"পাবজি উইথ সিনিয়র আপু "



ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে প্রতিদিন ভুলক্রমেই দেখা হয়ে যায় আপুটির সাথে। প্রথম কয়েকটা দিন তেমন খেয়াল করতাম না। কিন্তু ইদানীং নিজের অজান্তেই ঐ আপুটি আমার চোখের সামনে চলে আসছে। হউক সেটা স্বপ্নে অথবা বাস্তবে। কিন্তু কেনো জানি আমি তাকে একটু বেশিই ভয় পেতাম। এইতো কিছুদিন আগের কথাই। অনলাইনে পাবজি মোবাইল (PUBG MOBILE) নামক একটি গেইম বের হয়েছে। গেইমটি খুব কম মানুষই আছে যারা খেলে না বা পছন্দ করেনা। এক কথায় সিংগেল ছেলেদের রিলেশন বলা যায়। ঠিক তেমনই আমারও খুবই পছন্দের একটা গেইম ছিলো। সময় কাটিয়ে দিতাম এই গেইমটির মাধ্যমেই। কিন্তু সে কাটানো দিন গুলো যেনো খুব তাড়া-তাড়ি আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ফেলে।
.
প্রতিদিনের মতোই সেইদিনও বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। একটু চারদিকে চোখ নাড়িয়ে দেখে নিলাম যে ঐ আপুটি আশে পাশে কিনা। কিন্তু না সেইদিন তাকে দেখতে পেলাম না। মনে মনে খুব খুশিই হয়ে গেলাম। বাস চলে আসে ২০ মিনিট অপেক্ষা করার পরে। বাসে উঠে দেখি পিছনের সিট খালি। সামনের সব গুলো সিটে যাত্রী বসে আছে। কিছু করারও নেই। বাস মিস করলে আবার কখন বাস আসে তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। তাই পিছনের সিটে গিয়েই বসে পড়ি। কিন্তু হঠাৎ কারো কথায় সামনের দিকে তাকালাম।
.
- এই ছেলে। সামনে আসো।
- জ্বি আমি?
- হ্যা তুমি সামনে এসে বসো।
- না না। এখানেই ঠিক আছে আপু।
- আসতে বলেছি আসো।
.
বুঝলাম না উনি কখন এই বাসে উঠলো? আর আমি কি অন্ধ হয়ে গেলাম নাকি। দেখতেও পেলাম না। দেখতে পারলে তো কখনই এই বাসে উঠতাম না। ভদ্র ছেলের মতো তার পাশে গিয়েই বসলাম। আমি যতই তার কাছ থেকে দূরে থাকতে চেতাম। ঠিক ততটাই তার কাছে চলে আসতে হচ্ছে বারবার। কেনো এমন হচ্ছে আমার সাথে সেটাও বুঝতে পারছিনা।
.
- সকালে নাস্তা করেছো?
- জ্বি আপু করেছি।
- এই ছেলে এই। এত আপু আপু বলো কেনো? আমার নাম তন্নি। আমাকে তন্নি বলেই ডাকবে।
- আপনি তো আমার সিনিয়র। আপনাকে কিভাবে নাম ধরে ডাকবো আপু?
- যেটা করতে বলেছি সেটাই করবে। ঠিক আছে?
- হুমম। <মাথা নাড়িয়ে বললাম>
.
হ্যা আপুটি আমার থেকে ২ বছরের বড় হবে। আমি পলিটেকনিক এ ১ম সেমিষ্টারে পড়তাম। আর আপুটি ৩য় সেমিষ্টারে পড়তেন। আপুটি দেখতে অনেক সুন্দরী ছিলেন। কিন্তু ভিলেনদের মতো কথা বলতেন। শুধু কি আমার সাথেই এভাবে কথা বলতেন নাকি সবার সাথেও এভাবেই কথা বলতেন সেটা জানতাম না। তার সাথে আমার পরিচয়টা একটু ভিন্ন রকম ভাবেই হয়েছিলো। আমি তখন প্রথম ক্যাম্পাসে যাই। আর র‍্যাগিং শব্দটা মোটা-মুটিই সবাই জানেন। কিন্তু প্রথমত আমি এই শব্দটার সাথে পরিচিত ছিলাম না।
.
তো সেইদিন ক্যাম্পাসে বড় ভাইদের সামনে পড়লাম। এবং তারাও র‍্যাগিং দিলো। সেখানে আমি সহ আরো কয়েকটা ক্লাসমেট ছিলো আমার সাথে। সবাইকে সহজ কিছু করতে বললেও আমাকে খুব একটা কঠিন কাজই দিলো করবার জন্য। যেটাকে র‍্যাগিং বলে ধরা যায়। একজন বড় আপুকে দেখিয়ে বলে যে তাকে গিয়ে প্রপোজ করতে। আমি বেশ কয়েকবার রিকুয়েস্ট করেছিলাম যাতে অন্যকিছু করতে বলে। কিন্তু না তারা যেটা বলেছে ঠিক সেটাই করতে হবে। একটা ভাইয়া গাছ থেকে ফুল ছিড়ে আমার হাতে ধরিয়ে দেয়। পরে আমিও ঐ আপুটির সামনে যাই। আপুটি বসে মোবাইলে কার সাথে যেনো কথা বলতেছিলো। আমি তার সামনে গিয়ে দাঁড়াই। তবে আমার হাত পা কাঁপছিল এই ভেবে যে নিশ্চিত চড় - থাপ্পড় দুই একটা আমার গালে পড়বে।
.
- কি সমস্যা? কিছু বলবে?
- জ্বি না আপু।
- তাহলে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? আর পিছনে হাত কেনো?
- না আপু এমনি।
.
কথাটি বলে পিছনে তাকালাম। দেখলাম ভাইয়ারা ইশারা করছিলো আমাকে। কি বিপদে পড়লাম। উনাকে প্রপোজ করলে তার থেকে মার খেতে হবে না করলে বড় ভাইদের কাছে মার খেতে হবে। কথাটি ভাবিতেছিলাম নিচে তাকিয়ে। কি করা যায়। না এইবার সাহস করে বলেই ফেলবো। একটু পরে আবারো আপুটির ডাকে তার দিকে তাকালাম।
.
- এই ছেলে? এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
- আসলে আপু। একটা সমস্যায় পড়ে গেছি।
- কি সমস্যা?
- ঐ যে দেখছেন ভাইয়ারা। তারা তো আমাকে র‍্যাগিং দিচ্ছে। আর র‍্যাগিংটা হচ্ছে। আপনাকে প্রপোজ করতে হবে। কিন্তু আপনাকে প্রপোজ করলে নিশ্চিত মার খেতে হবে। আবার না করলেও তাদের কাছ থেকে মার খেতে হবে। এখন কি করবো আপু?
- কথা শুনে তো মনে হচ্ছে ভদ্র। কোন সেমিষ্টার?
- জ্বি আপু প্রথম সেমিষ্টার।
- কোন ডিপার্টমেন্ট?
- ইলেক্ট্রনিক্স।
- আচ্ছা তাহলে তোমাকে যেটা র‍্যাগিং দিয়েছে সেটাই করো।
- আপনি যদি রাগ করেন।
- আমি না হয় দুইটা থাপ্পড় মারবো। কিন্তু ওরা তো ইচ্ছে মতো পিটাবে। তুমি কোনটা চাও?
- আচ্ছা আপু। এই নিন ফুলটা।
.
ফুলটি তার হাতে দিয়ে আমি আমার দুই হাত দিয়ে দুই গাল ধরে রাখলাম। আমার কাহিনি দেখে উনি হেসে দিলেন এবং বললেন।
.
- আরে বোকা হাত নামাও। মারবো না।
.
মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে চলে গেলেন আপুটি। আমি পরে গাল থেকে হাত নামিয়ে নিলাম। সেইদিনের পর থেকে বেশ কয়েকদিন যাবত তার সাথে দেখা হয়নি। আমি নিজেই চাইতাম না তার সামনা সামনি না হতে। কিন্তু এর মধ্যে তার নাম জেনে যাই। কিন্তু তার মুখে অনেকবার শুনেছি। যতবারই আপু বলতাম ততবারই তার নাম বলতো এবং তাকে নাম ধরে ডাকতে বলতো। এভাবে আর বেশিদিন তার কাছ থেকে লুকিয়ে থাকতে পারলাম না।
.
একদিন ক্লাসে বসে গেইম খেলতেছিলাম। আর পাবজি গেইমটি খুবই মনোযোগ সহকারে খেলতে হয়। আমিও মনোযোগ দিয়েই খেলতেছিলাম। কিন্তু সেইদিন উনি সহ আরো কয়েকটা আপু আমাদের ক্লাসে আসেন। আমার ক্লাসমেটরা তাদের দেখে উঠে দাঁড়ায়। কিন্তু আমি বসে বসে গেইম খেলছিলাম। আমি আসলে খেয়াল করতে পারিনি। আমার উপর সেইদিন রাগ হয় বড় আপুরা। কিন্তু কিছু বললো না আমাকে। কারণটা তখন পর্যন্ত জানতাম না। পরে ক্লাসমেটরাও জিজ্ঞাসাবাদ করলো কেনো কিছু বললো না আমাকে। হেন তেন আরো অনেক কিছু বললো। আমি ওদের কিভাবে বলবো আমি নিজেই তো জানতাম না কারণটা।
.
এর মধ্যে আমাদের সেমিষ্টার ফাইনাল শেষ হয়। এবং দিত্বীয় সেমিষ্টারে উঠি। আর তারা চতুর্থ সেমিষ্টার। তখন থেকে বড় ভাইদের সাথে খুব ভাল সম্পর্ক হয়ে যায় আমার। আমি মাঝে মধ্যে ভুল করলেও কিছু বলতো না। আরো বুঝিয়ে বলতো ভুল গুলো শুধরে নেওয়ার জন্য। ব্যাপারটা আমার কাছে কেমন জানি মনে হচ্ছিলো। আর একটা কথা বলে রাখা ভালো। আমি ক্লাসে উনাদের ছোট হতে পারি তবে বয়সে সেইম ছিলাম। কিন্তু ক্যাম্পাসে তাদের সম্মান করতে হতো। যাইহোক বড় ভাই বলে কথা।
.
রাতের বেলায় একদিন গেইম খেলতে ছিলাম। তখনই অচেনা নম্বর থেকে আমার মোবাইলে কল আসে। গেইম খেলছিলাম তাই কলটা কেটে দেই। এভাবে ১১ বার কল কেটে দেই। যে কারণে চিকেন ডিনারটি মিস হয়ে যায়। রাগ উঠে যায় তাই গেইম থেকে বের হয়ে ঐ নম্বরে কল ব্যাক করলাম। ইচ্ছেমত বলবো ভাবছিলাম। কিন্তু এটার উল্টো হলো।
.
- এই কে আপনি? এতবার কেউ কল দেয়? দেখছেন কলটা বার বার কেটে দিচ্ছি তারপরও কেনো কল দিচ্ছেন?
- এই ছেলে। এত কিসের ব্যস্ত তুমি? যে আমার কল কেটে দেও।
.
বুঝতে আর বাকি রইলো না। হ্যা উনিই কল দিয়েছেন। সারারাত কথা বললেন। আমি মিস করতেছি আমার গেইমটি। সেইদিন রাতে আর গেইমে ডুকতে পারিনি। পরেরদিন ক্যাম্পাসেও যেতে পারিনি। সকালে ঘুম থেকে উঠিয়ে দেয় কল দিয়ে। এবং কোনো একটা রেস্টুরেন্টের নাম বলে যেতে বলে। আমিও ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে। সে রেস্টুরেন্ট এ চলে গেলাম। গিয়ে দেখি উনি বসে আছে।
.
- সরি। আ..
- একদম চুপ। আরেক আপু বললে চড় খাবে।
.
আ বলতেই বুঝে গেলেন। কি ব্রিলিয়েন্ট রে বাবা। চুপ-চাপ বসে রইলাম। এবং তিনি তার পছন্দ মত খাবার অর্ডার করলেন। এবং সেটাই খেতে হলো। খাচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম এইগুলো কিভাবে খায়। আসলে আমি সুপ খেতে পারতাম না। কেমন জানি লাগতো। কিন্তু সেইদিন খেতে হয়েছে জগন্য খাবারটা। অনেকেরই পছন্দ এটা। তবে আমার একদমই অপছন্দ।
.
- কোনো সমস্যা?
- উঁহুম।
- তাহলে খাচ্ছো না কেনো?
- খেয়েছি। আর খেতে পারবো না।
- এখনও তো পুরোটাই আছে। তাড়া-তাড়ি শেষ করো।
- আমি সুপ খেতে পারিনা। আপনি খেয়ে নিয়েন।
- আমি বলছি খেতে খাবেন।
.
কিছু করার নাই। নাকে ধরে অর্ধেক খেলাম। আমার অবস্থা দেখে উনি বললেন 'থাক আর খেতে হবে না'। কথাটি শুনে খুব ভাল লাগলো। এবং কিছুক্ষণ কথা বললাম। কিন্তু আমার তেমন ফিলিং ছিলো না। সে কথা বলছিলো আমার সাথে আর আমি ভাবতেছিলাম গেইমের কথা। বাসায় থাকলে তো গেইম খেলতে পারতাম। এরকম আমাকে অন্যমনস্ক দেখে তিনি রেগে গেলেন।
.
- আমি কি বলতেছি শুনতেছো?
- হ্যা। হুম শুনতেছি তো।
- কি বুঝলে শুনে?
- চিকেন ডিনার পেতে হবে।
- হোয়াট?
- না কিছু না।
.
পরে উঠে চলে আসি। আর হ্যা বিলটাও উনি দিয়েছেন। বড় আপু বলে কথা। আর আমার মাথার ভেতরে দিন রাত পাবজি ঘুরা-ঘুরি করে। কিভাবে ভাল খেলা যায়। এ ভাবনাই আসতো দিনরাত। তাই অন্য চিন্তা মাথায় ঢুকতো না। কিন্তু তন্নি আপুর কথা শুনে কেমন জানি মনে হতো। উনি আমাকে খুব কেয়ার করতো। সময় মতো সবকিছু করতে বলতো। সময় মতো খাওয়া। এরকম আরো অনেক কিছু। যেরকমটা বড় বোন ছোট ভাইকে কেয়ার করে ঐ রকম। এভাবে আরো কয়েকদিন চলে যায়।
.
তো একদিন কথা বলতে বলতেই আমাকে জানায় ভালবাসি শব্দটা। কথাটি শুনে আমি হেসে দেই। এবং বলি যে সিনিয়র আপুর সাথে রিলেশন সবাই কিভাবে দেখবে। এভাবে আরো অনেক কথা বলতাম তার সাথে। কিন্তু ততদিনে তাকে নিয়েও ভাবতাম। তবে পাবজি আগে পরে উনি। সে একদিন আমার মোবাইলটি হাতে নিয়ে গেইমটি ডিলেট করে দেয়। এবং পুনরায় যেনো গেইমটি ইন্সটল না করি সেটাও বলে দেয়। পাবজি বিহীন জীবন কাটাচ্ছিলাম।


.
এর মাঝে আপুটার সাথে আমার রিলেশন হয়ে যায়। হ্যা ভালবাসার সম্পর্কেই আবদ্ধ হই দুইজনে। আমি আপনি করে বলতাম কিন্তু তার রিকুয়েস্ট এ তুমি করেই বলতে হয়। প্রায় ১৫ দিন ধরে পাবজি থেকে দূরে ছিলাম। মন খারাপ থাকতো। বিষয়টা তন্নি বুঝতে পেরে তার নিজের মোবাইলেও গেইমটি ইন্সটল করে এবং আমাকেও ইন্সটল করতে বলে। এরপর থেকে শুরু হয় পাবজি উইথ ভালবাসা। আমি গেইমে না থাকলেও তন্নি গেইমে থাকতো। একটা সময় সে ও পাবজির প্রেমে পড়ে যায়। এবং একসাথে Duo Match খেলতাম। এভাবেই চলতে থাকে।
.
- হ্যালো আসো না দেখা করি।
- এখন পারবো না।
- কেনো?
- আরে গেইমে আছি। আচ্ছা রাখি পরে কথা হবে।
.
বিষয়টা উল্টো হয়ে গেলো। আগে আমি যেরকম গেইম নিয়ে পাগল ছিলাম। এখন সে পাগল হয়েছে। এরকমই পাগল হয়েছে যে আমার সাথে কথা বলারও সময় পেতো না। এটাই নিয়ম ভাই পাবজির নেশা সব নেশাকে হার মানায়। তখন থেকে তার সাথে কথা হতো শুধু পাবজিতেই। এভাবেই কেটে যাচ্ছিলো আমাদের পাবজি উইথ রিলেশনশিপ।
.
.
লেখাঃ হৃদয় নাদিম

Comments