"ব্যাচেলর" (১৯ তম পর্ব)



- কি বাবা তোমার হাতে কি হয়েছে? ব্যান্ডেজ কেনো হাতে?
- আন্টি একটু ব্যথা পেয়েছি।
- কিভাবে ব্যথা পেয়েছো বাবা? দেখো তো কতখানি কেটে গেছে। তোমরা রুমে যাও বাবা।
- জ্বি আন্টি।
.
সবাইকে বলতে হয় রিয়াদের এক্সিডেন্টের কথা। বুঝলাম না শেষ পর্যায় বকা আমাকেই শুনতে হচ্ছে। যাক কি আর করার। রিয়াদের জন্য সবাই আফসোস করতেছে। কিন্তু আমার বউটা কোথায়। নীলাকে দেখতে পাচ্ছিনা। টয়াকে জিজ্ঞাসা করলাম।
.
- কিরে ও কোথায়?
- ও কে?
- তোর ভাবি। কোথায় সে?
- কেনো এত ভাবিকে খুঁজছিস কেনো? কিছু লাগলে আমাকে বল।
- আরে বোকা না। বল বা কোথায় সে?
- তোর বউ আমাদের জন্য লুডুলস রান্না করতেছে।
- আমার বউটারে এইখানেও রান্নাঘরে পাঠালি?
- আরে বাবারে। আমি বলিনি। তোর বউ নিজেই বলেছে। তোর নাকি নুডুলস পছন্দ। সে কারণে রান্না করছে।
- হ। আমার নাম আর সবার কাজ।
- হইছে এখন যা তোর বউয়ের কাছে যা।
- হ যামুই তো।
.
পরে রান্নাঘরে গেলাম। গিয়ে দেখি সে মনোযোগ দিয়ে নুডুলস রান্না করছে। নুডুলস এর ঘ্রাণে তো আমার খিদেই পেয়ে গেলো। তার পাশে গেলাম। আমাকে দেখে নীলা বলে।
.
- কখন আসছেন?
- এইতো মাত্রই।
- তো রান্নাঘরে কি করেন?
- কাউকে খুঁজতে খুঁজতে এখানে চলে এসেছি।
- বাহ। কাকে খুঁজত খুঁজতে এখানে চলে আসলেন?
- আমার মেয়ের আম্মুকে।
- ও আচ্ছা। আয়াতের আম্মুকে খুঁজতে খুঁজতে চলে এসেছেন?
- জ্বি। রান্না হয়নি?
- হ্যা আর একটু হবে।
- আচ্ছা তাহলে আমি এইখানে দাঁড়াই। তুমি রান্না শেষ করো।
- আচ্ছা।
.
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নীলার রান্না দেখছিলাম। তাকে একটু হেল্প করলাম। আমিও নুডুলস ভালো রান্না করতে পারি। তাই আমি রান্না করতেছিলাম। নীলা বলে যাক বিয়ের পর তাহলে নুডুলস রান্না করে খাওয়াবেন। একটু পর আন্টি এসে হাজির হয়। আন্টি এসে বলেন।
.
- কি বাবা তুমি রান্নাঘরে কি করো?
- এইতো আন্টি দেখছিলাম রান্না করা।
- ওহহহ আচ্ছা। তোমরা রুমে যাও। আমি রেঁধে দিচ্ছি।
- না থাকুক আন্টি। আপনার কষ্ট করতে হবে না। রান্না হয়ে গেছে প্রায়ই
- তাহলে তো ভালই। হৃদয় বাবা। টয়াকে আমাকে বলেছে সবকিছু।
- কি বলেছে আন্টি?
- বলেছে তোমার আর নীলার কথা।
- ইয়ে মানে আন্টি। টয়া কি বললো?
- থাক আর ইয়ে মানে করতে হবে না। আমিতো ভাবতেছি টয়ার সাথে সাথে তোমাদের বিয়েটাও সেরে ফেলবো।
- না। আন্টি এত তাড়া-তাড়ি কাজটা ঠিক হবে কি? আগে টয়ার বিয়েটাই হউক। পরে চিন্তা কইরেন।
- আচ্ছা যেটা ভালো হয় সেটাই হবে। এখন তোমরা রুমে যাও। আমি তোমাদের জন্য নুডুলস নিয়ে যাই।
- ঠিক আছে আন্টি।
.
আমি রান্নাঘর থেকে বাহির হয়ে গেলাম। আন্টি নীলার সাথে কি যেনো কথা বলে। পরে নীলা আর আন্টি মিলে আমাদের জন্য নুডুলস বেড়ে নিয়ে যায়। নীলা রিয়াদের অবস্থা দেখে অবাক হয়ে গেলো। সেও আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।
.
- আচ্ছা আমার দোষটা কোথায়? সবাই আমাকেই রাগ দেখাচ্ছো কেনো?
- কারণ আপনিই শয়তানের নানা। তাই।
- হইছে। এখন নুডুলস দাও। আর তর সইছে না।
- হুমম এটাই পারেন। শুধু খাবেন আর বাঁদরামি করবেন।
- হুহ। যাও খাবোই না।
- না খেলে মিস করবেন?
- নুডুলস মিস করতে চাই না। আগে খাবো পরে যে যে বোকা দেওয়ার বকা দিও।
- আচ্ছা নিন খান।
.
সবাই একসাথে নুডুলস খেলাম। বাহ সবাই প্রশংসা করে। নীলার রান্না আসলেই খুব মজা হয়। কিন্তু আমার জেলাস লাগছিলো কারণ আমার বউয়ের হাতের রান্না সবাই খাচ্ছে। আমার বউয়ের হাতের রান্না শুধু আমি খাবো। নুডুলস খেয়ে শেষ করলাম। ঐ দিন তাড়া-তাড়ি ঘুমিয়ে যাই। ক্লান্ত ছিলাম সবাই। রিয়াদ ওর প্রেমিকার সাথেও কথা বলতে ঘুমিয়ে যায়।
.
রাত ৩ টায় নীলার ফোনে আবারো ঘুম ভাঙে। তার ঘুম ভেঙে গেছে বলে আমাকেও উঠিয়ে দিলো। পরে নীলার সাথে কথা বলতে বলতে আমিও ঘুমিয়ে যাই নীলাও ঘুমিয়ে যায়। সকালে তাড়া-তাড়ি ঘুম থেকে উঠি। লাইটিং এর জন্য লোকেরা চলে আসে ৯ টা বাজেই। পরে তাদের সাথে থেকে লাইটিং এর কাজটা শেষ হলো।
.
- আংকেল।
- হ্যা বাবা বলো।
- আমরা আজ বিকেলে রুবেলদের বাসায় যেতে চাচ্ছিলাম।
- কি বলো তোমরা এতদিন পর আমাদের বাসায় আসছো। আজ আবার কেনো ওদের বাসায় যাবে? না তোমরা এইখানেই থাকবে।
- আসলে আংকেল। রুবেল গতকাল ওর বাসায় জানিয়ে দিয়েছে যে আমরা আজ যাচ্ছি ওদের বাসায়।
- কি বলছো বাবা। আচ্ছা যেয়ো তাহলে।
- আংকেল টয়াকে আমাদের সাথে যেতে চাই। ও আমাদের সাথে দুই একদিন ঘুরে আসুক।
- আচ্ছা নিয়ে যেয়ো।
- ধন্যবাদ আংকেল। আর লাইটিং এর কাজ শেষ।
- তুমি যেভাবে বলছো ঠিক ঐ ভাবে লাগিয়েছে তো?
- হ্যা আংকেল।
- আচ্ছা তাহলে বাসায় গিয়ে গোসল করে ফেলো।
- আচ্ছা আংকেল।
.
যাক পরে গোসল করে খাওয়া দাওয়া করে ফেললাম। এবং ব্যাগ গুছিয়ে ফেললাম। ৩ টার সময় বের হলাম রুবেলদের বাসায় যাওয়ার জন্য। আংকেল আন্টির কাছ থেকে বিদায় নিলাম। অটোতে করে বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত গেলাম। কিছু কিনে নিলাম। পরে বাসে উঠলাম। ২ ঘন্টা লাগলো বাসেই। রুবেলদের বাসায় যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো।
.
- বন্ধু হৃদয়।
- কি বল।
- দিয়া আমাদের সাথে আসছে। অনেক খুশি লাগতেছে রে বন্ধু।
- হুমম। আমার ঘুম পাচ্ছে রে।
- আচ্ছা বাসায় গিয়ে ঘুমাইস।
.
আংকেল আন্টির সাথে পরিচয় হলাম। আমাদেরকে দেখে তারা খুব খুশি হলেন। আমাদের জন্য কত কিছু আয়োজন করেছেন। রাতে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকাল সকাল উঠিয়ে দিলো রুবেল। কেনো এত সকালে উঠালো সেটার কারণ জানতে চাইলাম। পরে রুবেল বলে।
.
- বন্ধু অনেকদিন ধরে চুরি করিনা। চুরি করে খাওয়া কি যে মজা এটা আজ তোদের দেখাবো।
- হালার পো। সকাল সকাল তুই চুরি করার জন্য উঠাইছোত? হালা চোর।
- দোস্ত আমি প্রথমবার রুবেলকে দেখেই মনে হইছিলো ও চোর। ওর সাথে চোরদের মধ্যে অনেকটা মিল আছে।
- তুই চুপ কর হালা প্রতিবন্ধী। হাতে যে বড় ব্যান্ডেজ লাগাইছোত। তোরেই চোর মনে কইরা পাবলিক পিটাইবো। এখন চুপ কইরা আয় আমার সাথে।
- আচ্ছা। তাহলে কি চুরি করবি তুই?
- প্রথমে ডাব চুরি করে খাই। পরে অন্যকিছু দেখা যাবে।
- আচ্ছা যা খুশি কর।
.
রুবেল এত বড় ডাব গাছে উঠে গেলো। ডাব পেড়ে নিচে নেমে এলো। পরে বাসায় এসে ছাদে ডাব গুলো রাখে। আমরা ঐখানেই বসে আছি। পরে রুবেল ডাব কেটে আমাদের খাওয়ায়। ডাবের পানি গুলো খুব মিষ্টি ছিলো। ১০ টার মতো ডাব চুরি করে নিয়ে আসি। ডাব খেয়ে পরে ডাবের পানি দিয়ে মুখ ও ধুয়ে ফেললাম। পরে রুমে গিয়ে সবার ঘুম নষ্ট করলাম। সুযোগ পেয়েছি। তাই প্রথমে টয়াকে চুল টেনে উঠালাম। টয়া তো ঘুম থেকে উঠে আমাকেই মারতেছে। কেনো উঠালাম সকাল বেলায়।
.
- কুত্তা তুই এত তাড়া-তাড়ি উঠছোত কেনো?
- আর বলিস না। রুবেল ডাব চুরি করতে নিয়ে গেছে সকাল সকাল।
- হায়রে চোররা রে। এখন যা তোর বউকে উঠা।
- না না। ওকে এত সকালে উঠালে শরীর খারাপ করবে।
- কুত্তা তাইলে আমারে উঠাইলি কেনো? আমার যদি শরীর খারাপ করে।
- তোর করলে সমস্যা নাই।
- ওরে হারামী। এখনই বউয়ের প্রতি কত দরদ। কে জানে বিয়ের পর আমাদের মনে রাখবি নাকি।
- আরে বাদ দে। চল তোকে চুরি করা ডাবের পানি খাওয়াই।
- চুরি করা জিনিষ তোরাই খা। আমি খামু না।
- তুই খাবি না তোর জামাই খাইবো।
.
পরে ওরে টেনে নিয়ে গেলাম ছাদে। ওরে জোড় করে ডাবের পানি খাওয়ালাম। টয়াও পানি খেয়ে বলে অনেক মিষ্টি পানি গুলো। টয়া পরে রুমে গিয়ে নীলা এবং দিয়াকেও উঠিয়ে দিলো। পরে সকাল বেলায় রাস্তায় হাটলাম সবাই। হাটতে হাটতে বাসা থেকে অনেক দূরে চলে গেলাম। টমেটো ক্ষেতের দিকে গেলাম। পরে কাচা টমেটো দিয়ে টয়াকে ঢিল ছুঁড়লাম। অনেক মজা করলাম সকাল বেলায়। নীলা আমাদের কাহিনী দেখে হাসছে শুধু। কিন্তু পরে সবাই মিলে আমাকেও টমেটো দিয়ে  ছুঁড়ে মারে। কে জানি পাঁকা টমেটো দিয়ে ঢিল মারে আমাকে। আর পাঁকা টমেটো আমার মাথায় গিয়ে লাগে। পুরো মাথাটা টমেটোর রসে ভরে গেলো।
.
আরো অনেকক্ষণ সবাই একসাথে মজা করে বাসায় চলে আসি। বাসায় ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করলাম। সকালটাই শুরু হলো মজা মাস্তি দিয়ে। আমি তো সবসময়ই টয়ার সাথে লেগে থাকতাম। সকালে নাস্তা করার সময়ও টয়ার ভাগের ডিম খেয়ে ফেলি। এটা নিয়েও টয়া কিল ঘুষি কয়েকটা মারে। এরকম দুষ্টামি দেখে নীলা তো অবাকই। কারণ ও কখনো ভাবেওনি আমি এরকম। যাইহোক পরে শান্ত ছেলের মতো শান্ত হয়ে গেলাম।
.
- তুমি খাচ্ছো না কেনো?
- খাচ্ছি তো।
- আমি খাইয়ে দেই?
- দেন। আরো ভাল তাহলে।
.
পরে নীলাকে নাস্তা খাইয়ে দিলাম। নীলাও আমাকে খাইয়ে দিলো। ভালই লাগছিলো এভাবে। মজা মাস্তি করে সকালটা কেটে যায়। রুবেল তো দিয়াকে নিয়ে পরে আছে। পুরো বাড়ি ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে। পরে রুবেলের মা'য়ের সাথেও পরিচয় করিয়ে দেয় ভাল ভাবে। আমরা তো তা দেখে পুরাই অবাক। যাইহোক ভাল ভাবেই কেটে গেলো দিন গুলো।
.
- আন্টি ভাল ভাবে খোঁজ নিয়ে নেন। রুবেল কিন্তু দিয়াকে আপনাদের বাড়িতে খুব তাড়া-তাড়ি নিয়ে আসতে চাচ্ছে।
- মানে কি বাবা?
- আহা মা। তুমি হৃদয়ের কথায় কান দিও না তো।
- আন্টি আমি কিন্তু ঠিকই বলতেছি।
- যাক। মেয়ে আমার অনেক পছন্দ হইছে।
- আলহামদুলিল্লাহ্‌। তাহলে তো আর কোনো কথাই নাই। রুবেলের রাস্তা ক্লিয়ার।
- আচ্ছা মা। তুমি রান্না করো তো মজা করে।
.
- বন্ধু এই খুশিতে কি আমাদের একটা ট্রিট দিবি না।
- যা চাইবি সব দিবো। বন্ধু তুই আমার রাস্তা ক্লিয়ার করে দিছোত। আয় বুকে আয় বন্ধু।
- হইছে থাকুক। ট্রিট টা তাড়া-তাড়ি দিয়ে দিস।
- আরে বন্ধু আজই ট্রিট দিবো।
- তাহলে তো ভালোই।
.
সবাই রুবেলের ট্রিটের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আর আমি সবাইকে খুব সহজে আপন করে ফেলি। রুবেলের বাবা-মাকেও আপন করে ফেলি। আংকেল আন্টিও আমাকে তার ছেলের মতোই ভেবে নেন।
.
(চলবে)
.
.
লেখাঃ হৃদয় নাদিম

Comments