রাতের বেলায় ছাদের মধ্যে পার্টি শুরু হয়। রবিন এবং রিমন দুইজনই সব কিছু তৈরী করে। আমরাও ছিলাম সাথে ওদেরকে সাহায্য করছিলাম। কাঠ গুলো পুড়িয়ে কয়লা বানাতে গিয়ে ধুয়ায় চোখ জ্বলছিলো সবার। তারপরও মজাই হচ্ছিলো সবার। ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে ছিলাম। টয়ার স্বামীর সাথে কথা বলছিলাম। কথা বলার সময় নীলার আব্বু কল করে আমাকে।
.
- আসসালামু ওয়ালাইকুম আংকেল। কেমন আছেন?
- আলহামদুলিল্লাহ্ ভাল আছি। তোমরা কেমন আছো বাবা?
- জ্বি আংকেল আমরাও ভাল আছি।
- মিরপুর আসছো কখন?
- জ্বি আংকেল শুক্রবার আসবো।
- আচ্ছা এসো। তোমাদের দেখার জন্য তোমাদের চাচারা এসেছেন।
- ওহহহ। আচ্ছা আংকেল আমরা চলে আসবো। নীলার সাথে কথা বলেছেন?
- নীলাকে তো অনেকক্ষণ যাবত কল করছি কিন্তু কল ধরছে না।
- আসলে আংকেল আমরা ছাদে। নীলার মোবাইল মনে হয়ে রুমে চার্জে দেয়া।
- ওহহহ আচ্ছা।
- আমি নীলাকে দিচ্ছি। কথা বলেন।
- আচ্ছা বাবা দাও তাহলে।
.
পরে নীলাকে ডেকে মোবাইলটা দিলাম। নীলা তার আব্বুর সাথে কথা বলে। আমিও নীলার পাশে দাঁড়িয়ে তার হাতটি ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আংকেল তো এখন হবু শ্বশুর হয়ে গেছেন। কিন্তু তাকে আংকেল বলেই ডাকি। আর মনে হয়না বাবা বলে ডাকতে পারবো। কারণ প্রথম থেকেই উনাকে আংকেল বলে ডাকি। এখন হঠাৎ করে বাবা বলে ডাকাটা একটু কেমন জানি দেখায়।
.
- কি বললো?
- বলেছে সাবধানে থাকার জন্য।
- ওহহহ।
- হ্যা। আচ্ছা আপনি আব্বুকে কি বলে ডেকেছেন?
- কেনো? আগে যা বলে ডাকতাম তাই বলে ডেকেছি।
- আব্বু কিন্তু এটাও বলেছেন যে আপনি আব্বুকে আংকেল বলে ডেকেছেন।
- তাহলে কি বলবো?
- শ্বশুর কে মানুষ কি বলে ডাকে?
- আচ্ছা আসতে আসতে ঠিক হয়ে যাবে। এখন তো আর হুট করে বাবা বলে ডাকতে পারবো না।
- আমাকে তো ঠিকই বউ বলে ডাকেন।
- তুমি তো আমার বউ। তাই না?
- জ্বি জামাই। কিন্তু আব্বু-আম্মুকে কিন্তু এখন আর আংকেল - আন্টি বলে ডাকা যাবে না।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
- জ্বি।
.
- হৃদয়।
- হুমম দোস্ত বল।
- কাকা ডাকে তোকে।
- কেনো?
- জানিনা।
- আচ্ছা যাচ্ছি। তোরা কথা বল তাহলে।
.
পরে নিচে নেমে আসি। আব্বা ডাকলো কেনো হঠাৎ? রুমে গিয়ে দেখা করলাম তার সাথে। পরে বললেন আগামীকাল মামার সাথে দেখা করার জন্য। হয়তো মামার অফিসের চাকরির জন্য যেতে বলেছেন। শুনে খুশি হলাম। চাকরিটা করা দরকারই ছিলো। কেননা এখন তো আর সব খরচ বাসা থেকে চাইতে পারবো না। আর এমনিতেও আমার চাকরিটা খুবই দরকার ছিলো।
.
- আচ্ছা বউমার কোনো অসুবিধে হচ্ছে না তো?
- না আব্বা। অসুবিধে হবে কেনো?
- বউমাকে তো তেমন কিছু দিতেও পারলাম না।
- আহ আব্বা। সমস্যা নাই।
- তুই বললেই হলো সমস্যা নেই। এই নে কিছু টাকা রাখ। বউমাকে নিয়ে শপিং এ যাস।
- আব্বা তুমি কিনে এনো পছন্দ করে।
- আমি পছন্দ করে কি আনবো। আচ্ছা ঠিক আছে দেখি আমি এনে দিবো নে।
.
পরে আয়ানকে নিয়ে ছাদে চলে আসি আব্বার সাথে কথা বলে। আর আমি জানি যে আব্বা শাড়ি আনবে। কিন্তু আমি নিয়ে গেলে শাড়ির কথা বললে নীলা কথা শুনাবে। কিন্তু আব্বা পছন্দ করে নিয়ে এলে কিছু বলতে পারবে না। নীলাকে শাড়িতে অনেক ভাল লাগে। কিন্তু সে শাড়ি পড়তে চায় না। আর তাকে আগে শাড়ি পড়ানোই শিখাতে হবে। যাতে সবসময় শাড়ি পড়ে থাকতে পারে।
.
ভাগিনার সাথে দুষ্টামি করতে করতে ছাদে চলে যাই। এই দিকে ভাগিনা আমার চুল টানছিলো। পিচ্ছিটা এত রাগি কেনো? যেটা চাইবে ঐ তার হাতে না দিলে কান্না করে। নীলার সামনে গেলাম। নীলাকে দেখে আমার কোল থেকে নীলার কোলে চলে গেলো। বুঝলাম না কিছুই। আগে তো আমার কোলে থাকলে কারো কোলেই যেতে চাইতো না। আর এখন তার মামীর কোল থেকে আনা যায় না।
.
আয়ানকে নীলার কাছে রেখে আমি গেলাম বাকিদের কাছে। রুবেল, রিয়াদ অন্যপাশে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিলো। আমিও গেলাম ওদের সামনে। এবং আমিও সিগারেট টানলাম। অনেকদিন পর খেলাম শান্তিই লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো ভাল করে নিশ্বাসটা নিতে পারছি।
.
- রিয়াদ কেমন কাঁটালি লুনার সাথে?
- সেই দোস্ত। আসতেই ইচ্ছে করছিলো না।
- তাহলে আসলি কেনো? লুনার সাথেই থাকতি?
- হ। আমার তো বউ। যে যখন খুশি তার সাথে থাকতে পারবো।
- হাহাহা। বউ বানিয়ে ফেললেই তো হয়।
- বানাবো তো। কিন্তু এখন না। আরো কয়েকটা দিন যাক।
- হুমম সেটাই ভালো। ও ভাল কথা আমরা তো আবার বরিশাল যাচ্ছি।
- কবে?
- এইতো কয়েকদিনের মধ্যে। তুই যাবি না?
- মাথা খারাপ। লুনা ঢাকায় আর আমি যাবো বরিশাল। সম্ভব না দোস্ত।
- তুই যে যাবিনা সেটা আমরা আগেই জানতাম।
- লুনা না থাকলে যেতাম। বুঝতেই তো পারছিস।
- হুমম খুব বুঝতে পারছি। আচ্ছা তাহলে তোরা বিড়ি টান। আমি গিয়ে দেখি ঐ দিকটার কি খবর।
- আচ্ছা যা।
.
ঐ দিন পার্টিটা খুব ভালো মতোই জমে গেলো। সবাই খুব ইনজয় করলাম। পার্টি শেষ করে রুমে চলে আসি। এবং ঘুমিয়ে পড়ি। কারণ সকালে আবার মামার অফিসে যেতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে ৯ টায় বের হলাম বাসা থেকে। মামার অফিসটা আবার গুলশানেই ছিলো। তাই যেতে একটু সময় লাগলো। মামার অফিসের সামনে গিয়ে মামাকে একটা কল দিলাম।
.
- হ্যালো আসসালামু ওয়ালাইকুম মামা।
- ওয়ালাইকুম সালাম।
- মামা আমি তো অফিসের গেইটের সামনে।
- আচ্ছা দাঁড়া আমি লোক পাঠিয়ে দিচ্ছি। তুই তার সাথে আমার রুমে চলে আসিস।
- আচ্ছা মামা।
.
১০ মিনিট অপেক্ষা করলাম। একটু ভদ্র ভাবেই আসতে হয়েছিলো। কিছুক্ষণ পর মামার সহকারী লোক চলে আসেন। এবং তার সাথে মামার রুমে গেলাম। আমি এই প্রথম বার মামার অফিসে এসেছি। তাই চিনতাম না। একটু পরে গিয়ে মামার সাথে দেখা হয়।
.
- সকালে নাস্তা করে এসেছিস?
- না মামা।
- এটার জন্য তুই আমার কাছে মার খাবি। ১১ টা বাজে এখনো সকালের নাস্তা করিসনি কেনো?
- আমি তো সকালে একটু দেড়ি করেই নাস্তা করি মামা।
- চুপ। চল আমার সাথে। আগে নাস্তা করে তারপর কথা হবে।
.
পরে মামা আমাকে রেস্টুরেন্ট এ নিয়ে গেলেন। এবং সকালের নাস্তা করালেন। মামা আমার পাশে বসে ছিলেন। এবং যা যা অর্ডার করেছি সব গুলোই খেতে হলো। নাস্তা শেষ করে মামার সাথে আবারো তার অফিসে চলে গেলাম। এবং মামা বললেন গ্রাফিক্সের কাজের জন্য একটা লোক লাগবে। আর ঐ কাজটাই আমাকে করতে বলেন।
.
আমি এস এস সি পরিক্ষার পরই গ্রাফিক্সের কোর্সটা কমপ্লিট করেছিলাম। তাই আমার ততো সমস্যা ছিলো না। আর সেলারিও আলহামদুলিল্লাহ্ ভালই ছিলো। মামা ঐ অফিসের খুব ভাল পর্যায় ছিলেন। আর তিনিও গ্রাফিক্স নিয়েই কাজ করতেন। সেইদিনই মামা আমাকে দেখিয়ে দিলেন কিভাবে কি করতে হবে। আমি যেহেতু আগে থেকেই জানতাম তাই বেশি সময় লাগেনি বুঝতে।
.
- আচ্ছা তাহলে এখন বাসায় চলে যা। আর তোর তো ল্যাপটপ আছেই। চাইলে বাসাতেও কাজ কমপ্লিট করে ফেলতে পারবি। তবে অফিসে কিন্তু প্রতিদিনই আসতে হবে।
- হুমম ঠিক আছে মামা।
- নীলা কেমন আছে?
- জ্বি মামা ভাল আছে।
- শোন ভাগ্নে। বউকে সবসময় যত্নে রাখবি। কিছু চাওয়ার আগেই যেনো সব কিছু পেয়ে যায়। ঐ দিকে খেয়াল রাখবি।
- আচ্ছা মামা।
- কিছু টাকা রাখ। বাসায় মিষ্টি নিয়ে যাবি এবং নীলার জন্য কিছু নিয়ে যাবি। আর শোন বউকে সবসময় কিছু না কিছু গিফট্ করবি। তাতে ভালবাসা বাড়বে।
- হুমম ঠিক আছে মামা।
- নীলা যা যা পছন্দ করে মাঝে মাঝে তা নিয়ে যাবি। খুশি হবে তাতে।
- মামা। তুমিও কি মামীর জন্য মামীর পছন্দের সব কিছু নিয়ে যেতে?
- হ্যা। ভুলে না নিয়ে গেলে। অনেক রাগ করতো তোর মামী।
- হুমম। মামী অনেক লাকি।
- আচ্ছা এখন তাহলে বাসায় চলে যা। কাল তো শুক্রবার। অফিস বন্ধ থাকবে। শনিবার থেকে অফিসে আসবি।
- আচ্ছা মামা। আসি তাহলে।
.
মামার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হই অফিস থেকে। মামার কথা শুনে খুবই ভাল লাগে। এবং মিষ্টির দোকানে গিয়ে মিষ্টি নিলাম। এবং নীলার জন্য ফুল নিলাম। মামার কথা অনুযায়ী কাজটা করলাম। মামা কিন্তু ঠিকই বলেছেন। আর যেহেতু জবটা হয়েই গেছে। তার মানে এখন আমি নিশ্চিন্ত। আর আমাদের বিয়ের জন্য তিন বছর সময় নিয়েছিলো। কিন্তু আমি এত বছর অপেক্ষা করতে পারবো না। তাই বাসায় গিয়ে বলবো সময়টা যেনো তাড়া-তাড়িই এগিয়ে নিয়ে আসে। বাসায় গিয়ে পৌঁছালাম। এবং বাসায় ডুকেই মা'য়ের হাতে মিষ্টির প্যাকেটটা দিলাম। এবং বললাম যে আমার জবটা হয়ে গেছে। মা খুব খুশি হয়েছেন কথা শুনে।
.
- আব্বা কোথায় মা?
- তোর আব্বা তো এখনও আসেনি।
- ওহহ আচ্ছা। নীলা কোথায়?
- দেখ রুমে আছে হয়তো।
- আচ্ছা মা। নীলার সাথে দেখা করে আসি।
.
তারপর রুমে গেলাম। আমার রুমটা গুছাচ্ছিলো। তার সামনে গেলাম। হাতটি পিছনেই রেখেছিলাম। যাতে ফুল গুলো না দেখতে পায়।
.
- নীলা। কি করো?
- এইতো কিছুই না। আপনি চলে এসেছেন?
- হ্যা। কেনো মিস করছিলে?
- হুমম খুব। নাস্তা করেছেন?
- হ্যা বাবা করেছি।
.
ফুল গুলো তার হাতে দিলাম। সে ফুল গুলো হাতে নেয় এবং খুব খুশি হয় ফুল গুলো দেখে। আমি বললাম যে আমার চাকরিটা হয়েছে। সেটা শুনে নীলা আরো খুশি হয়।
.
- আমার গিফট্ কোথায়?
- কিসের গিফট্?
- বাহ রে। চাকরি পেয়ে গেলাম। গিফট্ দিবে না কিছু।
- কি গিফট্ চাই বলুন।
- আঁদর লাগবে।
- ইশশ। শখ কতো।
- আঁদর দিবে না?
- জ্বি না।
- সত্যি দিবে না তো?
- না এখন না।
.
অভিমান করে রুম থেকে চলে আসছিলাম। সাথে সাথে আমার হাতটি ধরে। এবং কপালে একটা চুমু একে দেয়। আমিও আমার বউটার কপালে চুমু একে দেই। তারপর বুকে জড়িয়ে নিলাম নীলাকে। কিছুক্ষণ বুকে নিয়েই দাঁড়িয়ে ছিলাম। একটু পর আপুর কাশির শব্দ শুনে নীলাকে তাড়া-তাড়ি ছেড়ে দিলাম।
.
- এত ভালোবাসা আড়ালে দেখাতে হয়।
- চুপ থাক আপু।
- এত খুশি কেনো?
- খুশির কারণ তো অনেকটাই আছে। কোনটা আগে বলবো?
- প্রথম কারণটাই বল।
- আমি জব পেয়ে গেছি।
- বাহ। মিষ্টি কোথায়?
- ফ্রিজে দেখ। যা সবার জন্য মিষ্টি নিয়ে আয় আপু।
- পারবো না। তুই চাকরি পেয়েছিস তোর বউকে বল সবার জন্য নিয়ে আসতে।
- হুহ। জানু তুমিই যাও।
- মুখে কিছু আটকায় না আপনার?
- না আটকায় না।
.
পরে নীলা আমাদের সবার জন্য মিষ্টি নিয়ে এলো। আমরাও মিষ্টি খেলাম। সবাইকে খাইয়ে দিলাম আমি নিজেই। ততক্ষণে আব্বাও চলে আসেন। প্রথমে আব্বা-মা কে খাইয়ে দেই। খুব খুশি লাগছিলো।
.
(চলবে)
.
.
লেখাঃ হৃদয় নাদিম
Comments
Post a Comment