"ব্যাচেলর" (২৯ তম পর্ব)



- হৃদয়।
- হ্যা দোস্ত বল।
- নীলা কি তোদের বাসায়?
- না এখনো আসেনি। দুপুরে আসবে হয়তো।
- তাহলে এক কাজ করি। নীলার বাসায় গিয়ে নীলাকে আগে নিয়ে আসি।
- কথাটা মন্দ বলিসনি।
- তাহলে গাড়ি ঘোরা।
- হুমম ঠিক আছে।
.
পরে গাড়ি ঘুরিয়ে মিরপুরের দিকে যাওয়া শুরু করলাম। ও আমরা টয়াদের আনার জন্য ছোট মামাদের গাড়িটা নিয়ে গিয়েছিলাম। সাথে ড্রাইবার ছিলো। কারণ আমি গাড়ি চালাতে পারতাম না। যদি পারতাম তাহলে একাই চলে যেতাম গাড়ি নিয়ে। গান শুনতে শুনতে মিরপুরের রাস্তার দিকে আটকিয়ে পড়লাম জ্যামে। আল্লাহ্‌ এত জ্যাম কেনো এই রাস্তাটায় বুঝিনা কিছুই। ১০ মিনিট গাড়ি চলে তো ২০ মিনিট জ্যামে আটকে থাকে। তাই গাড়িটা সাইড করে হোটেলে গিয়ে সকালের নাস্তাটা করে ফেললাম সবাই। নাস্তা করে আবার গাড়িতে উঠি। এইবার সোজা নীলাদের বাসার গেইটের সামনে চলে গেলাম।
.
নীলাকে সারপ্রাইজ দেবো বলে টয়া এবং টয়ার জামাইকে নিচে দাঁড়া করালাম। এবং পরে আমি আর রিয়াদ উপরে গেলাম। গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে নীলাকে কল করলাম। ও হয়তো ঘুমাচ্ছিলো।
.
- হ্যালো।
- এই কি কল দেওয়ার সাথে সাথে আমার পাখিটা কল ধরলো যে।
- আপনি জানেন আমি আজ কখন ঘুম থেকে উঠেছি।
- না জানিনা তো। কখন উঠেছো?
- আরো এক ঘন্টা আগে উঠেছি।
- ওহ তাই বুঝি? তো এত সকালে উঠার কারণ?
- আমার তো ঘুমই আসছিলো না। কখন আপনার সাথে দেখা হবে। অনেক উত্তেজিত আমি।
- আচ্ছা গেইট টা খুলো তাহলে।
- কেনো?
- খুললেই বুঝতে পারবে কেনো।
- আচ্ছা আসতেছি।
.
একটু পরে নীলা এসে গেইটটা খুলে। এবং আমাকে দেখে অবাক হয়ে যায়। সাথে সাথে আমাকে জড়িয়ে ধরে। রবিন যে পাশে ছিলো সেটাও খেয়াল করলো না আর। পরে আমি কানের সামনে গিয়ে বললাম। আমার সাথে কিন্তু রবিন আছে। পরে সাথে সাথে আমাকে ছেড়ে দিলো।
.
- হঠাৎ? এত সকালে আসলেন যে?
- এমনি ভাল লাগছিলো না তোমাকে ছাড়া। তাই চলে আসলাম।
- ইশশ। ভেতরে আসেন তাহলে।
- দাঁড়াও না। নিচে তোমার জন্য কেউ অপেক্ষা করছে। তাদেরকেও নিয়ে আসি।
- কে এসেছে?
- নিচে চলো তাহলেই দেখতে পারবে।
.
পরে নীলাকে নিয়ে নিচে গেলাম। নীলা শিড়ি দিয়ে নামছে আর আমাকে জিজ্ঞাসা করছিলো কে এসেছে। কিন্তু আমি বলেছিলাম নিজের চোখেই দেখে নিও। নিচে গেইটের সামনে গিয়ে দেখে টয়াকে। টয়াকে দেখে তো খুব খুশি হয়ে গেলো নীলা। পরে সবাই গেলাম আমার হবু শ্বশুর বাড়িতে। এখনো শ্বশুর বাড়ি হয়নি। কিন্তু হতে কতক্ষণ? আংকেল আন্টির সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম টয়াকে।
.
- কেমন আছো মা?
- জ্বি আন্টি ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন?
- এইতো আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভাল আছি।
- তোমরা ঢাকায় কবে এসেছো?
- আজই এসেছি আন্টি। আর সোজা আপনাদের বাসায়ই এসে পড়লাম নীলাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
- হুমম খুব ভাল করেছো।
.
টয়ার জামাইর সাথে কথা বলেন আন্টি। আংকেলের সাথেও কথা হয়। পরে তারা বলেন যে তাদের সাথেই যেতে। আমরা পরে বলি যে আগে চলে যাবো। পরে আর কি করার। নাস্তা করতে ছিলাম। নীলাকে বললাম তোমার ব্যাগ গুঁছিয়ে নাও। নীলা চলে গেলো রুমে। আমরা বসে বসে কথা বলছিলাম। কেনো জানি সেইদিন একটু লজ্জ্বা পাচ্ছিলাম। আমি একটু কথা কম বলছিলাম তাদের সামনে। নীলা একটু পর চলে আসে ব্যাগ গুঁছিয়ে।
.
- আচ্ছা আন্টি তাহলে আমরা এখন আসি। আপনারা চলে যেয়েন কিন্তু সময় মত।
- আচ্ছা বাবা।
- জ্বি আন্টি। আসসালামু ওয়ালাইকুম।
- ওয়ালাইকুম সালাম।
.
আংকেল - আন্টি আমাদের গেইট পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন। পরে সোজা গাড়িতে উঠে নারায়ণগঞ্জে চলে আসলাম। জ্যামের কথা আর নাই বলি। অনেক জ্যাম পার করেই আসতে হয়। কেমন জানি লাগছিলো। আর আমরা কিভাবে জানি আবারও এক হয়ে গেলাম। আমরা সবাই এক হলেই আমাদের মজাটা বেড়ে যায়। গাড়ি গিয়ে বাসার গেইটের সামনে থামে। এইদিকে আপুকে জানিয়ে দিয়েছিলাম যে নীলা আসছে আমাদের সাথে। আপুও নীলাকে দেখার জন্য উত্তেজিত ছিলো।
.
- এই যে।
- জ্বি বলো।
- আমার না লজ্জ্বা করতেছে অনেক।
- লজ্জ্বা কিসের?
- জানিনা। তবুও কেনো জানি লজ্জ্বা লাগছে।
- লজ্জ্বা পেলে হবে না। আসো এখন বাসায় যাই। সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।
.
পরে বাসায় গেলাম সবাইকে নিয়ে। সবার সাথেই পরিচয় করিয়ে দিলাম নীলাকে। টয়া এবং টয়ার জামাইকে দেখে তো সবাই আরো খুশি। খুব ভাল লাগছিলো বাসায় সকল মেহমান চলে আসে। মামা - খালা আরো অনেক আত্বীয়রা চলে এসেছেন। নীলাকে দেখেও সবাই পছন্দ করেন। আমার বউ বলে কথা পছন্দ না করে যাবে কোথায়। আব্বা তো নীলাকে আগেই দেখেছেন। নীলাকে দেখে মা বলেই ডাকে আব্বা। আমার রুমে গিয়ে বসে নীলা। সবাই একসাথে কথা বলছিলাম। একটু পর আপু আর ভাইয়া আসেন আমাদের রুমে।
.
- দেখি দেখি আমার শালার বউটাকে। বাহ খুব মিষ্টি তো দেখতে। শালা তোমার পছন্দ আছে।
- জ্বি ভাইয়া।
.
ভাইয়া অনেকক্ষণ দুষ্টামি করলো আমাদের সাথে। নীলাও লজ্জ্বা পাচ্ছিলো কিন্তু আসতে আসতে ঠিক হয়ে যাবে।
.
- আপু আয়ান কোথায় রে?
- আয়ান ওর নানার কাছে।
- আচ্ছা নিয়ে আসতেছি।
- যাহ।
.
আমি পরে অন্যরুমে গিয়ে আয়ানকে নিয়ে আসি। আয়ান এত মানুষ দেখে একদম চুপ-চাপ হয়ে গেছিলো। আয়ানকে নিয়ে আমার রুমে গেলাম। নীলা হাত বাড়াতেই নীলার কোলে চলে গেলো। এমনিতে কিন্তু আয়ান সবার কোলে যেতো না। কিন্তু নীলার কোলে গেছে। টয়া এত ডাকলো টয়ার কোলেও যায়নি। নীলা আয়ানকে কোলে নিয়ে দুষ্টামি করছিলো।
.
- আমি এত ডাকলাম আমার কোলে আসলো না। আর নীলা হাত বাড়াতেই চলে গেলো।
- বুঝতে হবে না। নতুন মামীর কোলে যাচ্ছে।
- ইশশ নতুন মামী। তোর লজ্জ্বা শরম সব ধুলোয় মিশে গেছে রে?
- কি বলো আপু? লজ্জ্বা পাবো কেনো?
- এখন যা। সবাই গিয়ে নাস্তা করে নে।
- নাস্তা করেই এসেছি। এখন আর খাবো না।
- সবার জন্য অপেক্ষা করলাম একসাথে নাস্তা করবো বলে। আর তোরা নাস্তা করে আসলি?
- কালকে একসাথে করবো নে। এখন তুই করে নে। রবিনের বউ কোথায় রে?
- সুমা তো। রান্নাঘরে মা'কে সাহায্য করছে।
- ওহহ। রবিন যা তোর বউকে ডেকে নিয়ে আয়।
- আমি পারবো না ভাইয়া। আপু তুমি একটু ডেকে দেও।
- বিয়ে করে ফেলেছিস। এখনো লজ্জ্বা পাচ্ছিস। পোলাপাইন গুলো যে কি করে।
.
সবাই হেসে দিলাম আপুর কথা শুনে। টয়ার জামাইয়ের সাথে আব্বা সহ বাকিরা কথা বলছিলো। নতুন জামাই বলে কথা। আর আমরা এক রুমের মধ্যেই সবাই বসে আড্ডা মারছিলাম। আমি তো নীলাকে পেয়ে তার পিছুই ছাড়ছিলাম না। একটু পর সুমা আসে। তারপর নীলা এবং টয়ার সাথে কথা বলে। আর অন্য দিকে রুবেল আর দিয়াকে তো খুঁজেই পাচ্ছিলাম না। রুমে না দেখে রুবেলকে কল দিলাম।
.
- কিরে কই তোরা?
- আমরা বাহিরে হাটতেছি।
- এহহ। বউ পেয়ে সবাইকে ফেলে হাটতেছিস?
- আরে বন্ধু তা না।
- বুঝি বুঝি সবই বুঝি।
- তোরাও আয়।
- হুম থাক আসিতেছি।
.
পরে বাহিরে গেলাম। বাহিরে গিয়ে রিমনকে কল দিলাম। রিমন হলো আমার ছোট বেলার ফ্রেন্ড। আমি, টয়া এবং রিমন একসাথেই পড়তাম।
.
- রিমন কই রে তুই?
- আমি তো বাসায়।
- আচ্ছা বাহিরে বের হ।
- আসিতেছি।
.
রিমনদের বাসা আর আমাদের বাসা পাশা-পাশিই। একটু পর রিমন চলে আসে আমাদের মাঝে। রিমন টয়াকে দেখে তো পুরাই অবাক। টয়া পরে ওর জামাইর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। রিমন ও আমাদের সাথে টয়ার বিয়েতে যেতো। কিন্তু একটা সমস্যার কারণে আর যেতে পারেনি। পরে নীলার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম। রিমন ও জানতো নীলার কথা। রিমনই আমাকে অনেক সাপোর্ট করতো নীলার ব্যাপারে। যাক তাহলে সব বানর গুলো আবার একসাথে হইলাম।
.
- দোস্ত তোর কি খবর?
- আছিরে।
- কেনো? তোর ঐটার কি খবর? আছে না গেছে?
- কবেই তো বিয়ে হয়ে গেছে।
- নামটা জানি কি ছিলো?
- রুপা।
- ওহ হ্যা রুপা। বিয়ে হলো মানে। তুই বাসায় জানাসনি?
- জানিয়ে ছিলাম। কিন্তু। আচ্ছা বাদ দে এইগুলো। তোরা কবে আসলি?
- এইতো সকালেই ঢাকায় আসলাম।
- অনেকদিন পর তোর সাথে দেখা হলো।
- হুমম।
.
একটু পরে বাসায় চলে আসি। নীলাকে সাজিয়ে দিচ্ছিলো আপু। মনে হচ্ছিলো নতুন বউকে সাজাচ্ছে। আর ততক্ষণে বাকিরাও চলে আসেন আমাদের বাসায়। নীলার বাসার লোকও চলে আসে। সাথে নীলার বড় আপুও আসেন। তাকে এমনিতে চিনতাম। মাঝে মাঝে কথা হতো। আর ঐ আপুটা আমার আর নীলার সম্পর্কের কথা প্রথম থেকেই জানতেন। কিন্তু তিনিও প্রথম থেকেই আমাদের খুব সাপোর্ট দিয়েছেন।
.
খাওয়া দাওয়া শেষ করলাম। এইবার শুরু হবে আমার আর নীলার এংগেজমেন্ট। ব্যাপারটা তখনও জানতাম না আমি নীলার বাসার মানুষেরা না জেনে হঠাত কিভাবে রাজি হলেন? কিন্তু পরে জানতে পারি আব্বার পরিচিত ছিলেন আংকেল। আর আমি যখন তাদের বাসায় উঠেছিলাম তখনই আব্বার সাথে আংকেলের আবার পরিচয় হয়। এভাবেই কিভাবে জানি হয়ে গেলো।
.
যাইহোক একটা সময় আমার আর নীলার এংগেজমেন্টের কাজটা সম্পূর্ণ হয়ে গেলো। মিষ্টিমুখ করে সবাই। আর আমাদের বিয়ে ৩ বছর পরই আনুষ্ঠানিক ভাবে হবে। তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। তিন বছর হউক আর ছয় বছর পর হউক। এখন তো যখন খুশি নীলার সাথে দেখা করতে পারবো, কথা বলতে পারবো। এটাই আমার জন্য অনেক বেশি। তো সন্ধ্যা হয়ে যায় এবং পরে সবাই বিদায় নিচ্ছিলো। আংকেল - আন্টিরাও চলে যাবেন বলছিলেন। তাদেরকে আব্বা-আম্মা অনেক বলেন থাকার জন্য। কিন্তু তারা বললেন আরেকদিন থাকবেন। এবং সবাই বললো নীলাকে রেখে যেতে। ও কয়টাদিন আমাদের সাথেই থাকুক। আংকেল - আন্টিও রাজি হলেন। এবং নীলাকে রেখে গেলেন।
.
সবকিছু যে এত সহজে শুরু হয়ে যাবে সেটা ভাবতেও পারিনি। কিন্তু হঠাত করেই রিমন বলে আমাকে।
.
- দোস্ত।
- হ্যা দোস্ত বল।
- আমি তো তোদের না জানিয়ে একটা ড্রিংকের ব্যবস্থা করে ফেলেছি।
- কি বলিস?
- আমি জানতাম যে তোদের বাসায় এটা সম্ভব হবে না। তাই আমাদের বাসাই ব্যবস্থা করলাম।
- আরে বেটা আমাকে বললেই তো পারতি। রুবেল, রিয়াদরা গতকাল  আমাকে এই নিয়ে কথা বলেছিলো।
- আচ্ছা তাহলে কোনো সমস্যাই নাই। খুশির দিনে একটু আধটু ড্রিংক না করলে হয় না।
- হুম তা ঠিক আছে।
.
পরে সবাই মিলে কিছুক্ষণ আড্ডা মারলাম। এবং ড্রিংকের বিষয়টা জানাই সবাইকে। আর আমরা ছেলেরাই শুধু করবো। এইবার কোনো মেয়েরা করতে পারবেনা। কারণ বাসায় জেনে গেলে আমার খবর আছে। তো পরে রিমনদের বাসায় গিয়ে ড্রিংকের পার্টিটা জমিয়ে দিলাম। গান ছেড়ে হুদাই লাফা-লাফি করি। খুব মজা করলাম ঐ দিন সব বন্ধুরা মিলে। আর এরকম মজাটা কোনো খুশির দিনেই হয় বেশি।
.
(চলবে)
.
.
লেখাঃ হৃদয় নাদিম

Comments