দিনটা মেঘলা ছিলো। সারা রাত বৃষ্টি নামে। ঘুমটাও বেশ হয়েছিলো রাতে। ঘুম থেকে যেনো সকালে উঠতেই ইচ্ছে করছিলো না। শুক্রবার ছুটির দিনে এত সকাল সকাল কে'ই বা উঠতে চায়। গতকাল রাতে ঘুমাতে ঘুমাতে ৪ টা বেজে যায়। আমি, রুবেল, রিয়াদ এবং রিমন চার জন রিয়াদের রুমে ঘুমিয়েছিলাম। কারণ আমি যে ফ্লাটে থাকতাম ঐ ফ্লাটে রবিন এবং ওর বউ ও থাকতো। তাই আগে তেমন মজা হতো না। কিন্তু এখন আর ঐ জিনিষটা নেই। আমি বেশির ভাগ সময়ই রিয়াদ- রুবেলদের সাথে থাকতাম।
.
বৃষ্টির দিনে সকাল বেলায় খিচুড়ি আর গরুর মাংস খেতে কার না ভাল লাগে। রাতে কথাটি ভেবেছিলাম। নীলাদের বাসায় সকালে খিচুড়ি আর গরুর মাংস রান্না করে। এবং আমাদের জন্যও নিয়ে আসেন। প্রায়ই সময় ভাল কিছু রান্না করলে আমাদের জন্য নিয়ে আসতেন। আমরাও মজা করে খেতাম। আগে তো ছিলাম তাদের বাসার ভাড়াটিয়া আর এখন তো আত্বীয় হয়ে গেছি। তাই আগের থেকে আপ্যায়নটাও বেড়ে গেছে।
.
- আসসালামু ওয়ালাইকুম আন্টি।
- ওয়ালাইকুম সালাম। কেমন আছো তোমরা?
- জ্বি আলহামদুলিল্লাহ্।
- আজ তো শুক্রবার। তোমরা সবাই বাসায় থাকবে। আজ দুপুরে আমাদের বাসায় খাবে।
- আচ্ছা আন্টি।
.
আন্টি বলে চলে গেলেন। আমিও পরে সবাইকে জানিয়ে দিলাম। আগে তো খালি হাতেই তাদের বাসায় চলে যেতাম কিন্তু এখন তো তা পারবো না। শ্বশুর বাড়ি বলে কথা। বারান্দায় গেলাম বাহিরে তাকিয়ে দেখলাম তখনো বৃষ্টি হচ্ছে। আজ কি সারাদিনই বৃষ্টি হবে নাকি? কিছুক্ষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখলাম। ঠান্ডাও ভালই পড়েছিলো। একটু পর নীলাকে কল দিলাম।
.
- হ্যালো। কি করে আমার বাবুটা?
- আপনার বাবু ঘুমাচ্ছে।
- কি? এখনো ঘুমাচ্ছো? কয়টা বাজে ঘড়ি দেখছো?
- আরে বাবা। আমি অনেক আগেই উঠেছি। নাস্তা করে শুয়ে আছি।
- ওহহহ। আসো দেখা করবো।
- আপনি বাসায় আসেন। এখন তো আর বাসায় আসতে কোনো সমস্যা নাই।
- তারপরও।
- তাহলে কি করবো? বলেন।
- ভিডিও কল দেই। হোয়াটস্ অ্যাপ অন করো।
- করতেছি।
.
ভিডিও কলে কথা বললাম আমার বউটার সাথে। একটা জিনিষ ভাল লাগতো যে সবার সামনেই কথা বলতে পারতাম। তখন কোনো লুকোচুরি ছিলো না কিছুই। কথা বলা শেষ করে আমার রুমে গেলাম। কয়েকটা শার্ট ধুতে হবে। শুক্রবার ছাড়া সময়ও পেতাম না। তার মাঝে আজ বাহিরে রৌদ ও নেই। শার্ট শুকাতে সময় লাগবে অনেক।
.
- বন্ধু। কইরে তুই?
- ভেতরে আয়।
- কি করছিস?
- তেমন কিছু না। কেনো?
- না দোস্ত। আমার কিছু টাকা লাগবে। দিতে পারবি?
- আজব। লাগলে নিয়ে নিবি। আমাকে বলার কি আছে? দেখ তো মানিব্যাগে কত টাকা আছে?
- দাঁড়া দেখছি।
- বন্ধু ৫ শত টাকা আছে শুধু। থাক তাহলে রিয়াদের কাছ থেকে নিয়ে নিবো নে।
- তোর কত টাকা লাগবে?
- হাজার দু এক।
- তাহলে এক কাজ কর। ৫ হাজার টাকা ক্যাশআউট করে তুই দুই হাজার টাকা নিয়ে ৫ কেজি মিষ্টি নিয়ে আসবি।
- মিষ্টি কেনো?
- আজ নীলাদের বাসায় দাওয়াত না। খালি হাতে কি যাবো নাকি?
- ওহহহ আসলেই তো।
- আচ্ছা তাহলে মোবাইল নিয়ে যা। পিন কোড তো জানিসই।
- হুমম আচ্ছা ঠিক আছে যাচ্ছি।
- শোন বাহিরে তো বৃষ্টি। ছাতা নিয়ে যা।
- ঠিক আছে বন্ধু যাইতেছি।
.
রুবেল চলে গেলো বাহিরে। আমিও শার্ট গুলো ধুয়ে গোসল করে বের হয়ে গেলাম। ঠান্ডাও লাগছিলো অনেক। তাড়া-তাড়ি করে কম্বলের ভেতরে ঢুকে গেলাম। একটু পরে টয়া কল দেয়। মাথার উপর থেকে কম্বল নামিয়ে টয়ার কল রিসিভ করলাম।
.
- হ্যালো। দোস্ত কেমন আছিস?
- হুমম ভাল। তুই কেমন আছিস?
- হ্যা ভাল আছি।
- শোন দোস্ত আগামীকাল আমাদের ফ্লাইট।
- কি বলিস? কালই চলে যাবি?
- হ্যা রে দোস্ত। তোদেরকে অনেক মিস করবো রে।
- আমরাও মিস করবো। আর কাঁদছিস কেনো বোকা?
- না এমনি। ভালো থাকিস তোরা। ওদেরকে জানিয়ে দিস।
- আচ্ছা দোস্ত ঠিক আছে। তুই মন খারাপ করিস না। পৌঁছে জানাইস কিন্তু।
- আচ্ছা আল্লাহ্ হাফেজ।
- আল্লাহ্ হাফেজ।
.
কথাটি শুনে আসলেই একটু খারাপ লেগে যায়। টয়ার সাথে মজার স্মৃতি গুলো খুব মনে পড়ে যায়। কতোই না একসাথে দুষ্টামি ফাজলামি করছি। পরে সবাইকে জানালাম কথাটি। সবাই একটু মন খারাপ করে। আবার কবে না কবে দেখা হয়। বেঁচে থাকলে একদিন দেখা হবেই। রুবেল চলে আসে মিষ্টি নিয়ে। আমরাও কিছুক্ষণ পরে নীলাদের বাসায় চলে যাই।
.
- কেমন আছো আদ্রিতা?
- ভাল আছি ভাইয়া।
- তোমার পড়া-শুনার কেমন চলছে?
- হ্যা ভাইয়া ভালো।
- তোমার আপু কোথায়?
- আপু তো রুমে। ডেকে দিবো?
- ওকে দেও।
- আমাকে চকলেট দিতে হবে। তাহলে ডেকে দিবো।
- আচ্ছা অনেক গুলো দিবো। ঠিক আছে?
- হুম ঠিক আছে।
.
একটুও মনে ছিলো না চকলেটের কথাটা। আমি দোকানে গেলে হয়তো চকলেট দেখলে নিয়ে আসতাম। কিন্তু দোকানে তো রুবেল গেছে। আর আমারও মনে ছিলো না। আমার ছোট শালিটা চকলেট অনেক পছন্দ করতো। আর বউ পছন্দ করতো আইস্ক্রিম খেতে। কিন্তু আমি এই দুইটার একটাও পছন্দ করতাম না। তারপরও এইগুলো নিয়ে আসতে ভাল লাগতো। একটু পর নীলা আসে। দূর থেকে দেখেই একটা হাসি দিলো। নীলা আমার পাশে এসে বসে।
.
- কখন আসলেন?
- এইতো মাত্র। এখন গোসল করলে?
- হুমম। ঠান্ডা অনেক।
- চুল ও তো এখনো ভেজা।
- শুকিয়ে যাবে।
.
পরে সবার সাথে কথা বললো। রিমন ভাবি ভাবি বলা শুরু করে দিলো। রিমন যে আমাদের বাসায় আসছে সেটা নীলা জানতো না। রিমনের সাথে ভালই মজা করলো। একটু পরে দুপুরের খাবার খেলাম সবাই একসাথে। ভালই লাগছিলো প্রায় অনেকদিন পর নীলাকে পাশে রেখে খেতে পেরে। খাওয়া শেষ করে আমরা সবাই একটু বাহিরে বের হলাম হাটতে। তখনও অল্প অল্প বৃষ্টি ছিলো। তবে হাটতে ভালই লাগছিলো। আদ্রিতার জন্য চকলেট নিয়ে আসলাম। আদ্রিতা চকলেট পেয়ে তো খুব খুশি। আমরা কিছুক্ষণ হেটে বাসায় চলে আসি। বাসায় গিয়ে রেস্ট নিলাম।
.
- দোস্ত বিড়ির প্যাকেটটা কই রে?
- রিয়াদকে জিজ্ঞাসা কর।
- আয় দোস্ত সবাই আজ একসাথে বিড়ি খাবো।
- আচ্ছা। অনেকদিন ধরেই তো খাওয়া হয়না। চল।
.
রিমন রবিনকেও ডেকে আনে। এবং ৫ জন মিলে সিগারেট খেলাম। অনেকদিন পর সবাই মজা করলাম। মাঝে মাঝে লুকিয়ে সিগারেট খাওয়ার মজাই আলাদা। আবার যদি সাথে বন্ধু বান্ধবরা থাকে। সিগারেটের ধুয়ায় পুরো রুম অন্ধকার হয়ে গেলো। ধুয়ায় চোখ জ্বলতে শুরু করলো।
.
- দোস্ত কাল বাসায় চলে যাবো।
- আরে আর কিছুদিন থেকে যা।
- না দোস্ত বাসায় দরকার আছে।
- কি দরকার?
- আম্মু একা বাসায়।
- কিছু হবে না।
- আরেক দিন আসবো।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
.
পরেরদিন সকালে উঠে অফিসে চলে গেলাম। অফিসের কাজের চাপে লাঞ্চ করতে একটু লেট হয়ে যায়। এভাবে চলতে চলতে দুই বছর হয়ে যায়। এবং এই দুই বছরে আমি একটা ভাল পজিশনে দাঁড়াতে পেরেছি। আর নীলাকেও বিয়ে করে বউ করে নিজের করে নিয়েছি। আর অন্যদিকে রুবেলও সবাইকে মানিয়ে দিয়াকে বিয়ে করে ঢাকায় নিয়ে আসে। রিয়াদের ব্যাপারটা তো অন্যরকম ছিলো। রিয়াদও রবিনের মতো পালিয়ে বিয়ে করে।
.
তবে সবাই ভাল আছি খুব। বিবাহিত জীবনটা আরো সুন্দর ভাবে কেটে যায়। নীলাও আপনি থেকে তুমি বলে ডাকে এখন। আমাদের বিবাহিত জীবনটা খুব সুন্দর ভাবেই কেটে যাচ্ছিলো।
.
- নীলা।
- হুমম বলো।
- কি করছো গো?
- কি আর করবো? আমার জামাইটার জন্য ফালুদা বানাচ্ছি।
- এই সত্যি?
- হুমম সত্যি।
.
পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম। নীলা ফালুদা বানাচ্ছে আমি তাকে জড়িয়ে ধরে তার ফালুদা বানানো দেখছিলাম।
.
অন্যদিকে রিয়াদ আর লুনা সবসময়ই লেগে থাকতো। এই ঝগড়া করছে একটু পরেই আবার মিলে যাচ্ছে। আসলেই এটাই হওয়া দরকার। ভালবাসায় রাগ অভিমান থাকেই। সেটা মুছে আবার ভালবাসায় আবদ্ধ হওয়ার নামই হচ্ছে ভালবাসা।
.
রুবেল আর দিয়ার মধ্যে কখনো ঝগড়া করতে দেখি নাই। ওরা সবসময়ই দু'জন দু'জনাকে খুব ভালবাসতো। আর ওদের ভালবাসা দেখে নীলা হিংসা করতো। আর বলতো আমি নাকি তাকে ভালবাসতাম না।
.
রবিন আর সুমার ব্যাপারটা তো অনেক আগে থেকেই শুনে আসছেন। ছোট ভাইটাও তার বউকে নিয়ে ভাল আছে। এত অল্প বয়সে এত বড় একটা কাজ সামলানো। এটাই তো অনেক বেশি ছিলো ওর জন্য।
.
টয়ার একটা ফুটফুটে বাবু হয়েছে। টয়া তার স্বামীর সাথে আমেরিকাতেই আছে। আল্লাহ্র রহমতে সবাই খুব ভাল আছে। টয়ার সাথে ঝগড়াটা আমার এখনো হয়। এবং সবসময়ই থাকবে।
.
রিমন এখনো সিংগেল আছে। আমার মনে হয় না যে ও কখনো মিংগেল হবে। ছ্যাকাটা ভাল ভাবেই খেয়েছিলো রিমন।
.
সবাই সবার জন্য দোয়া করবেন। যাতে সবাই ভাল থাকতে পারে। এবং সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। ব্যাচেলর গল্পটির সাথে থাকার জন্য।
.
.
লেখাঃ হৃদয় নাদিম
.
(((সমাপ্ত)))
Comments
Post a Comment