রাতের বেলায় কে কিভাবে ঘুমিয়েছিলাম তার কোনো খেয়াল নেই। আমি সোফায় ঘুমিয়ে ছিলাম। আমার পাশে নীলা ঘুমিয়েছিলো। গতকালের মতো আর কোনো দিন আসবে না হয়তো। খুব আনন্দে কেটেছিলো। সবাই ঘুমাচ্ছিলো। আমার ঘুম ভেঙে যায় মোবাইলে মেসেজের নোটিফিকেশনে। তাই আমি সবার দিকে তাকিয়ে দেখলাম এক এক জন মরার মতো ঘুমাচ্ছে। নীলা আমার বুকের উপর মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। তাই আর উঠলাম না। আমার পরে গতকালের রাতের কথা মনে পড়ে যায়।
.
নীলা কিভাবে পাগলামি করলো। কিভাবে বললো যে তাকে বুকে নিতে। সত্যি তার কাহিনী দেখে আমিই অবাক হয়ে যাই। আমি চাইনি ওদেরকে এইগুলো খাওয়াতে। কিন্তু টয়াই জোড় করেছে বিধায় খেয়েছিলো। আচ্ছা ড্রিংক করার পর নাকি সবাই সত্যি কথা বলে। কিন্তু আমি তো কখনো এরকম করলাম না। হ্যা প্রথম যেদিন ড্রিংক করেছিলাম ঐ দিন পাগলামি করেছিলাম। সেটা না বলাই থাকুক। একটু পর নীলাও ঘুম থেকে উঠে যায়। সে চোখ মেলে দেখে আমার বুকে শুয়ে আছে। তাড়া-তাড়ি করে উঠে যায়।
.
- এই কি আমি আপনার বুকে শুয়ে আছি। আপনি ডাকলেন না কেনো?
- আপনি করে বলছো কেনো? গতকালই তো তুমি করে ডাকলে। কতোই না ভাল লাগছিলো।
- কি? আমি তুমি করে কখন বললাম?
- হ্যা। এখন কিছুই মনে পড়বে না।
- আপনার আসলেই মনে মাথা খারাপ হয়েছে।
- হুমম আমার আসলেই মাথা খারাপ হয়েছে।
- আমরা কি সবাই এক রুমে ঘুমিয়েছিলাম নাকি?
- হুম। দেখছো না তুমি আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমানোর জন্য কত বায়না ধরেছিলে। তাই তো বুকেই রেখেছি।
- আমার সত্যিই কিছু মনে পড়ছে না।
- থাক আর মনে করতে হবে না। এখন দেখো সবাইকে উঠাই কিভাবে।
.
নীলা সোফায় বসে থাকে। আমি প্রথমে রিয়াদকে উঠাই। রিয়াদ ফ্লোরে শুয়ে আছে। ওর সাথে টয়ার আর কয়েকটা কাজিন ও শুয়ে আছে। রিয়াদকে উঠিয়ে দেই। পরে সবাই উঠে যায়। কিন্তু তারা গত রাতের কথা কেউই মনে করতে পারছে না। সবাই উঠে ফ্রেশ হলাম। টয়া তো অন্যরুমে ঘুমিয়েছিলো। পরে টয়াও উঠে আসে আমাদের রুমে। অনেকক্ষণ আড্ডা মারি। পরে নাস্তা করলাম। আর টয়াকে সাজাতে পার্লারের থেকে লোক আসে।
.
- নীলা।
- হুমম।
- কি করছো?
- সবাই কিভাবে সবাইকে হলুদ দিচ্ছে। সেটাই দেখছি।
- আহারে। তোমাকে কেউ হলুদ দেয়নি?
- আমি তো এই ভয়ে নিচেই যাইনি।
.
পরে হলুদ নীলার মুখে লাগিয়ে দিলাম। হলুদ দিয়ে সবাই মাখা মাখি করে। আমি সাদা রংয়ের টি শার্ট পড়েছিলাম। আমার সাদা টি শার্ট হলুদ হয়ে যায়। হলুদ মাখামাখি শেষ হয়। পরে শুরু হয় রং দেয়া দেয়ি। আল্লাহ্ রং দিয়ে আমাকে ভুত বানিয়ে ফেলে। নীলাকে রং দেয়া থেকে বাঁচাতে গিয়ে আমাকে ভুত হতে হয়। কিন্তু শেষে নীলাকেও রং দিয়ে রাঙিয়ে দেয়। গ্রামের বিয়েতে এই রং দেয়াটা অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে। যাইহোক ভাল ভাবেই কাটে।
.
- ভাবি আপনাকে কিন্তু এখন খুব সুন্দরী লাগছে। রং দিয়ে পুরো চেহারা লাল হয়েছে।
- কিন্তু আমি তো কাউকে রং দিলাম না।
- কেনো?
- এখন দিবো। রং নেয় হাতে।
.
আমি তখন ওয়াশরুমে গিয়ে মুখ ধুয়ে আসি। কিন্তু পরে নীলা আবারো আমাকে রং দিয়ে ভুত বানিয়ে দেয়। আর কি করার বউয়ের ইচ্ছে হয়েছে তাই রং দিয়েছে। সব শেষ হয়। সেইদিনও বলে পুকুরে গোসল করবে সবাই। কিন্তু নীলা সাথে সাথে বলে দেয় আমি যেনো না যাই পুকুরে। কিন্তু আমার ইচ্ছে ছিলো পুকুরে গোসল করার। নীলার বারণে আর পুকুরে যাওয়া হয়নি। বাসায় গোসল করতে হয়।
.
- নীলা।
- গোসল করে এসেছেন?
- হ্যা আসলাম।
- হুম।
- আচ্ছা। আজ কি রংয়ের ড্রেস পরবে?
- জানিনা ঠিক। কেনো?
- আচ্ছা দাড়াও একটু আমি আসছি।
.
পরে আমার ব্যাগ থেকে নীলার জন্য আনা শাড়িটা বের করে নীলার হাতে দেই। নীলা দেখে খুব খুশি হয়। কিন্তু একটু মন খারাপ ও করে। কারণ সে শাড়ি সামলাতে পারেনা। গতকালই তো অনেক কষ্টে শাড়ি সামলেছে।
.
- এটা কবে কিনেছেন?
- যেদিন তুমি আমার জন্য পাঞ্জাবী কিনেছিলেন সেইদিনই।
- এতদিন পর দিতে মনে চাইলো?
- হুমম। সারপ্রাইজ। কেনো পছন্দ হয়নি?
- হ্যা খুব পছন্দ হয়েছে। আমার পছন্দের কালার।
- তাহলে আজ তুমি নীলা শাড়ি পড়বে।
- না পড়লে হয়না?
- তোমার ইচ্ছে।
- আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু আপনি নীল পাঞ্জাবীটা পড়বেন।
- আচ্ছা পড়বো।
.
পরে নীলা শাড়ি নিয়ে চলে গেলো। আমি রেডি হইলাম। সবাই রেডি হয়ে গেছে। কিন্তু নীলা সহ আরো মেয়েরা সাঁজছিলো। আমি আংকেলের সামনে গিয়ে কথা বলছিলাম। আংকেল আমাকে বলে দেখা শুনা করার জন্য। আমি সেইখানেই বসে ছিলাম। চেয়ারে বসে বসে কথা বলছিলাম। রিয়াদ, রবিন, রুবেল আমরা সবাই একসাথেই বসেই কথা বলছিলাম। একটু পর রবিন আমাকে বলে পিছনে তাকাতে। পিছনে তাকিয়ে দেখি নীলা দাঁড়িয়ে আছে। নীল রংয়ের শাড়িটাই পড়েছিলো। বলে বুঝাতে পারবো না কি যে সুন্দর লাগছিলো। আমি সাথে সাথে তার সামনে যাই।
.
- আপনি কি নীলা?
- না। আমি নীলা না। আপনার বউ।
- সত্যি? আমার বউ?
- জানিনা।
- একটা মানুষ এত সুন্দর হয় কিভাবে?
- ধ্যাত। থামেন তো। আপনার ফ্রেন্ড আপনাকে ডাকে। কত গুলা কল দিয়েছি? মোবাইল কোথায়?
- আমার কাছেই তো।
.
পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখি মোবাইল সাইলেন্ট করা। তাই শুনতে পারিনি তাদের কল। পরে নীলাকে নিয়ে টয়ার কাছে গেলাম। টয়া রুমে বসে আছে বউ সেজে। আমি এবং নীলা গিয়ে বসি টয়ার পাশে।
.
- বাহ তোদের দুজনকে তো আজ অনেক সুন্দর লাগছে। আবার দেখি মেচিং করে পড়েছিস।
- হুম। তোকেও অনেক সুন্দরী লাগছে দোস্ত।
- থেংক্স রে। আচ্ছা চল একটা সেলফি তুলি আমি তুই আর নীলা।
- হুমম ঠিক আছে।
.
পরে সেলফি নেই একটা। একেক করে সবাই ছবি তুলছিলো। পরে আমরা সব ফ্রেন্ডরা একটা গ্রুপ ছবি তুলি। পরে আমরা খেতে চলে যাই। সবাই একসাথে বসে খাই। কিন্তু আজ টয়াকে ছাড়াই খেতে হচ্ছে। টয়া তো বউ সেঁজে বসে আছে। আমরা খাওয়া শেষ করে আবারো টয়ার রুমে গেলাম।
.
- কিরে তোর ক্ষুধা লাগেনি?
- হুমম রে অনেক ক্ষুধা লাগছে। আচ্ছা আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসি।
- ঠিক আছে দোস্ত।
.
পরে গিয়ে প্লেটে করে খাবার নিয়ে আসি টয়ার জন্য। কিন্তু ও তো হাত দিয়েও খেতে পারবেনা। পরে আমাকেই খাইয়ে দিতে হয়। খাইয়ে দেই টয়াকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বর এর বাড়ির মানুষ চলে আসে। টয়ার বরের সাথে আমাকে আগে থেকেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো। আমি গিয়ে তার সাথে কথা বললাম।
.
- কি খবর ভাইয়া? কোনো সমস্যা হয়নি তো আসতে?
- না ভাইয়া।
- আচ্ছা তাহলে ঠিক আছে।
- ভাইয়া নীলাকে দেখছি না। সে কোথায়?
- আপনিও জানেন তার কথা?
- টয়া তো সবসময়ই আপনাদের কথা বলতো।
- পাগলিটা আসলেই একটা পাগলি। আচ্ছা আমি নীলাকে নিয়ে আসছি।
- ঠিক আছে ভাইয়া।
.
পরে গিয়ে নীলাকে নিয়ে যাই। পরিচয় করিয়ে দিলাম। তারা কথা বললো। পরে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করি। এইবার বিয়ের পালা। কাজী চলে আসে। আল্লাহ্র রহমতে বিয়েটা হয়ে যায়। সবাই মিষ্টি মুখ করে। এইবার টয়াকে বিদায় দেওয়ার পালা। সবাই কান্না করে টয়াকে বিদায় দেওয়ার সময়। আমি সেইখান থেকে সরে যাই। কারণ মন আমারও খারাপ হয়ে যায়। তাই অন্যদিকে চলে আসি। কিন্তু পরে টয়া আমাকে ধরে কান্না করে দেয়। আর আমিও কেঁদে ফেলি। ওদের গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে আসি। টয়ার সাথে নীলা, দিয়া এবং সুমা যায় এবং টয়ার দাদী যান।
.
এইদিকে বাসার ঝামেলা শেষ হয়। আসতে আসতে বাসা একদম খালি হয়ে যায়। আংকেল আন্টিকে শান্তনা দিচ্ছিলাম। তারা তো আমাকে ধরেই কাঁদছিল। কি আর করার। শান্তনা দেওয়া ছাড়া আর কি করার আছে। সেইদিন রাতে বাসাটা খালি খালি মনে হচ্ছিলো। এই কিছুদিন কত আনন্দে কেটেছে। কিন্তু সেইদিন বাসাটা একদম ঠান্ডা। আমাদের আগামিকালই ঢাকায় ফিরে আসবো বলে আংকেল আন্টির সাথে কথা বলি। তারা আরো কিছুদিন থেকে যেতে বলে। কিন্তু এমনিতেই অনেক দিনের জন্য আসছিলাম। আর বাসার সবাই ও ঢাকা যাওয়ার জন্য বলে।
.
পরেরদিন টয়ার শ্বশুর বাড়িতে যেতে হয়। আমরা সবাই যাই। আর নীলা ওরা তো গতকালই টয়ার সাথে যায়। আমরা ৫০ জনের মতো যাই টয়াকে নিয়ে আসতে। আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। এবং আমরাও ঢাকায় ফিরবার জন্য বের হলাম। সবার থেকে বিদায় নেই। আংকেল আন্টি তো বলছে আরো কিছুদিন থাকার জন্য। টয়া তো আমাদের যেতে দিবেই না।
.
- দোস্ত আর কিছুদিন থেকে যা না।
- অন্য আরেকদিন আসবো আবার। আজ যেতে হবে।
- তোদেরকে অনেক মিস করবো রে।
- আমরাও মিস করবো।
.
আমাদের লঞ্চঘাট পর্যন্ত যাওয়ার জন্য। গাড়ি মেনেজ করে দেয় আংকেল। আমরা বিদায় নিয়ে গাড়িতে গিয়্ব উঠি। দিয়ারও খুব মন খারাপ। রুবেলকে সত্যি খুব ভাল বেসে ফেলে দিয়া। লঞ্চ ঘাটের সামনে এসে পরি। লঞ্চে উঠি। রাত ৯ টায় লঞ্চ ছাড়বে। টয়া কল দিলো।
.
- কিরে কোথায় এখন?
- এইতো মাত্র লঞ্চে উঠলাম।
- সাবধানে থাকিস।
- হুমম তোরাও ভাল থাকিস রে। আর অবশ্যই কিন্তু ঢাকা আসবি তোর জামাইকে নিয়ে।
- আচ্ছা যাবো। সবাই সাবধানে থাকিস। আল্লাহ্ হাফেজ।
- আচ্ছা। আল্লাহ্ হাফেজ।
.
সবারই মন খারাপ ছিলো। আসলেই এই অল্প কিছুদিনে খুব আপন করে ফেলি সবাইকে। রুবেল দিয়ার সাথে মোবাইলে কথা বলছিলো। আমি আপুকে কল দিয়ে জানিয়ে দেই আমরা বাসায় ফিরছি। যাওয়ার সময় যতটা আনন্দে গিয়েছিলাম। আসার সময় ততটা মন খারাপ করে আসতে হয়। লঞ্চ ছেড়ে দেয়। সেইদিন আবহাওয়া ভাল ছিলো।
.
- কি হয়েছে?
- না কিছু না।
- মন খারাপ তাই না?
- হ্যা কিছুটা।
- মন খারাপ করে কি হবে। যেতে তো হবেই।
- হুমম। তোমার হাতটি দিবে?
- হ্যা অবশ্যই।
.
পরে নীলার হাতটি ধরে দাঁড়িয়ে বাহিরে দৃশ্য দেখছিলাম। আগামীকাল থেকে তো নীলাকেও পাশে পাবো না। যখন তখন তাকে দেখতেও পারবো না। বুঝিনা এরকম সময় গুলো কেনো যে এত তাড়া-তাড়ি চলে যায়। নীলা ঘুমিয়ে যায় পরে। আমরাও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।
.
সকালে ঢাকায় গিয়ে পৌঁছাই। লঞ্চ থেকে নামি। গাড়িতে উঠে বাসায় চলে আসি। আংকেল আন্টির সাথে দেখা করে বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। কিন্তু ঘুমের মধ্যেও নীলাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি। নীলা আমার স্বপ্নে নয় আমার মনের মধ্যেও গিরে থাকে। তাকে কোনো ভাবেই ভুলা সম্ভব নয়।
.
(চলবে)
.
.
লেখাঃ হৃদয় নাদিম
Comments
Post a Comment