলেন। আমি আব্বাকে বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি। এবং রিক্সার মধ্যেও আব্বা আমাকে আগে যেভাবে বুঝাতেন ঠিক ঐ ভাবেই বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। আসলে বাবা-মা'য়ের কাছে ছেলে মেয়েরা সবসময় বাচ্চাই থাকে। আর আমি এটা খুব প্রাউডলি ভাবে নিতাম। কারণ আমি আমার ফ্যামিলিকে খুব ভালবাসতাম।
.
- আচ্ছা আব্বা তাহলে তুমি বাসে উঠো তাহলে। বাসায় গিয়ে আমাকে কল দিও।
- আচ্ছা বাবা। তুই ও সাবধানে থাকিস। আর বাসায় থেকে ঘুরে আসিস।
- হ্যা আব্বা যাবো। পরিক্ষাটা শেষ হলেই যাবো।
- আর পরিক্ষা ভাল ভাবে দিস কিন্তু।
- হুমম ঠিক আছে।
- আচ্ছা সাবধানে বাসায় চলে যা।
- হুমম বাবা। আল্লাহ্ হাফেজ।
.
বাস ছেড়ে দেয় । আমিও রিক্সা নিয়ে বাসার দিকে চলে আসি। কত সহজেই সব কিছু হয়ে যাচ্ছে কিভাবে যেনো। ভাবতেই ভাল লাগছে। আসলে ফ্যামিলির মধ্যে এরকম ফ্রেন্ডশিপ থাকাটা খুবই প্রয়োজন। আর আমি সে জিনিষটাই পেয়ে বড় হয়েছি। নীলাকে কল দিলাম।
.
- তুমি কি চলে গেছো?
- নাহ। আছি এখনো কেনো?
- থাকো আমি আসলে পরে বাসায় যেও।
- আচ্ছা ঠিক আছে আসেন।
.
পরে রিক্সা থেকে নেমে আইস্ক্রিম নিয়ে নিলাম। নীলার খুব পছন্দের ছিলো আইস্ক্রিম। আর তার আইস্ক্রিম খাওয়াটা শুধু আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতাম। কেনো জানি খুব ভাল লাগতো। আসলে প্রিয় মানুষের সব কিছুই খুব ভাল লাগে। এটাই হয়তো আসল কারণ। বাসায় গিয়ে নীলার হাতে আইস্ক্রিম দেই। পরে সুমা আর নীলা আইস্ক্রিম খায়।
.
- হ্যালো ভাইয়া।
- হুম রবিন।
- খালু কি চলে গেছেন?
- হ্যা তোর খালু চলে গেছে। কেনো?
- না এমনি কোনো সমস্যা হয়নি তো।
- না। কোনো সমস্যা হয়নি। তুই রুবেলের সাথে গিয়েছিস?
- হ্যা ভাইয়া। রুবেল ভাইয়ার সাথেই।
- আচ্ছা ঠিক আছে। দুপুরে খাওয়া দাওয়া করিস ভালো মত। রাখি তাহলে।
.
সেইদিন এভাবেই কেটে গেলো। পরের পরিক্ষা দিতে গেলাম। পরিক্ষার হলে গিয়ে দেখি সীট পরেছে সবার সামনে। কিছু করার নাই। সামনে বসেই পরিক্ষা দিলাম। আল্লাহ্র রহমতে পরিক্ষাটা ভাল হয়। এভাবে একটা একটা করে প্রতিটা বিষয়ের পরিক্ষা শেষ হলো। মোটামুটি ভাল ভাবেই দিয়েছি পরিক্ষা গুলো। এইদিকে আমাদের ব্যাচেলর লাইফটাও ভাল ভাবেই কেটে যাচ্ছিলো।
.
- হ্যালো মা কেমন আছো?
- এইতো বাবা। ভাল আছি। তুই কেমন আছিস?
- জ্বি আলহামদুলিল্লাহ্ আমিও ভাল আছি।
- পরিক্ষা শেষ হয়েছে?
- হ্যা মা। গতকাল শেষ হয়েছে।
- অনেকদিন হলো তো বাসায় আসিস না। এসে কয়টা দিন দেখে যা।
- হ্যা মা আসবো।
- আচ্ছা তাহলে বন্ধুদের নিয়ে কালই চলে আয়।
- আচ্ছা মা আসবো। তোমার শরীরটা কেমন? আব্বা ভাল আছেন?
- হ্যা আমরা ভালো আছি সবাই। তাহলে আগামিকাল বাসায় আসছিস কিন্তু। আর রবিনের বউকে সাথে করে নিয়ে আসিস। দেখলামই তো ছেলের বউটাকেন
- আচ্ছা ঠিক আছে আসবো। রাখি এখন।
.
অনেকদিন হলো বাসায় যাইনা। তাই আমিও ভাবছিলাম বাসায় গিয়ে একটু ঘুরে আসি। তাই বিকেলে মা কে কল করি। যাইহোক কয়টাদিন এলাকায় থেকে আসি। বন্ধুরাও বলছে যাওয়ার জন্য। এলাকার বন্ধুদের সাথেও অনেকদিন হবে দেখা হয় না। জমিয়ে আড্ডা দেয়া যাবে কয়টা দিন। আর এতদিনে মা রবিন আর ওর বউয়ের কথা জেনে যায়। তাহলে আগামিকাল বাসায় যাচ্ছি সবাই।
.
(চলবে)
.
.
লেখাঃ হৃদয় নাদিম
Comments
Post a Comment