"ব্যাচেলর" (২৮ তম পর্ব)



বাস থেকে নেমে গেলাম। রবিন ভয় পাচ্ছিলো যেটা রবিনকে দেখেই বুঝা যাচ্ছিলো। রিক্সায় উঠলাম আমরা তিন জন এক রিক্সায় বসলাম আর অন্য রিক্সায় রবিন আর সুমা বসে। অনেকদিন পর নিজের এলাকাটা দেখছিলাম। বাসার গেইটের সামনে গিয়ে পৌঁছালাম। রিক্সা থেকে নামলাম সবাই।
.
- ভাইয়া দেইখো কিন্তু বউয়ের সামনে মাইর খাওয়াইয়ো না।
- মাইরের কাজ করছোত। খাইলে খাইতেও পারিস।
- আমি তাহলে বাসায়ই যাবো না। এখনই মিরপুর চলে যাবো।
- যা চলে যা। ধরে রাখছে কে?
- ভাইয়া এমন কইরো না। আমার সত্যি অনেক ভয় লাগছে।
- আচ্ছা তাহলে তুই এখানেই দাঁড়িয়ে থাক। আমরা বাসায় যাই। চলো সুমা তোমাকে তো কেউ কিছু বলবে না।
.
পরে আমরা বাসায় চলে যাই। রবিন একা একাই দাঁড়িয়ে আছে গেইটের সামনে। পিছু তাকাতেই দেখি রবিন দৌড়ে আমাদের সামনে চলে আসে।
.
- কিরে এখন আসলি কেনো?
- ভাইয়া মা আসতেছে।
- কি বলিস আসলেই? এখন তো আমারই ভয় লাগছে।
- কি করবো বলো না।
- তাড়া-তাড়ি রুমে গিয়ে লুকিয়ে থাক। পরে দেখি কি করা যায়।
.
আপু দরজা খুলে দেয়। আর রবিন কাউকে কিছু না বলেই সাথে সাথে বাথরুমে গিয়ে লুকিয়ে পড়ে। আপু রবিনের কাহিনী দেখে হেসে দেয়। পরে বাসায় গিয়ে বসি আপুর সাথে কথা বলে। সুমা আপুকে সালাম করে। সবাইকেই সালাম করে। আমরা বাসায় ঢুকার একটু পরেই খালা আসেন আমাদের বাসায়।
.
- আসসালামু ওয়ালাইকুম খালা। কেমন আছেন?
- কখন এসেছিস? আর কেমন আছিস?
- এইতো খালা ভাল আছি।
- এটা কে?
- আমার ফ্রেন্ড ওরা।
- বিয়ে টিয়ে করে ফেলেছিস নাকি?
- না খালা কি যে বলেন না।
.
- নাম কি তোমার মা?
- জ্বি আমার নাম সুমা। <সাথে সাথে খালার পা ধরে সালাম করে সুমা>
- নামটা কোথায় জেনো শুনছিলাম।
.
একটু পর আপু বলে ফেলে। আরে খালা আপনি তো সুমাকে চিনেনই। রবিনের বউয়ের নামই তো সুমা।
.
- কি বলিস? এটা কি ঐ মেয়ে?
- হ্যা  এটাই ঐ মেয়ে।
- কুত্তাটা কই?
- ও তো আপনার ভয়ে লুকাইছে।
- কই লুকাইছে বের কর।
- থাক খালা ছোট মানুষ একটা ভুল করেই ফেলেছে। মাফ করে দেন।
- রাখ তোর মাফ। দাঁড়া দেখাইতাছি ওরে মজা। রবিন, রবিন।
.
রবিনকে ডাকতে ডাকতে খালা অন্যরুমে চলে গেলেন। এইদিকে হাসিও পাচ্ছিলো আবার খারাপ ও লাগছিলো। সুমাকে কিছু বলে নাই। আর খালাও জানতেন না যে আমরা আজ আসবো। কিন্তু কিভাবে তিনি আজই চলে আসলেন আমাদের বাসায়। ওদেরকে বললাম ফ্রেশ হয়ে নে। ওরা ফ্রেশ হতে যায়। আমরা যে রুমে বসে ছিলাম। ঐ রুমের বাথরুমেই রবিন লুকিয়ে ছিলো। বাথরুম থেকে আমাদের সব কথা শুনেছে। আমি পরে অন্যরুমে গেলাম। আয়ানকে কোলে নিলাম। আমাকে দেখে আয়ান একটা হাসি দিলো। কতদিন পর দেখলাম আয়ানকে।
.
- মা।
- হুম বল।
- খালাকে একটু বুঝাও না।
- বুঝাইছি অনেক। এহন দেখি কি হয়। রবিন কই?
- ও আছে। বাথরুমে লুকিয়ে রয়েছে।
- থাকুক ঐ জায়গায়। এটাই ওর শাস্তি।
- তুমি একটু বুঝাও খালাকে।
.
পরে আমিই খালার কাছে গেলাম। দেখি কিছু ম্যানেজ করা যায় কিনা। কিন্তু উল্টা আরো বকা শুনলাম। ইচ্ছে মতো কথা শুনাইলো। এবং আয়ানকে আমার কোল থেকে নিয়ে বলে 'এদের সাথে থাকিস না তাহলে তুই এদের মতো হয়ে যাবি' খালা রেগে পুরাই আগুন হয়ে আছেন। হার মেনে খালার সামনে থেকে চলে আসলাম। রাগ করাটাই স্বাভাবিক। কেউ কল্পনাও করেনি যে রবিন এরকম একটা কাজ করবে। আর এতে সম্মানহীন হতে হয়েছে তাদের। আমিও চুপ করে আমার রুমে চলে আসি। সবাইকে নাস্তা দেয়। আমিও গিয়ে নাস্তা করতেছিলাম সবার সাথে।
.
মা সুমার সাথে কথা বলতেছিলো। আমরাও তাদের কথা শুনছিলাম। বাথরুমের দরজার সামনে গিয়ে রবিনকে আসতে আসতে ডাকলাম।
.
- রবিন। তোর না ক্ষুধা লাগছে। খাবি?
.
আমার কথা শুনে সবাই হেসে দেয়। আপুর সাথে কথা বলছিলাম। আপু আমাকে বলে নীলার কথা। বললো যে নীলাকে নিয়ে আসলাম না কেনো।
.
- হ। আমার তো বিয়ে করা বউ। যখন খুশি নিয়ে আসা যাবে?
- আচ্ছা এই কথা? বিয়ে করার শখ তোর ও জেগেছে।
- আরে না আপু।
- বুঝছি বুঝছি। নীলাকে জানিয়েছিলি?
- উঁহুম। ভাল কথা মনে করিয়ে দিয়েছিস রে আপু।
.
পরে নীলাকে কল দিলাম। আপু পাশেই ছিলো। আপুর সামনেই নীলার সাথে কথা বললাম। নীলা মন খারাপ করে কথা বলছিলো। আর আমার কথা শুনে আপুও হেসে দেয়। পরে আপুকে দিলাম কথা বলার জন্য। আপু নীলার সাথে কথা বলে। আপু আরো উল্টা প্যাঁচ লাগিয়ে দিলো। এমনিতেই বিয়ের জন্য প্যারা দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। তার মাঝে আবার নীলাকেও এইগুলো বলছে। চুপ-চাপ শুনলাম তার কথা।
.
- হইছে এইবার দে আমি একটু কথা বলি।
- আরে পাগল হয়ে গেলি কেনো? কথা শেষ করেনি।
- অনেক কথা বলছোত আর বলা দরকার নেই।
.
- কি করো গো?
- বসে আছি।
- মন খারাপ করে কেনো থাকো?
- মন খারাপ করিনি।
- আচ্ছা রাখি। মন ভাল যেনো হয়। ঐ ব্যবস্থা করছি।
.
পরে রেখে দিলাম কথা বলে। এবং আমারও মনটা খারাপ হয়ে গেলো। আপুর সাথে শেয়ার করি কথা গুলো। আপু আমাকে একটা সমাধান বের করে দিলো। কিন্তু সেটা আব্বা-আম্মা কে আমি নিজে কখনো বলতে পারবো না। তাই আপুকেই অনুরোধ করলাম তাদের বলার জন্য। আপু বললো দেখবে পরে। আমি জানি আপুকে কিছু বললে সে অবশ্যই আমার কথা শুনবে। আর সবসময়ই এটাই হয়ে আসছে।
.
- আব্বা কোথায় রে?
- অফিসে।
- আসবে কখন?
- এসে পড়তেছে মনে হয়।
- ওহহ। তাহলে কিন্তু বুঝিয়ে বলিস তাদের।
- আচ্ছা দেখি না। মাত্রই তো আসলি। এখনই পাগল হয়ে গেলি নাকি?
- হুমম। ভাইয়া কই?
- তোর ভাইয়াও অফিসে। তোর ভাইয়ার আসতে আসতে সন্ধ্যা হবে।
- ওহহহ সমস্যা নেই। ভাইয়াকে বলেই ম্যানেজ করাবো তাহলে।
- কেনো? আমি কি ম্যানেজ করতে পারবো না?
- সেটা দেখা যাবে।
- হুহ। ঠিক আছে।
.
আব্বা চলে আসেন। আর রবিনও বাথরুম থেকে বের হয়। আব্বার ভরসায় বের হয়। পরে আব্বা তার শালিকে বুঝিয়ে বলেন। এবং তার শালিও মানে খালাও রাজি হন। রবিন দুইটা থাপ্পড় খায় খালার হাতের। কিন্তু পরে ঠিক হয়ে যায়। এভাবেই বিকেলে আমরা বাসা থেকে বের হলাম। এলাকায় হাটা-হাটি করলাম। রাতে বাসায় ফিরি। বাসায় ফিরে দেখলাম ভাইয়াও চলে আসছে। ভাইয়ার সাথে কথা বললাম। বন্ধুদেরকে ভাইয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম। ভাইয়ার সাথে আমার সম্পর্কটা ছিলো ফ্রেন্ডের মতো। যেরকমটা শালা-দুলা ভাইয়ের মাঝে থাকে।
.
সেইদিন আর কোনো কথা বলা হয়নি নীলার ব্যাপারে। রাতে খেয়ে আড্ডা মেরে ঘুমিয়ে পড়লাম। কিন্তু নীলা কল দিয়ে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিলো। নীলার সাথে কথা বলতে বলতে রাত কেটে গেলো। ফজরের আজান দিচ্ছিলো। নীলাকে বললাম নামাজটা পড়ে নাও। নীলাও নামাজ পড়তে গেলো। কিন্তু পরে আমি ঘুমিয়ে যাই। ১০ বারের মতো কল দিয়েছিলো কিন্তু টের পাইনি। কারণ তখন আমি ঘুমের দেশে।
.
পরের দিন শুক্রবার। মানে সবাই বাসায় আছেন। আমি যখন ঘুমিয়ে ছিলাম। তখনই নাকি আপু আমাদের ব্যাপারে কথা বলে। কথাটি ছিলো আমার আর নীলার বিয়ের কথা। কিন্তু আব্বা রাজি হয়নি কারণ আমি মাত্র পরিক্ষা দিয়েছি। আগে জব করতে হবে। পরে বাকিটা বুঝবেন। কিন্তু পরে নাকি রাজি হয়েছিলেন আমাদের এংগেজ করে রাখবেন। যাইহোক তাহলে এটা করলেও ভাল হবে। আমি ঘুম থেকে উঠে আপুর কাছে শুনি এই কথা গুলো। বিশ্বাস হয়নি পরে ভাইয়াও বললো যে আসলেই সত্যি। তখন বিশ্বাস করেছিলাম।
.
ভাবছিলাম নীলাকে কথা গুলো জানাবো। কিন্তু পরে ভাবলাম একটা সারপ্রাইজ থাকুক। আগে জানিয়ে দিলে সারপ্রাইজটা আর থাকবে না। ১২ টায় ঘুম থেকে উঠলাম। গোসল করে সবাই জুম্মা পড়তে যাই। কিন্তু সেইদিন মসজিদে মিষ্টি দেইনি। কপাল খারাপ ছিলো। নামাজ পড়ে বাসায় চলে আসলাম। একেবারে সকালের নাস্তা আর দুপুরের খাবার একসাথে করলাম। আগের অভ্যাস ছিলো এটা। আর বাসায় আসলেই আমার এই অভ্যাসটা শুরু হয়ে যেতো। এই নিয়ে আব্বার কাছে অনেক বকা শুনতে হতো। এখনো শুনি আশা করি সামনেও শুনবো।
.
অন্যদিকে রবিন আর সুমার ব্যাপারটা মেনে নেয়। এবং আগামী রবিবারে আমাদের আত্বীয়দের দাওয়াত দেবে। রবিন আর সুমার বিয়ের দাওয়াত। আর আব্বা বলেন যে নীলাদের বাসার মানুষদের কেও দাওয়াত করবেন। তাহলে কি ঐ দিনই আমার আর নীলার ইয়েটা হয়ে যাবে। ইয়ে মানে বিয়ে। আব্বা -আম্মা পরে আংকেল আন্টির সাথে ফোনে কথা বলে তাদের আসতে বলেন। আমি বুঝলাম না আব্বার কাছে তাদের নম্বরটা কিভাবে ছিলো। আর বুঝারও চেষ্টা করলাম না।
.
ছোট খাটো একটা আয়োজন করলেন আমাদের বাসায়। এবং শনিবার বিকেলে টয়া কল দেয় আমাকে। টয়ার কল পেয়ে তো আরো খুশি।
.
- কিরে কেমন আছিস?
- দোস্ত অনেক ভাল আছিরে। তুই কেমন আছিস?
- এইতো আলহামদুলিল্লাহ্‌। তুই এখন কোথায় রে?
- আমি তো দুই দিন আগে বাসায় এসেছি। কিন্তু কেনো রে?
- না। এমনি।
- দোস্ত একটা ঘটনা ঘটে গেছে তো।
- কি ঘটনা ঘটলো।
.
পরে টয়াকে সব কিছু খুলে বললাম। টয়া প্রথমে বিশ্বাস করেনি। কিন্তু পরে ঠিকই বিশ্বাস করেছে। টয়াও খুশি হয়েছে।
.
- দোস্ত তোরা আয় না। তোরা থাকলে অনেক ভালো লাগতো।
- নারে। অন্য আরেকদিন আসবো নে।
- ধ্যাত। তুই না থাকলে ভাল লাগবে না।
- আচ্ছা এখন রাখি। পরে কথা হবে।
- ঠিক আছে আল্লাহ্‌ হাফেজ।
.
আমার কেনো জানি টয়ার কথা শুনে মনে হচ্ছিলো। টয়া ঢাকা আসতেছে। কিন্তু আমার কাছে লুকাবে কেনো যদি ঢাকায় আসে। নীলার সাথে কথা বললাম সারা-রাত। সেইদিন তো নীলা খুব খুশি আমিও খুব খুশি ছিলাম। ঐ দিন রাতেও আর ঘুম হলো না। রিয়াদ আর রুবেল তো বলতেছে মাল খাবে। কিন্তু ওদের বললাম যে বাসায় এইগুলো করা যাবেনা। তাই বললাম মিরপুর গিয়ে মাল খাবো।
.
আমার তো খুশিতে লুংগি ড্যান্স করতে ইচ্ছে করছিলো। কতটা খুশি হয়েছিলাম বুঝাতে পারবো না। যদি টয়া থাকতো আরো মজা হতো। নীলাকেও বললাম টয়াদের কথা। নীলাও বলে যে টয়া আপুরা থাকলে খুব ভাল লাগতো। সারা রাত কথা বললাম। কথা বলতে বলতেই ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে রবিনের ডাকে ঘুম থেকে উঠি।
.
- কিরে কি হয়েছে?
- তোমার মোবাইলটা চেক করো তো।
- কেনো? <পরে চেক করে দেখলাম টয়া ১৫ টা কল দিয়েছে>
- টয়া আপুরা এখন ঢাকায়।
- কি বলিস? সত্যি?
- হুমম। তুমি কল ধরছো না দেখে আমাকে কল দিয়ে মাত্র জানালো।
.
সাথে সাথে কল দিলাম টয়াকে।
.
- ঐ কুত্তা ঐ। কয়টা কল দিছি দেখছোত?
- এখন কোথায় তোরা?
- সদরঘাট।
- তোরা ঐ খানেই থাক। আমি আসতেছি।
.
বাসায় জানিয়ে দিলাম। যে টয়ারা আসতেছে। পরে রুবেল আর রবিনকে নিয়ে গেলাম টয়াদের নিয়ে আসতে। রিয়াদ ঘুমিয়ে ছিলো তাই আর ওকে ডাকলাম না। আমার চোখেও ঘুম ছিলো। ঘুমাতে পারিনি ভাল মতো। মাত্র দুই ঘন্টার মতো ঘুমিয়েছিলাম। আধা ঘন্টার মতো লাগলো সদরঘাট গিয়ে পৌঁছতে। টয়াকে কল দিলাম। পরে ওদের সামনে গেলাম।
.
- কুত্তাটা এতক্ষণ লাগে?
- ওই তুই আমাকে বলেছিস যে আসবি?
- বললে কি আর সারপ্রাইজটা দিতে পারতাম?
- হুমম। এখন চল।
.
টয়ার জামাইর সাথে হ্যান্ডসিপ করলাম। তার সাথে কথা বললাম। রুবেল তো দিয়াকে দেখে একেবারে অবাকই হয়ে গেলো। রুবেল তো দিয়ার পিছুই ছাঁড়ছিলো না। আমরা পরে চলে আসলাম ঐ খান থেকে। কত কথা জমে রয়েছে ওদের মাঝে। কি ভালবাসা রুবেল আর দিয়ার মাঝে। সেটা না দেখে বুঝা যাবে না। দুষ্টামিটা আবারও শুরু হয়ে গেলো আমাদের।
.
(চলবে)
.
.
লেখাঃ হৃদয় নাদিম

Comments