"ব্যাচেলর" (২৭ তম পর্ব)



- রুবেল, রুবেল।
- হ্যা বন্ধু। আসতেছি।
- আরে বেটা বাথরুম থেকে বের হইবি না নাকি? আধা ঘন্টা ধইরা বাথরুমে ঢুকে বসে আছোত। তাড়া-তাড়ি বের হ। নাহলে কিন্তু পেন্ট নষ্ট করে ফেললে তোর ধুয়ে দিতে হবে।
- রাখ না মামা। পাগল হইছনা এতো। আমি বাথরুমে ঢুকলেই তোগো ধইরা যায়। আরো ২০ মিনিট লাগবো বের হইতে।
- ধুর শালা। বাথরুমেই থাকিস তুই।
.
বুঝিনা কাহিনী মাইয়া মানুষদের মতো এতো সময় লাগে কেনো। আমার তো মনে হয় ও বাথরুমে গিয়া ঘুমায়। এইদিকে আমার অবস্থাও খারাপ। তাই নিজের মোবাইল দিয়ে রুবেলের নম্বরে কল দিলাম। যাতে করে রুবেলকে বলতে পারি যে দিয়া কল দিয়েছে। কিন্তু এইবার রুবেল সাথে করেই মোবাইল নিয়া গেছে। কারণ এই নিয়ে অনেকবার মজা নিছি। চিপ মাইরা বসে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই।
.
- আহ শান্তি রে বন্ধু। বাথরুম যদি না থাকতো তাহলে কি যে হতো। আমি কেনো জানি বাথরুমের মধ্যেই অনেক সুখ পাই। কিরে বইসা রইছোত কেন? এতক্ষণ না পাগল হইয়া গেছিলি। এহন যাস না কে?
- বাই**দ। তুই বের হইলি কে? বইসা থাক না আরো।
- আরে বন্ধু আগে যা। পরে ঘরটারে নোংড়া করে ফেলবি তো।
- আমি কাজটা শেষ কইরা আসি পরে তোর লগে এই নিয়া কথা হইবো।
.
- বন্ধু রিয়াদ, রিয়াদ।
- কি হইছে কুত্তার মতো ঘেউ ঘেউ করতাছোত কেনো?
- ধুরু হারামী। যা ঘুমা তুই ভালা মতো। লুনার সাথে তাহলে আমিই প্রেম করি একটু।
- এই বেটা রাখ। রুবেল ভাই কি কস? বন্ধু পায়ে ধরি কোনো প্যাঁচ লাগাইছনা আর।
- রাখ তোর বন্ধু। একটু আগে কি কইছোত? আমি কুত্তার মতো ঘেউ ঘেউ করি?
- না বন্ধু। তুই মানুষের বাচ্চার মতো করোছ। আমি কুত্তার মতো ঘেউ ঘেউ করি। তারপরও বন্ধু লুনার সাথে প্যাঁচ-ট্যাচ লাগাইছনা।
- মনে থাকে জানি। এই নে কল ব্যাক কর লুনাকে।
.
আমি বাথরুমের কাজ শেষ করে বের হইলাম। কিন্তু কুকুরটাকে খুঁজে পাচ্ছি না। আজকে ওরে বাথরুমেই আটকিয়ে রাখবো। রিয়াদকে জিজ্ঞাসা করি রুবেলের কথা। ও আরো উল্টা ঝাড়ি মারলো আমাকে। বুঝতে পারলাম যে রুবেল রিয়াদের সাথে কোনো ঝামেলা করেই রুম থেকে বের হইছে।
.
- এই বেটা উইঠা ফ্রেশ হয়ে নে। ১০ টার মধ্যেই বাসায় যাবো।
- এহন বাজে ৭ টা। আমার কি রেডি হইতে ৩ ঘন্টা লাগবো। আর বরিশাইল্লা হুদাই লুনারে কল দিছে এত সকালে। লুনা তো উল্টা পাল্টা কথা বলতেছে।
- এহন সব কিছু আমার উপরে ঝাড়। আর কি করবি এটা ছাড়া। তোগো কারণে বেটা বাথরুমেও যেতে পারিনা ঠিক সময়ে। একটা তো আছে গন্ডার ২৪ ঘন্টার মধ্যে মনে হয় ১২ ঘন্টাই বাথরুমে কাটিয়ে দেয়।
- আমি তো এরকম করিনা। আমার তো ১০ মিনিটেই হয়ে যায়।
- তুই হালা আরো বড় গন্ডার। তোরা দুইটাই একইরকম।
- তোর মতো খাচ্চর হমু তো? তুই তো বেটা সপ্তাহে একদিন বাথরুমে যাস।
- আসতে আসতে আর বলিস না বন্ধু। যা উঠে ফ্রেশ হয়ে নে।
- এখন এতো নরম হইলি কেনো?
- কি যে বলিস। আমি তো সবসময়ই নরম ভাবে থাকি।
- আচ্ছা হইছে।
.
এখনই তো সব সিক্রেট ফাঁস করে দিচ্ছিলো। যাইহোক কোনো ভাবে মুখ বন্ধ করতে পেরেছি এটাই অনেক। আর রুবেল তো রুমেও নেই। তাহলে নিশ্চিত ছাদে গেছে সিগারেট খেতে। রবিনদের রুমের দরজা নক করে বললাম তাড়া-তাড়ি উঠার জন্য। আজ আর বাসায় নাস্তা করবো না। বাহিরেই হোটেল থেকে সবাই মিলে নাস্তা করবো। ইশশ যদি নীলাকে সাথে করে নিয়ে যেতে পারতাম। সাথে সাথে নীলাকে কল দিলাম। তখন সকাল আটটা বাজে প্রায়।
.
- আমার বাবুটা কি করে?
- হ্যালো কে?
- তুমি কে?
- আমি আদ্রিতা।
.
সাথে সাথে কলটি কেটে দেই। এই প্রথম ধরা খেলাম নীলার ছোট বোনের কাছে। আল্লাহ্‌ যদি আংকেল-আন্টির কাছে বলে দেয় তাহলে আমি শেষ। কি করা যায় সেটাই কপালে হাত দিয়ে ভাবছিলাম। একটু পরই নীলার নম্বর থেকে কল আসে। আমি তো ভয়ে শেষ। এই বুঝি আংকেল কল দিলো। তাই কলটা রিসিভ করলাম না। দুই-তিনটা কল দেওয়ার পর। একটা মেসেজ আসে নীলার নম্বর থেকে। মেসেজটি ছিলো " কল ধরেন আমি নীলা "
.
পরে আমিই নিজেই কল ব্যাক করলাম। এবং জিজ্ঞাসা করলাম কিছু হয়েছে কিনা। নীলা বললো যে আদ্রিতা সেইদিন তার সাথেই ঘুমিয়ে ছিলো। তো পরে তাকে জানালাম যে বাসায় যাবো কয়েকদিনের জন্য। কিছুক্ষণ কথা বলার পর বললাম।
.
- আচ্ছা আমি রুম থেকে বের হওয়ার সময় তোমাকে কল দিবো নে। তুমি একটু তোমাদের দরজার সামনে এসো।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
- যদি তোমাকেও সাথে করে নিয়ে যেতে পারতাম।
- এই ভয়ে তো বিয়েই করছেন না। বিয়ে করলেই তো আপনার সাথে করে নিয়ে যেতে পারতেন।
- ইশশ। চলো আজই বিয়ে করবো।
- হ্যা। আপনি তো শুধু কাজী অফিসে গিয়েই বিয়ে করতে পারবেন। সাহস থাকলে সবাইকে মানিয়ে বিয়ে কইরেন। হুহ।
- যাও। সবাইকে মানিয়েই বিয়ে করবো। এখন একটু মিষ্টি করে জান বলে ডাকো।
- এতো জান শুনতে হবে না। বিয়ে করেন আগে পরে জান কেনো জামাই বলেই ডাকবো।
- আচ্ছা ঠিক আছে। রাখছি এখন। বের হয়ে কল দিবো।
- হুমম রাখেন।
.
বুঝতেছি না আজ কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠছি। সবাই শুধু আমাকেই ঝাড়তেছে। ধ্যাত সকাল সকাল মনটা খারাপ হয়ে গেলো। কি আর করার দেখি কি হয়। পরে রবিন আমার সামনে আসে।
.
- ভাইয়া কোথাও যাচ্ছো নাকি আজ?
- কেনো? তুই জানিস না?
- না ভাইয়া। জানিনা তো।
- বাসায় যাবো সবাই। রেডি হয়ে নে।
- কাদের বাসায়? কোন বাসায়?
- নারায়ণগঞ্জ যাবো। এইবার বুঝেছিস?
- ভাইয়া কি বলো? আমিও কি যাবো সাথে?
- হ্যা। তুই ও যাবি তোর বউ ও যাবে সাথে।
- আমি কিন্তু কিছুই বুঝতেছিনা।
- তোর এত কিছু বুঝতে হবে না। তোর খালাই বলেছেন তোদের নিয়ে যেতে।
- ভাইয়া দেইখো। আবার মাইর খাওয়াইয়ো না কিন্তু।
- যেতে বলছি যা। রেডি হয়ে নে তাড়া-তাড়ি।
- যাচ্ছি তো। আর একটা কথা বলি ভাইয়া?
- হ্যা বল।
- নীলা ভাবির সাথে কি কিছু হয়েছে?
- কেনো তার সাথে কি হবে?
- না মানে। ভাবির সাথে কোনো ঝামেলা হলেই তো তোমার মাথা গরম থাকে তাই বললাম। আচ্ছা আমি গেলাম রেডি হতে।
.
পোলাপাইন গুলো খুব পেঁকেছে। আসলেই নীলাকে তো কিছু বলতে পারিনা তাই সব রাগ অন্যদের সাথে মিটাই। একটু পর আমাদের রুমে গেলাম। পারফিউমের গন্ধে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো। আর এটা রুবেলের কাজ। প্রতিদিন সকালে মার্কেটে যাওয়ার সময় পারফিউম মারবে। এত কড়া পারফিউম কেনো মারতে হয়। ওর কারণে একটা পারফিউম ৩-৪ দিনের বেশি টিকে না। উঠতে বসতেই পারফিউম মারতেই হবে।
.
- বন্ধু নে পারফিউম মারবি না? এইদিকে আয় আমি দিয়ে দেই?
- তুই যা মারছোত তাতেই হয়ে যাবে। তোর সাথে হাটলে আর পারফিউম মারতে হবে না।
- বন্ধু তুই সকাল সকাল মাথা গরম করিস না তো। বুঝছি তো নীলার সাথে ঝামেলা হইছে।
- আজব। আমি বুঝিনা। সবসময় তোরা ওকে কেনো আনিস?
- আচ্ছা ঠান্ডা হও বন্ধু। প্যাকেটে বিড়ি রাখা আছে। বারান্দায় গিয়ে চুপ করে একটা খেয়ে নাও। দেখবা মাথা পুরো ঠান্ডা হয়ে যাবে।
- তোরা এমন কেনো বুঝিনা আমি।
.
সিগারেটের প্যাকেটটা নিয়ে বারান্দায় গেলাম। একটা ধরালাম। মুখের সামনে নিতেই মনে পড়ে গেলো নীলাকে দেওয়া প্রোমিজের কথাটি। কি আর করার। রুবেলকে ডেকে সিগারেটটা ধরিয়ে দিলাম। কেনো জানি সিগারেটের নেশাটা শেষ হয়ে যায়। আর শেষ হওয়ার একমাত্র কারণ হলো নীলা।
.
- আরে বন্ধু কি কারণে যে তুই প্রেমে পড়লি?
- কেনো প্রেমে পড়লে কি হইছে?
- প্রেমে পইরা শান্তি মতো সিগারেটটাও টানতে পারোছ না।
- এতে তো তোদের আরো ভাল হইছে। বেশি করে টানতে পারোছ।
- হুমম সেটা ঠিক। আগে তো হালা তোর কারণে ভাল মতো টানতেই পারতাম না। কাইড়া নিয়া যাইতি হাত থেকে।
- এখন একটু বেশি বলে ফেলছিস। আমি কখনো কারো হাত থেকে কেড়ে নেই নাই। নিলে তুই নিয়েছিস। আর তোর নিজের দোষটা আমার উপর চাপিয়ে দিচ্ছিস।
- হইছে চুপ কর এখন।
.
কিছুক্ষণের মধ্যেই রুম থেকে বের হই। এবং নীলাকে কল দিলাম দরজার সামনে আসার জন্য। আন্টিকে গতকাল রাতেই বলে দিয়েছিলাম যে আমরা আজ বাসায় যাবো। শিড়ি দিয়ে তাড়া-তাড়ি করে নেমে আসলাম নীলাদের রুমের সামনে। এসে দেখি আমার পরীটা দাঁড়িয়ে আছে। না পারছি হাতটি ধরতে না পারছি জড়িয়ে ধরতে।
.
- মন খারাপ করে রেখেছো কেনো? একটু হাসো না।
- সাবধানে যাবেন।
- আচ্ছা সাবধানেই যাবো। কিন্তু তোমার ঘোমড়া মুখ দেখতে ভাল লাগছেনা। একটু হাসো না।
- এমনি এমনি কিভাবে হাসবো? আমি কি পাগল যে শুধু শুধু হাসবো।
- জান। একটু হাসো না।
- আচ্ছা এখন যান। আল্লাহ্‌ হাফেজ।
- হুমম আল্লাহ্‌ হাফেজ।
.
নীলার হাসি মুখটি দেখে বের হই। খারাপ লাগছিলো নীলাকে রেখে যেতে। কিন্তু কিছু করার ছিলো না। বাসে উঠার আগে হোটেল থেকে নাস্তা করলাম। নাস্তা খেয়ে বাসে উঠি বাসায় যাওয়ার জন্য। বাস চলছে আমরাও যাচ্ছি। নীলাকেও মিস করছি। মোবাইলটা বের করে দেখি নীলার মেসেজ। মেসেজে লিখা ছিলো -" আই মিস ইউ "। আমিও মেসেজের রিপ্লাই দিলাম - "আই মিস ইউ টু"।
.
(চলবে)
.
.
লেখাঃ হৃদয় নাদিম

Comments