"ব্যাচেলর" (৩৪ তম পর্ব)



সকালে উঠে চলে গেলাম অফিসে। সেইদিন ছিলো অফিসের প্রথম ডিউটি। সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত ছিলো ডিউটি। আমার অফিস ছিলো বলে সবাইকে নিয়ে মিরপুরে আসতে পারলাম না। তাই বাকিরা নাস্তা করে মিরপুর চলে আসে। সাথে টয়ারাও আসে আমাদের ঐ বাসায়। টয়াদের ও আজ বরিশালে ব্যাক করতে হবে। সময় গুলো কিভাবে যেনো খুব তাড়া-তাড়ি চলে যাচ্ছিলো। রুবেল ও রবিন সেইদিন মার্কেটে যায়নি। পরেরদিন থেকে যাবে মার্কেটে।
.
অফিসের কাজ শেষ করে ২ ঘন্টা আগেই অফিস থেকে বের হয়ে গেলাম। আজ যেহেতু টয়া'রা চলে যাবে। তাদের তো এগিয়ে দিতে হবে। তাই অফিস থেকে বের হয়ে বাসার দিকে রওনা দিলাম। নীলা তাদের বাসায়। আর আমরা আমাদের বাসায়। আমি বাসায় গিয়ে নীলার আব্বু-আম্মুর সাথে দেখা করলাম। অনেকদিন পর দেখা হয় তাদের সাথে। আর এখন তো সম্পর্কটা তো একটু গভীর হয়েছে।
.
মিরপুর থেকে অফিসটা কিছুটা দূরে হয়ে গেছে। বাসাটা চেঞ্জ করা দরকার। কিন্তু পরে রুবেলের সমস্যা হয়ে যাবে। তাই আর এই টপিক নিয়ে কথা বলিনি ওদের সাথে। কিন্তু বাসাটা চেঞ্জ করবো কারণ দুই রুমে আমাদের হচ্ছে না এখন। আর শ্বশুর বাড়িতেও থাকতে পারবো না। এই দুইটাই আসল কারণ। সাড়ে ছয়টায় টয়াদের সদরঘাট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসলাম। আমার সাথে রুবেলকে নিয়ে যাই।
.
- আচ্ছা দোস্ত আল্লাহ্‌ হাফেজ। বাসায় গিয়ে কল দিস কিন্তু।
- আচ্ছা যা। তোদের সবাইকে মিস করবো রে।
- তোদেরকেও মিস করবো রে।
.
টয়ার জামাইর সাথে কথা বললাম। এবং তাদেরকে বিদায় দিয়ে বাসায় ব্যাক করলাম। এবং রুবেলের সাথে বাসা চেঞ্জ করা নিয়ে কথা বললাম। একটা সমস্যা ছিলো যে নীলার সাথে প্রতিদিন দেখা নাও হতে পারে যদি অন্য বাসায় যাই আমরা। তারপরও অনেক ভেবে দেখলাম। বাসায় চলে যাওয়ার সময় আংকেলের সাথে গেইটের সামনে দেখা হয়ে যায়। এবং জোড় করেই তাদের রুমে নিয়ে গেলেন।
.
- বাবা তোমার অফিসটা কোথায় যেনো?
- আংকেল। ধানমন্ডিতে।
- তাহলে তো আসা যাওয়া খুব কষ্ট হয়ে যাবে তোমার।
- হুমম তা কিছুটা কষ্ট হবে। সমস্যা নেই। আর একটি কথা আংকেল। আমরা বাসাটা চেঞ্জ করতে চাচ্ছি।
- কেনো? বাসা চেঞ্জ করবে কেনো? কোনো সমস্যা হয়েছে?
- না আংকেল তেমন কিছুই হয়নি। আসলে উপরের ফ্লাটে তো ২ টা রুম। আর এখন তো আমাদের ৪ টা রুম দরকার। যেহেতু আমরা চার জন একসাথে আছি।
- এই সমস্যা? এটা তো আগে বললেই হতো। তোমাদের পাশের ফ্লাটের ভাড়াটিয়াদের বলে দেবো অন্য বাসায় চলে যেতে। তোমাদের দুই ফ্লাট হলে হবে না?
- তা হবে। কিন্তু আংকেল।
- আর কোনো কিন্তু নয়। আমি নীলাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
.
পরে আংকেল রুমে গিয়ে নীলাকে ডেকে পাঠায়। নীলার সাথে দেখা হয়ে গেলো। নীলার সাথে কথা বললাম কিছুক্ষণ চা খেতে খেতে। আমি অর্ধেক খেয়ে নীলাকে দেই। নীলাও চা খেলো। কথা শেষ করে আমাদের রুমে চলে আসলাম। ৪ তলায় দুইটা ফ্লাট ছিলো। দুই রুম করে ছিলো প্রতিটা ফ্লাটে। কিন্তু এই দুই ফ্লাটের মাঝে শুধু বাধা হয়ে আছে দেয়াল। সমস্যা নেই তাতে।
.
- সুমা।
- জ্বি ভাইয়া।
- তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো?
- না তা হচ্ছে না। তবে সাথে ভাবি থাকলে আমার বেশি কষ্ট হতো না।
- কাজের লোক রেখে দেই তাহলে।
- আরে না ভাইয়া তা কোনো দরকার নেই। আমি এমনেই মজা করলাম।
- ওহ। খুব শীগ্রই নীলা চলে আসবে। ঠিক আছে?
- হুমম ঠিক আছে ভাইয়া।
.
- বন্ধু শুধু ভাবিকে নিয়ে আসলে হবে না। আমার আর রিয়াদের কথাও ভাইবা দেখিস।
- তোদের কথা ভেবেই তো আর একটা ফ্লাট নিলাম।
- আসলেই তো। এটা তো খেয়াল ছিলো না।
- আমি সবার কথাই ভাবি। বুঝছিস?
- হুমম দোস্ত।
- বাসায় এসে রিয়াদকে দেখলাম না। কোথায় গেছে ও?
- আর কোথায় যাবে? যানিসনা ওর যাওয়ার রাস্তা তো একটাই আছে।
- লুনার সাথে দেখা করতে গেছে তাই না?
- হাহা। দেখা করুক কয়টা দিনই তো আছে ঢাকাতে।
.
বাসার সবাইকে অনেক মিস করছি। সবাইকে রেখে আবার চলে আসতে হলো। মা'য়ের কথা খুব মনে পড়তে ছিলো। তাই মা'কে কল দিলাম।
.
- হ্যালো মা। কি করো?
- বইসা আছি বাবা। অফিস থেকে কখন আসছোত বাসায়?
- আজ ৪ টা বাজেই চলে আসছি। টয়াদের আবার এগিয়ে দিয়ে আসলাম।
- ওরা চলে গেছে?
- হ্যা মা।
- বউমারা ভাল আছে?
- হ্যা ভাল আছে। তোমার এক বউমা আছে চোখের সামনে অন্যজন তাদের বাসায়।
- আচ্ছা জবটা তো মাত্র শুরু করলি। আর তোর বাবার সাথে কথা বলে দেখবো নে।
- হুমম ঠিক আছে। আপুরা কি করে?
- তোর আপুরাও বিকেলে বাসায় চলে গেছে।
- আজই চলে গেছে?
- হ্যা। বাসাটা একদম খালি লাগছে এখন।
- আবার ভরে যাবে চিন্তা কইরো না। হাহা।
.
মা'য়ের সাথে কথা বললাম। মা বুঝে গেছে আমি কি বুঝাতে চেয়েছিলাম। যাইহোক আমিও চেয়েছিলাম এটা। আর এটা হলে খারাপ হবে না। রবিনদের বাসায় তো সুমাকে মেনেই নিয়েছে। খালা বলেছিলো আমাদের সাথে না আসতে। কিন্তু রবিন আমাদের সাথেই থাকবে তাই চলে এসেছে। একটু পরে কলিংবেলের শব্দ পেলাম। দরজা খুলে দেখি রিয়াদ।
.
- কিরে কই গেছিলি?
- কই যামু আবার। আশে পাশেই ছিলাম। তুই অফিস থেকে কখন এসেছিস?
- এইতো ৪ টা বাজে আসলাম। পরে টয়াদের এগিয়ে দিয়ে আসলাম।
- ওহহহ। ও এই নে।
- কি এটা?
- খুলে দেখ কি।
.
পরে বক্স খুলে দেখি নুডুলস্। আহ ঘ্রাণটা কেমন জানি চেনা চেনা লাগছিলো। আমি প্রথমে খেলাম দাঁড়িয়ে।
.
- লুনা এনেছিলো তোর জন্য?
- আর মানুষ খুঁজে পাইলি না। লুনা আনবে আমার জন্য। তাও আবার রান্না করে।
- তাহলে কে রান্না করছে?
- তোর বউ।
- মানে?
- মানে নীলা। উপরে উঠার সময় আমার হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। বললো যে সবাইকে খেতে।
- এটাই ভালবাসা বুঝলি।
- হুমম খুব।
.
নুডুলস খেতে খেতে নীলাকে কল দিলাম। তার সাথে একটু কথা বললাম। পরে সবাই মিলে খেলাম একসাথে। নীলার হাতে যাদু আছে। তা নাহলে এত মজা করে কিভাবে রান্না করে সে। রাতে কিছুক্ষণ আড্ডা মেরে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে আবার অফিস আছে। রিয়াদ আগামিকাল  সিলেটে যাবে ওদের বাসায়। আমাদেরকে অনেক রিকোয়েস্ট করেছে কিন্তু সম্ভব নয় যাওয়াটা। বাসায় আগামিকাল সুমা একা থাকবে। তাই নীলাকে বলে দেই যাতে সুমার সাথে থাকে।
.
এভাবেই শুরু হলো আমাদের নতুন জীবন। ব্যাচেলর থেকে এখন ব্যাচেলর পার্সেন্ট হয়েছি। এমনও হতে পারে বিবাহিত ব্যাচেলর ও হয়ে যাবো। বাসে যাওয়ার সময় নীলার সাথে ফোনে কথা বলতে বলতেই যাওয়া হয়। অফিসের সামনে গিয়ে ফোন রেখে দেই। অফিসে গেলাম অনেক গুলো কাজ জমা হয়ে আছে। অল্প অল্প করে কাজ গুলো কমপ্লিট করে ফেলি।
.
- কি খবর ভাগ্নে?
- জ্বি মামা। খুব ভাল।
- কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো?
- না মামা।
- লাঞ্চের সময় হয়েছে। খাবার নিয়ে আসিস তুই?
- না মামা। হোটেল থেকে খেয়ে আসি দুপুরে।
- আজ তোর মামী বাসা থেকে খাবার পাঠিয়েছে। দুই মামা-ভাগ্নে একসাথেই লাঞ্চ করবো আজ।
- ঠিক আছে মামা। তুমি যাও আমি আসতেছি।
- আচ্ছা আমার রুমে চলে আসিস।
.
একটু কাজ বাকি ছিলো। তাই ঐটা শেষ করে মামার সাথে লাঞ্চ করলাম। খাওয়ার সময় নীলা কল দিয়েছিলো। প্রথমে কলটা ধরিনি। পরে আবার দেয়। এবং মামা বললেন ফোন রিসিভ করতে। পরে একটু সাইডে এসে কথা বলি নীলার সাথে।
.
- লাঞ্চ করেছেন?
- করতেছিলাম। তুমি করেছো?
- হ্যা করেছি। আচ্ছা তাহলে করেন। লাঞ্চ করে কল দিয়েন।
- আচ্ছা। আল্লাহ্‌ হাফেজ।
- হুমম আল্লাহ্‌ হাফেজ।
.
পরে গিয়ে খাওয়া শেষ করলাম। উঠে চলে আসলাম। কাজ করতেছিলাম আর নীলার সাথে কথা বলতেছিলাম। কথা বলতে বলতে নীলা ঘুমিয়ে যায়। পরে ফোন রেখে দেই আমি। এভাবে সাত দিন পাড় হয়ে গেলো। রিয়াদও সাতদিন পর সিলেট থেকে চলে আসে। খুব ভাল ভাবেই কাটছিলো আমাদের দিন গুলো।
.
আমরা নতুন ফ্লাটে চলে এলাম। রুমটা একটু গুছিয়ে ফেলি। মোটা-মুটি কিছু আসবাবপত্র দিয়ে রুম গুলো সাজিয়ে ফেলি কয়েক মাসের মধ্যে। চারটা রুমের জন্য চারটা খাট আরো অনেক কিছু যা যা দরকার সব কিছু নিয়ে এলাম। সবাই তখন যার যার রুমেই থাকতো। কিন্তু আড্ডাটা আগের মতোই ছিলো। ১২ টা পর্যন্ত আড্ডা মেরে পরে ঘুমাতাম যার যার রুমে। এক ফ্লাটে আমি আর রবিনরা ছিলো। অন্য ফ্লাটে রিয়াদ আর রুবেল থাকতো। মাঝে মাঝে রুবেল,রিয়াদ ও আমি একই রুমে থাকতাম। যেদিন ছুটি থাকতো।
.
রিয়াদ ও ততদিনে একটা জব পেয়ে যায়। আল্লাহ্‌র রহমতে আমাদের দিন গুলো খুব ভাল ভাবেই কাটছিলো। আরো ভাল কাটতো যদি নীলা আমার পাশে থাকতো। কিন্তু সে এখন আমার পাশে নাই।
.
- কিরে দোস্ত কি অবস্থা?
- এইতো রিমন। তোর কি খবর?
- হুমম ভাল। দোস্ত তোদের বাসায় আসছি বিকেলে।
- বাসা চিনিস?
- নাহ।
- সমস্যা নাই তুই আমার অফিসের সামনে আইসা পর। একসাথে বাসায় যাবো নে।
- আচ্ছা তোর অফিসের এড্রেসটা মেসেজ করে পাঠিয়ে দে।
.
আমি অফিস শেষে রিমনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। একটু পরে রিমন আসে। চা-সিগারেট খেয়ে বাসে উঠি। দুই বন্ধু কথা বলতে বলতে বাসায় চলে আসি। রিমনকে দেখে রুবেল,রিয়াদ খুব খুশি হয়। সবাই একসাথে আড্ডা মারলাম।
.
(চলবে)
.
.
লেখাঃ হৃদয় নাদিম

Comments