"ব্যাচেলর" (৩১ তম পর্ব)



নীলা কথা বলতে বলতে আমার কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে যায়। আমি বসে বসে মশা তাড়াচ্ছিলাম। কি আদর্শবান স্বামী বউ ঘুমাচ্ছে আর জামাই বসে বসে মশা তাড়াচ্ছে। তারপরও নীলা প্রতিনিয়ত বলবেই আমি নাকি তাকে একটুও ভালবাসি না। কিন্তু নীলা কেনো এটা বলতো সেটা আমি বুঝতাম। কারণ নীলা এ কথা বললে আমি আরো বেশি সময় দিতাম তাকে। আর সে আমার কাছে এই সময়টুকুই চায় যাতে আমি তার সাথে থাকি। আমিও তো চাই আমি আমার বউটাকে আমার পাশেই রাখি। তাই তো তাকে একেবারে কাছেই নিয়ে এসে পরি।
.
আর বিকেলে একটু শপিং এ যাবো। নীলার জন্য কয়েকটা ড্রেস কিনতে হবে। কারণ ও বাসা থেকে শুধু দুইটা ড্রেস এনেছিলো। ও তো জানতোও না যে আমাদের বাসায়ই থাকবে। জানলে হয়তো ড্রেস বাড়িয়েই নিয়ে আসতো। কিন্তু স্বামী হিসেবে তো আমার একটা দায়িত্ব আছেই। আর গতকালই মা আমাকে এই ব্যাপারে একটু ইজ্ঞিত দিয়েছিলেন। যাতে নীলাকে নিয়ে শপিং এ যাই।
.
- কি শালা ভাই? কখন উঠলে ঘুম থেকে? আর এখানে বসে কি বউকে পাহারা দিচ্ছো?
- হাহাহা ভাইয়া। আসলে নীলা রাতে ঘুমাতে পারেনি। তাই কথা বলতে বলতেই ঘুমিয়ে পড়েছে।
- বাহ। এটা ভালো। তোমার আপুটা যে কেমন?
- কেনো ভাইয়া? আপু কি আপনাকে ঝাড়ির উপরে রাখে?
- আর বইলো না ভাই। তোমার আপু যা বলবে ঐটাই করতে হবে। শোনো শালা তোমাকে একটা কথা বলি। বউকে বেশি মাথায় উঠাইয়ো না। তাহলে কিন্তু পরে আমার মতো অবস্থা হবে।
- না ভাইয়া। নীলা এরকম নয়। ও একটু অন্য টাইপের।
- আরে শালা ভাই। তোমার আপুও তো এরকম ছিলো না। বেশি ভালবাসা দিয়ে মাথায় উঠিয়ে ফেলছি তাই এখন..
.
কথাটি শেষ করতে পারলো না। আপু চলে আসে। আপুকে দেখে ভাইয়া একদম চুপ হয়ে গেলো। কি ভদ্র মানুষ না দেখলে বুঝা যেতো না। যাইহোক আমি মজা পাচ্ছিলাম ভাইয়ার কথা শুনে। কিন্তু একটু ভাবলামও শেষে নাকি আবার ভাইয়ার মতোই অবস্থা হয় আমার। আমি তো বউ পাগল। সমস্যা নাই এরকম কিছু ঘটলে সামলিয়ে নিবো।
.
- এইখানে বসে বসে মশার কামড় না খেয়ে রুমে মশারি টানানো আছে মশারির ভেতরে গিয়ে ঘুমাতে বল নীলাকে।
- ও উঠে গেলে। আর ঘুমাবে না। এর থেকে ভাল এখানেই একটু ঘুমাক।
- হৃদয়। তুই যে এতটা পাগল। সেটা কিন্তু আমার জানা ছিলো না।
- হুমম। আমি আসলেই অনেক পাগল। হাহাহা।
.
- আর আপনি এখানে বসে না থেকে ফ্রেশ হয়ে আসেন।
- হ্যা যাচ্ছি। ছেলে কোথায়?
- ছেলে ছেলের নানীর কাছে।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
.
একটু পর আসতে আসতে সবাই চলে আসে। আর সবার কথার আওয়াজে নীলাও উঠে যায়। সবাই বলতে ফ্রেন্ডরা। ফ্যামিলির কেউ না কিন্তু। তাদের সামনে কোনো ভাবেই পারবো না। লজ্জাজনক ব্যাপার এটা। তবে আসতে আসতে ঠিক হয়ে যাবে সব কিছুই। সেটা সময়ের প্রয়োজন আরো।
.
এর মধ্যে লুনা ঢাকায় আসে। রিয়াদ তো দেখা করার জন্য খুবই উত্তেজিত। এতদিন পর তাহলে রিয়াদের প্রেমিকাকে দেখতে পারবো। রিয়াদ বিকেলেই যাবে লুনার সাথে দেখা করতে। আর দেখা করবে বসুন্ধরায়। আমারও কোনো সমস্যা নেই। আর সবাই মিলে ঘুরতে আমার ভালোই লাগে। তাই দুপুরে খাবার খেয়ে মামার গাড়ি নিয়ে বের হলাম। আমি, রবিন, রুবেল, রিয়াদ, রিমন, টয়ার জামাই, নীলা, সুমা, দিয়া ও টয়া বের হলাম ঘুরতে। একসাথে গেলাম বসুন্ধরা।
.
পরে গিয়ে লুনার সাথে দেখা করে রিয়াদ। আমাদের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। আমাকে আর রুবেলকে তো চিনেই। আর আমরা তো রুবেলের কাছ থেকে একটা ট্রিট পাবোই। ঐ দিন রেস্টুরেন্টের বিলটা রুবেলই দেয়। বেশি না মাত্র ছয় হাজার টাকা হইছিলো বিল। এরপর আমি নীলাকে নিয়ে একটু শপিং এ চলে যাই। সবাই কিছু না কিছু শপিং করি।
.
- শাড়ি দেখবে?
- এতো শাড়ি শাড়ি করেন কেনো?
- আচ্ছা যাও। যা নিতে চাও নেও।
- শাড়ি তো সবসময় পড়তে পারবো না। তাই মানা করেছি।
- সমস্যা নেই।
- রাগ হয়ে বলছেন? আচ্ছা ঠিক আছে একটা শাড়ি নিবো শুধু।
- সত্যি? আচ্ছা আগে তুমি সবসময় পড়ার জন্য কিছু ড্রেস কিনো। পরে আমার পছন্দের একটা শাড়ি নিয়ে নিবো।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
.
নীলা তার পছন্দ মতো কিছু ড্রেস নিলো। এবং আমি নীলার জন্য কালো রংয়ের একটা শাড়ি নিলাম। কালো শাড়িতে নীলাকে ভালোই লাগবে। শপিং শেষ করলাম। কিন্তু এখন নীলা আমাকে কিছু নেওয়ার জন্য বলছে। নীলার পছন্দের একটা টি শার্ট নিলাম। কিন্তু এইদিকে টয়া আমাদের সবাইকে কিছু না কিছু গিফট্ করছিলো। আমাকে ঘড়ি গিফট্ করলো। ঘড়িটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। এইদিকে সবাই ডাবোল ডাবোল। আমি নীলার সাথে, রবিন সুমার সাথে, রুবেল দিয়ার সাথে, রিয়াদ লুনার সাথে কিন্তু আমার দোস্ত রিমন একা একাই দাঁড়িয়ে আছে।
.
- কিরে দোস্ত মন খারাপ?
- না তো। কেনো?
- না এমনি। সবাই একসাথে হাটছে। তুই একা একা হাটছিস কেনো। যা তোর ভাবির সাথে কথা বল।
.
পরে রিমনের সাথে কথা বলতে বলতে বের হয়ে গেলাম। এখন তো লুনার কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার পালা। লুনা প্রায়ই অনেকদিনই থাকবে ঢাকায়। তাই আর সমস্যা হলো না। আমরা লুনাকে বিদায় দিয়ে চলে আসলাম বাসায়। আমরাও ভাবছিলাম শুক্রবারে মিরপুরে চলে আসবো। কারণ রুবেলের চাকরিটা মিস হয়ে যাচ্ছিলো।
.
আর রবিনকে বলে বাসাতেই থাকার জন্য। কিন্তু রবিন আমাদের সাথেই থাকবে। আসলে একসাথে থাকাটা অনেক আনন্দের। আর আমাদের বাসাটাও চেঞ্জ করা দরকার। কারণ রুম মাত্র ২টা ছিলো আমাদের ফ্লাটে। আর নীলাদের বাসায়ই কিভাবে থাকি এখন। মানুষ কি না কি বলবে শ্বশুর বাড়িতে থাকি হেন-তেন।
.
তাই আমাদের বাসাটা চেঞ্জ করতে হবে মিরপুর গিয়ে। এখন বাসা খুঁজতে কোনো সমস্যা নাই। কারণ এখন তো আর আমরা ব্যাচেলর নই। কিন্তু যদি বাসাটা ছেড়ে দেই তাহলে নীলার সাথেও প্রতিদিন দেখা হবে না। সব দিকেই সমস্যা। আর আমাকেও এখন একটা জব খুঁজতে হবে। আব্বাকে বললে উনি কিছু একটা ব্যবস্থা করে দিবেন।
.
আমরা ঐ দিন থাকি খালার বাসায়। পরেরদিন আমাদের বাসায় চলে আসি। আর প্লানিং করি যে রাতে ভার্বিকিউ পার্টি করবো। সব কিছু নিয়ে এলাম যা যা লাগবে। দুপুরে খাবার খেলাম সবাই একসাথে। আর আজ রান্নাটা করেছে নীলা এবং সুমা। আব্বা বলেছিলেন একসাথে দুই বউমার হাতের রান্না খাবে। আর সেইদিন তাই হয়েছে। পাগলিটা রান্না খুব ভালো ভাবে করতে পারে। এটা বলতে হবে।
.
- বন্ধু।
- এতদিন পর ডাকলি? দিয়ার সাথে কোনো ঝামেলা হইছে?
- ধুরু শালা। তুই তো তোর বউরে নিয়াই ব্যস্ত থাকোছ। আবার আমারে বলছ।
- আচ্ছা কি হয়েছে বল।
- দিয়ার ব্যাপারেই কথাটি বলতাম আসলে।
- হুমম সেটা বুঝতেই পারছি। এখন বলে ফেল কি হয়েছে।
- তোদের তো লাইন ক্লিয়ার হয়ে গেলো। এইবার আমার আর দিয়ার ব্যাপারটা কি করা যায়।
- আন্টির সাথে কথা বলে দেখবো?
- যেটা ভালো বুঝিস করিস।
- তাহলে কল দে। এখনই বলি।
- না দোস্ত। মোবাইলে বলার থেকে সামনা সামনি বলাটা ভালো হবে।
- তাহলে কি করতে হবে বল।
- গ্রামের বাড়িতে গিয়ে আব্বা-আম্মার সাথে বসে কথাটি বলতে হবে।
- আবার যেতে হবে বরিশাল?
- দোস্ত এভাবে বলছিস কেনো? তুই না আমার ভাই। ভাই হয়ে ভাইয়ের জন্য একটু কষ্ট করতে পারবি না?
- তা না হয় পারবো। কিন্তু
- কোনো কিন্তু নয়। তুই যাচ্ছিস আমার সাথে বরিশাল এটাই ফাইনাল।
- কে কে যাবে?
- আমি আর তুই। সাথে যদি রিয়াদ যেতে চায় যাবে। আমার তো মনে হয়না যে রিয়াদ যাবে আমাদের সাথে।
- কেনো যাবেনা?
- আরে বোকা। রিয়াদের লুনা ঢাকায়। আর ঐ শালায় লুনাকে ঢাকায় রেখে আমাদের সাথে কি বরিশাল যাবে?
- এটা ঠিক বলেছিস। তাহলে কবে যাবি?
- তুই বল কবে যাবি?
- টয়াদের সাথে যাবি? নাকি ওরা যাওয়ার পর যাবি?
- ওরা যাওয়ার পরই যাই।
- আচ্ছা ঠিক আছে। এখন যা তোর দিয়াকে ইমপ্রেস করতে থাক।
- আর ইমপ্রেস করা লাগবে না। যা ইমপ্রেস করার করেই ফেলেছি।
- আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে।
.
- কিরে তোরা দুইজন কি বলে এত হাসা-হাসি করছিস।
- আর বলিসনা টয়া। রুবেল তো বিয়া করার জন্য পাগল হয়ে গেছে।
- আসলেই? দিয়া তো রাজিই। তাহলে চল আজই যাই কাজী।
- আমার বন্ধু কি এমন? যে পালাইয়া বিয়ে করবে। সবাইকে মানিয়েই বিয়ে করবে। কি বলিস তুই বন্ধু?
- হুমম সেটাই তো।
.
এভাবে আড্ডা দিচ্ছিলাম। আর রিয়াদ একাই চলে গেছে লুনার সাথে দেখা করতে। আমাকে অনেক বলেছিলো যাওয়ার জন্য কিন্তু যেতে পারিনি। তাই একাই চলে গেছে। তাই রিয়াদকে কল দিলাম।
.
- কিরে কোথায় এখন?
- বন্ধু ধানমন্ডিতে আছি।
- লুনার সাথে দেখা করেছিস?
- সে আমার সাথেই আছে।
- ওরে সর্বনাশ। ভালই তো। তাড়া-তাড়ি চলে আসিছ বাসায়।
- আচ্ছা ঠিক আছে দোস্ত।
.
অনেকক্ষণ হয়ে গেলো আমার বউটাকে দেখছিনা। কোথায় সে? আমার রুমে গেলাম দেখি সে ঘুমাচ্ছে। অবেলায় ঘুমাচ্ছে কেনো? শরীর খারাপ হলো নাকি। তাই পাশে গিয়ে বসলাম। কপালে হাত দিয়ে দেখলাম। না কপাল তো ঠান্ডাই। আমি বসে ছিলাম তার পাশে এবং বসে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম। একটু পরই তার ঘুম ভেঙে যায়।
.
- এই কখন এসেছেন? আমাকে ডাকলেন না কেনো?
- দেখলাম ঘুমাচ্ছো। তাই আর ডাকি নাই। তুমি এই অবেলায় ঘুমাচ্ছো কেনো? শরীর খারাপ হয়েছে?
- না। এমনি ঘুম চলে আসছিলো।
- ওহহহ। এখন উঠো একটু পরেই মাগরিবের আজান দিয়ে দিবে।
- জ্বি উঠতেছি। আর আপনি কিন্তু বলেছিলেন নামাজ পড়া শুরু করবেন। কিন্তু এখনো কিন্তু তা করেননি।
- আমার বউটা তো পড়ে। আর আমি জানি আমার বউয়ের মোনাজাতে আমি থাকি। আর অবশ্যই নামাজ পড়বো।
- হুমম নামাজ পড়বেন। মন ভাল থাকবে।
.
নীলা উঠে আমার পাশে বসে। আমি আলতো করে তার কপালে একটা চুমু একে দেই। নীলা একটু লজ্জ্বা পেয়ে মাথাটা নিচু করে ফেলে। বসে বসে তার চুল গুলো হাত দিয়ে ধরছিলাম। আমার কাছে এই জিনিষটা অনেক ভাল লাগতো কেনো জানি। আর আমার ভাল লাগার প্রতিটা জিনিষই নীলা পছন্দ করতো। কিছুক্ষণের মধ্যে মাগরিবের আজান দিয়ে দেয়। নীলা চলে গেলো নামাজ পড়তে। আমিও সেইদিন মসজিদে গিয়ে মাগরিবের নামাজটা পড়ে আসি।
.
(চলবে)
.
.
লেখাঃ হৃদয় নাদিম

Comments