- হৃদয়।
- জ্বি আংকেল।
- টয়া সাথে কথা হলো। ও বললো গায়ে হলুদের ব্যাপারটা। তাহলে তোমরা কাল মার্কেটে গিয়ে যা দরকার কিনে ফেলো।
- কিন্তু আংকেল এইখানে তো মার্কেট কোথায় সেটাই জানিনা।
- তোমার একটা ফ্রেন্ড না এই খানের। ও চিনবে হয়তো।
- ও হ্যা আংকেল। ভুলেই গেছিলাম। রুবেল চিনবে মার্কেট।
- আচ্ছা তাহলে ঠিক আছে। আর এমনিতেও টয়ার বিয়ের জন্য মার্কেট কিছু বাকি আছে। তাই বলি আগে আগেই তোমরা যা লাগে এনে ফেলো।
- ঠিক আছে আংকেল।
- এখন লিস্ট করো টয়াকে নিয়ে। কয়টা পাঞ্জাবী আর কয়টা শাড়ি লাগবে।
- আচ্ছা ঠিক আছে আংকেল।
.
আংকেল বলে চলে গেলেন। পরে টয়ার সাথে কথা বলে লিস্ট করে ফেললাম। কিন্তু ঐ দিন টয়া খুব মন খারাপ করে ফেলে। কারণটা জানতে চাইলাম কিন্তু বললো না। পরে একটু আন্দাজ করছিলাম হয়তো বিয়ের পর সবাইকে ছেড়ে চলে যাবে। এর কারণেই হয়তো মন খারাপ করেছে। কিন্তু পরে শুনি কারণ এটাই। আমি যা ভাবি তাই মিলে যাচ্ছে কিভাবে যেনো।
.
তো ঐ দিন রাতেই আমার জন্য যে ড্রেস গুলো কিনেছিলো। ঐ গুলো আমাকে দেয়। কিন্তু আমি তখন তার জন্য যে শাড়িটা কিনেছিলাম ঐটা দেইনি। আমার ইচ্ছে ছিলো ঐ শাড়িটা টয়ার বিয়েতে পরবে নীলা। তাই নীলার বিয়ের দিনই দিবো। আমার জন্য নীল রংয়ের পাঞ্জাবিটা এনেছিলো ঐটা আমাকে পড়ে আসার জন্য বলে। আমিও পড়ে সবার সামনে গেলাম। এবং সবাইকে গিয়ে বললাম এটা আমার বউ আমাকে গিফট্ করেছে। রিয়াদ আমার সামনে এসে বলে ভাবির জন্য যে শাড়িটা কিনেছিস ঐটা দিবি কবে? আমি পরে বললাম যে সময় মত দিয়ে দিবো।
.
- কেমন লাগছে?
- বেশি ভালো লাগছে না। তবে ঠিক আছে।
- আজ সুন্দর না বলে সবাই আমার সাথে এরকম করে।
- আহারে। কি কষ্ট।
- খুলে ফেলি তাহলে।
- হুমম।
.
আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম। কেনো জানি তাড়া-তাড়ি ঘুমিয়ে পড়তাম। এত তাড়া-তাড়ি আমি কখনো ঘুমাতাম না। ১১ টা বাজলেই চোখের মধ্যে ঘুম চলে আসতো। সেইদিন রাতে আমি একাই রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে যাই। আর বাকি সবাই আড্ডা মারে। ঘুম ভাঙে রাত দুইটায়। কিন্তু তখন দেখি আমি রুমে একাই। বিছানা থেকে উঠে রুম থেকে বের হই। অন্য রুমে গিয়ে দেখি তারা এখনো সবাই আড্ডা মারছে। আমিও তাদের সাথে আড্ডায় যোগ দিলাম।
.
- কিরে ঘুম হইছে?
- আর ঘুম। তোদের চিল্লা চিল্লিতে ঘুমানো যায়। টয়ার গলার সাউন্ড তো মনে হচ্ছিলো কাউয়া ডাকতে ছিলো কানের সামনে।
- হুহ। এই কাউয়ার ডাকই একদিন মিস করবি। < একটু ইমোশনাল হয়ে কথাটি বলে টয়া >
- আহা আপনি আসলে। দেখছেন যে টয়া আপুর মনটা খারাপ। তবুও দুষ্টামি কমে না।
- আচ্ছা ঠিক আছে আর বলবো না।
.
টয়ার পাশে গিয়েই বসলাম। যেহেতু ওর মন খারাপ। তাই ওর মনটা একটু ভাল রাখার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু উল্টা আমার মনই খারাপ করে দিলো টয়া। টয়া একটু বেশি ইমোশনাল হয়ে পরে সেইদিন। ওর কথা গুলো আমার মনেও খুব টাচ করলো। আর কি করার বন্ধুই তো। আমি চেয়েছি দুষ্টামি বাঁদরামি করে হলেও টয়াকে খুশিতে রাখবো। কিন্তু এর উল্টো টা হয়।
.
- দোস্ত তোদের খুব মিস করবো রে।
- আমরাও তোকে অনেক মিস করবো।
- কি যে মিস করবি জানা আছে।
- আমারও জানা আছে আমেরিকান জামাই পাইয়া আমাদের কি আর মনে থাকবে।
- ধ্যাত ফালতু কথা তুই আমার ছোট বেলার ফ্রেন্ড। আর এই অল্প কিছুদিনে বাকিরাও আমার ফ্রেন্ডের মতো হয়ে গেছে।
- হইছে ইমোশনাল কথা বাদ দে। আমার ক্ষুধা লাগছে প্রচুর। কিছু নিয়ে আয়।
- কুত্তা এতক্ষণে বলতাছোত? এখানে বস আমি নিয়ে আসছি।
- যা তাড়া-তাড়ি।
- যাচ্ছি বাবা।
.
- কি হলো আমার টিয়া পাখিটা এখনো জেগে আছে।
- ওলে বাবালে। টিয়া পাখিটা রে।
.
আমার কথা শুনে বাকিরা হেসে দেয়। আমার একটু লজ্জা লাগে সবার হাসি দেখে। নীলাও হাসে। আর সবার সামনে এইগুলো বলা যাবেনা।
বললে আবারো ইজ্জত খেতে হবে। আর একটি কথা রুবেল আর দিয়ার মধ্যে সম্পর্কটা হয়ে যায়। আর টয়ার বিয়ের পরেই ইচ্ছে আছে রুবেল আর দিয়ার বিয়েটা হয়ে যাবে। পরে বাকি থাকবো আমি আর রিয়াদ।
.
একটা জিনিষ ভাবছিলাম যে আমরা চার জনই বিয়ে করি। চার জনই একসাথে থাকবো। কিন্তু যে বাসাটা চেঞ্জ করতে হবে আমাদের। কারণ এখন যে বাসাতে আছি ঐ বাসাতে মাত্র রুম ২ টা। আর কোনোভাবেই তো নীলাদের বাসায় থাকা যাবে না। এমন আরো অনেক কিছু একা একাই ভাবছিলাম। জানিনা শেষ টা কি হয়।
.
টয়া খাবার নিয়ে আসে আমার জন্য। ভাত আর মুরগির মাংস গরম করে নিয়ে আসে। ঠান্ডা হয়ে গেছিলো তাই গরম করে নিয়ে এসেছে। কিন্তু আর খাওয়াটা হলো না ভালো মতো। রিয়াদ আর রুবেল কাড়াকাড়ি করে আমার প্লেটে ভাগ বসালো। ওদের কাহিনী দেখে রবিন ও শুরু করলো। আর কি করার। এক প্লেটের ভাত চার জন খেলাম। ওদের ক্ষুধা লাগেনি। কিন্তু দেখেছে যে আমি খাচ্ছি তাই আমার প্লেটে ভাগ বসাইছে। আগেও এরকম হতো আমাদের মাঝে। সেটা আবার আজও হলো।
.
- তোমরা তো ওরেই খেতেই দিলে না। তোমাদের জন্য নিয়ে আসছি তাহলে।
- আরে না না। আমাদের ক্ষুধা লাগেনি। আমরা এভাবেই মজা করে খাই।
- ঠিকই বলছে ওরা। এক কাজ কর মুড়ি বানিয়ে আন। পেয়াজ, কাঁচা মরিচ কেটে নিয়ায়। আমি এখন তোদের স্পেশাল মুড়ি বানিয়ে খাওয়াবো।
- আচ্ছা আনতেছি।
.
একটু পর টয়া পেয়াজ,কাঁচা মরিচ নিয়ে আসে সরিষার তেল নিয়ে আসে। সাথে ছুড়িও আনে।
.
- তুই যখন স্পেশাল মুড়ি বানিয়ে খাওয়াবি তাহলে তুই নিজেই পেয়াজ, কাঁচা মরিচ কেটে নে।
- এটা কিছু হইলো। এত গুলা মেয়ে মানুষ থাকতে আমাকে এইগুলো কাটতে হবে।
- আচ্ছা দেন আমি কেটে দিচ্ছি। < নীলা বলে >
- হুম মাথা খারাপ হইছে তো। এত রাতে তোমাকে কাঁদাবো আমি।
- ইশশ। দেখ বউয়ের প্রতি কি ভালবাসা।
- থাকবেই তো। আমি আমার বউকে অনেক ভালবাসি।
.
পরে আর কি করার আমি নিজেই পেয়াজ কাটি এবং কাঁদলাম। ভাই পেয়াজ কাটলে এতো কান্না আসে কেনো বুঝিনা। আর সব গুলা কিরকম স্বার্থপরের মতো তাকিয়ে তাকিয়ে আমার কান্না দেখছে। সুমাও চেয়েছিলো ও এইগুলো কেটে দিবে। কিন্তু পরে আমি নিজেই কাটি। মুড়ি বানিয়ে দিলাম সবাইকে। আমি গিয়ে মুখ ধুয়ে আসলাম। আসতে আসতে দেখি মুড়ি অর্ধেক শেষ করে ফেলেছে। কি রাক্ষস - রাক্ষসীরে। আমি এসে মুড়ির বলটাই নিয়ে ফেলি। আর ওরাই আমার পিছনে পিছনে আসা শুরু করে।
.
- না দোস্ত মুড়িটা আসলেই মজা হয়েছে।
- হইছে আমারে কাঁদাইয়া এহন আইছোত মজা হইছে বলতে।
- ঠিকই আছে। আচ্ছা এহন সবাই ঘুমাইতে যা। তোরা সব ছেলেরা এক রুমে গিয়ে ঘুমা। আর আমরা সব মেয়েরা আজ একসাথে ঘুমাবো।
- আমি আমার বউকে ছাড়া ঘুমাবো না। <রবিন বলে কথাটা>
- লজ্জা সরম সব গেছে তোমারও?
- লজ্জার কি আছে। হুহ।
- যাও আজ তোমার ভাইদের সাথে ঘুমাও।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
.
পরে আমরা আমাদের রুমে চলে আসি। চারজন একসাথে থাকা মানে সিগারেটের প্যাকেট খালি করা। সিগারেট খেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম সবাই। সকালে আবার মার্কেটে যেতে হবে। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হইলাম। আংকেল আমার হাতে ১০ হাজার টাকা দিয়ে যায়। তো পরে আমি, রুবেলকে নিয়ে বের হইলাম। কিন্তু আমরা তো মেয়েদের শাড়ি আনতে পারবো না। তাই সুমাকে এবং নীলাকে সাথে করে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলি। কিন্তু পরে টয়া ও আমাদের সাথে যাবে। পরে ৫ জনই গেলাম মার্কেটে।
.
ছেলেদের জন্য ২০ টা পাঞ্জাবি নিলাম সাইজ মতো। আর মেয়ে কম ছিলো ১৫ জনের মতো। তাই ১৫ টা শাড়ি নিলো ওরা। তো আমাদের বেজাল শেষ হয় তাড়া-তাড়ি। কিন্তু মেয়ে মানুষ নিয়ে গেলে তো আর তাড়া-তাড়ি মার্কেট শেষ হয়না। এই দোকানে যায়, ঐ দোকানে যায় আর আমরা তাদের পিছু পিছু শপিং নিয়ে হাটছি। টয়া গায়ে হলুদের জন্য কি যেনো কিনলো। ফুলের দোকানে গেলো। মাথায় ফুল দিবে না কি যেনো। এত বেজাল আবার নিতে পারছিলাম না। তাই মার্কেট থেকে বের হয়ে গেলাম। খুব ক্ষুধা লেগে যায় সবারই। তাই রেস্টুরেন্টে যাই।
.
- তোমরা কি খাইবা? অর্ডার দাও।
- আমরা আমাদেরটা অর্ডার দিচ্ছি। আপনারা আপনাদেরটা দিন।
.
পরে বার্গার অর্ডার করলাম আর কোল্ড ড্রিংক। আমরা খেয়ে বাসার জন্য পার্সেল করে নিয়ে নিলাম বাকিদের জন্য। বাসায় গিয়ে পৌঁছালাম। গিয়ে দেখি রিয়াদ আর রবিন তখনও ঘুমাচ্ছিলো। ওদেরকে উঠিয়ে দিলাম। এবং খাবার গুলো আন্টিকে দিয়ে আসি। পরে বাকিরা একসাথে খেলো।
.
- কিরে কেমন আছিস?
- হ্যা আপু ভাল আছি। তুই কেমন আছিস?
- হ্যা ভাল আছি। নাস্তা করেছিস?
- হ্যা আপু করেছি। তুই করেছিস?
- হুম করলাম একটু আগে। বাসায় কল দিয়েছিস?
- না দেইনি। এখন দিবো।
- আচ্ছা তাহলে বাসায় ফোন দে।
.
পরে বাসায় কল দিয়ে মা'য়ের সাথে কথা বললাম। বাসায় আরো গেস্ট আসা শুরু করে সেইদিন থেকে। বিয়ের মাত্র ৩ দিন বাকি ছিলো। তাই টয়াদের আত্বীয়রা আসেন। পুরো বাড়িতে মেহমান। এবং আমাকেও আংকেল তার সাথে সাথে রাখা শুরু করে দিলেন। বিয়ের বাজার এবং যাবতীয় কাজ যা যা দরকার আমি আংকেলের সাথেই ছিলাম। তাই একটু ব্যস্ত ছিলাম। আর গায়ে হলুদে একটু ড্রিংক এর আয়োজন হবে না। তা কি করে হয়। আর এইগুলো আংকেলকেও বলা যাবেনা। কারণ তারা কি না কি ভাবে। তাই আমি নিজের টাকা দিয়ে আমাদের জন্য এবং বাকি কিছু লোকদের জন্য ড্রিংকের ব্যবস্থা করি। এইখানে রুবেল আমাকে হেল্প করে এইগুলো আনার জন্য।
.
আগামীকাল টয়ার গায়ে হলুদ। আর গত দুইটা দিন অনেক প্যারায় ছিলাম। ভাল মতো বাসায় ও ছিলাম না। নীলাকেও সময় দিতে পারিনি তেমন। আজ কিছুটা ফ্রি হয়েছি। তাই আজ সবাই একসাথে আড্ডা দিবো। কারণ আজ আড্ডা না দিলে আর সময় পাবো না। যেহেতু আগামীকাল গায়ে হলুদ। এবং আমাদেরকেও ঢাকায় ফিরতে হবে।
.
(চলবে)
.
.
লেখাঃ হৃদয় নাদিম
Comments
Post a Comment